Categories
ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ এবং কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর

ভাইরাস বাহিত একটি রোগ হিসেবে পরিচিত হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ জানতে হলে সাথে থাকুন।

বহুকাল পূর্বে মানুষের মধ্যে, যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বেশ সীমিত। এই সীমিত যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে কোন রকমে দিন পার করতেন। অনুন্নত সমাজ ব্যবস্থার ফলে তখন চিকিৎসা সেবা ছিল না উন্নত। ফলে উন্নত চিকিসৎসা সেবার অভাবে, কোন ঘাতকবাহী রোগের প্রভাবে অনেক মানুষ ঢলে পড়তেন মৃত্যুর কোলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সেই রোগকে প্রতিহত করার মতো উন্নত চিকিসৎসা সেবার আবির্ভাব হয়েছে আমাদের জীবনে। ভাইরাস জনিত একটি রোগ হিসেবে হেপাটাইটিস এ। তাই হেপাটাইটিস এ এর লক্ষন বিস্তারিত বিবরণ থাকবে আজকের আলোচনায়।

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ

হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংগঠিত হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন কারণে হতে পারে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। মূলত ৫ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাসের প্রভাবে হয়ে থাকে হেপাটাইসিস ভাইরাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-

  • আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পেশী এবং গিটে গিটে ব্যথা হয়ে থাকে এই রোগের প্রভাবে।
  • শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় শরীরে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব দেখায়।
  • অনেক সময় ক্ষুদামন্দার মতো সমস্যা দেখা দেয় এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে।
  • রক্তে বিরুলিনের পরিমান কমে গিয়ে যকৃটার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে গিয়ে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে শরীরে।

হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম

হেপাটাইটিস এ একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। আর আমরা প্রায় কম বেশি সকলে জানি, যে কোন ধরণের ভাইরাসবাহিত রোগ যদি কোন একজন ব্যক্তির উপর ভর করে, সেই রোগ ধীরে ধীরে সকলের মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে ফেলতে পারে। যা মাঝে মাঝে অনেক সময় মহামারীর মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই কোন রোগ এর প্রাদুর্ভাব ঘটার পূর্বে থেকে রোগটি যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে তার জন্য অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কথা আছে সমাধান থেকে প্রতিকার শ্রেয়। তাই ভাইরাসবাহিত যেকোনো ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তার জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করতে চাইলে এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে জেনে তার জন্য উপযুক্ত ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করতে হবে । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

হেপাটাইটিস এ এর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হল হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বেশ সাহায্য করে। এই ভাইরাসের টিকা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রায় ৯৫ ভাগ সফল। তবে এই টিকা গ্রহণের জন্য আপনার বয়সসীমা সর্বোচ্চ ১৫ হতে হবে। হেপাটাইটিস এ থেকে পরিপূর্ণরূপে সুরক্ষার জন্য দুই ডোজের টিকার প্রয়োজন। প্রতি ৬ মাস পর পর এই হেপাটাইটিস এ সুরক্ষার জন্য টিকা নিতে হয়।

হেপাটাইটিস এ হলে করনীয়

একটি ঘাতকবাহী রোগ হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত হল হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমণে হয় এই রোগ। তবে হেপাটাইটিস এ একটি স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ। পরিমিত চিকিসৎসা এবং পর্যাপ্ত পরিমান সেবা যত্ন পেলে হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে আপনার এই রোগটি হয়েছে কিনা। তাই কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ এ আক্রান্ত হয় তাহলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে-

  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তিকে সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেই ব্যক্তির বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি জাতীয় তরল খাবার প্রদান করে পানিশূন্যতা দূর করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সে ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গরমে যাতে কোন ধরণের পচা বেশি খাবার রোগীর না খেতে পারে সে দিকে পরিপূর্ন খেয়াল রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং সঠিক খাবার-দাবার পারে খুব সহজে হেপাটাইটিস এ থেকে রোগীর সুস্থতা প্রদান করতে।

তবে যদি কোন রোগীর হেপাটাইটিস এ এতে আক্রান্ত হবার পর শরীর থেকে রক্তের মধ্যে বিরুলিনের মাত্রা ১০ মিলিগ্রাম কমে যায় তাহলে তাকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

হেপাটাইটিস এ হলে কি খাওয়া উচিত

সঠিক এবং পরিমিত খাবার গ্রহণে যেকোনো রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। সাধারণত রাস্তার ধারে পঁচা বাসি খাবার, ময়লা পানি খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখা দিলেই আপনার শরীরে বাসা বাধতে পারে হেপাটাইটিস এ। এই রোগের প্রাদুর্ভাব এর ফলে আপনার কর্মচঞ্চলতা হতে পারে রুদ্ধ এবং ব্যাঘাত গ্রস্থ। তাই এই রোগের যদি প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আপনাকে বিশেষ করে নজর দিতে হবে পরিমিত এবং সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার-দাবারের দিকে।

যেহেতু হেপাটাইটিস এ একটি লিভারজনিত রোগ তাই এই রোগে আক্রান্ত শরীরে অবশ্যই দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতার। তবে হেপাটাইটিস এ এর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই এই রোগ হয়েছে বিধায় ধরে নেওয়া ঠিক নয়।বরং লক্ষণ প্রকাশ পেলে আপনাকে পরীক্ষার মাধ্যমে শুনিশ্চিত হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ হলে কি ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত।

          • শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি এবং সেই সাথে মিনারেল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
          • বিভিন্ন ফলমূল যেমন তরমুজ, মাল্টা, আনারস, আপেল ইত্যাদি পানিজাতীয় ফলমূল বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে।
          • বেশি বেশি করে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
          • পরিমিত পুষ্টি পেতে স্যুপ খেতে দিতে হবে রোগীকে।
          • খাবারে স্বাদের পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে মাছ মাংশের পর্যাপ্ত
          • পরিমাণ সমন্বয় করতে হবে খাবার দাবারে।
          • সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
          • রোগীকে দুধ ডিম খাওয়াতে হবে।

সবচেয়ে ক্ষতিকর হেপাটাইটিস ভাইরাস কোনটি?
হেপাটাইটিস একটি লিভারজনিত রোগ। এইরোগটির প্রভাবে ধীরে ধীরে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা বিকল হয়ে বিভিন্ন রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের শরীরে বাসা বাধে ঘাতকবাহি এই রোগটির। বিভিন্ন লক্ষণ এবং প্রভাবরের উপর ভিত্তি করে হেপাটাইটিসকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তা হল –

  1. হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
  2. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।
  3. হেপাটাইটিস সি ভাইরাস।
  4. হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস।
  5. হেপাটাইটিস ই ভাইরাস।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস এ
মূলত দূষিত পানি এবং রাস্তার ধরে অবিশুদ্ধ পানি গ্রহণের ফলে মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে এই রোগটিতে। তবে বড়দের তুলনায় শিশুরাই এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি বেশ ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। হেপাটাইসিস এর যতগুলো ভাগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হল এটি। কারণ এটি মানবদেশে আক্রমণ করে ধীরে ধীরে আমাদের যকৃতের কার্যক্ষমতা কমিয়ে আনে।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
আরও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

হেপাটাইটিস সি
এর উপসর্গ তেমন একটা চোখে প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘদিন আমাদের শরীরে বসবাস করার ফলে এটি লিভার সিরোসিস এর প্রভাব দেখা দিতে সাহায্য করে আমাদের শরীরে। এই রোগে ক্যান্সার কিংবা মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস ডি হেপাটাইটিস বি এর মতো আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস ই
এটি তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে গর্ভকালীন সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস এর যতগুলো ধরণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি এর প্রতিচ্ছবি হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস ডি এর টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ দমন করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এর বিশেষ কিছু লক্ষণ বিদ্যমান রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, সাধারণত কি ধরণের লক্ষণ দেখলে আপনারা বুঝবেন যে রোগীর হেপাটাইসিস ডি এ আক্রান্ত হয়েছে –

শরীরের বিশেষ অংশ যেমন চোখ ,ত্বক হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে।
অনেক সময় শরীরে রক্তের বিদ্যমান বিরুলিনের মাত্রা কমে গিয়ে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়।

উপরের লক্ষণসমূহ হেপাটাইটিস ডি হওয়ার জন্য প্রকৃত দায়ী।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

শেষ কথা
হেপাটাইটিস “এ” একটি মরণব্যাধি রোগ। এই রোগ হলে সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক খাদ্যভাস পারে রোগীদের সুস্থ করে তুলতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *