Categories
ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ এবং কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর

ভাইরাস বাহিত একটি রোগ হিসেবে পরিচিত হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ জানতে হলে সাথে থাকুন।

বহুকাল পূর্বে মানুষের মধ্যে, যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বেশ সীমিত। এই সীমিত যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে কোন রকমে দিন পার করতেন। অনুন্নত সমাজ ব্যবস্থার ফলে তখন চিকিৎসা সেবা ছিল না উন্নত। ফলে উন্নত চিকিসৎসা সেবার অভাবে, কোন ঘাতকবাহী রোগের প্রভাবে অনেক মানুষ ঢলে পড়তেন মৃত্যুর কোলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সেই রোগকে প্রতিহত করার মতো উন্নত চিকিসৎসা সেবার আবির্ভাব হয়েছে আমাদের জীবনে। ভাইরাস জনিত একটি রোগ হিসেবে হেপাটাইটিস এ। তাই হেপাটাইটিস এ এর লক্ষন বিস্তারিত বিবরণ থাকবে আজকের আলোচনায়।

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ

হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংগঠিত হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন কারণে হতে পারে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। মূলত ৫ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাসের প্রভাবে হয়ে থাকে হেপাটাইসিস ভাইরাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-

  • আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পেশী এবং গিটে গিটে ব্যথা হয়ে থাকে এই রোগের প্রভাবে।
  • শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় শরীরে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব দেখায়।
  • অনেক সময় ক্ষুদামন্দার মতো সমস্যা দেখা দেয় এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে।
  • রক্তে বিরুলিনের পরিমান কমে গিয়ে যকৃটার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে গিয়ে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে শরীরে।

হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম

হেপাটাইটিস এ একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। আর আমরা প্রায় কম বেশি সকলে জানি, যে কোন ধরণের ভাইরাসবাহিত রোগ যদি কোন একজন ব্যক্তির উপর ভর করে, সেই রোগ ধীরে ধীরে সকলের মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে ফেলতে পারে। যা মাঝে মাঝে অনেক সময় মহামারীর মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই কোন রোগ এর প্রাদুর্ভাব ঘটার পূর্বে থেকে রোগটি যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে তার জন্য অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কথা আছে সমাধান থেকে প্রতিকার শ্রেয়। তাই ভাইরাসবাহিত যেকোনো ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তার জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করতে চাইলে এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে জেনে তার জন্য উপযুক্ত ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করতে হবে । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

হেপাটাইটিস এ এর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হল হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বেশ সাহায্য করে। এই ভাইরাসের টিকা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রায় ৯৫ ভাগ সফল। তবে এই টিকা গ্রহণের জন্য আপনার বয়সসীমা সর্বোচ্চ ১৫ হতে হবে। হেপাটাইটিস এ থেকে পরিপূর্ণরূপে সুরক্ষার জন্য দুই ডোজের টিকার প্রয়োজন। প্রতি ৬ মাস পর পর এই হেপাটাইটিস এ সুরক্ষার জন্য টিকা নিতে হয়।

হেপাটাইটিস এ হলে করনীয়

একটি ঘাতকবাহী রোগ হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত হল হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমণে হয় এই রোগ। তবে হেপাটাইটিস এ একটি স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ। পরিমিত চিকিসৎসা এবং পর্যাপ্ত পরিমান সেবা যত্ন পেলে হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে আপনার এই রোগটি হয়েছে কিনা। তাই কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ এ আক্রান্ত হয় তাহলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে-

  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তিকে সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেই ব্যক্তির বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি জাতীয় তরল খাবার প্রদান করে পানিশূন্যতা দূর করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সে ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গরমে যাতে কোন ধরণের পচা বেশি খাবার রোগীর না খেতে পারে সে দিকে পরিপূর্ন খেয়াল রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং সঠিক খাবার-দাবার পারে খুব সহজে হেপাটাইটিস এ থেকে রোগীর সুস্থতা প্রদান করতে।

তবে যদি কোন রোগীর হেপাটাইটিস এ এতে আক্রান্ত হবার পর শরীর থেকে রক্তের মধ্যে বিরুলিনের মাত্রা ১০ মিলিগ্রাম কমে যায় তাহলে তাকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

হেপাটাইটিস এ হলে কি খাওয়া উচিত

সঠিক এবং পরিমিত খাবার গ্রহণে যেকোনো রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। সাধারণত রাস্তার ধারে পঁচা বাসি খাবার, ময়লা পানি খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখা দিলেই আপনার শরীরে বাসা বাধতে পারে হেপাটাইটিস এ। এই রোগের প্রাদুর্ভাব এর ফলে আপনার কর্মচঞ্চলতা হতে পারে রুদ্ধ এবং ব্যাঘাত গ্রস্থ। তাই এই রোগের যদি প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আপনাকে বিশেষ করে নজর দিতে হবে পরিমিত এবং সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার-দাবারের দিকে।

যেহেতু হেপাটাইটিস এ একটি লিভারজনিত রোগ তাই এই রোগে আক্রান্ত শরীরে অবশ্যই দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতার। তবে হেপাটাইটিস এ এর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই এই রোগ হয়েছে বিধায় ধরে নেওয়া ঠিক নয়।বরং লক্ষণ প্রকাশ পেলে আপনাকে পরীক্ষার মাধ্যমে শুনিশ্চিত হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ হলে কি ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত।

          • শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি এবং সেই সাথে মিনারেল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
          • বিভিন্ন ফলমূল যেমন তরমুজ, মাল্টা, আনারস, আপেল ইত্যাদি পানিজাতীয় ফলমূল বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে।
          • বেশি বেশি করে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
          • পরিমিত পুষ্টি পেতে স্যুপ খেতে দিতে হবে রোগীকে।
          • খাবারে স্বাদের পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে মাছ মাংশের পর্যাপ্ত
          • পরিমাণ সমন্বয় করতে হবে খাবার দাবারে।
          • সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
          • রোগীকে দুধ ডিম খাওয়াতে হবে।

সবচেয়ে ক্ষতিকর হেপাটাইটিস ভাইরাস কোনটি?
হেপাটাইটিস একটি লিভারজনিত রোগ। এইরোগটির প্রভাবে ধীরে ধীরে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা বিকল হয়ে বিভিন্ন রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের শরীরে বাসা বাধে ঘাতকবাহি এই রোগটির। বিভিন্ন লক্ষণ এবং প্রভাবরের উপর ভিত্তি করে হেপাটাইটিসকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তা হল –

  1. হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
  2. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।
  3. হেপাটাইটিস সি ভাইরাস।
  4. হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস।
  5. হেপাটাইটিস ই ভাইরাস।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস এ
মূলত দূষিত পানি এবং রাস্তার ধরে অবিশুদ্ধ পানি গ্রহণের ফলে মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে এই রোগটিতে। তবে বড়দের তুলনায় শিশুরাই এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি বেশ ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। হেপাটাইসিস এর যতগুলো ভাগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হল এটি। কারণ এটি মানবদেশে আক্রমণ করে ধীরে ধীরে আমাদের যকৃতের কার্যক্ষমতা কমিয়ে আনে।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
আরও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

হেপাটাইটিস সি
এর উপসর্গ তেমন একটা চোখে প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘদিন আমাদের শরীরে বসবাস করার ফলে এটি লিভার সিরোসিস এর প্রভাব দেখা দিতে সাহায্য করে আমাদের শরীরে। এই রোগে ক্যান্সার কিংবা মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস ডি হেপাটাইটিস বি এর মতো আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস ই
এটি তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে গর্ভকালীন সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস এর যতগুলো ধরণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি এর প্রতিচ্ছবি হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস ডি এর টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ দমন করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এর বিশেষ কিছু লক্ষণ বিদ্যমান রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, সাধারণত কি ধরণের লক্ষণ দেখলে আপনারা বুঝবেন যে রোগীর হেপাটাইসিস ডি এ আক্রান্ত হয়েছে –

শরীরের বিশেষ অংশ যেমন চোখ ,ত্বক হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে।
অনেক সময় শরীরে রক্তের বিদ্যমান বিরুলিনের মাত্রা কমে গিয়ে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়।

উপরের লক্ষণসমূহ হেপাটাইটিস ডি হওয়ার জন্য প্রকৃত দায়ী।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

শেষ কথা
হেপাটাইটিস “এ” একটি মরণব্যাধি রোগ। এই রোগ হলে সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক খাদ্যভাস পারে রোগীদের সুস্থ করে তুলতে।

Categories
ভ্যাকসিন

১১ টি ভ্যাকসিন এর নামের তালিকা এবং কার্যকারীতা

আমাদের নানা সময়ে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে এর মধ্যে অনেক সময় ভাইরাস জনিত রোগ হয়ে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পযন্ত এই সব ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যে সব ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার নাম এবং কার্যকারিতা আলোচনা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

তার আগে ভ্যাকসিন কি বা টিকা কি সেই সব জেনে নেই… ভ্যাকসিন হচ্ছে জৈব রাসায়নিক যৌগ যা অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা জন্মাতে সাহায্য করে তাকে টিকা বা vaccine বলে। আর এই ভ্যাকসিন কোনো প্রাণীর দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria), ভাইরাস (Virus) ইত্যাদির জীবিত (যার রোগসূচনাকারী ক্ষমতা শূন্য) এবং মৃতদেহ বা কোনো অংশবিশেষ হতে প্রস্তুত ঔষুধ যা ঐ প্রাণীর শরীরে ঐ ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে আন্টিবডি তৈরি করে।

টিকা হল কোন রোগের কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট রোগটিরই বিরুদ্ধে শুধু কাজ বা প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়া সম্পন্ন জৈব উপাচার যা টিকাকরণ (ইনঅক্যুলেশন) অর্থাৎ ত্বকে সূচ ফুটিয়ে দেওয়া হতে পারে বা অন্য উপায়ে যেমন:- খাবার ড্রপ (যেমন মুখে সেব্য পোলিও টিকা) বা ওরাল পোলিও শরীরে ভ্যাক্সিন হিসেবে দেওয়া হতে পারে।

এতে করে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু অথবা তার বিষ থেকে তৈরী হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু-সদৃশ উপাদান থাকে। এই ধরনের টিকা উক্ত উপাদানটিকে বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করতে, সেটিকে ধবংস করতে এবং পর্বতীতে স্মৃতিতে রাখতে অনাক্রম্যতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যাতে পরবর্তীতে অনাক্রম্যতন্ত্র ঐ সমস্ত জীবাণুকে খুব সহজে পরবর্তী অনুপ্রবেশে শনাক্ত ও ধবংস করতে পারে। এই জন্য জীবাণু দারাআক্রান্ত রোগের জন্য টিকা ব্যবহার করে থাকে।

১১ টি ভ্যাকসিন এর নামের তালিকা

1. হেপাটাইটিস বি টিকা (Hepatitis B vaccine)
১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার মধ্যে এই হেটাটাইটিস এটি একটি অন্যতম ঠিকা। এই টিকা আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানব জাতির অনেক উপকার হয়েছে। চলুন তাহলে কি কি উপকার হয়েছে জেনে নেওয়া যাক?

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন

আমাদের শরীরে হেপাটাইটিস বি নামক ভাইরাসের আক্রমণ হলে, লিভার প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভার ক্যান্সার হতে পারে, লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয়, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে। রোগীর অজান্তেই এই রোগ অন্যদের মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। এই সব রোগের বিরুদ্ধে শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনটি ডোজে হেপাটাইটিস বি টিকা দেওয়া হয়। জন্মের এক-দু’দিনের মধ্যে প্রথম ডোজ, শিশুর বয়স এক মাস হলে ২য় ডোজ দিতে হয় এবং ৬ মাস হলে ৩য় বা শেষ ডোজটি দেওয়া হয়।

2. বিসিজি (Bacillus Calmette-Guerin Vaccine (BCG)
আমরা আলোচনা করবো ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার মধ্যে বিসিজি(BCG) নিয়ে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক…
বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

এই বিসিজি টিকা বাচ্চার জন্মের পর থেকে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে যে কোনও সময় দেওয়া যায়। এই টিকা টি টিউবারকুলোসিস মেনিনজাইটিস (Tuberculous Meningitis) বা বাচ্চাদের একরকম যক্ষ্মা রোগ থেকে রক্ষা করে। এটি প্রয়োগ করে থাকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই বিসিজি টিকা দেওয়া হয়ে থাকে বাচ্চাকে। আদর্শ বিসিজির ডোজে ১ মিলিলিটার টিকার তরলে ০.১ মিলিগ্রাম ওষুধ থাকে। বাচ্চাকে একটাই বিসিজি ডোজ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ বিসিজি টিকা নিয়ে নতুন তথ্য এবং বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

3. পোলিও টিকা (Oral Polio Vaccine (OPV)
এখন যে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে আলোচনা করবো এই টিকার নাম আমরা সবাই জানি প্রায়। এই টিকার অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং এটি আবিষ্কার হওয়ার ফলের শিশুদের এই মারাক্ত রোগের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে। এই টিকার কারনে কি কি রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে শিশুরা। চলুন তাহলে সেই সব বিষয় আগে জেনে নেই।
পোলিও রোগের জীবাণুর নাম কী

এই টিকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং পোলিও রোগের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করে। পোলিও রোগের প্রকোপে শিশুর পা বিকৃত হয়ে যায় এবং সারাজীবনের জন্য শিশু প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। এই পোলিও টিকা চারটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ জন্মের পর থেকে ২ মাসের মধ্যে, দ্বিতীয় ডোজ ৪ মাস বয়সে, তৃতীয় ডোজ ৬-১৮ মাসের মধ্যে এবং শেষ ডোজটি বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয় ৪-৬ বছর বয়সের মধ্যে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই ডোজগুলি দেওয়া যায় আবার ওষুধের মতো খাইয়েও দেওয়া যায়।

4. রোটাভাইরাস টিকা (Rotavirus Vaccine)
আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে পায় ছোট শিশু থাকে। আর এই ছোট শিশুদের নানা সময়ে নানা ধরেনের রোগ হয়ে থাকে। আমরা যদি সচেতন না থাকি তাহলে আমাদের শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সকলের এই রোটাভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা দরকার। চলুন তাহলে এই ভাইরাস সম্পর্কে জেনে নেই।

এই রোটা ভাইরাস ছোট শিশুদের আক্রমণে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন ও ডায়রিয়া হতে পারে। এই রোটাভাইরা টিকা শিশুকে টিকা ওষুধের মতো খাওয়ানো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে শিশুর জন্মের ৬-১৫ সপ্তাহের মধ্যে এই টিকার প্রথম ডোজ খাওয়ানো হয়। এই টিকা মোট তিনটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়। প্রথমে শিশুর ২ মাস বয়সে একটি, এরপর ৪ মাস বয়সে একটি সর্বশেষ ৬ মাস বয়সে একটি, মোট তিনটি ডোজ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ সব পিতা-মাতার জানা দরকার রোটা ভাইরাস কি

5. ডিটিএপি/ডিটিপি (DTAP/DTP)
এটিও একটি শিশুদের মারাক্ত রোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। তাই আমাদের সকলের এই সব টিকার বিষয়ে জানা থাকা দরকার। তাহলে আর দেরি না করে এখনি শুরু করা যাক।

এই ডিটিএপি/ডিটিপি ভ্যাকসিন বা টিকাটি টিটেনাস (Tetanus), এটি ডিপথেরিয়া(Diphtheria) ও হুপিং কাশি(whooping cough) এবং যক্ষার –এর মতো রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা শরীরে দ্রুত গড়ে তোলে। পর্বতীতে এই রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা করে এবং স্মৃতিতে রাখে পর্বতীতে জীবাণুর অনুপ্রবেশ করতে ধবংস করে। এটি বাচ্চার ১.৫ মাস, ২.৫ মাস ও ৩.৫ মাস বয়সে এই টিকাটি দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথম ডোজ সম্পন্ন হলে, ১.৫ বছর বয়সে DPT-র দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় এবং ৫ বছর বয়সে Double DT-র আর একটি ডোজ দেওয়া হয়। এই DTaP টিকা বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই টিকাটি প্রয়োগে শিশু ব্যথা পায় না এবং আগের থেকে অনেক নিরাপদ। এর আগে DTP টিকা শিশুকে দেওয়া হত। এই DTP টিকা শিশুর জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল। তাই এখন আর এই টিকা দেওয়া হয় না।

শিশুর টিকা, প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ

6. এইচ আই বি টিকা (Haemophilus influenzae B (HiB) Vaccine)
এই ভাইরাসটি শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি করে থাকে তাই এইচ আই বি ভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা দরকার এবং এই ভাইরাস এর উপাকারিতা কি সেটিও জানা উচিত। তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক

আমরা জানি সব টিকাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানব শরীলে বাড়িয়ে তুলে। তেমনি এই টিকাকরন করলে শিশুর শরীর হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus Influenzae) নামক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এই ভাইরাস যে সব শিশুদের আক্রমন করেছে তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছে যে শিশুর গলা, ত্বক এবং মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এই টিকা নিলে শিশদের এপিগ্লটিস, মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করে থাকে। তবে এই টিকাটিও বাচ্চাকে তিনটি ডোজে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমে বাচ্চার ২ মাস বয়সে এবং ২য় ডোজ ৪ মাস বয়সে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এরপর বাচ্চার বয়স ১৫ মাস হয়ে গেলে শেষ ডোজটি বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।

7. হেপাটাইটিস এ টিকা (Hepatitis A Vaccine)

আমাদের শিশুদের প্রায় দেখা যায় লিভার জনিত সমস্যা। এই লিভারজনিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে এই হেপাটাইটিস এ টিকা দেওয়া হয়। আর এই হেপাটাইটিস এ নামক ভাইরাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হেপাটাইটিস এ টিকা দুটি ডোজে এই টিকা শিশু পেয়ে থাকে। শিশুর বয়স ১২থেকে২৩ মাস তখন প্রথম ডোজ এরপর ৬থেকে১০ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়।

8. এম এম আর (Measles Mumps Rubella (MMR) Vaccine)
অন্যন্য টিকার মতোই এই টিকা টিও শিশুকে তিনটি ধাপে দেওয়া হয়। এই টিকা যে সব রোগের জন্য কার্যকারিতা বা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, হাম বা মিসলস, মাম্পস এবং রুবেলার। তবে এই টিকাটি তিনটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়ে থাকে। ৯ মাস বয়সে প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়।

9. পি সি ভি (Pneumococcal Conjugate Vaccine (PCV)
ছোট শিশুদের প্রায় নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। আর এই নিউমোনিয়া হয়ে অনেক শিশু মৃত্যু হয়। আর এই নিউমোনিইয়ার কবল থেকে বাচাতে পি সি ভি দেওয়া হয়। এটি দেওয়ার ফলে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এই টিকা টি শিশুর ২ মাস বয়সে প্রথম এবং ৪ মাস বয়সে দ্বিতীয়। এরপর ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ৪থেকে৬ বছরের মধ্যে একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। আর বুস্টার ডোজ সম্পন্ন হলে পর্বতীতে শিশুর নিউমোনিয়া হয় না।

10. টি সি ভি টিকা (Typhoid Conjugate Vaccine (TCV)
টি সি ভি টিকা টাইফয়েড রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এই টিকা। শিশুদের এই টিকা দুটি ডোজে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ শিশুর ৯-১২ মাসের মধ্যে দিয়ে দেওয়া উচিত।

11. ভ্যারিসেলা টিকা (Varicella Vaccine)
চিকেনপক্স এই এটিও একটি মারাক্ত রোগ। ভ্যারিসেলা টিকা চিকেনপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে শিশুর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এই টিকা। এই টিকা অন্য টিকার চাইতে একটু আলাদা, এটি প্রথম ডোজ দেওয়া হয় শিশুকে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে এবং পরের ডোজটি দেওয়া হয় প্রথম ডোজের তিন মাস পরে

কিছু বিষয় মাথায় রাখুন
আমরা জানি বাচ্চা নিজের মায়ের কোলে সবথেকে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত বোধ করে। আপনার শিশুকে টিকার জন্য ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় যদি আপনি আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে থাকেন, তা হলে ও আপনার মুখ দেখতে পাবে না। বাচ্চাকে টিকা দেওয়ার সময় বাবা বা পরিবারের অন্য কাউকে সঙ্গে নিয়ে যান, বাচ্চাকে ওনার কোলে দিন। আর আপনি এমনভাবে বাচ্চাটির পাশে তার গায়ে হাত দিয়ে থাকুন, যেন বাচ্চা বুঝতে পারে আপনি তার পাশেই আছেন এবং ওর কোনও ক্ষতি হবে না। এতে করে বাচ্চা ভয় কম পাবে।
টিকা নেওয়ার পরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান বা ও যদি ফর্মুলা খেতে শুরু করেছে তা হলে তাই দিন। যদি বাচ্চা খুব কাঁদলে একটু শান্ত করে নিয়ে তবেই খাওয়ান। তা না হলে গলায় আটকে যেতে পারে। এই টিকা নেওয়ার পর বাচ্চার জ্বর আসতে পারে, এতে কেউ ঘাবড়ে যাবেন না। প্রয়োজনে অনুসারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এমনকি ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাচ্চার টিকা দেওয়ার সময় এবং ঠিক কোন সময় কী টিকা বা কোন টিকা দিতে হবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। এতে করে পর্বতীতে আর সমস্যা হবে।

টিকা দেওয়ার পরে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তবেই ওই জায়গায় ব্যথা কমানোর মলম লাগান। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ব্যথা কমানোর কোনও ওষুধ বাচ্চাকে দেবেন না। এতে করে আপনার বাচ্চার ক্ষতি হতেপারে। আপ্নারা কোনও রকম কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চার স্বাস্থ্যের সাথে ঝুঁকি নেবেন না। এই সমস্ত টিকা আপনার সন্তানকে সারা জীবন নানা জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে। যদি নিজের মনে কোনও সন্দেহ বা দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে বিশেষ আলোচনা করুন।
আরও পড়ুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

পরিশেষে বলতে পারি আমাদের আজকের এই ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকা নাম ব্যবহার বা তথ্য গুলো আপনাদের অনেক কাজে লাগবে ইনশাল্লাহ

Categories
খাদ্য তালিকা

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

মানুষের দেহে আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আয়রন দেহে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে। আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকায় কি ধরনের খাদ্যে আয়রন এর পরিমান বেশি রয়েছে তা জেনে নেই।

আপনারা কি জানেন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিগ্রাম আয়রনের দরকার হয়। সেই সাথে নারীদের জন্যও কিন্তু আয়রন আবশ্যকীয়। দৈনিক প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন নারীদের জন্য প্রয়োজন এবং প্রতিদিন প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন হয় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য।

আমরা যখন শরীরে ক্লান্তি এবং দূর্বল অনুভব করি তখন আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর কারণ হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতির ফলে। আয়রনের ঘাটতির ফলে গর্ভবতী মহিলাদের এবং শিশুদের অ্যানেমিয়া জনিত রোগ হয়ে থাকে। আপনি যদি এই আয়রনের ঘাটতি পূরণের করতে চান, তাহলে আপনাকে দুই ধরনের আয়রন গ্রহণ করতে হবে। যেমন; প্রাণীজ আয়রন এবং উদ্ভিজ্জ আয়রন। এই দুই ধরনের আয়রন মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবারের মধ্যে আয়রন আছে এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য –

কলিজা:
কলিজা হচ্ছে এমন একটি খাবার, যেটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন ছাড়াও কলিজার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। মুরগীর কলিজা থেকে গরুর কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তবে আমরা অনেকেই কলিজা খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু কলিজার পরিবর্তে আপনি চাইলে লাল মাংস অথবা ডিম খেতে পারেন।কারন ৩ আউন্স লাল মাংসে রয়েছে (২-৩) মিলিগ্রাম আয়রন এবং আধা কাপ ডিমের কুসুমে রয়েছে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন, যা আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।

ডার্ক চকলেট:
আমাদের দেহের জন্য ডার্ক চকলেট কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এর কারণ ডার্ক চকলেটে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। পাশাপাশি ডার্ক চকলেটে বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও থাকে।

ছোলা:
আমরা সাধারণত যে ছোলা খেয়ে থাকি সেটিতে রয়েছে আয়রন।এক কাপ ছোলাতে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং সেইসাথে এতে পরিমাণমতো প্রোটিনও থাকে। আমরা যারা নিরামিষ পছন্দ করি, তাদের জন্য কিন্তু ছোলা আদর্শ একটি খাবার। ছোলা আমরা চাইলে বিভিন্ন ভাবে রান্না করেও খেতে পারি।

কুমড়ার বিচি:
কুমড়ার বিচিতেও কিন্তু আয়রন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। কুমড়ার বিচি আমরা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেতে পারি। যেমন; সালাদের সাথে কুমড়ার বিচি মিক্স করলে অনেক সুস্বাদু হয়ে উঠে। তাই আমরা চাইলে প্রতিদিনের সালাদে কুমড়ার বিচি মিক্স করে খেতে পারি। এছাড়াও অনেকেই আবার কুমড়ার বিচি তেলে ভেজে খেয়ে থাকে।অনেকেই আবার এটি তরকারির সাথে রান্না করে খেতে পছন্দ করে। কেউবা আবার সিদ্ধ করেও খায়।তাই বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেহে আয়রনের ঘাটতির অভাব মেটাতে পারি। এই কুমড়ার বিচিতে আছে ২ মিলিগ্রাম আয়রন।

ব্রোকলি:

ব্রকলী
ব্রকলী

আয়রন জাতীয় খাবারের মধ্যে ব্রোকলি একটি জনপ্রিয় সবজি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। ব্রোকলিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, আয়রন ফলিত, জিংক এবং ম্যাগনেশিয়াম। ব্রোকলি সেদ্ধ বা সাতলিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

ডালজাতীয় খাবার:
আরো একটি খাবার যেটি আয়রনের ভালো একটি উৎস হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে, আর সেটি হলো ডালজাতীয় খাবার। ডালজাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আপনারা হয়ত জানেন প্রতি কাপ ডালের মধ্যে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রনের একটি ভালো উৎস হল ডাল। এক কাপ ডালে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং প্রচুর ফাইবার থাকে।এতে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে এবং রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে।

বেদানা:
বেদনা এমন একটি ফল, এটি খাওয়ার পর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বেদনায় রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এতে আরো রয়েছে এসকর্বিক এসিড যা শরীরে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

বিটরুট:

বিটরুট
বিটরুট

যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা বিটরুট সবজি খেতে পারেন। কারন এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের ভালো উৎস। বিটরুট এটি একটি শীতকালীন সবজি। এতে আয়রন ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, কপার, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, সালফারসহ আরও অনেক উপাদান।

বাঁধাকপি:

বাঁধাকপি
বাঁধাকপি

আমরা জানি বাঁধাকপি একটি শীতকালীন সবজি। জনপ্রিয় এই সবজিতে রয়েছে আয়রন, আরোও অনেক প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ওজন কমাতে সহেতা করে,বাঁধাকপি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং মানব দেহের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

আপেল:

আপেল
আপেল

আপেল আমাদের সবার পরিচিত এবং প্রিয় একটি ফল, এই ফল আয়রনের ভালো উৎস এবং পুরো স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।

পালং শাক:

পালংশাক
পালংশাক

শীতকালীন নানা ধরনের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি। এতে এক কাপ রান্না করা পালংশাকে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, এছাড়াও এতে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন ই থাকে। এটি পরীক্ষিত ভাবে জানা গিয়েছে, রান্না করা পালং শাক এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই মানবদেহ শোষণ করে নিতে পারে।

কমলা:

কমলা
কমলা

আপেল এর মতোই কমলা একটি জনপ্রিয় ফল, এতে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস এবং শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। কমলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি দেহের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ
কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার
শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

সিদ্ধ আলু:
আপনি কি জানেন সিদ্ধ আলুতে বি ভিটামিন, ভিটামিন সি প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রনও থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে থাকে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন।

আমরা জানি উপরের আয়রন জাতীয় সমৃদ্ধ বাদ দিয়ে আরও অনেক খাবার রয়েছে। যেমন: কিশমিশ, কাজুবাদাম, টমাটো, শিমের বীচি মটরশুঁটি ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরে চা বা কফি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ক্ষতি হতে পারে।

Categories
ভেষজ খাদ্য

প্রাকৃতিক ফল আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

সুস্থ থাকতে হলে আমরা কত ধরনের চেষ্টাই তো করি। পুষ্টিকর খাবার খাই,ব্যয়াম করি ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। তবে সুস্থ থাকতে হলে যে ভেষজ উপাদান কিন্তু খুবই কাজে দেয়। তা কি আমরা জানি ? অনেকেই এ সম্পর্কে বেশি জানি না। ভেষজ উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো আমলকি। এর গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক এর গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি হলো ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।এর এতো গুণাগুণ থাকার জন্য এটিকে বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। শীতকালে এটির বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ ও কাগজী লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি রয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এটি আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য কতটা উপকারী। নিচে এটির বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক…

  • আমলকি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য কয়েক টুকরো আমলকি মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • আমলকি বমির সমস্যা সমাধান করে।
  • আমলকির রস পান করলে শরীরের জ্বর কমে যায়।
  • দাঁতের ব্যথা ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে আমলকি ও কর্পূর মিশিয়ে দাঁতে লাগান। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত আমলকির রস পানে শরীরের কোলেস্টেরল কমে যায় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • এতে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিক রোগীর জন্য আমলকি দারুন উপকারী।
  • আমলকি শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয় ফলে আমাদের যকৃত বা লিভার সুস্থ থাকে।
  • আমলকিতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • আমলকিতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমলকি খুবই কার্যকর। এজন্য প্রতিদিন আমলকির গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আমলকি খেলে মুখের দুর্গন্ধ‌‌‌ দূর হয়।

আমলকির ইংরেজি নাম

আমলকির ইংরেজি নাম হলো “Amla” বা “Indian Gooseberry” ।এর আরো কয়েকটি ইংরেজি নাম রয়েছে – Malacca Tree, Emblic Myrobalan বা Emblic Myrobalan ইত্যাদি। এটিকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় “আমলক”। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো “Phyllanthus Emblica“। এটি ফাইলান্থাসি গোত্রের ফাইলান্থুস গণের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের ভেষজ ফল।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই খালি পেটে লেবুর রস পান করে থাকি। কিন্তু যেহেতু আমলকিতে লেবুর তুলনায় অনেক বেশি ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান সেহেতু খালি পেটে আমলকি ও দারুন উপকারী। খালি পেটে আমলকি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. কুসুম গরম পানিতে কয়েক টুকরো আমলকি দিয়ে সেই পানি পান করলে খুব ভালো। মধুর সাথে আমলকি মিশিয়ে খেলে আরো ভালো।
  2. খালি পেটে আমলকি খেলে শরীর থেকে দ্রুত টক্সিক উপাদান বের হয়ে আসতে পারে।
  3. এটি শরীরে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
  4. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি।
  5. সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে এটি পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে ও সকল দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
  6. যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে আমলকি খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

শুকনো আমলকির উপকারিতা
যেহেতু আমলকি সারা বছর পাওয়া যায় না তাই একে শুকনো করে সংরক্ষণ করতে হয়। শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আছে অনেক। নিচে তা দেওয়া হলোঃ।

  1. অনিদ্রাজনিত রোগ নিরাময় করে শুকনো আমলকি।
  2. প্রতিদিন দুই বেলা শুকনো আমলকি খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়।
  3. এছাড়াও অ্যাসিডিটির সমস্যা সমাধানে শুকনো আমলকি খুবই কার্যকর।
  4. খাওয়ায় অরুচি থাকলে শুকনো আমলকি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার

ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার
ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার

এবার চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে আমলকি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।

ত্বকের দাগ দূর করতে আমলকি দারুন উপকারী। ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি প্রচুর পরিমাণে থাকে আমলকিতে। এক্ষেত্রে আমলকির রস ও অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের যাবতীয় দাগ দূর হয়।

রোজ সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও আমলকির রস সরাসরি মুখে লাগালেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য ত্বকে আমলকির রস মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নিয়মিত আমলকির রস পান করলে ত্বকের মধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে না ও ত্বক টানটান থাকে‌।

আমলকির রস ও বাদামের তেল মিশিয়ে মুখে লাগালে তা ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে ও ব্রণের দাগ দূর করে।

ত্বকের কালো কালো ছোপ দূর করে আমলকির রস। এজন্য লেবুর রসের সাথে আমলকির রস মিশিয়ে মুখে লাগালে উপকার পাবেন।

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আমলকির রস , চালের গুঁড়া ও গোলাপ জল মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে মুখে ম্যাসাজ করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয়।

প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ফর্সা করতে আমলকির রস , বাদাম গুঁড়া ও চন্দন গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে মাখলে এটি ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে উজ্জ্বল করে তোলে।

ত্বকের অ্যালার্জি ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে আমলকির রস। এজন্য আমলকি বাটার সাথে কয়েক চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ৪০ মিনিট।

আমলকি ও পেঁপে ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আমলকির রস ও পেঁপে বাটা দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

এটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী। এটি ত্বকে কোনো ধরনের ইরিটেশন করে না।

কাঁচা হলুদ বাটা ও আমলকির রস একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের মরা কোষ দূর করে ও ত্বককে উজ্জ্বল করে।

উপরোক্ত নিয়মে আমলকির রস ব্যবহার করলে আপনার ত্বক ভালো থাকবে।

চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার

চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার
চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার

চুলের যত্নে আমলকি যে কতটা উপকারী তা অবশ্যই কারো অজানা নয়।
এটি চুলের যত্নে যেভাবে ব্যবহার করতে হয় এটিও সবার জেনে রাখা জরুরি।

চুল পড়া সবার একটা কমন সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণে আমলকি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এজন্য বিভিন্ন ভাবে আমলকি ব্যবহার করা যায়।

✓ এক চামচ আমলকির রস, এক চামচ মধু ও দু চামচ টক দই একত্রে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এটি চুলে মেখে নিন ও ৩০ মিনিট রেখে দিন।এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন।

✓সরাসরি আমলকির রস চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে রেখে দিন ১০-২০ মিনিট। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে ‌।

✓আমলকির তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করলে চুলের ফলিকল মজবুত হয় ও চুল পড়া বন্ধ হয়।

যাদের অকালে চুল পেকে যাচ্ছে তারা আমলকি হেয়ার ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য কয়েকটি আমলকি কেটে পানিতে দিয়ে আধাঘণ্টা ফুটিয়ে নিন। ফুটে গেলে এটিকে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, আপনার পাকা চুলে কালোভাব এসে পড়বে।

আমলকিতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট চুলের খুশকি দূর করে ও বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে তা নিরাময় করে।

আমলকিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা চুলকে সিল্কি ও মজবুত করে। সেই সাথে চুলের আগা ফাটা রোধ করে।

আমলকি চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলকে শাইনি করে তোলে।

আমলকির রস পান করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল ঘন হয়।

আমলকি ব্যবহারে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে ও সহজে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায় না।

নারকেল তেল হালকা গরম করে এতে কয়েক ফোঁটা আমলকির রস মিশিয়ে চুলে মালিশ করলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে ও আগা ফাটা রোধ হয়।

খুশকি দূরীকরণে আমলকির রসের সাথে কয়েকটি তুলসী পাতা বেটে মিশিয়ে নিন ও চুলে ব্যবহার করুন। এতে ভালো ফল পাবেন।

আমলকির ব্যবহার চুলের যত্নে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে চুলের বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে এর ব্যবহার অনেক ব্যাপক। তাই এটি চুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ বহেড়ার খাওয়ার উপকারিতা এবং চুলের যত্নে বহেড়ার ব্যবহার

আমলকির তেল

আমলকির তেল
আমলকির তেল

চুলের যত্নে আমলকির তেলের ব্যবহার ব্যাপক। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির আমলকির তেল পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেকে ঘরোয়াভাবে আমলকির তেল তৈরি করে নেন। ঘরোয়া ভাবে তৈরি করা আমলকির তেল সম্পূর্ণ অরগানিক হয় বলে এর উপকারিতা অনেক। চলুন জেনে নেয়া যাক ঘরে কিভাবে তৈরি করবেন আমলকির তেল।

যা যা লাগবে:

আমলকি -১০/১৫ টি
নারকেল তেল-¼ কাপ
কারি পাতা – ¼ কাপ
ভিটামিন ই ক্যাপসুল – ৫ টি
তিলের তেল – ৩ কাপ

যেভাবে তৈরি করবেন

আমলকি ভালো মতো ধুয়ে নিন। ছুরি দিয়ে কেটে শাস আলাদা করে বিচি ফেলে দিন। কারি পাতা ও ¼ কাপ নারকেল তেলের সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন মিহি করে।

একটি কড়াই চুলাতে দিয়ে এতে ৩ কাপ তিলের তেল দিয়ে আমলকির মিহি মিশ্রণ দিয়ে কম আঁচে নাড়তে থাকুন। প্রায় ৪৫ মিনিট পর রং পাল্টিয়ে গেলে নামিয়ে ৮ ঘন্টা ঢেকে রাখুন।এরপর একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। তৈরি হয়ে গেল আমলার তেল। এই তেল আপনি চাইলে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। চুলের যত্নে এই তেল খুবই ভালো। ভারতীয়রা এই তেল বেশি ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এই তেল চুলের জন্য সবচেয়ে বেশি উপাকারি।

আমলকির সিরাপ

আমলকির সিরাপ

আমলকি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ভালো তা আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি। অনেকে সরাসরি আমলকির রস বা গুঁড়ো খেতে পারে না। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আমলকির সিরাপে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ কোম্পানী আমলকির সিরাপ বাজারে নিয়ে এসেছে। তবে অবশ্যই এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। চলুন তাহলে এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক…

উপকারিতা:

✓ যাদের খাবারে রুচি নেই তাদেরকে ডাক্তার আমলকির সিরাপ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।

✓দেহে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দিলে আমলকির সিরাপ খাওয়া যেতে পারে।

✓আবার অনেকে মোটা হওয়ার জন্য এই সিরাপ সেবন করে থাকেন।

✓আমলকির সিরাপ হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

অপকারিতা:

উপকারিতার পাশাপাশি আমলকির সিরাপ সেবনে বেশ কিছু সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। যেমন:

✓এই সিরাপ সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

✓এটি দীর্ঘদিন ধরে সেবন করার পর হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলে ঠোঁট ও জিহ্বা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

✓এটি অতিমাত্রায় সেবনের কারণে স্বাস্থ্যহানি ও ঘটতে পারে।

আমলকি রসায়ন

আমলকির বিভিন্ন ধরনের সিরাপের মধ্যে “আমলকি রসায়ন” একটি। এটি কাঁচা আমলকির নির্যাস দ্বারা তৈরি একটি ভিটামিন সিরাপ। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সিরাপ। এটি শতভাগ ক্যামিক্যাল মুক্ত ও প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি সেবনের ফলে যা যা উপকার পাবেন তা নিচে দেওয়া হলো:

  • এটি সেবন করলে বুকের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
  • খাওয়ায় অরুচি , ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দূর করে।
  • হজমে দূর্বলতা দূর করে।
  • খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি করে ।
  • গ্যাসজনিত পেট ব্যথা দূর করে।তবে অবশ্যই এই সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। তা না হলে সমস্যা হতে পারে।

আমলকির অপকারিতা

আমলকির এতো গুণাগুণ থাকার পর ও এর কিন্তু কিছু অপকারিতা ও আছে। অতিরিক্ত আমলকি খেলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত…

এতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি অতিরিক্ত সেবনে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: পেট ব্যথা, পেট খারাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।

এটি ঠান্ডা ধাঁচের হওয়ায় এটি অতিরিক্ত খেলে সর্দি কাশির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

এতে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে কিডনি রোগীদের জন্য এটি কম খাওয়াই ভালো।

অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের আমলকি না খাওয়াই ভালো।

আমলকির প্রভাবে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।

পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হতে পারে।

তাই পরিমিত পরিমাণে আমলকি খাওয়া উচিত এবং দিনে ২ টার বেশি আমলকি না খাওয়াই ভালো।

Categories
মেডিসিন

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা

আজকে জানবো ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা। ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট হলো ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি এর সমন্বয়ে তৈরি একটি ট্যাবলেট যা সাধারণত সব বয়সী মানুষ খেতে পারে যদি ক্যালসিয়াম এর অভাব থাকে। ক্যালসিয়াম হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রো মিনারেল, যা আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। মূলত সব খনিজ উপাদানের মধ্যে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি; যার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগ হাড় ও দাঁতের ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের সাথে যুক্ত থাকে। আজ আপনাদেরকে আমরা ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট সম্পর্কে জানাবো। আপনারা আজ জানবেন –

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের অপকারিতা
ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেলে কি হয়
ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের নাম ও দাম
শরীরে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বেশি খেলে কি হয়

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার সময় তো এত সব আলোচনা জানতে আমাদের আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট সব বয়সী মানুষ খেতে পারলেও অযথা কারণে এটি গ্রহণ করার কোনো দরকার হয় না। আপনার শরীরে যখন ক্যালসিয়াম আর ডি এর অভাব হবে তখনই আপনি এটি গ্রহণ করবেন। একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে তার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়াম আছে কি না তা চেক করে নিতে হয়,নয়তো নবাগত বাচ্চা ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগবে এবং মায়ের শরীর ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। আসুন দেরি না করে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হই-

১৷ হাড়ের সমস্যার সমাধান করে: অপ্রাপ্তবয়স্কে যাদের হাড় ভেঙে গেছে, হাড়ের ক্ষয় হয়ে গেছে,হাড়ের ঘনত্ব কমে গেছে বা হাড় বেঁকে গেছে তাদের জন্য ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়া খুব জরুরী। ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট হাড়ের গঠন বৃদ্ধি করে ও হাড় শক্ত, মজবুত করতে সাহায্য করে।

২৷ মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে: হাড় ক্ষয় হলে মাংসপেশীর ব্যথা হবে এটাই স্বাভাবিক মাংসপেশী ব্যথা চিরতরে দূর করতে ও শরীরে পর্যাপ্ত ডি তৈরির জন্য ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট গ্রহণ করা জরুরি।

৩৷ দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: হাড় ছাড়াও দাঁতেও কিছু পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। দাঁত মজবুত ও শক্তিশালী করতে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের জুরি নেই।

৪৷ হরমোনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে: ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হরমোন উৎপাদন ,হরমোনের ব্যালেন্স রক্ষা করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মহিলাদের যখন মেনোপোজ হরমোনের ক্ষরণে কমে যায় তখন হাড় ক্ষয় হতে পারে। তাই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে সব সময় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বা ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেতে হবে।

৫৷ বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি বাড়াতে: বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি সাধারণত ছোটবেলাতেই বেশি হয়। হাড় ,পেশির যখন বৃদ্ধি হবে তখনই তো শারীরিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। এই শারীরিক বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পুষ্টি দরকার। ক্যালসিয়াম ও ডি একসাথে বাচ্চাদের গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যেসব বাচ্চা খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান পায় না তাদের জন্য সাপ্লিমেন্ট খাওয়া খুবই ভালো।

৬৷ বাচ্চাদের জন্য: ক্যালসিয়াম অভাবজনিত রোগ রিকেটস এবং বৃদ্ধদের অভাবজনিত রোগ অস্টিওপ্যোরেসিস সমস্যাআর সমাধান আগে থেকে নিতে হলে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বা প্রয়োজনে ট্যাবলেট খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট

গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মা চেষ্টা করেন নবাগত সন্তানের যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করতে। গর্ভধারণের পূর্বেই মায়ের শারীরিক অবস্থা (অর্থাৎ শারীরিকভাবে মায়ের শরীরে সব পুষ্টি উপাদান যথাযথ আছে কি) জানা খুব জরুরী। তার মধ্যে একটি হলো মায়ের ক্যালসিয়াম ও ডি এর অভাব আছে কি না।

যদি গর্ভধারণের আগে জানা সম্ভব না হয় এবং পরে এসে বুঝতে পারেন মা ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগছেন এমতাবস্থায় মায়ের জন্য ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। এখন আসি কেন গর্ভাবস্থায় মাকে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেতে হবে সেই নিয়ে। গর্ভাবস্থায় যদি অপুষ্টিতে ভোগে তবে সন্তান মা থেকে সঠিক পুষ্টি পাবে না, ফলে সন্তানের হাড়ের সমস্যা যেমন হাড় বাঁকা, সহজে ভঙ্গুর হয়ে পড়া, হাড়ের ঘনত্ব কম হওয়া, পেশির সংকোচন প্রসারণের ব্যর্থতা ইত্যাদি হবে। এছাড়াও সন্তানের হরমোনাল সমস্যা, কম ওজন দেখা যাবে। এই সমস্যাগুলো দূর করতে গর্ভাবস্থায় মাকে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়া খেতে হবে এবং শিশু জন্মের পরও মাকে সেটা চালিয়ে যেতে হবে কিছুদিন।

গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় মাকে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা ভুল ডোজ খাওয়ানো হলে সন্তানের উপর তার প্রভাব পড়বে। সন্তানের সুস্থতার প্রতি লক্ষ করে গর্ভাবস্থায় মাকে সচেতন হতে হবে প্রতিটি খাবার খাওয়ার সময়, তেমনিভাবে ঔষধ খাওয়ার সময়ও সচেতন থাকা জরুরি।

গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হলো:- মায়ের বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তাহলে মাকে ১০০০ মি.গ্রা এর ট্যাবলেট খেতে হবে। মায়ের বয়স যদি ১৮ এর বেশি হয় তবে ১০০০ -১৩০০ মি.গ্রা এর ট্যাবলেট খেতে হবে। মূলত মা কিরূপ অপুষ্টিতে ভুগছেন সেই অনুযায়ী তাকে ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। দেখা যেতে পারে উপরোক্ত পরিমাণের চেয়ে কম বেশি ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের প্রয়োজন হতে পারে মায়ের ওজন, উচ্চতা অনুযায়ী। তবে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার আগে গর্ভবতী মাকে অবশ্যই নিকটবর্তী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার অপকারিতা

সকল জিনিসের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি কমবেশি অপকরিতাও থাকতে পারে এই বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে। না জেনে বুঝে কোনো ঔষধ বা ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়। চলুন তাহলে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হই।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের অপকারিতা বললে আসলে তেমন কিছু নেই, তবে ট্যাবলেটটি গ্রহণ করলে এক এক জনের শরীরে এক এক রকম কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলো হলো:

  • বমি বমি পাওয়া ও দুর্বল লাগা।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হওয়া।
  • মাথাব্যথা ও শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা অনুভব করা।
  • প্রেসার কম বেশি হওয়া, প্রস্রাবের সমস্যা হওয়া।

উপকারিতা জানার পাশাপাশি অপকরিতা জানলে সতর্ক থাকা যায়। তাই দুটোই জানতে হবে।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেলে কি হয়?

ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে এক্টিভ ফর্ম ভিটামিন D3 এর সমণ্বয়ে এই ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট তৈরি করা হয়। এখন আপনি ভাবতেই পারেন অন্য সব ভিটামিন আর মিনারেল বাদ দিয়ে কেন এই দুইটি উপাদান দিয়েই ট্যাবলেট বানানো হয়েছে এর উত্তরটা জানা খুব জরুরী, তা হলো- আপনার শরীরে যদি ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তখন আপনার হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। যাদের ক্যালসিয়াম ও ডি এর অভাব ক্যালসিয়াম জনিত রোগ আছে তাদের জন্য ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলা দুষ্কর।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর নাম ও দাম

বাজারে নানা ধরনের ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এই নিয়ে আপনি একটু বিভ্রান্ত হতে পারেন প্রথমে । তবে কিছু বেসিক তথ্য জানা থাকলে আপনি নিজেই বুঝবেন আপনি কোনটা কিনবেন। ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে এক্টিভ ফর্ম অর্থাৎ শরীরে দ্রুত শোষণ হয় বা ভালো শোষণ হয় হলো ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও ক্যালসিয়াম সাইট্রেট। আর ভিটামিন ডি এর মধ্যে সবচেয়ে এক্টিভ ফর্ম হলো D3, যাকে কোলেক্যালসিফেরল বলা হয়। আপনি বাজারে গিয়ে সবার আগে দেখবেন এই উপাদানগুলো কোন ট্যাবলেটে আছে।

এছাড়াও আমাদের আজকের আর্টিকেলে কিছু ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের নাম আপনাদের জানাবো যা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অর্থাৎ মানুষের কাছে চাহিদা বেশি। ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের কয়েকটি নাম ও তাদের বর্তমান দাম হলো-

১৷ Calbo-D Tablet: Calbo -D Tablet টি মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর একটি পণ্য।বেশিরভাগ সময় এটি ৩০০-৩৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। আর এই প্যাকেটে সাধারনণত ৩০ পিস করে থাকে প্রতিটি পিসের দাম ১০-১৫ টাকা করে। তবে জায়গা ও ফার্মেসি অনুযায়ী দামের কম বেশি হতে পারে এবং কম পিচ কিনলে দামটাও বেশি রাখে। আপনি যদি প্যাকেটসহ কিনেন তাহলে দাম কম পাবেন।

২৷ Caldical-D Tablet: Caldical-D Tablet টি হলো জিসকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর একটি পণ্য। এটিও সাধারণত পিস ৭-১০ টাকা করে রাখে।প্রতিটি প্যাকেটে ১৫ বা ৩০ বা ৫০ টি করে থাকে এবং সেই অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়।

৩৷ Calbon- D Tablets: Calbon-D Tablets টি হলো এরিস্টোফার্মা লিমিটেড এর একটি পণ্য। এই কোম্পানির ঔষধটি প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ৭-১০ টাকা করে রাখে। বিভিন্ন ফার্মেসি অনুযায়ী দামের ভিন্নতা হতে পারে।

৪৷ Calcin-D Tablet: Calcin-D Tablet টি হলো রেনেটা ফার্মা লিমিটেডের একটি পণ্য। মূলত ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেটের দাম প্রায় সব কোম্পানির কাছাকাছিই; দামের তেমন কোনো ভিন্নতা নেই। এই কোম্পানির ট্যাবলেটটি প্রতি পিস ৮-১০ টাকা করে বিক্রি হয়।

এখানে উল্লিখিত সব কোম্পানির ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট-গুলোর দাম বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম হতে পারে; সাথে অনলাইনেও দামের অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও বাজারে আরো বিভিন্ন কোম্পানির ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট আছে, তবে এই উপরোক্ত কয়েকটি বাজারে বেশি প্রচলিত তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলে এই কয়েকটা ট্যাবলেটের কথা বলা হয়েছে। আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ দোকানে যেসব ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট আছে সেগুলোও খেতে পারেন।

শরীরে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট হলো এক ধরনের সাপ্লিমেন্ট যেটা খাদ্য তালিকা বাদ দিয়ে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। খাদ্য তালিকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি না পেলে তবেই ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেতে হবে। শরীরে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির অনেক উপায় আছে। আপনাদের কাছে আজ সেটা নিয়েও কথা বলবো যাতে আপনারা খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন। ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়গুলো হলো-

  • দুধ খেতে হবে ও দুগ্ধজাতীয় অন্যান্য খাবার যেমন: দই, ছানা,পনির, মাখন,দই এর লাচ্ছি ইত্যাদি।
  • বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার যেমন চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কুমড়োর বিচি, শিমের বিচি,চিয়া সিডস ইত্যাদি।
  • যে সকল মাছ সামুদ্রিক বা তৈলাক্ত সেগুলো খেতে হবে ,যেমন: পাঙ্গাস মাছ, ইলিশ মাছ, কোরাল মাছ ,স্যালমন ,রূপচাঁদ মাছ ইত্যাদি।
  • সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ফলের রস বা শরবত খেতে হবে।

উপরোক্ত খাবারগুলো ছাড়াও আরো খাবার আছে যা আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করবে। তবে চেষ্টা করবেন সব সময় সব ধরনের তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার পাশাপাশি উপরোক্ত খাবারগুলো খাওয়ার।

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট বেশি খেলে কি হয়?

আমরা সবাই জানি যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে শারীরিক নানা সমস্যা হতেই পারে। চলুন জেনে নিই শরীরে ক্যালসিয়াম ডবি ট্যাবলেট বেশি হলে কি হয়-

  1. ক্যালসিয়ামের পরিমাণ রক্তে বেড়ে গেলে একে হাইপারকেলেসিমিয়া বলে।হাইপারকেলেসিমিয়া হলে বমি বমি ভাব, দুর্বলতা বোধ, ক্লান্তি অনুভব হয়। হাত, মুখ শুকিয়ে যায়।
  2. অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খেলে হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হয়।
  3. বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম কিডনি ফিল্টার করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় কিডনিতে পাথর ও কিডনিতে সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের ফলে।
  4. আবার অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খেলে রক্তচাপের পরিবর্তন হয় আবার অনেকে মনে করেন কারো কারো হার্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কিভাবে বুঝবো অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়েছি কিনা বা কম খাচ্ছি কি না। কারণ অতিরিক্ত খেলেও সমস্যা হয় কম খেলেও সমস্যা হয়। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন। আবার যেসব মায়েরা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান তাদের বেশি ক্যালসিয়াম খেতে হয়। সাধারণত ১০০০ মিলিগ্রাম থেকে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় ও প্রসূতি মাকে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিবিশেষে এর পার্থক্য হতে পারে। খাবার থেকে এই চাহিদা পূরণ না হলে ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ ছোটদের কাশির সিরাপ এবং খাওয়ার নিয়ম

ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার সময়

আপনি যতই বিজ্ঞ হোন না কেন ঔষধ বা ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে খাবেন। আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য অনুযায়ী যে পরি পরিমাণ ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খেতে বলা হয়েছে আপনি সেই পরিমাণ ট্যাবলেটই খাবেন। ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট কোনো চুষে খাওয়ার ট্যাবলেট নয়। এটি পানি দিয়ে সাধারণ ঔষধের মতো খেতে হয়। ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার ভালো সময় হলো- রাতে বা সকালে খাওয়ার পর খেতে পারবেন। এছাড়াও খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ও পরে অন্যান্য ঔষধ খাবেন না কারণ এতে শোষণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

পরিশেষে এটাই বলবো যে, আপনি আমাদের আর্টিকেল থেকে ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট এর উপকারিতা ও বিস্তারিত তথ্য জেনে কারো পরামর্শ ছাড়াই এটি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন। কেননা আপনার শরীরে কি পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি দরকার তা একজন ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞই বলতে পারবেন। তাই শারীরিক কোনো পরীক্ষা না করে বা অভাবজনিত লক্ষণ না থাকা সত্বেও ক্যালসিয়াম ডি ট্যাবলেট খাবেন না, আর যদি খান তবে খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পরবর্তীতে নতুন কোনো টপিক নিয়ে আবার আপনাদের কাছে আসবো সেই পর্যন্ত আমাদের আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।

Categories
খাদ্য তালিকা

ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার তালিকা

দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রধান নিয়ামক হলো তিনবেলার সুষম খাবার তালিকা । আমাদের খাবারে সাধারণত ৬টি উপাদান থাকে।সেগুলো হলো শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানি। এই খাদ্য উপাদানগুলো পরিমাণ মতো থাকলে সেই খাবারগুলোকে সুষম খাবার বলা হয়ে থাকে। তবে শুধু সুষম খাবার গ্রহণ করলেই স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এমনটি কিন্তু না, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আপনাকে এই সুষম খাবারগুলো খেতে হবে সময়মতো। আর তাই সঠিক একটি সুষম খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে। যে তালিকায় সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার সঠিক পরিমাণমত রাখতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সুষম খাবারের তালিকাগুলো –

ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার তালিকা

পালং শাকঃ–পালংশাক এমন একটি সুষম খাবার যেটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনারা জানেন পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে, যেটি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এই ভিটামিনগুলো আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেইসাথে পালং শাক আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরীতে সহায়তা করে থাকে।

কমলালেবুঃ– আর একটি ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার হলো কমলালেবু। এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি ত্বকের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

কমলা
কমলা লেবু

গাজরঃ– সুষম খাবারের মধ্যে গাজর হলো অত্যন্ত উপকারী শরীরের জন্য। আপনারা জানেন গাজরে থাকে ২৮ গ্রাম ভিটামিন কে এবং এই সুষম খাবারটি শরীরের বিভিন্ন রোগ দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে যুক্ত গাজর আমাদের নার্ভাস সিস্টেম শক্ত রাখে। তাই আমরা যদি দৈনিক অন্তত এক গ্লাস গাজরের রস সুষম খাবারের তালিকায় রাখি, তাহলে এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

গাজর
গাজর

মিষ্টি আলুঃ- ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় আমাদেরকে মিষ্টি আলু অবশ্যই রাখা উচিত।কেননা মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন ই, যা আমাদের দেহের টিস্যু ও ফুসফুস গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেহেতু মিষ্টি আলু একটি সুষম খাবার এবং এটিতে রয়েছে ভিটামিন ই তাই, ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় এটি আমাদের অবশ্যই রাখা রাখা জরুরি। সেইসাথে আপনারা জানেন আরও অনেক সুষম খাবার রয়েছে যেমন- আপেল, দুধ,ডিম,লেবু,সবজি,মাছ, টমেটো ইত্যাদি। এগুলোতে বেশি পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন, যার ফলে আমাদের ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় প্রতিদিন এসব খাবার রাখা উচিত।

সকালের সুষম খাবার

সকালের সুষম খাবার আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের পাকস্থলী খালি থাকে। তাই আমাদের সবার প্রথমে যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো ঘুম ভাঙার পর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা খাওয়া সেরে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই খালি পেটে থাকা যাবে না। তবে সকালের খাবারটি যেন সুষম হয়, সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই সকালবেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। সকালের খাবারে ভাত সুষম খাবারের তালিকায় রাখা যায়,কারণ এতে থাকা শর্করা আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় শর্করার চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন রুটি, পরোটা,পাউরুটি, কিংবা খিচুড়ি। আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন দুধ, ডিম, ২/৩ পিস মাংস ও সবজি।
আরোও পড়ুনঃ শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

দুপুরে সুষম খাবার তালিকা

আমরা সাধারণত সকালের নাস্তার পর দুপুরের খাবার খেতে লেট করে ফেলি।কিন্তু আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে খাবারের টাইম মেইনটেইন করতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সকালের নাস্তা যেন ১০টার আগে করা হয় এবং দুপুরের খাবার যেন ২টার মধ্যে খাওয়া হয়। আমাদেরকে দুপুরের খাদ্য তালিকায় এক কাপ ভাত এর সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ এবং মাংস ও সবজি খেতে হবে। এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ এবং প্রোটিন। তাই আমরা যদি এই খাবারগুলো প্রতিদিন দুপুরের সুষম খাবার তালিকায় রাখি, তাহলে আমাদের শরীরের আমিষ ও প্রোটিন এর পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব।
আরোও পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

রাতের সুষম খাবারের তালিকা

আমরা অনেকেই আছি যারা রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। কিংবা অনেকেই আছেন রাতে কম খাবার খেয়ে থাকি। আমাদেরকে এই অভ্যাসটি পরিবর্তন করতে হবে, কারণ রাতের খাবার না খেলে দৈনিক প্রতি বেলার প্রাপ্ত যে পুষ্টি চাহিদা শরীরের জন্য প্রয়োজন সেটি পূরণ হয় না। তাই আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিন রাত ১০ টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া। রাতের সুষম খাবারের তালিকায় আমাদেরকে রাখতে হবে এক কাপ ভাত কিংবা রুটি। আর এর সাথে রাখতে হবে ডিম, ডাল বা ১/২ পিস মাছ বা মাংস, সালাদ এবং সবজি।

আমরা অনেকেই আছি যারা মাছ, মাংস খাওয়ার প্রতি অনিহা প্রকাশ করি। আমাদেরকে কিন্তু এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। কেননা এই খাদ্যগুলো কম গ্রহণ করলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমতে শুরু করে এবং শরীরের শক্তি কমে যেতে থাকে। এছাড়াও শরীরের পুষ্টির পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিন সুষম খাবারের তালিকায় প্রাণিজ প্রোটিন, আমিষ, শর্করা, ভিটামিন ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে রাখা এবং সময়মত গ্রহণ করা।

Categories
খাদ্য তালিকা

কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

কোষ্ঠকাঠিণ্য একটি কষ্টসাধ্য মলাশয়ের মলত্যাগ জনিত সমস্যা। কোষ্ঠ ও কাঠিণ্য দুটি পৃথক শব্দ যেখানে কোষ্ঠ শব্দের অর্থ মলাশয় আর কাঠিন্য মানে মল ত্যাগে সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিণ্য শব্দের অর্থ দাঁড়ায় মলাশয়ের মল পরিপূর্ন ভাবে ত্যাগ করতে ব্যর্থ হওয়া। যখন কোন ব্যাক্তি ফাইবার সমৃদ্দ্ব খাবার খাবার পর ও সপ্তাহে অন্তত তিন বার সঠিক ও স্বাভাবিক ভাবে মল ত্যাগে ব্যর্থ হয় তখন তিনি যে পীড়ায় ভোগেন সেটাই কোষ্ঠ কাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

অতিরিক্ত তেল, জাল, ফাস্টফুড ও মশলা যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, ধূমপান করা, অতিরিক্ত শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া, পানি কম খাওয়া, আঁশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও ভিবিন্ন রোগ ব্যাদি যেমন: ডায়াবেটিস, অন্ত্রনালীর ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড এর সমস্যা, মস্তিষ্কে টিউমার বা রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত শোয়ে থাকা এবং কাপনিজনিত রোগ এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া ভিবিন্ন ধরণের ওষুধ সেবনে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন: পেপটিক আলসার এর ওষুধ , ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, পেট ব্যথা , খিঁচুনি ও উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ খেলে তাছাড়া ক্যালসিয়াম,অ্যালুমিনিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।তাই আমাদের নিয়ম করে কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার গ্রহণ করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণসমূহ

পেট ব্যথা, মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যথা ও জ্বালা পোড়া করা, মলত্যাগের চাপ অনুভব করা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ মলত্যাগ না হওয়া, শক্ত শক্ত শুস্ক ও ছোট আকারের মল ত্যাগ হওয়া।

অন্তত দুই দিনে একবার পায়খানা না হওয়া। বেশি সময় নিয়ে পায়খানা করা, পেট ফুলে থাকা, পানের ডগা আঙ্গুল বা সাপোজিটরি পায়খানা করা, তলপেট ব্যথা করা ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।

কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়োজোষ্ঠ আমরা সবাই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকি। অনেকেই এ ভুল ধারণা টি মনে পোষণ করে থাকেন যে কোষ্টকাঠিন্য শুধু ওষুধ সেবনের মাদ্ধমে ঠিক করা যায়। সঠিক খাদ্যবাস ও খাবার নির্বাচন কোষ্টকাঠিন্য নিরাময় ও প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার আর ভবিষতে ওষুধ ও লাগবে না। চলুন জেনে নেই কোষ্টকাঠিন্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।

১. কলমিশাক: কলমিশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুব এ কার্যকরী ।কলমিশাকের পাতা ও কাণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে। এই ফাইবার খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে থাকে। কলমিশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর ভালো থাকে।

২. কলা: কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । পাকা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা এর পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে। কাঁচা কলা তরকারি হিসাবে রান্না করে খেলেও কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়।

৩. গাজর: গাজর একটি পরিচিত সবজি যা আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় এই সবজিটি প্রাকৃতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ সমৃদ্ধ। একটি আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে।

গাজরের ছবি
গাজরের ছবি

৪. শসা: শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ডায়াটেরি ফাইবার যা শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহা ঔষধ। শসার বেশির ভাগ প্রায় ৭০ ভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

৫. পেয়ারা: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ওজন কমাতে পেয়ারা খুব এ ভালো কাজ করে। তাই যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পেয়েরা খেতে পারেন।পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কি এবং মিনারেলস।

৬. কিসমিস: কিসমিস প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি করে কিসমিস খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিসমিস কোষ্টকাঠিন্য কমাতে খুব কার্যকরী। বাজার থেকে ভাল গুণসম্পন্ন কিসমিস কিনে আনবেন। কেননা অনেক দোকানদার কিসমিসে চিনি মিশিয়ে দেয়।

৭. এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী: নিয়মিত এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জুস বানিয়ে খান। এতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও মিনারেলস রয়েছে যা সাস্থের জন্য অতন্ত্য উপকারী। নিয়মিত এলোভেরা জুস পান করে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। অবশই বাজার থেকে কেনা এলোভেরা জুস যেগুল প্যাকেট এ পাওয়া যায় সেগুলো পরিহার করবেন।

ঘৃতকুমারী এর ছবি
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী এর ছবি

৮. লেবুর রস: লেবুর রস নিয়মিত গ্রহণ করলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে আধা চা চামচ নুন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন আপনার রুচি অনুযায়ী । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করবেন দ্রুত ফল পেতে প্রতিদিন দুইবার পান করুন এই মিশ্রণ।

9. ইসবগুলের ভুসি: ইসবগুলের ভুসি কোষ্টকাঠিন্য দূর করার মহাঔষধ। অনেকেই স্বাদের জন্য ভুসি খেতে চান না। কিন্তু এর অনেক গুনাগুন রয়েছে। ইসুবগুলের ভুসি রক্তে চিনির পরিমান কমায় এবং হজমে সহায়তা করে। তাই কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে অবশই নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসির শরবত বানিয়ে খাবেন। ক্যাস্টর অয়েল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। আপনি চাইলে ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

10. মধু: প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলেই দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট পরিষ্কার না হাওয়ার মতো সমস্যা একেবারে কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে। ফলে মধু খাওয়া মাত্র পেট পরিষ্কার হতে শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রে দিনে ৩ বার, এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ করে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।

11.পালং শাক: প্রতিদিন এই শাকটি খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। তাই যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে হয় রান্না করে পালং শাক খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন অল্প দিনেই কষ্ট কমে যাবে। প্রসঙ্গত, আরেক ভাবে পালং শাককে কাজে লাগানো যেতে পারে। এক গ্লাস পানির সঙ্গে ১ গ্লাস পালং শকের রস দিনে দুবার করে খেলে কনিস্টেপেশনের কোনও নাম গন্ধই থাকে না।

12. আঙুর: এতে উপস্থিত অদ্রবণীয় ফাইবার, পেট পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। তাই বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক না হলেই দিনে হাফ বাটি কাঁচা আঙুর অথবা আঙুরের রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

13.তিসি: এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পেট পরিষ্কার রাখতে নানাদিক থেকে সাহায্য করে। তাই পটি পরিষ্কার হোক, বা না হোক, প্রতিদিন তিসি বীজ জলে গুলে পান করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, এক গ্লাস জলে ১ চামচ তিসি বীজ গুলে কম করে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন। রাতে শুতে য়াওয়ার আগে পান করুন সেই জল। দেখবেন সকালে উঠে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।পয়ঃনিষ্কাষণে কোনো সমস্যা থাকবে না।

14. তিলের বীজ: তিলের বীজ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এতে আছে অত্যাবশ্যকীয় তেল যা শরীরের পক্ষে ভালো। এই বীজ পেট পরিষ্কার করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

তিল বীজ এর ছবি
তিল বীজ এর ছবি

আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা
আরোও পড়ুনঃদ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট টি পরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অব্যশই কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার এর বিকল্প নেই। আমরা আজকে যে খাদ্য তালিকা উল্লেখ করেছি তা নিয়মিত গ্রহণ করবেন। এছাড়া অবশই পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করবেন। বাইরের ফাস্ট ফুড ,তেল চর্বি সম্ভব হলে এড়িয়ে যাবেন নাহলে পরিমানে একদম কম গ্রহণ করবেন।
আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট এর উপদেশ মেনে চললে আপনাকে আর কোষ্টকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে হবে না।

Categories
ভেষজ গাছ

বাসক পাতার উপকারিতা

আমাদের প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গাছ, যেগুলো শুধু পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করে না, সাথে বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপকার করে।‌ আজকে এই বাসক পাতার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবো। আদিকালে মানুষ যেকোন রোগ নিরাময়ে ভেষজ চিকিৎসা সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকতেন, কালের বিবর্তনে এর চাহিদা মানুষের কাছে কিছুটা কমে গেলেও হারিয়ে যায় নি সেসব ঔষধি গাছের গুন।

আমাদের সকলেই যেসব উপকারী গাছের কথা জানি সেগুলো হল বাসক, নিম, তুলসী, অর্জুন ইত্যাদি। তবে আজকে যে গাছটি নিয়ে বলতে যাচ্ছি তা হলো ” বাসক গাছ” যাকে কোনভাবেই বাদ দেয়া যায় না।আদিযুগ থেকে বাসক গাছ বহু গুণে গুণান্বিত। এটি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অন্যতম ভেষজ উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম “Justicia Adhatoda” এবং ব্যাবসায়িক নাম বাসক। কান্ড, পাতা , গাছের ছাল , ফুল সবকিছু মূল্যবান ভেষজ চিকিৎসা সেবা প্রদানে ভূমিকা পালন করে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যবাসে যদি এক অথবা দুইটি বাসক পাতা খাওয়া যায় তবে শরীরে এটি বিভিন্ন রোগের উপশম হিসাবে কাজ করবে। এছাড়া ঔষধ হিসাবে এর বহূবিধ ব্যাবহার রয়েছে।

বাসক পাতার উপকারিতা

বাসক গাছের পাতাটির বহুবিধ ব্যবহার এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।‌ বাসক পাতার মধ্যে ভ্যাসিনিন‌ নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা অনেক রোগের ঔষুধে ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও নানা ধরনের এসেনসিয়াল অয়েল রয়েছে। বাসক পাতার উপকারিতার কথা বলতে গেলে যেসব রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এইগুলো

ব্যাবহার করা সেগুলো হল: বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুর পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে প্রায় সবারই ঠান্ডা, কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। এহ্মেত্রে যদি বাসক পাতার বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে । পুরানো সর্দি কাশি কমাতে বাসক পাতার রস সেবনে উপকার পাওয়া যায়। যেহুতু বাসক পাতার রস তিতা এই কারনে সাথে মধু মিশিয়ে খেলেও চলবে। মধু বরাবরই ঠান্ডার জন্য উপকারী। তবে এই হ্মেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায় এবং খাওয়ার পর অন্তত এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। তাছাড়া জ্বর হলে তাপমাত্রা কমাতে বাসক পাতা সাহায্য করে। শিশুদের পেটে কৃমি হলে বাসকের ছালের রস খাওয়ানো হলে বাসকের তিক্ততার কারণে কৃমি দূর হয়ে যায় ‌। শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করতেও বাসক পাতার ভূমিকা রয়েছে। এহ্মেত্রে বাসক পাতা শুকিয়ে ঐ পাতা চরুটের মতো পাকিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে সাহায্য করে।

যাদের খিচূনি রোগ রয়েছে তারা যদি বাসক পাতার রস নিয়মিত সেবন করে তাহলে খিচূনি রোগ দূর হয়ে যায়। আজকাল অনেকেরই ইউরিন ইনফেকশন (প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া) সমস্যা হয়ে থাকে, এহ্মেত্রে মেডিকেল চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যায়বহুল। কিন্তু মেডিকেল চিকিৎসা সেবার বিকল্প হিসেবে বাসকের ফুল বেটে ২/৩ চামচ ও ১/২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগের উপকার পাওয়া যায়। অনেকেরই দাদ বা চুলকানি সমস্যা থাকে। এই সমস্যা দূর করতে বাসকের কচি পাতার সাথে যদি কাঁচা হলুদ বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে চুলকানি সেরে যায়। জন্ডিস নিরাময়ে বাসক পাতার ভূমিকা রয়েছে।

বাসক পাতার বা ফুলের রস ১/২ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে জন্ডিস নিরাময়ে সাহায্য করে। অনেকেরই ভিটামিন এর অভাবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। দাঁতের এই সমস্যা দূর করতে যদি কেউ বাসক পাতা ছেঁচে পানিতে ফুটিয়ে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় কুলকুচি করে তাহলে ফল পাওয়া যায়। গলাব্যাথা বা কাশির সমস্যা থাকলে বাসক পাতার রসে‌ উপকার পাওয়া যায়। সৌন্দর্য বর্ধনে বাসক পাতার ব্যাবহার হয়ে থাকে। বাসকের রসের সাথে শংঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে মুখে লাগালে রং ফর্সা হয়। অনেকেরই শরীরের মধ্যে দুগন্ধ থাকে এই সমস্যা দূর করতে বাসক পাতার কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে দুর্গন্ধ দূর হয়।

আমাদের শরীরের মধ্যে রক্ত পরিস্কার না থাকলে মুখে ব্রন, পেটে সমস্যা, এলার্জি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বাসক পাতার রস নিয়মিত সেবন করলে রক্ত পরিস্কার হয়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীরের মধ্যে ব্যাথা বা কাজ করতে গিয়ে শরীরের কোন অংশে মাংস পেশীর মধ্যে টান লাগলে সেহ্মেত্রে চুন হলুদ করে এর সাথে বাসক পাতা বেটে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে অনেক মেয়েদেরই অনিয়মিত মাসিক সমস্যা থাকে অথবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, তলপেটে ব্যথা করে। এইজন্য বাসক পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাসক পাতার অবদান রয়েছে। গ্ৰামীন দরিদ্র নারীরা প্রতিদিন শত শত বাসক পাতা সংগ্রহ করে শুকানোর পরে ৩০/৪০ কেজি দরে বিক্রি করতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু গ্ৰামে যেমন: রংপুরের পীরগঞ্জের পানোয়া গ্ৰাম, জাহাঙ্গীরাবাদ, পাইতান, এনায়েতপুর, শাহপুর, কেশবপুর, শাহেদুপুর, নাসীরাবাদসহ অত্যন্ত পনেরোটি গ্ৰামে বাসক চাষ হয়।

বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম: যে গাছের গুন নিয়ে এতো কথা হয়েছে আসুন জেনে নেয়া যাক ঔষধ হিসেবে এই গাছের উপাদানসূমহ আমরা কি ভাবে খেতে পারি। বাসক পাতা গুনের কথা শুনতে যতটা মিষ্টি বা ভালো লাগবে খাবারের বেলায় তার উল্টো।‌বাসক পাতা প্রচন্ড তেতো হয়ে থাকে। নানাভাবে বাসক পাতা খাওয়া গেলেও বেশিরভাগ হ্মেত্রে ঔষধ হিসেবে বাসক পাতার রস খাওয়ানো হয়ে থাকে। অপরদিকে বাসক‌ পাতা গরম জলে ফুটিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস খাওয়ার হ্মেত্রে পাতা ভালো করে ধুয়ে বেটে নিতে হবে, প্রতি এক চামচ পাতার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলেও সেহ্মেত্রে উপকার পাওয়া যায়। যদি কেউ বাসক পাতার জল খেতে চায় ঐহ্মেত্রে পাতা ভালো করে ধুয়ে পানিতে ফুটিয়ে, পানি ঠাণ্ডা করে ছেঁকে খাওয়া উচিত।

বাসক গাছের চাষ পদ্ধতি

বাসক গাছটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে যেমন‌ ভারত, শ্রীলঙ্কা, কলোম্বিয়া, মালোশিয়াতে এই গাছটি পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাসক পাতার চাষ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সাবলম্বী হয়ে উঠেছে। বাসক পাতা চাষে আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয় না।সমতল ভূমিতে যেখানে লোকালয়ের উপস্থিতিতে এই গাছ জন্মে থাকে। যার ফলে গ্ৰামীন দরিদ্র মানুষজন বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে এই পাতা চাষ‌ করে অর্থ উপার্জন করতে সহ্মম হচ্ছে। বাসক গাছটি চাষের হ্মেত্রে ১/২ টি কাটিং গর্তে রোপন করতে হবে।

গর্তে পযাপ্ত পরিমাণ গোবর সার দিতে হবে। প্রথম‌ ছয় মাস থেকে পাতা সংগ্রহ করা যাবে। সংগ্ৰহ করার পরে ২/৩ ঘন্টা ছায়ায় রেখে পাতা শুকিয়ে নিতে হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে তিন মাস পর পর পাতা সংগ্রহ করা যায়।গ্ৰামীন দরিদ্র নারীরা প্রতিদিন শত শত বাসক পাতা সংগ্রহ করে শুকানোর পরে ৩০/৪০ কেজি দরে বিক্রি করতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু গ্ৰামে যেমন: রংপুরের পীরগঞ্জের পানোয়া গ্ৰাম, জাহাঙ্গীরাবাদ, পাইতান, এনায়েতপুর, শাহপুর, কেশবপুর, শাহেদুপুর, নাসীরাবাদসহ অত্যন্ত পনেরোটি গ্ৰামে বাসক চাষ হয়।

কেন বাসক পাতা ব্যাবহার করব: বাসক পাতার এতো উপকার কথা শুনে আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন পরবর্তীতে উপরিউক্ত কোন একটি সমস্যা হলে বাসক পাতার ব্যাবহার করবেন। বাসকের পাতা যেকোন রোগ নিরাময়ে ব্যাবহার করলে শরীরে তৎহ্মণাত কাজ করতে সাহায্য করে।বাসক পাতার মধ্যে হ্মারের পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে কোন পোকা মাকড় ধরে না, এমনকি ছত্রাক ও জন্মায় না যার কারণে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
আরোও পড়ুনঃ জানলে অবাক হবেন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পরি সমাপ্তি: প্রত্যেক জিনিস এর যেমন উপকারী দিক আছে তেমনি আছে কিছু অপকারি দিকও। ব্যাবহারকারীকে ব্যাবহারের বেলায় অপকারিতা জেনে ব্যাবহার করতে হবে। যেমন: প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে পেট খারাপ সহ বমি ভাব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাসক পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে। তেমনি রয়েছে বাসক পাতার মধ্যে এমন কিছু হ্মারীয় পদার্থ রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। বাসক পাতা বেশি খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায় তা ডায়েবেটিক হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এইজন্য বাসক পাতা সেবনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা আমাদের অসতর্কতা আমাদের অস্বােস্থ্যর কারণ হতে পারে।

Categories
মেডিসিন

সিপ্রোসিন সিরাপ কেনো খেতে হয় জেনেনিন

সিপ্রোসিন সিরাপ কেনো খেতে হয় আমরা অনেকেই জানি না। আজকের আলোচনায় থাকছে সিপ্রোসিন নিয়ে। ধরুন আপনার দেহে অনেকগুলি রোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে আপনাকে যেটি করতে হবে সেটি হলো সেই প্রতিটি রোগের জন্য খেতে হবে এক একটি ঔষধ। কিন্তু এটি কি আদৌও সম্ভব? আমরা মোটামুটি সকলেই জানি মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবনের ফলেও কিন্তু বাড়তি রোগ জন্মাতে পারে। এক্ষেত্রে সব রোগের সাথে একসাথে টেক্কা দিতে কাজ করবে সিপ্রোসিন সিরাপ। যে সিরাপ সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনার প্ল্যানিং সাজিয়েছি। এছাড়াও আজকের আলোচনায় বোনাস হিসেবে থাকছে সিপ্রোসিন আই ড্রপসহ বেশকিছু চোখ ও কানের ড্রপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমাদের আজকের এই আয়োজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে!

সিপ্রোসিন সিরাপ কি

মূলত সিপ্রোসিন সিরাপ হলো এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটিকে অনেকেই সিপ্রোসিন ড্রাই সাসপেনশনও বলে থাকে। বলে রাখা ভালো এই সিপ্রোসিন সিরাপে সক্রিয় উপাদান হিসাবে সিপ্রোফ্লক্সাসিনের আধিক্য রয়েছে। যা ব্যাকটেরিয়ার বেড়ে যাওয়ার হারকে থামিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।

আমাদের দেহে বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্ট, পাকস্থলী, অন্ত্র, ফুসফুস, হাড় এবং জয়েন্টগুলোতে যে নরম টিস্যুগুলি রয়েছে, সে নরম টিস্যুগুলিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মাত্রা রোধ করতে এটি ব্যবহৃত হয়। যার ফলে কমে যায় দেহের ৮০% রোগের পরিমাণ। সিপ্রোসিন সিরাপ কেনো খেতে হয় বা এর ব্যবহারকালীন সতর্কতা কি কি সে-সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

সিপ্রোসিন সিরাপ কেনো খেতে হয়

সিপ্রোসিন সিরাপ সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য জানতে পেরে ইতিমধ্যেই হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে, সিপ্রোসিন সিরাপটা আসলে কেনো খেতে হয় বা এর প্রয়োজনীয়তাটাই বা কি!

মূলত আপনার দেহে যদি বহুবর্ষজীবী, মৌসুমী এলার্জিক রাইনাইটিস, ঠান্ডা ছুলি, হাঁপানি উপসর্গ, লিভার রোগ, যকৃতের ডিসঅর্ডারস, আগম অ্যালার্জি, খাবার কারণে অ্যালার্জিক চোখ উঠা, ধারণক্ষমতা পরিবর্তন, রক্ত বা রক্তরস এলার্জি প্রতিক্রিয়া, ক্ষুধামন্দার রোগ থেকে থাকে তবেই আপনি এই সিপ্রোসিন সিরাপ ব্যবহার করতে পারবেন।

কেননা উপরে বর্ণিত প্রতিটি রোগের মূল কারণ হলো দেহের কোষে তৈরি হওয়া ব্যাকটেরিয়া। মূলত এই ব্যাকটেরিয়াকে তাড়াতে ব্যবহার করা হয় সিপ্রোসিন সিরাপ।

সিপ্রোসিন সিরাপ কিভাবে ব্যবহার করে

সিপ্রোসিন সিরাপ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানলে এর কার্যকারিতা আপনার দেহের উপর এফেক্ট ফেলতে পারবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে যেসব নিয়ম মানতে হবে সেসব নিয়ম হলো:

  • ব্যবহারে পূর্বে সিরাপটিকে আপনার ডাক্তার দ্বারা নির্দেশিত সিরাপ হিসেবে টেস্ট করে আনুন বা পরামর্শ নিন।
  • সিরাপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ঔষধের লেবেলের নির্দেশাবলী সাবধানে পড়ে নিন।
  • ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে দিনে ২ থেকে ৩ বার এটি ব্যবহার করতে থাকুন।

সিপ্রোসিন সিরাপ ব্যবহারে সতর্কতা কি

সতর্কতা হলো আমাদের নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ঔষধ গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও আপনাকে অবলম্বন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা। এবার আমরা একে একে জেনে নিবো সিপ্রোসিন ব্যবহারে সতর্কতাগুলি কি কি সে-সম্পর্কে।

আপনার যদি সিপ্রোফ্লক্সাসিন বা সিপ্রোসিন ড্রাই সাসপেনশন এর কোনো উপাদান রিলেটেড অ্যালার্জি থাকে তবে আপনি এই সিরাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

রিসেন্টলি আপনি যদি নিজস্ব রোগ সারাতে টিজানিডিন ঔষধ সেবন করে থাকেন তবে আপনি এই সিপ্রোসিন সিরাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

রিসেন্টলি আপনি যদি অন্যান্য কুইনোলন ঔষুধ যেমন: মক্সিফ্লক্সাসিন, নরফ্লক্সাসিন, অফলক্সাসিন বা নালিডিক্সিক অ্যাসিড গ্রহণ করেন তবে আপনি কোনোভাবেই সিপ্রোসিন সিরাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

স্কিলড চিকিৎসকের মতে স্তন্যপান করানো শিশুর সম্ভাব্য ক্ষতির সৃষ্টির কারণে এই সিপ্রোসিন সিরাপ বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ব্যবহার করা উচিত নয়।

বাচ্চার মায়েরা বিশেষ করে যাদের ক্ষেত্রে সিপ্রোসিন সিরাপ নেওয়া আবশ্যক তারা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় Ciprocin Dry Suspension ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

আপনি যদি গর্ভবতী হোন কিংবা মনে করেন আপনি গর্ভবতী হতে পারেন বা গর্ভাবস্থার পরিকল্পনা করছেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই সিপ্রোসিন সিরাপ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশে সিপ্রোসিন সিরাপের দাম কত

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিপ্রোসিন সিরাপ ২৫০ মিলিগ্রামের দাম মাত্র ১০০/-। যাদের এই সিরাপটি গ্রহণ করা বর্তমানে আবশ্যক হয়ে গেছে তারা চাইলে অনলাইনে কিংবা ঘরের কাছে কোনো ফার্মেসি থেকে সিরাপটি কালেক্ট করে নিতে পারেন।

চোখের ড্রপের নামগুলি কি কি

চোখের ড্রপের নামগুলি কি কি
চোখের ড্রপের নামগুলি কি কি

সিপ্রোসিন সিরাপের আলোচনা শেষ করার পর এবার আসি বোনাস পয়েন্টে। চোখের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে প্রত্যেকের প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার চোখে কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ দেবেন না। তবে কিছু প্রাইমারি ড্রপ সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো৷

লিউকিব্রিন: এটি মূলত চোখের ড্রপ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। যা সাধারণত চোখের উচ্চ চাপকে হ্রাস করতে সাহায্য করে। কার্বোনিক অ্যানহাইড্রেসের প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করা এই ড্রপ চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তবেই ব্যবহার করতে হবে।

আর্টিফিশিয়াল টিয়ার: চোখের জ্বালাপোড়া বেড়ে হলে এই ড্রপ ব্যবহার করা হয়। রোগীর কম্পিউটারের অত্যধিক ব্যবহার, অত্যধিক বই পড়া, রোদের আবহাওয়া, গরম বা এয়ার কন্ডিশনার এবং নির্দিষ্ট কোন ওষুধ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ড্রপটি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে।

মক্সিফ্লক্সাসিন: আক্রান্ত চোখে এক ফোঁটা করে দিনে ৩ বার প্রয়োগ করলে চোখের ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা সমাধান হয়৷ এটির অতিরিক্ত ব্যবহার আবার চোখের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে৷ সুতরাং ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং এটি ব্যবহার করার সময় বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

আইমক্স: এটিও আরেকটি জনপ্রিয় আই ড্রপ। এটি ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারকে নিজের বর্তমান ঔষধের তালিকার সম্পর্কে অবগত করতে হবে। ব্যবহারের পর বেলায় সরাসরি আলো এবং তাপ থেকে দুরে রেখে এটিকে যত্নে রাখতে হবে।

মক্সিনিস এলপি: কর্টিকোস্টেরয়েড একটি ড্রপ হলো এই মক্সিনিস এলপি আই ড্রপ।ফোলা, চোখের লাল হয়ে যাওয়া বা চোখের জ্বালা কমাতে ব্যবহৃত হয় এই আই ড্রপ। এটি মৌসুমী এলার্জি রাইনাইটিস কমাতেও সাহায্য করে। আপনি যদি চোখের রেডনেস, চোখের ফোলাভাব, চোখের সংবেদনশীলতা, শুকনো চোখ, মাথা ব্যাথা এবং খিটখিটে মেজাজ দূর করতে চান তবে এই ড্রপ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইউজ করতে পারেন।

সিপ্রোসিন সিরাপের পাশাপাশি বোনাস ইনফো হিসেবে বেশকিছু চোখের ড্রপ সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনার আই রিলেটেড যেকোনো রোগ সারাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উপরের ড্রপগুলি ইউজ করবেন।

কানের ড্রপের নামগুলি কি কি

সিপ্রোসিন সিরাপ, আই ড্রপের পাশাপাশি কানের কিছু ড্রপ সম্পর্কে জেনে নিলে কেমন হয়? কানের সমস্যা তো মোটামুটি আমাদের সকলের মাঝেই দেখা যায়। সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তারের গাইডলাইন নেওয়ার পাশাপাশি কানের বিভিন্ন ড্রপ সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে।

সিপ্লক্স: এটি একটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ। যা গলা, ত্বক, কান, নাক, সাইনাস, হাড়, শ্বাসযন্ত্র এবং মূত্রনালীর ব্যাকটেরিয়া এডিকশনকে রোধ করে।

ক্লোরফেন: ক্লোরফেন এমন একটি কানের ড্রপ যা আপনার কানের ব্যাকটেরিয়া এফেক্ট, মুখের আলসার এবং দাঁতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে।

ওটেক এসি প্লাস: এই ইয়ার ড্রপটি প্রাথমিকভাবে কানের সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ড্রপটি ইউজ করার প্রায় ২ ঘণ্টা পরে এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।

ওল্টাউর: এটি এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ যা কানের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে৷ আপনি চাইলে সেই ক্যাটাগরির টেবলেট বা ক্যাপসুলও খেতে পারেন৷
আরোও পড়ুনঃ সিনকারা সিরাপ খেলে কি মোটা হয়
আরোও পড়ুনঃ জেনে নিন বার্না ক্রিম কি কাজ করে

পরিশেষে: সিপ্রোসিন সিরাপ, কিছু আই ড্রপ এবং কিছু ইয়ার ড্রপের কাজ, সিপ্রোসিন সিরাপ কেনো খেতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি বিভিন্ন তথ্য একসাথে পেয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে। ধন্যবাদ।

Categories
খাদ্য তালিকা

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে খাদ্য। ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য দেহের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবণ, চর্বি ও পানি খাদ্যের এই ছয়টি উপাদান দেহগঠন থেকে শুরু করে ক্ষয়পূরণ, কর্মশক্তি প্রদান, বৃদ্ধিসাধনসহ নানা কাজে যুক্ত থাকে। গবেষনায় দেখা যায় মানুষের খাদ্যগ্রহনের প্রায় ৫০-৬০% থাকে এই শর্করা জাতীয় খাবার। চলুন এই শর্করা জাতীয় খাবার কি এবং শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

শর্করা কি?

খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রধান ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শর্করা। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেনের এই তিন মৌলের সম্বন্বয়ে এটি একটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। শরীর আপনার হজমকৃত বা বিপাক করা খাবারগুলিকে দেহের গ্রহণ উপযোগী চিনিতে পরিণত করে যা স্যাকারাইড বা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা নামে পরিচিত। এই ম্যাক্রোনিয়োট্রিয়েন্টটি শরীরের স্বাভাবিক কোষের কার্যকারিতা থেকে শুরু করে কোষের বৃদ্ধি এবং মেরামত পর্যন্ত সমস্ত কিছু করে থাকে।

এমনকি শক্তিও সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম শর্করা 4 ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে যা পরবর্তীতে নানা শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে ব্যয় হয়। শর্করা জাতীয় খাবার প্রধানত উদ্ভিদজাত খাদ্যে পাওয়া যায়। এগুলি ল্যাকটোজ নামক দুধের চিনি আকারে দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতেও থাকে।শর্করা সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে রুটি, পাস্তা, মটরশুটি, আলু, ভাত এবং নানা শস্য জাতীয় খাদ্য। এছাড়াও শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি জেনে নিন।

শর্করার কাজ কি?

আসলে এই শর্করার কাজ কি বলুন তোহ! শর্করার প্রাথমিক কাজগুলির মধ্যে একটি হল আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করা।আপনার খাওয়া খাবারের বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার আগে হজম হয় এবং গ্লুকোজে ভেঙে যায়। রক্তে গ্লুকোজ আপনার শরীরের কোষগুলি গ্রহণ করে এবং তা সেলুলার শ্বসন নামে পরিচিত জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) নামক একটি জ্বালানী অণু তৈরি করে। এই এটিপিই দিয়েই কোষগুলি তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন করে। শরীরের বেশিরভাগ এটিপি খাদ্যতালিকার শর্করা এবং চর্বিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আসে।

শর্করাকে শক্তিভান্ডারও বলা হয়। এটি আপনার শরীরের বর্তমান চাহিদা পূরণ করে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ থাকলে, অতিরিক্ত গ্লুকোজ পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখে। গ্লুকোজের এই সঞ্চিত ফর্মটিকে গ্লাইকোজেন বলা হয় যা প্রাথমিকভাবে লিভার এবং পেশীতে পাওয়া যায়।

লিভারে প্রায় 100 গ্রাম গ্লাইকোজেন থাকে। এই সঞ্চিত গ্লুকোজ অণুগুলি সারা শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে এবং খাবারের মধ্যে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার পেশীতে যে গ্লাইকোজেন থাকে তা শুধুমাত্র পেশী কোষ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে। উচ্চ ব্যায়ামের জন্য বা দীর্ঘ সময় কাজে ব্যবহারের জন্য এটি অত্যাবশ্যক। পেশীর গ্লাইকোজেন বিষয়বস্তু ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে তবে এটি প্রায় 500 গ্রাম পর্যন্ত জমা থাকে। যখন আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত গ্লুকোজ থাকে এবং আপনার গ্লাইকোজেন স্টোর পূর্ণ থাকে, আপনার শরীর অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটকে ট্রাইগ্লিসারাইড অণুতে রূপান্তর করতে পারে এবং তাদের চর্বি হিসাবে সংরক্ষণ করে।

যখন শরীরে জমাকৃত শর্করা থেকে গ্লুকোজের অভাব হয়, তখন অ্যামিনো অ্যাসিডে ভেঙে যায় এবং অন্যান্য যৌগগুলি শর্করায় রূপান্তরিত হয়।

যাইহোক, এটি আপনার শরীরে মস্তিষ্কের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে, যার জন্য দীর্ঘায়িত অনাহারের সময়ও শক্তির জন্য কিছু গ্লুকোজ জমা থাকে।

কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম উৎস হচ্ছে ফাইবার। এগুলো হজম হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় না। ফাইবারকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে: দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়।

দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় ওটস, লেগুম এবং ফল এবং কিছু শাকসবজির ভেতরের অংশে। শরীরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, এটি জলে টেনে নেয় এবং জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। এটি আপনার মলের নরম অংশকে বাড়িয়ে দেয় এবং মলত্যাগকে সহজ করতে সাহায্য করে।

চারটি নিয়ন্ত্রিত গবেষণার পর্যালোচনায় বলে যে, দ্রবণীয় ফাইবার মলের সামঞ্জস্য রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্তদের মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়ায়। যা পরবর্তীতে বৃহদান্ত্র এসব খাদ্যের রস শোষণ করে পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই ধরনের ফাইবার পুরো শস্য,ফল,সবজির খোসা এবং বীজে পাওয়া যায়।পর্যাপ্ত অদ্রবণীয় ফাইবার পাচনতন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

40,000 জনেরও বেশি পুরুষের উপর করা একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অদ্রবণীয় ফাইবার বেশি গ্রহণের সাথে ডাইভার্টিকুলার রোগের(যা অন্ত্রে থলি তৈরি হয়) 37% কম ঝুঁকিতে ছিলো। ফাইবার হল এক প্রকার কার্বোহাইড্রেট যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে পাচনতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমায়।আসুন এই পাওয়ার হাউসের খাবারের তালিকা কি কি জেনে নিন।

শর্করা জাতীয় খাবারের কাজ কি

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন আর শর্করা জাতীয় খাবারের কাজ কি তা জেনে নিবেন না, তা কি করে হয়। যখন আপনার খাদ্যতালিকার ৫০-৬০% থাকে শর্করা জাতীয় খাবার, তাহলে নিশ্চয়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। শর্করা জাতীয় খাবার দেহের শক্তির যোগান দেয়, দেহকে কর্মক্ষম রাখে। মোটকথা আপনার শরীর যে দিন থেকে রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুধুমাত্র এই শর্করা জাতীয় খাবারের কারণেই।

এছাড়াও দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও করে। ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজনে তা কাজে লাগায়। সেলুলোজ জাতীয় শর্করা দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।মোটকথা আপনি শর্করা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই নানা রোগের নিরাময় করে ফেলছেন। শর্করা জাতীয় খাবার আপনার শরীরে অতিরিক্তভাবে নানা ভিটামিন ও খনিজ লবনের যোগান দেয় যা আপনার দেহকে এগুলোর অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।
পরিমিত পরিমাণ শর্করা আপনার দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

শর্করার উৎস কি

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে জানতে হবে এই শর্করার উৎস কি। ভিন্ন ভিন্ন শর্করার উৎসও ভিন্ন ভিন্ন। তবে শর্করার প্রধানত দুই ধরনের উৎস রয়েছে-উদ্ভিজ ও প্রাণিজ উৎস।

  • গ্লুকোজ: গ্লুকোজ চিনির তুলনায় মিষ্টি কম। এই শর্করাটি আপেল, আঙুর, গাজর, খেজুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
    উদ্ভিজ শর্করার মূল যোগান দেয় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি।
  • শ্বেতসার বা স্টার্চ: শ্বেতসার প্রধান উৎস গম, ধান, ভুট্টা। আরো রয়েছে রাঙা আলু, আলু, এবং কচুতেও শ্বেতসার বা স্টার্চ পাওয়া যায়
  • ফ্রুকটোজ: পেঁপে, আম, কলা কমলালেবু প্রভৃতি মিষ্টি ফলে এবং ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমানে ফ্রুকটোজ থাকে। এটিকে ফল শর্করাও বলা হয়।
  • সুক্রোজ: সুক্রোজ চিনির তুলনায় অনেক গুণ মিষ্টি হয়ে থাকে। চিনি, আখের রস, গুড়, মিছরি এর প্রধান উৎস।
  • সেলুলোজ: কলা, বেল, আম, তরমুজ, বাদাম, শুকনো ফল এবং সব ধরনের শাকসবজিতে এই সেলুলোজ রয়েছে।

প্রাণিজ উৎস মূলত বিভিন্ন প্রানীর দুগ্ধ্য,কলিজা,চর্বি থেকে পাওয়া যায়।

  • গ্লাইকোজেন: পশু ও পাখি জাতীয় (যেমন: কবুতর, মুরগি, বিভিন্ন) প্রাণীর যকৃৎ এবং মাংসে গ্লাইকোজেন নামক শর্করাটি থাকে।
  • ল্যাকটোজ বা দুধ শর্করা: ছাগল, গরু ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে এই শর্করা থাকে।
  • কার্বোহাইড্রেটের আরো ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে: ডাল জাতীয় শর্করা-শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, মটর। ডাল জাতীয় শর্করা প্রাকৃতিকভাবে আঁশযুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। এই শর্করাগুলো আপনাকে সঠিক ডায়েট অনুযায়ী ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এই কার্বোহাইড্রেটগুলোর মধ্যে আরও ভিটামিন এবং খনিজলবণ তো রয়েছেই। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের খাবারও হতে পারে আপনার শর্করার একটি ভালো উৎস।

যেমন: ওটস্, পাউরুটি, বিস্কিট, বার্গার, চিজ, পাস্তা, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও নানা মিষ্টি জাতীয়। যাইহোক, প্রক্রিয়াজাত এবং পরিশোধিত খাবারগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু পুষ্টির মান একেবারে শূন্য। এগুলি মানুষের ওজন বাড়ায় এবং এমনকি টাইপ-2 ডায়াবেটিস, স্থুলতা ও হৃদরোগ মতো জটিল রোগ সৃষ্টি করতে বিশেষভাবে অবদান রাখে।

শর্করার প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে বিদ্যমান শর্করাকে স্বাদ, গঠন, বিজারণ ক্ষমতার কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শর্করার প্রকারভেদ গুলো হচ্ছে। যেমন:

স্বাদের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট প্রধানত দুই প্রকার,যথা-
সুগার-গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ
নন সুগার-স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন।

গঠন অণুর ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
মনোস্যাকারাইড-ট্রায়োজ, টেট্রোজ, পেন্টোজ, হেক্সোজ, হেপ্টোজ
ডাইস্যাকারাইড-সুক্রোজ, সেলোবায়োজ, ম্যালটোজ, ল্যাক্টোজ
অলিগোস্যাকারাইড-র‍্যাফিনোজ, স্কার্ডোজ
পলিস্যাকারাইড-স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন

বিজারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেট দুই প্রকার,যথা-
রিডিউসিং শ্যুগার বা বিজারক শর্করা– গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ
নন-রিডিউসিং শ্যুগার বা অবিজারক শর্করা– সুক্রোজ,ট্রেহালোজ

প্রতিদিন কি পরিমাণ শর্করা গ্রহণ করা উচিত

প্রতিদিন কি পরিমাণ শর্করা গ্রহণ করা উচিত তা জেনে নিয়ে আপনার খাদ্যতালিকা করা উচিত। আমেরিকান একটি খাদ্যতালিকা অনুযায়ী আপনার দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের 45 থেকে 65 শতাংশ শর্করা হওয়া উচিত। একজন ব্যক্তির জন্য দিনে গ্রহণ করা মোট 2,000 ক্যালোরির মধ্যে 900 থেকে 1,300 ক্যালরি শর্করা থাকতে হবে। যাইহোক, আপনার শর্করা গ্রহণের পরিমাণ অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা ও বিএমআই এর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হবে।

শর্করা জাতীয় সবজির তালিকা

শর্করার একটি বড় অংশের যোগান দেয় উদ্ভিদ। তাই আমাদের আপনাকে আর নতুন করে বলতে হবে না যে আপনার কেন শাকসবজি খাওয়া উচিত। শাকসবজিতে যে পরিমাণ ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ থাকে, তাতে এগুলো বাদ দিয়ে খাদ্যতালিকা করা আপনার নিতান্তই বোকামি হবে। একদিকে কিছু সবজি উচ্চক্যালরি সমৃদ্ধ শর্করা, আবার কিছু কম ক্যালরি সমৃদ্ধ। আপনি যতটা আঁশযুক্ত সবজি খেতে চান (মনে করুন অ্যাসপারাগাস, সেলারি এবং পালং শাক)। যাইহোক, শাকসবজি বিশেষ করে স্টার্চি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি।

বছরের পর বছর ধরে, কার্বোহাইড্রেট একটি খারাপ খ্যাতি অর্জন করেছে যে লোকেরা প্রায়শই তাদের ওজন বৃদ্ধি, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতির জন্য শর্করাকে দায়ী করে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি এবং পরিশোধিত খাবারগুলোতে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলির অভাব থাকে। তবে প্রাকৃতিক উৎসগুলো অধিক পুষ্টি ও ফাইবার-সমৃদ্ধ যা আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বেশ ভালোভাবে ভুমিকা রাখতে পারে। এমন কয়েকটি শর্করা জাতীয় সবজির নাম জেনে নিন শর্করা জাতীয় সবজির তালিকা যা আপনার খাদ্যতালিকায় অধিক ক্যালরি যোগ করবে-

ভূট্টা: ভুট্টা একটি জনপ্রিয় সবজি যা আপনি সারা বছর সাইড ডিশ হিসাবে খেতে পারেন। এমনকি সালাদের সাথেও উপভোগ করতে পারেন। 100 গ্রাম ভুট্টাতে প্রায় 25 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং 3.36 গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সরবরাহ করে। একটি গবেষণা অনুসারে, ভুট্টা রক্তে শর্করার মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য উপকারী।

ভূট্টা
ভূট্টা

গাজর: গাজর শর্করার একটি প্রধান উৎস বলা যায়। এক কাপ পরিমাণ গাজরে প্রায় ১২০গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

গাজর
গাজর

মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু খাবার হিসেবে অত্যন্ত সুস্বাদু। একটি মাঝারি সিদ্ধ মিষ্টি আলুতে 23.61 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। মিষ্টি আলু হল পটাসিয়াম, ভিটামিন A এবং C এর একটি চমৎকার উৎস।একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,মিষ্টি আলুতে থাকা কিছু শর্করা অণু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিটিউমার হিসেবে কাজ করে।

কুমড়া: মিষ্টি কুমড়া আমাদের দেশের অত্যন্ত সহজলভ্য একটি সবজি। এক কাপ (কাটা) মিষ্টি কুমড়ায় প্রায় ৮গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়।

কুমড়া
কুমড়া

বিট: বিটরুট বা বীট হল এমন একটি মিষ্টি, যা সবজি যা মানুষ কাঁচা বা রান্না করে খেতে পারে। এক কাপ কাঁচা বীটে রয়েছে 13 গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়। বিট পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। এগুলি মানুষকে প্রাকৃতিকভাবে অজৈব নাইট্রেট সরবরাহ করে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আলু: আলু আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সবজি। আপনি জানেন কি, এক কাপ পরিমাণ আলুতে (কাটা)প্রায় ২৭ গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়

মটরশুঁটি: মটরশুটি legume পরিবারের অন্তর্গত। এগুলি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সবচেয়ে ভালো। এক কাপ মটরশুঁটিতে রয়েছে 21 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এগুলি প্রোটিন এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস। প্রতি কাপে যথাক্রমে 6.99 গ্রাম এবং 8.1 গ্রাম পটাসিয়াম এবং আয়রন আছে।অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, মটরশুটি কোলনে প্রদাহ প্রতিহত করতে সক্ষম।

মটর শুটি
মটর শুটি

মসুরডাল: মসুর ডাল জনপ্রিয় উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল। এক কাপ সেদ্ধ মসুর ডাল 17.86 গ্রাম প্রোটিন এবং 15.6 গ্রাম ফাইবার সহ 39.86 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেট থাকে।

পুঁইশাক: পুইশাক খাননি এমন বাঙালি খুবই কম পাওয়ার যাবে।এই প্রতি 100 গ্রাম পুঁইশাকে 3.4 গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়।তাই আপনি চাইলে এই সহজলভ্য শাকটি রাখতে পারেন আপনার দৈনন্দিন খাবার তালিকায়।

পুইশাক
পুইশাক

শর্করা জাতীয় ফল কি কি?

অনেকই ভাবেন যে, ফল শর্করামুক্ত,এতে কোনো শর্করা থাকে না। আপনাদের এই ধারণা একদমই ভুল, প্রায় সব ফলেই কমবেশি শর্করা পাওয়া যায়। উচ্চ শর্করাযুক্ত ফল আমাদের শরীরে ভিটামিন ও খণিজ লবণের পাশাপাশি শরীরে শক্তির যোগান দেয়। আসুন এই শর্করা জাতীয় ফল কি কি তা জেনে নেই।

উচ্চ শর্করাযুক্ত এমন কয়েকটি ফল হচ্ছে

কলা: আপনি যখন উচ্চ শর্করা জাতীয় ফলের কথা ভাবেন তখন আপনি সম্ভবত একটি কলার কথা ভাবতে পারেন। একটি মাঝারি কলা 27 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও এই শক্তির পাওয়ার হাউসটি হার্ট-স্বাস্থ্যকর ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ যেমন ভিটামিন বি 6 ও পটাসিয়ামের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উৎস।বলা যায়,আপনি সারাদিনের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি পাচ্ছেন শুধুমাত্র কলা থেকেই।

আনারস: এক আনারসে কাপে প্রায় 22 গ্রাম শর্করাসহ বিভিন্ন ভিটামিনে সমৃদ্ধ একটি পাঞ্চ প্যাক। এই সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।আনারস গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার দৈনিক ভিটামিন সি চাহিদার 131 শতাংশ এবং ম্যাঙ্গানিজের চাহিদার 76 শতাংশ নিশ্চিত করতে পারবেন।

আম: আমে অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলগুলির চেয়ে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। এক কাপ কাটা আম থেকে ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।এই “ফলের রাজা” খাওয়ার কারণ হচ্ছে—এটি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন B6 এর একটি ভালো উৎস।

আপেল: এটি আপনাকে অবাক করে দিতে পারে যে একটি মাঝারি আপেলে (তিন ইঞ্চি ব্যাস) 25 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এটি আংশিক একটি উচ্চ ফাইবার ফল। আপেল ভিটামিন সি এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সতন্ত্র রাখতে সাহায্য করে।

কিশমিশ: কার্বোহাইড্রেটের উচ্চ পরিমাণের কারণে কিশমিশের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।সম্ভবত 34 গ্রাম এই কার্বোহাইড্রেট আপনাকে যেকোন দৌড়ের জন্য শক্তি প্রদান করে থাকে। কিন্তু কিসমিস আপনাকে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনাকে 1.6 গ্রাম ফাইবারও দিবে, যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং পটাসিয়াম এবং লৌহের মতো খনিজলবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

খেঁজুর: ড্রাইফুডের মধ্যে খেজুর একটি উচ্চমানের শর্করা জাতীয় ফল। যার কারণে রোজার সময়ে মুসল্লীরা এটিকে খাদ্যতালিকায় রাখতে ভুল করেন না।প্রতি 100গ্রাম খেজুরে আপনি প্রায় 36গ্রাম শর্করা পাবেন।

শর্করা নিয়ে বর্তমান সমাজে একটা ভ্রান্ত ধারণা দেখা দিয়েছে।অনেকেই ওজন বৃদ্ধি ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য শর্করাকে দায়ী করেন।ফলে তারা খাদ্যতালিকা থেকে প্রায় শর্করাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। আর ফলস্বরূপ শর্করার অভাবে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, শরীর নিস্তেজ, ক্ষুধামন্দা,রুচিহীণতা, অতিরিক্ত ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাতপা অসাড়সহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে । রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে হাইপারগ্লোমিয়া দেখা দেয়। যেখানে শর্করা সমগ্র দেহের শক্তির যোগান দিচ্ছে,সেখানে একে বাদ দিয়ে কীভাবে আদর্শ ডায়েট হয়। আপনার শরীরের চাহিদা ও বিএমআই অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করছেন কিনা তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা

কথায় আছে,অতিমাত্রায় কোনোকিছুই ভালো নয়। বেশি পরিমাণে শর্করা গ্রহণ দেহের জন্য কখনোই ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে, ওজন বৃদ্ধি করার সাথে সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে কি শর্করা জাতীয় খাবার খাবো না? অবশ্যই খাবেন। শর্করা জাতীয় খাবার তালিকা কি কি তা জেনে নেই বাছাই করবেন কোনটা আপনার বেশি দরকার, কোনটা নয়। নিজের শরীরের চাহিদা ও বিএমআই অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করবেন।