Categories
খাদ্য তালিকা

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

মানুষের দেহে আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আয়রন দেহে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে। আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকায় কি ধরনের খাদ্যে আয়রন এর পরিমান বেশি রয়েছে তা জেনে নেই।

আপনারা কি জানেন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিগ্রাম আয়রনের দরকার হয়। সেই সাথে নারীদের জন্যও কিন্তু আয়রন আবশ্যকীয়। দৈনিক প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন নারীদের জন্য প্রয়োজন এবং প্রতিদিন প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন হয় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য।

আমরা যখন শরীরে ক্লান্তি এবং দূর্বল অনুভব করি তখন আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর কারণ হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতির ফলে। আয়রনের ঘাটতির ফলে গর্ভবতী মহিলাদের এবং শিশুদের অ্যানেমিয়া জনিত রোগ হয়ে থাকে। আপনি যদি এই আয়রনের ঘাটতি পূরণের করতে চান, তাহলে আপনাকে দুই ধরনের আয়রন গ্রহণ করতে হবে। যেমন; প্রাণীজ আয়রন এবং উদ্ভিজ্জ আয়রন। এই দুই ধরনের আয়রন মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবারের মধ্যে আয়রন আছে এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য –

কলিজা:
কলিজা হচ্ছে এমন একটি খাবার, যেটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন ছাড়াও কলিজার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। মুরগীর কলিজা থেকে গরুর কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তবে আমরা অনেকেই কলিজা খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু কলিজার পরিবর্তে আপনি চাইলে লাল মাংস অথবা ডিম খেতে পারেন।কারন ৩ আউন্স লাল মাংসে রয়েছে (২-৩) মিলিগ্রাম আয়রন এবং আধা কাপ ডিমের কুসুমে রয়েছে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন, যা আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।

ডার্ক চকলেট:
আমাদের দেহের জন্য ডার্ক চকলেট কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এর কারণ ডার্ক চকলেটে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। পাশাপাশি ডার্ক চকলেটে বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও থাকে।

ছোলা:
আমরা সাধারণত যে ছোলা খেয়ে থাকি সেটিতে রয়েছে আয়রন।এক কাপ ছোলাতে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং সেইসাথে এতে পরিমাণমতো প্রোটিনও থাকে। আমরা যারা নিরামিষ পছন্দ করি, তাদের জন্য কিন্তু ছোলা আদর্শ একটি খাবার। ছোলা আমরা চাইলে বিভিন্ন ভাবে রান্না করেও খেতে পারি।

কুমড়ার বিচি:
কুমড়ার বিচিতেও কিন্তু আয়রন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। কুমড়ার বিচি আমরা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেতে পারি। যেমন; সালাদের সাথে কুমড়ার বিচি মিক্স করলে অনেক সুস্বাদু হয়ে উঠে। তাই আমরা চাইলে প্রতিদিনের সালাদে কুমড়ার বিচি মিক্স করে খেতে পারি। এছাড়াও অনেকেই আবার কুমড়ার বিচি তেলে ভেজে খেয়ে থাকে।অনেকেই আবার এটি তরকারির সাথে রান্না করে খেতে পছন্দ করে। কেউবা আবার সিদ্ধ করেও খায়।তাই বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেহে আয়রনের ঘাটতির অভাব মেটাতে পারি। এই কুমড়ার বিচিতে আছে ২ মিলিগ্রাম আয়রন।

ব্রোকলি:

ব্রকলী
ব্রকলী

আয়রন জাতীয় খাবারের মধ্যে ব্রোকলি একটি জনপ্রিয় সবজি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। ব্রোকলিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, আয়রন ফলিত, জিংক এবং ম্যাগনেশিয়াম। ব্রোকলি সেদ্ধ বা সাতলিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

ডালজাতীয় খাবার:
আরো একটি খাবার যেটি আয়রনের ভালো একটি উৎস হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে, আর সেটি হলো ডালজাতীয় খাবার। ডালজাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আপনারা হয়ত জানেন প্রতি কাপ ডালের মধ্যে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রনের একটি ভালো উৎস হল ডাল। এক কাপ ডালে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং প্রচুর ফাইবার থাকে।এতে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে এবং রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে।

বেদানা:
বেদনা এমন একটি ফল, এটি খাওয়ার পর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বেদনায় রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এতে আরো রয়েছে এসকর্বিক এসিড যা শরীরে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

বিটরুট:

বিটরুট
বিটরুট

যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা বিটরুট সবজি খেতে পারেন। কারন এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের ভালো উৎস। বিটরুট এটি একটি শীতকালীন সবজি। এতে আয়রন ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, কপার, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, সালফারসহ আরও অনেক উপাদান।

বাঁধাকপি:

বাঁধাকপি
বাঁধাকপি

আমরা জানি বাঁধাকপি একটি শীতকালীন সবজি। জনপ্রিয় এই সবজিতে রয়েছে আয়রন, আরোও অনেক প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ওজন কমাতে সহেতা করে,বাঁধাকপি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং মানব দেহের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

আপেল:

আপেল
আপেল

আপেল আমাদের সবার পরিচিত এবং প্রিয় একটি ফল, এই ফল আয়রনের ভালো উৎস এবং পুরো স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।

পালং শাক:

পালংশাক
পালংশাক

শীতকালীন নানা ধরনের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি। এতে এক কাপ রান্না করা পালংশাকে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, এছাড়াও এতে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন ই থাকে। এটি পরীক্ষিত ভাবে জানা গিয়েছে, রান্না করা পালং শাক এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই মানবদেহ শোষণ করে নিতে পারে।

কমলা:

কমলা
কমলা

আপেল এর মতোই কমলা একটি জনপ্রিয় ফল, এতে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস এবং শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। কমলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি দেহের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ
কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার
শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

সিদ্ধ আলু:
আপনি কি জানেন সিদ্ধ আলুতে বি ভিটামিন, ভিটামিন সি প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রনও থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে থাকে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন।

আমরা জানি উপরের আয়রন জাতীয় সমৃদ্ধ বাদ দিয়ে আরও অনেক খাবার রয়েছে। যেমন: কিশমিশ, কাজুবাদাম, টমাটো, শিমের বীচি মটরশুঁটি ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরে চা বা কফি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ক্ষতি হতে পারে।

Categories
খাদ্য তালিকা

ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার তালিকা

দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রধান নিয়ামক হলো তিনবেলার সুষম খাবার তালিকা । আমাদের খাবারে সাধারণত ৬টি উপাদান থাকে।সেগুলো হলো শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানি। এই খাদ্য উপাদানগুলো পরিমাণ মতো থাকলে সেই খাবারগুলোকে সুষম খাবার বলা হয়ে থাকে। তবে শুধু সুষম খাবার গ্রহণ করলেই স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এমনটি কিন্তু না, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আপনাকে এই সুষম খাবারগুলো খেতে হবে সময়মতো। আর তাই সঠিক একটি সুষম খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে। যে তালিকায় সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার সঠিক পরিমাণমত রাখতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সুষম খাবারের তালিকাগুলো –

ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার তালিকা

পালং শাকঃ–পালংশাক এমন একটি সুষম খাবার যেটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনারা জানেন পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে, যেটি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এই ভিটামিনগুলো আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেইসাথে পালং শাক আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরীতে সহায়তা করে থাকে।

কমলালেবুঃ– আর একটি ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার হলো কমলালেবু। এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি ত্বকের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

কমলা
কমলা লেবু

গাজরঃ– সুষম খাবারের মধ্যে গাজর হলো অত্যন্ত উপকারী শরীরের জন্য। আপনারা জানেন গাজরে থাকে ২৮ গ্রাম ভিটামিন কে এবং এই সুষম খাবারটি শরীরের বিভিন্ন রোগ দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে যুক্ত গাজর আমাদের নার্ভাস সিস্টেম শক্ত রাখে। তাই আমরা যদি দৈনিক অন্তত এক গ্লাস গাজরের রস সুষম খাবারের তালিকায় রাখি, তাহলে এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

গাজর
গাজর

মিষ্টি আলুঃ- ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় আমাদেরকে মিষ্টি আলু অবশ্যই রাখা উচিত।কেননা মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন ই, যা আমাদের দেহের টিস্যু ও ফুসফুস গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেহেতু মিষ্টি আলু একটি সুষম খাবার এবং এটিতে রয়েছে ভিটামিন ই তাই, ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় এটি আমাদের অবশ্যই রাখা রাখা জরুরি। সেইসাথে আপনারা জানেন আরও অনেক সুষম খাবার রয়েছে যেমন- আপেল, দুধ,ডিম,লেবু,সবজি,মাছ, টমেটো ইত্যাদি। এগুলোতে বেশি পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন, যার ফলে আমাদের ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবারের তালিকায় প্রতিদিন এসব খাবার রাখা উচিত।

সকালের সুষম খাবার

সকালের সুষম খাবার আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের পাকস্থলী খালি থাকে। তাই আমাদের সবার প্রথমে যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো ঘুম ভাঙার পর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা খাওয়া সেরে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই খালি পেটে থাকা যাবে না। তবে সকালের খাবারটি যেন সুষম হয়, সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই সকালবেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। সকালের খাবারে ভাত সুষম খাবারের তালিকায় রাখা যায়,কারণ এতে থাকা শর্করা আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় শর্করার চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন রুটি, পরোটা,পাউরুটি, কিংবা খিচুড়ি। আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন দুধ, ডিম, ২/৩ পিস মাংস ও সবজি।
আরোও পড়ুনঃ শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

দুপুরে সুষম খাবার তালিকা

আমরা সাধারণত সকালের নাস্তার পর দুপুরের খাবার খেতে লেট করে ফেলি।কিন্তু আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে খাবারের টাইম মেইনটেইন করতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সকালের নাস্তা যেন ১০টার আগে করা হয় এবং দুপুরের খাবার যেন ২টার মধ্যে খাওয়া হয়। আমাদেরকে দুপুরের খাদ্য তালিকায় এক কাপ ভাত এর সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ এবং মাংস ও সবজি খেতে হবে। এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ এবং প্রোটিন। তাই আমরা যদি এই খাবারগুলো প্রতিদিন দুপুরের সুষম খাবার তালিকায় রাখি, তাহলে আমাদের শরীরের আমিষ ও প্রোটিন এর পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব।
আরোও পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

রাতের সুষম খাবারের তালিকা

আমরা অনেকেই আছি যারা রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। কিংবা অনেকেই আছেন রাতে কম খাবার খেয়ে থাকি। আমাদেরকে এই অভ্যাসটি পরিবর্তন করতে হবে, কারণ রাতের খাবার না খেলে দৈনিক প্রতি বেলার প্রাপ্ত যে পুষ্টি চাহিদা শরীরের জন্য প্রয়োজন সেটি পূরণ হয় না। তাই আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিন রাত ১০ টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া। রাতের সুষম খাবারের তালিকায় আমাদেরকে রাখতে হবে এক কাপ ভাত কিংবা রুটি। আর এর সাথে রাখতে হবে ডিম, ডাল বা ১/২ পিস মাছ বা মাংস, সালাদ এবং সবজি।

আমরা অনেকেই আছি যারা মাছ, মাংস খাওয়ার প্রতি অনিহা প্রকাশ করি। আমাদেরকে কিন্তু এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। কেননা এই খাদ্যগুলো কম গ্রহণ করলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমতে শুরু করে এবং শরীরের শক্তি কমে যেতে থাকে। এছাড়াও শরীরের পুষ্টির পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিন সুষম খাবারের তালিকায় প্রাণিজ প্রোটিন, আমিষ, শর্করা, ভিটামিন ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে রাখা এবং সময়মত গ্রহণ করা।

Categories
খাদ্য তালিকা

কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

কোষ্ঠকাঠিণ্য একটি কষ্টসাধ্য মলাশয়ের মলত্যাগ জনিত সমস্যা। কোষ্ঠ ও কাঠিণ্য দুটি পৃথক শব্দ যেখানে কোষ্ঠ শব্দের অর্থ মলাশয় আর কাঠিন্য মানে মল ত্যাগে সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিণ্য শব্দের অর্থ দাঁড়ায় মলাশয়ের মল পরিপূর্ন ভাবে ত্যাগ করতে ব্যর্থ হওয়া। যখন কোন ব্যাক্তি ফাইবার সমৃদ্দ্ব খাবার খাবার পর ও সপ্তাহে অন্তত তিন বার সঠিক ও স্বাভাবিক ভাবে মল ত্যাগে ব্যর্থ হয় তখন তিনি যে পীড়ায় ভোগেন সেটাই কোষ্ঠ কাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

অতিরিক্ত তেল, জাল, ফাস্টফুড ও মশলা যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, ধূমপান করা, অতিরিক্ত শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া, পানি কম খাওয়া, আঁশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও ভিবিন্ন রোগ ব্যাদি যেমন: ডায়াবেটিস, অন্ত্রনালীর ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড এর সমস্যা, মস্তিষ্কে টিউমার বা রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত শোয়ে থাকা এবং কাপনিজনিত রোগ এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া ভিবিন্ন ধরণের ওষুধ সেবনে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন: পেপটিক আলসার এর ওষুধ , ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, পেট ব্যথা , খিঁচুনি ও উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ খেলে তাছাড়া ক্যালসিয়াম,অ্যালুমিনিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।তাই আমাদের নিয়ম করে কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার গ্রহণ করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণসমূহ

পেট ব্যথা, মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যথা ও জ্বালা পোড়া করা, মলত্যাগের চাপ অনুভব করা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ মলত্যাগ না হওয়া, শক্ত শক্ত শুস্ক ও ছোট আকারের মল ত্যাগ হওয়া।

অন্তত দুই দিনে একবার পায়খানা না হওয়া। বেশি সময় নিয়ে পায়খানা করা, পেট ফুলে থাকা, পানের ডগা আঙ্গুল বা সাপোজিটরি পায়খানা করা, তলপেট ব্যথা করা ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।

কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার

ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়োজোষ্ঠ আমরা সবাই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকি। অনেকেই এ ভুল ধারণা টি মনে পোষণ করে থাকেন যে কোষ্টকাঠিন্য শুধু ওষুধ সেবনের মাদ্ধমে ঠিক করা যায়। সঠিক খাদ্যবাস ও খাবার নির্বাচন কোষ্টকাঠিন্য নিরাময় ও প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার আর ভবিষতে ওষুধ ও লাগবে না। চলুন জেনে নেই কোষ্টকাঠিন্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।

১. কলমিশাক: কলমিশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুব এ কার্যকরী ।কলমিশাকের পাতা ও কাণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে। এই ফাইবার খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে থাকে। কলমিশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর ভালো থাকে।

২. কলা: কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । পাকা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা এর পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে। কাঁচা কলা তরকারি হিসাবে রান্না করে খেলেও কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়।

৩. গাজর: গাজর একটি পরিচিত সবজি যা আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় এই সবজিটি প্রাকৃতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ সমৃদ্ধ। একটি আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে।

গাজরের ছবি
গাজরের ছবি

৪. শসা: শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ডায়াটেরি ফাইবার যা শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহা ঔষধ। শসার বেশির ভাগ প্রায় ৭০ ভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

৫. পেয়ারা: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ওজন কমাতে পেয়ারা খুব এ ভালো কাজ করে। তাই যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পেয়েরা খেতে পারেন।পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কি এবং মিনারেলস।

৬. কিসমিস: কিসমিস প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি করে কিসমিস খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিসমিস কোষ্টকাঠিন্য কমাতে খুব কার্যকরী। বাজার থেকে ভাল গুণসম্পন্ন কিসমিস কিনে আনবেন। কেননা অনেক দোকানদার কিসমিসে চিনি মিশিয়ে দেয়।

৭. এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী: নিয়মিত এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জুস বানিয়ে খান। এতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও মিনারেলস রয়েছে যা সাস্থের জন্য অতন্ত্য উপকারী। নিয়মিত এলোভেরা জুস পান করে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। অবশই বাজার থেকে কেনা এলোভেরা জুস যেগুল প্যাকেট এ পাওয়া যায় সেগুলো পরিহার করবেন।

ঘৃতকুমারী এর ছবি
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী এর ছবি

৮. লেবুর রস: লেবুর রস নিয়মিত গ্রহণ করলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে আধা চা চামচ নুন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন আপনার রুচি অনুযায়ী । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করবেন দ্রুত ফল পেতে প্রতিদিন দুইবার পান করুন এই মিশ্রণ।

9. ইসবগুলের ভুসি: ইসবগুলের ভুসি কোষ্টকাঠিন্য দূর করার মহাঔষধ। অনেকেই স্বাদের জন্য ভুসি খেতে চান না। কিন্তু এর অনেক গুনাগুন রয়েছে। ইসুবগুলের ভুসি রক্তে চিনির পরিমান কমায় এবং হজমে সহায়তা করে। তাই কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে অবশই নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসির শরবত বানিয়ে খাবেন। ক্যাস্টর অয়েল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। আপনি চাইলে ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

10. মধু: প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলেই দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট পরিষ্কার না হাওয়ার মতো সমস্যা একেবারে কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে। ফলে মধু খাওয়া মাত্র পেট পরিষ্কার হতে শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রে দিনে ৩ বার, এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ করে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।

11.পালং শাক: প্রতিদিন এই শাকটি খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। তাই যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে হয় রান্না করে পালং শাক খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন অল্প দিনেই কষ্ট কমে যাবে। প্রসঙ্গত, আরেক ভাবে পালং শাককে কাজে লাগানো যেতে পারে। এক গ্লাস পানির সঙ্গে ১ গ্লাস পালং শকের রস দিনে দুবার করে খেলে কনিস্টেপেশনের কোনও নাম গন্ধই থাকে না।

12. আঙুর: এতে উপস্থিত অদ্রবণীয় ফাইবার, পেট পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। তাই বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক না হলেই দিনে হাফ বাটি কাঁচা আঙুর অথবা আঙুরের রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

13.তিসি: এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পেট পরিষ্কার রাখতে নানাদিক থেকে সাহায্য করে। তাই পটি পরিষ্কার হোক, বা না হোক, প্রতিদিন তিসি বীজ জলে গুলে পান করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, এক গ্লাস জলে ১ চামচ তিসি বীজ গুলে কম করে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন। রাতে শুতে য়াওয়ার আগে পান করুন সেই জল। দেখবেন সকালে উঠে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।পয়ঃনিষ্কাষণে কোনো সমস্যা থাকবে না।

14. তিলের বীজ: তিলের বীজ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এতে আছে অত্যাবশ্যকীয় তেল যা শরীরের পক্ষে ভালো। এই বীজ পেট পরিষ্কার করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

তিল বীজ এর ছবি
তিল বীজ এর ছবি

আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা
আরোও পড়ুনঃদ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট টি পরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অব্যশই কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার এর বিকল্প নেই। আমরা আজকে যে খাদ্য তালিকা উল্লেখ করেছি তা নিয়মিত গ্রহণ করবেন। এছাড়া অবশই পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করবেন। বাইরের ফাস্ট ফুড ,তেল চর্বি সম্ভব হলে এড়িয়ে যাবেন নাহলে পরিমানে একদম কম গ্রহণ করবেন।
আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট এর উপদেশ মেনে চললে আপনাকে আর কোষ্টকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে হবে না।

Categories
খাদ্য তালিকা

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে খাদ্য। ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য দেহের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবণ, চর্বি ও পানি খাদ্যের এই ছয়টি উপাদান দেহগঠন থেকে শুরু করে ক্ষয়পূরণ, কর্মশক্তি প্রদান, বৃদ্ধিসাধনসহ নানা কাজে যুক্ত থাকে। গবেষনায় দেখা যায় মানুষের খাদ্যগ্রহনের প্রায় ৫০-৬০% থাকে এই শর্করা জাতীয় খাবার। চলুন এই শর্করা জাতীয় খাবার কি এবং শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

শর্করা কি?

খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রধান ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শর্করা। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেনের এই তিন মৌলের সম্বন্বয়ে এটি একটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। শরীর আপনার হজমকৃত বা বিপাক করা খাবারগুলিকে দেহের গ্রহণ উপযোগী চিনিতে পরিণত করে যা স্যাকারাইড বা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা নামে পরিচিত। এই ম্যাক্রোনিয়োট্রিয়েন্টটি শরীরের স্বাভাবিক কোষের কার্যকারিতা থেকে শুরু করে কোষের বৃদ্ধি এবং মেরামত পর্যন্ত সমস্ত কিছু করে থাকে।

এমনকি শক্তিও সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম শর্করা 4 ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে যা পরবর্তীতে নানা শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে ব্যয় হয়। শর্করা জাতীয় খাবার প্রধানত উদ্ভিদজাত খাদ্যে পাওয়া যায়। এগুলি ল্যাকটোজ নামক দুধের চিনি আকারে দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতেও থাকে।শর্করা সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে রুটি, পাস্তা, মটরশুটি, আলু, ভাত এবং নানা শস্য জাতীয় খাদ্য। এছাড়াও শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি জেনে নিন।

শর্করার কাজ কি?

আসলে এই শর্করার কাজ কি বলুন তোহ! শর্করার প্রাথমিক কাজগুলির মধ্যে একটি হল আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করা।আপনার খাওয়া খাবারের বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার আগে হজম হয় এবং গ্লুকোজে ভেঙে যায়। রক্তে গ্লুকোজ আপনার শরীরের কোষগুলি গ্রহণ করে এবং তা সেলুলার শ্বসন নামে পরিচিত জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) নামক একটি জ্বালানী অণু তৈরি করে। এই এটিপিই দিয়েই কোষগুলি তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন করে। শরীরের বেশিরভাগ এটিপি খাদ্যতালিকার শর্করা এবং চর্বিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আসে।

শর্করাকে শক্তিভান্ডারও বলা হয়। এটি আপনার শরীরের বর্তমান চাহিদা পূরণ করে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ থাকলে, অতিরিক্ত গ্লুকোজ পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখে। গ্লুকোজের এই সঞ্চিত ফর্মটিকে গ্লাইকোজেন বলা হয় যা প্রাথমিকভাবে লিভার এবং পেশীতে পাওয়া যায়।

লিভারে প্রায় 100 গ্রাম গ্লাইকোজেন থাকে। এই সঞ্চিত গ্লুকোজ অণুগুলি সারা শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে এবং খাবারের মধ্যে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার পেশীতে যে গ্লাইকোজেন থাকে তা শুধুমাত্র পেশী কোষ দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে। উচ্চ ব্যায়ামের জন্য বা দীর্ঘ সময় কাজে ব্যবহারের জন্য এটি অত্যাবশ্যক। পেশীর গ্লাইকোজেন বিষয়বস্তু ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে তবে এটি প্রায় 500 গ্রাম পর্যন্ত জমা থাকে। যখন আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত গ্লুকোজ থাকে এবং আপনার গ্লাইকোজেন স্টোর পূর্ণ থাকে, আপনার শরীর অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটকে ট্রাইগ্লিসারাইড অণুতে রূপান্তর করতে পারে এবং তাদের চর্বি হিসাবে সংরক্ষণ করে।

যখন শরীরে জমাকৃত শর্করা থেকে গ্লুকোজের অভাব হয়, তখন অ্যামিনো অ্যাসিডে ভেঙে যায় এবং অন্যান্য যৌগগুলি শর্করায় রূপান্তরিত হয়।

যাইহোক, এটি আপনার শরীরে মস্তিষ্কের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে, যার জন্য দীর্ঘায়িত অনাহারের সময়ও শক্তির জন্য কিছু গ্লুকোজ জমা থাকে।

কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম উৎস হচ্ছে ফাইবার। এগুলো হজম হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় না। ফাইবারকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে: দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়।

দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় ওটস, লেগুম এবং ফল এবং কিছু শাকসবজির ভেতরের অংশে। শরীরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, এটি জলে টেনে নেয় এবং জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। এটি আপনার মলের নরম অংশকে বাড়িয়ে দেয় এবং মলত্যাগকে সহজ করতে সাহায্য করে।

চারটি নিয়ন্ত্রিত গবেষণার পর্যালোচনায় বলে যে, দ্রবণীয় ফাইবার মলের সামঞ্জস্য রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্তদের মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়ায়। যা পরবর্তীতে বৃহদান্ত্র এসব খাদ্যের রস শোষণ করে পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই ধরনের ফাইবার পুরো শস্য,ফল,সবজির খোসা এবং বীজে পাওয়া যায়।পর্যাপ্ত অদ্রবণীয় ফাইবার পাচনতন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

40,000 জনেরও বেশি পুরুষের উপর করা একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অদ্রবণীয় ফাইবার বেশি গ্রহণের সাথে ডাইভার্টিকুলার রোগের(যা অন্ত্রে থলি তৈরি হয়) 37% কম ঝুঁকিতে ছিলো। ফাইবার হল এক প্রকার কার্বোহাইড্রেট যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে পাচনতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমায়।আসুন এই পাওয়ার হাউসের খাবারের তালিকা কি কি জেনে নিন।

শর্করা জাতীয় খাবারের কাজ কি

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন আর শর্করা জাতীয় খাবারের কাজ কি তা জেনে নিবেন না, তা কি করে হয়। যখন আপনার খাদ্যতালিকার ৫০-৬০% থাকে শর্করা জাতীয় খাবার, তাহলে নিশ্চয়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। শর্করা জাতীয় খাবার দেহের শক্তির যোগান দেয়, দেহকে কর্মক্ষম রাখে। মোটকথা আপনার শরীর যে দিন থেকে রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুধুমাত্র এই শর্করা জাতীয় খাবারের কারণেই।

এছাড়াও দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও করে। ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজনে তা কাজে লাগায়। সেলুলোজ জাতীয় শর্করা দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।মোটকথা আপনি শর্করা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই নানা রোগের নিরাময় করে ফেলছেন। শর্করা জাতীয় খাবার আপনার শরীরে অতিরিক্তভাবে নানা ভিটামিন ও খনিজ লবনের যোগান দেয় যা আপনার দেহকে এগুলোর অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।
পরিমিত পরিমাণ শর্করা আপনার দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

শর্করার উৎস কি

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে জানতে হবে এই শর্করার উৎস কি। ভিন্ন ভিন্ন শর্করার উৎসও ভিন্ন ভিন্ন। তবে শর্করার প্রধানত দুই ধরনের উৎস রয়েছে-উদ্ভিজ ও প্রাণিজ উৎস।

  • গ্লুকোজ: গ্লুকোজ চিনির তুলনায় মিষ্টি কম। এই শর্করাটি আপেল, আঙুর, গাজর, খেজুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
    উদ্ভিজ শর্করার মূল যোগান দেয় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি।
  • শ্বেতসার বা স্টার্চ: শ্বেতসার প্রধান উৎস গম, ধান, ভুট্টা। আরো রয়েছে রাঙা আলু, আলু, এবং কচুতেও শ্বেতসার বা স্টার্চ পাওয়া যায়
  • ফ্রুকটোজ: পেঁপে, আম, কলা কমলালেবু প্রভৃতি মিষ্টি ফলে এবং ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমানে ফ্রুকটোজ থাকে। এটিকে ফল শর্করাও বলা হয়।
  • সুক্রোজ: সুক্রোজ চিনির তুলনায় অনেক গুণ মিষ্টি হয়ে থাকে। চিনি, আখের রস, গুড়, মিছরি এর প্রধান উৎস।
  • সেলুলোজ: কলা, বেল, আম, তরমুজ, বাদাম, শুকনো ফল এবং সব ধরনের শাকসবজিতে এই সেলুলোজ রয়েছে।

প্রাণিজ উৎস মূলত বিভিন্ন প্রানীর দুগ্ধ্য,কলিজা,চর্বি থেকে পাওয়া যায়।

  • গ্লাইকোজেন: পশু ও পাখি জাতীয় (যেমন: কবুতর, মুরগি, বিভিন্ন) প্রাণীর যকৃৎ এবং মাংসে গ্লাইকোজেন নামক শর্করাটি থাকে।
  • ল্যাকটোজ বা দুধ শর্করা: ছাগল, গরু ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে এই শর্করা থাকে।
  • কার্বোহাইড্রেটের আরো ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে: ডাল জাতীয় শর্করা-শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, মটর। ডাল জাতীয় শর্করা প্রাকৃতিকভাবে আঁশযুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। এই শর্করাগুলো আপনাকে সঠিক ডায়েট অনুযায়ী ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এই কার্বোহাইড্রেটগুলোর মধ্যে আরও ভিটামিন এবং খনিজলবণ তো রয়েছেই। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের খাবারও হতে পারে আপনার শর্করার একটি ভালো উৎস।

যেমন: ওটস্, পাউরুটি, বিস্কিট, বার্গার, চিজ, পাস্তা, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও নানা মিষ্টি জাতীয়। যাইহোক, প্রক্রিয়াজাত এবং পরিশোধিত খাবারগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু পুষ্টির মান একেবারে শূন্য। এগুলি মানুষের ওজন বাড়ায় এবং এমনকি টাইপ-2 ডায়াবেটিস, স্থুলতা ও হৃদরোগ মতো জটিল রোগ সৃষ্টি করতে বিশেষভাবে অবদান রাখে।

শর্করার প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে বিদ্যমান শর্করাকে স্বাদ, গঠন, বিজারণ ক্ষমতার কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শর্করার প্রকারভেদ গুলো হচ্ছে। যেমন:

স্বাদের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট প্রধানত দুই প্রকার,যথা-
সুগার-গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ
নন সুগার-স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন।

গঠন অণুর ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
মনোস্যাকারাইড-ট্রায়োজ, টেট্রোজ, পেন্টোজ, হেক্সোজ, হেপ্টোজ
ডাইস্যাকারাইড-সুক্রোজ, সেলোবায়োজ, ম্যালটোজ, ল্যাক্টোজ
অলিগোস্যাকারাইড-র‍্যাফিনোজ, স্কার্ডোজ
পলিস্যাকারাইড-স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন

বিজারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেট দুই প্রকার,যথা-
রিডিউসিং শ্যুগার বা বিজারক শর্করা– গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ
নন-রিডিউসিং শ্যুগার বা অবিজারক শর্করা– সুক্রোজ,ট্রেহালোজ

প্রতিদিন কি পরিমাণ শর্করা গ্রহণ করা উচিত

প্রতিদিন কি পরিমাণ শর্করা গ্রহণ করা উচিত তা জেনে নিয়ে আপনার খাদ্যতালিকা করা উচিত। আমেরিকান একটি খাদ্যতালিকা অনুযায়ী আপনার দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের 45 থেকে 65 শতাংশ শর্করা হওয়া উচিত। একজন ব্যক্তির জন্য দিনে গ্রহণ করা মোট 2,000 ক্যালোরির মধ্যে 900 থেকে 1,300 ক্যালরি শর্করা থাকতে হবে। যাইহোক, আপনার শর্করা গ্রহণের পরিমাণ অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা ও বিএমআই এর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হবে।

শর্করা জাতীয় সবজির তালিকা

শর্করার একটি বড় অংশের যোগান দেয় উদ্ভিদ। তাই আমাদের আপনাকে আর নতুন করে বলতে হবে না যে আপনার কেন শাকসবজি খাওয়া উচিত। শাকসবজিতে যে পরিমাণ ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ থাকে, তাতে এগুলো বাদ দিয়ে খাদ্যতালিকা করা আপনার নিতান্তই বোকামি হবে। একদিকে কিছু সবজি উচ্চক্যালরি সমৃদ্ধ শর্করা, আবার কিছু কম ক্যালরি সমৃদ্ধ। আপনি যতটা আঁশযুক্ত সবজি খেতে চান (মনে করুন অ্যাসপারাগাস, সেলারি এবং পালং শাক)। যাইহোক, শাকসবজি বিশেষ করে স্টার্চি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি।

বছরের পর বছর ধরে, কার্বোহাইড্রেট একটি খারাপ খ্যাতি অর্জন করেছে যে লোকেরা প্রায়শই তাদের ওজন বৃদ্ধি, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতির জন্য শর্করাকে দায়ী করে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি এবং পরিশোধিত খাবারগুলোতে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলির অভাব থাকে। তবে প্রাকৃতিক উৎসগুলো অধিক পুষ্টি ও ফাইবার-সমৃদ্ধ যা আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বেশ ভালোভাবে ভুমিকা রাখতে পারে। এমন কয়েকটি শর্করা জাতীয় সবজির নাম জেনে নিন শর্করা জাতীয় সবজির তালিকা যা আপনার খাদ্যতালিকায় অধিক ক্যালরি যোগ করবে-

ভূট্টা: ভুট্টা একটি জনপ্রিয় সবজি যা আপনি সারা বছর সাইড ডিশ হিসাবে খেতে পারেন। এমনকি সালাদের সাথেও উপভোগ করতে পারেন। 100 গ্রাম ভুট্টাতে প্রায় 25 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং 3.36 গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সরবরাহ করে। একটি গবেষণা অনুসারে, ভুট্টা রক্তে শর্করার মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য উপকারী।

ভূট্টা
ভূট্টা

গাজর: গাজর শর্করার একটি প্রধান উৎস বলা যায়। এক কাপ পরিমাণ গাজরে প্রায় ১২০গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

গাজর
গাজর

মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু খাবার হিসেবে অত্যন্ত সুস্বাদু। একটি মাঝারি সিদ্ধ মিষ্টি আলুতে 23.61 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। মিষ্টি আলু হল পটাসিয়াম, ভিটামিন A এবং C এর একটি চমৎকার উৎস।একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,মিষ্টি আলুতে থাকা কিছু শর্করা অণু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিটিউমার হিসেবে কাজ করে।

কুমড়া: মিষ্টি কুমড়া আমাদের দেশের অত্যন্ত সহজলভ্য একটি সবজি। এক কাপ (কাটা) মিষ্টি কুমড়ায় প্রায় ৮গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়।

কুমড়া
কুমড়া

বিট: বিটরুট বা বীট হল এমন একটি মিষ্টি, যা সবজি যা মানুষ কাঁচা বা রান্না করে খেতে পারে। এক কাপ কাঁচা বীটে রয়েছে 13 গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়। বিট পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। এগুলি মানুষকে প্রাকৃতিকভাবে অজৈব নাইট্রেট সরবরাহ করে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আলু: আলু আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সবজি। আপনি জানেন কি, এক কাপ পরিমাণ আলুতে (কাটা)প্রায় ২৭ গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়

মটরশুঁটি: মটরশুটি legume পরিবারের অন্তর্গত। এগুলি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সবচেয়ে ভালো। এক কাপ মটরশুঁটিতে রয়েছে 21 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এগুলি প্রোটিন এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস। প্রতি কাপে যথাক্রমে 6.99 গ্রাম এবং 8.1 গ্রাম পটাসিয়াম এবং আয়রন আছে।অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, মটরশুটি কোলনে প্রদাহ প্রতিহত করতে সক্ষম।

মটর শুটি
মটর শুটি

মসুরডাল: মসুর ডাল জনপ্রিয় উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল। এক কাপ সেদ্ধ মসুর ডাল 17.86 গ্রাম প্রোটিন এবং 15.6 গ্রাম ফাইবার সহ 39.86 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেট থাকে।

পুঁইশাক: পুইশাক খাননি এমন বাঙালি খুবই কম পাওয়ার যাবে।এই প্রতি 100 গ্রাম পুঁইশাকে 3.4 গ্রাম শর্করা পাওয়া যায়।তাই আপনি চাইলে এই সহজলভ্য শাকটি রাখতে পারেন আপনার দৈনন্দিন খাবার তালিকায়।

পুইশাক
পুইশাক

শর্করা জাতীয় ফল কি কি?

অনেকই ভাবেন যে, ফল শর্করামুক্ত,এতে কোনো শর্করা থাকে না। আপনাদের এই ধারণা একদমই ভুল, প্রায় সব ফলেই কমবেশি শর্করা পাওয়া যায়। উচ্চ শর্করাযুক্ত ফল আমাদের শরীরে ভিটামিন ও খণিজ লবণের পাশাপাশি শরীরে শক্তির যোগান দেয়। আসুন এই শর্করা জাতীয় ফল কি কি তা জেনে নেই।

উচ্চ শর্করাযুক্ত এমন কয়েকটি ফল হচ্ছে

কলা: আপনি যখন উচ্চ শর্করা জাতীয় ফলের কথা ভাবেন তখন আপনি সম্ভবত একটি কলার কথা ভাবতে পারেন। একটি মাঝারি কলা 27 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও এই শক্তির পাওয়ার হাউসটি হার্ট-স্বাস্থ্যকর ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ যেমন ভিটামিন বি 6 ও পটাসিয়ামের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উৎস।বলা যায়,আপনি সারাদিনের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি পাচ্ছেন শুধুমাত্র কলা থেকেই।

আনারস: এক আনারসে কাপে প্রায় 22 গ্রাম শর্করাসহ বিভিন্ন ভিটামিনে সমৃদ্ধ একটি পাঞ্চ প্যাক। এই সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।আনারস গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার দৈনিক ভিটামিন সি চাহিদার 131 শতাংশ এবং ম্যাঙ্গানিজের চাহিদার 76 শতাংশ নিশ্চিত করতে পারবেন।

আম: আমে অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলগুলির চেয়ে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। এক কাপ কাটা আম থেকে ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।এই “ফলের রাজা” খাওয়ার কারণ হচ্ছে—এটি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন B6 এর একটি ভালো উৎস।

আপেল: এটি আপনাকে অবাক করে দিতে পারে যে একটি মাঝারি আপেলে (তিন ইঞ্চি ব্যাস) 25 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এটি আংশিক একটি উচ্চ ফাইবার ফল। আপেল ভিটামিন সি এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সতন্ত্র রাখতে সাহায্য করে।

কিশমিশ: কার্বোহাইড্রেটের উচ্চ পরিমাণের কারণে কিশমিশের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।সম্ভবত 34 গ্রাম এই কার্বোহাইড্রেট আপনাকে যেকোন দৌড়ের জন্য শক্তি প্রদান করে থাকে। কিন্তু কিসমিস আপনাকে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনাকে 1.6 গ্রাম ফাইবারও দিবে, যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং পটাসিয়াম এবং লৌহের মতো খনিজলবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

খেঁজুর: ড্রাইফুডের মধ্যে খেজুর একটি উচ্চমানের শর্করা জাতীয় ফল। যার কারণে রোজার সময়ে মুসল্লীরা এটিকে খাদ্যতালিকায় রাখতে ভুল করেন না।প্রতি 100গ্রাম খেজুরে আপনি প্রায় 36গ্রাম শর্করা পাবেন।

শর্করা নিয়ে বর্তমান সমাজে একটা ভ্রান্ত ধারণা দেখা দিয়েছে।অনেকেই ওজন বৃদ্ধি ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য শর্করাকে দায়ী করেন।ফলে তারা খাদ্যতালিকা থেকে প্রায় শর্করাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। আর ফলস্বরূপ শর্করার অভাবে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, শরীর নিস্তেজ, ক্ষুধামন্দা,রুচিহীণতা, অতিরিক্ত ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাতপা অসাড়সহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে । রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে হাইপারগ্লোমিয়া দেখা দেয়। যেখানে শর্করা সমগ্র দেহের শক্তির যোগান দিচ্ছে,সেখানে একে বাদ দিয়ে কীভাবে আদর্শ ডায়েট হয়। আপনার শরীরের চাহিদা ও বিএমআই অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করছেন কিনা তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা

কথায় আছে,অতিমাত্রায় কোনোকিছুই ভালো নয়। বেশি পরিমাণে শর্করা গ্রহণ দেহের জন্য কখনোই ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে, ওজন বৃদ্ধি করার সাথে সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে কি শর্করা জাতীয় খাবার খাবো না? অবশ্যই খাবেন। শর্করা জাতীয় খাবার তালিকা কি কি তা জেনে নেই বাছাই করবেন কোনটা আপনার বেশি দরকার, কোনটা নয়। নিজের শরীরের চাহিদা ও বিএমআই অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করবেন।

Categories
খাদ্য তালিকা

আমিষ জাতীয় খাবারের উপকারিতা এবং দৈনিক আমিষের চাহিদা

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল এগুলোর যেকোনো একটা খাবার মোটামুটি আমাদের সবার বাসাতেই থাকে তাই তো! কিন্তু আপনি জানেন কি?এসব খাবারকে কি জাতীয় খাবার বলা হয়? মাছ, মাংস, ডিম, ডাল এগুলোকে সাধারণত আমিষ জাতীয় খাবার বলা হয়।আমিষ হলো কোষের প্রোটোপ্লাজমের প্রধান উপাদান। তাই আমিষ-কে বলা হয় জীব কোষের প্রাণ। আমিষ ছাড়া কোষ, কলা, গ্রন্থির গঠন সম্ভব হতো না। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আমিষ সম্পর্কে নানা তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরবো,তার মধ্যে আছে-

  • আমিষ জাতীয় খাবারের উপকারিতা
  • আমিষের উপাদান কয়টি
  • কোন খাবারে আমিষ বেশি থাকে
  • আমিষ কত প্রকার ও কি কি
  • আমিষের উৎস কি
  • দৈনিক আমিষের চাহিদা

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।

আমিষ জাতীয় খাবারের উপকারিতা

আমিষকে মূলত দেহ গঠনের প্রাথমিক উপাদান বলা হয়;কেননা আমাদের দেহের পেশি, চুল,হাড়, ত্বক, নখ ইত্যাদি অঙ্গে আমিষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর এই আমিষের গাঠনিক একক হল অ্যামাইনো এসিড। মূলত ২০ প্রকার অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি হয় আমিষ। আমিষের গঠনে এই অ্যামাইনো এসিডগুলো একে অন্যের সাথে পেপটাইড বন্ধনী দ্বারা যুক্ত থাকে। বিভিন্ন আমিষ বিভিন্ন দ্রবণীয় দ্রবীভূত হয়।

যেমন: কাঁচা ডিম পানিতে দ্রবণীয় হলেও সিদ্ধ ডিম পানিতে দ্রবণীয় হয় না। আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে,চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং আমিষ জাতীয় খাবার খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। তবে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হলে নানা সমস্যা হতে পারে।আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা বিষয়গুলো নিয়েই জানাবো। আসুন আমরা প্রথমেই আমিষ জাতীয় খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

ওজন বাড়ানোর জন্য সহায়ক

যাদের ওজন তুলনামূলক অনেক কম তারা তাদের ওজন বাড়ানোর জন্য কতই না চিন্তা করেন; কিন্তু নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলেই ওজন বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব। যাদের কম ওজন তারা যদি আমিষ জাতীয় খাবার নিয়মিত গ্রহণ করে পাশাপাশি ব্যায়াম করে তবে তাদের কাছে ওজন বাড়ানো খুব বেশি কঠিন লাগবে না। এছাড়াও ওজন বাড়ানোর অন্যান্য টিপস মেনে চলতে হবে।

পেশি বৃদ্ধি করতে: যারা অ্যাথলেটিক ও নিয়মিত জিম করেন তাদের মাসেল বা পেশি বৃদ্ধি করতে আমিষ জাতীয় খাবার সাহায্য করে থাকে।পেশি বৃদ্ধির জন্য আমিষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়াও আমিষ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শোষণ বাড়াতে করে।

শক্তি প্রদান করতে: যারা নিয়মিত ভারী ব্যায়াম করেন তারা দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করে থাকেন আর দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করলে ক্যালরি বার্ন হয়। পরবর্তী ব্যায়াম করতে বা খেলাধুলা করতে শক্তির দরকার হয় এবং এই শক্তি একজন খেলোয়াড় খাদ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে আমিষ জাতীয় খাবার থেকে বেশি পেয়ে থাকেন। এছাড়াও পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট গ্রুহণ করতে হয়।

হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করতে: আমরা জানি যে, সকল এনজাইম-ই আমিষ বা ইংরেজিতে যদি বলি তাহলে প্রোটিন। আর এনজাইম হরমোনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বা উৎপাদনে সহায়তা করে। আবার কিছু পেপটাইড হরমোন আছে যেগুলো আমিষ জাতীয়; যেমন- গ্রোথ হরমোন, ইনসুলিন, থাইরক্সিন, অ্যাড্রেনালিন ইত্যাদি। এই সকল হরমোনগুলো দেহের গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় কাজ ও বর্ধন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেহে এই সকল হরমোন ক্ষরণে ও বৃদ্ধিতে আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার সহায়তা করে। তাই আমাদেরকে আমিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে।

রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে: যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের শরীরে ইনসুলিন লেভেল স্বাভাবিক ব্যক্তির মতো থাকে না এবং তাদের রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেশি থাকে।কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করলে রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে কারণ আমিষ জাতীয় খাবারে সুগার লেভেল কম থাকে।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: আমিষ জাতীয় খাবার যেমন রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমাতে সাহায্য করে তেমনি এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টরল এলডিএল এর পরিমাণও কমাতে পারে। আমরা জানি যে, আমাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বেড়ে গেলে হার্টের অর্থাৎ হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচল কমে যায়। কারণ অতিরিক্ত খারাপ কোলেস্টরল ধমনীর রাস্তা সরু করে দেয়। আমিষ জাতীয় খাবার এই খারাপ কোলেস্টরল শরীর থেকে বের করে দিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: আমাদের দেহে যখন বাইরে থেকে কোনো জীবাণু প্রবেশ করে তখন এই জীবাণু ধ্বংস করার জন্য বা প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের একটি কোষ ‘বিটা লিম্ফোসাইট’ থেকে এক ধরনের আমিষ উৎপন্ন হয়, এদেরকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। অতএব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে আমিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে।

রক্ত জমাটকরণে: দেহের বিভিন্ন অংশ কেটে গেলে রক্ত বের হয় এটাই স্বাভাবিক। তবে বেশিক্ষণ ধরে রক্ত পড়তে থাকলে তা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রাকৃতিকভাবেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়। রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে ১৩ টি উপাদান, এর মধ্যে ১২ টি-ই হলো আমিষ বা প্রোটিন। তবে এ কাজে সহায়তা করে ভিটামিন ‘কে’ও সহায়তা করে। খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার কম থাকলে এই রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখা জরুরি।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: চুলের বৃদ্ধি ও গোড়া মজবুতের জন্য পুষ্টি উপাদান দরকার। চুলের রঞ্জক পদার্থ হচ্ছে মেলানিন ও চুলের গঠন সাহায্য করে কেরাটিন; আর মেলানিন ও কেরাটিন দুটোই মূলত এক ধরনের আমিষ।শরীরে আমিষের অভাব হলে চুলের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। তাই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমিষ জাতীয় খাবার আমাদেরকে প্রতিদিন খেতে হবে।

আমিষের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এছাড়াও আমিষ আমাদের নখের বৃদ্ধি ,ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় ভৃমিকা রাখে। আবার দেহের অক্সিজেন পরিবহনে হিমোগ্লোবিন সহায়তা করে কিন্তু এই হিমোগ্লোবিন মূলত এক ধরনের আমিষ।

আমিষের উপাদান

প্রত্যেক অনুকে ভাঙলে আরো কয়েকটি রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় তেমনি আমিষকে ভাঙলেও পাওয়া যায়। আমিষকে আমরা অনু বলতে পারি আর এই অনুকে ভাঙলে যা পাওয়া যায় সেটাকে সেটার উপাদান বলে।

আমিষের মূল উপাদান হলো চারটি। আমিষকে ভাঙলে পাওয়া যায় হলো-কার্বন (৫১-৫৫%) হাইড্রোজেন (৬-৭%) অক্সিজেন (২০-২৪%) নাইট্রোজেন (১৬%) এছাড়াও সামান্য পরিমাণে সালফার ,কখনো ফসফরাস ও লৌহ পাওয়া যায়। আমিষে এই সকল অনু সাধারণত অ্যামাইনো এসিডরূপে থাকে।

কোন খাবারে আমিষ বেশি থাকে?

সকল খাবারেই মোটামুটি আমিষ পাওয়া যায় তবে সব খাবারেই কোনো একটা পুষ্টি উপাদান বেশি থাকলে আমরা তাকে সেই উপাদানের খাদ্য বলে আখ্যায়িত করি। যেমন: মাংসে আমিষ বেশি আছে বলে আমরা মাংসকে আমিষ জাতীয় খাবার বলে থাকি। এখন আপনাদেরকে কোন খাবারে আমিষ বেশি থাকে সেই সম্পর্কে জানাবো।

কিছু আমিষ জাতীয় খাবারের নাম হলো

  • সকল দুগ্ধজাতীয় খাবার: দুগ্ধজাতীয় খাবারের মধ্যে আছে দুধ, পনির, ছানা, দধি ও দুধের তৈরি নানা খাবার।
  • ডাল জাতীয় খাবার: সকল ধরনের ডাল যেমন-মুগ ডাল, মসুর ডাল।
  • বীজ জাতীয় খাবার: শিমের বিচি, বাদাম ,মটরশুঁটি ,তৈলবীজ ইত্যাদি
  • মাংস ও মাছ জাতীয় খাবার: সকল ধরনের মাংস যেমনঃ গরুর মাংস, মুরগির মাংস, হাসের মাংস, ছাগলের মাংস, মহিষের মাংসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ পাওয়া যায়। তবে মুরগির বুকের মাংসে ও কলিজায় আমিষ বেশি থাকে। এছাড়াও সকল ধরনের সামুদ্রিক ও লোনা পানির মাছে আমিষ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।আবার শুঁটকি মাছেও ভালো পরিমাণ আমিষ পাওয়া যায়।

আমিষ কত প্রকার ও কি কি?

বিভিন্ন ধরনের আমিষ জাতীয় খাবার প্রকৃতিতে পাওয়া যায় সেই অনুযায়ী আমিষের শ্রেনিকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের আমিষের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন; কিছু আমিষ তাপে জমাট বাঁধে, কিছু আমিষের ঘনত্ব বেশি। এসব নানা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে আমিষের শ্রেনিকরণ করা হয়েছে।

ক) গঠন অনুযায়ী আমিষকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন-

  1. সরল আমিষ
  2. যৌগিক আমিষ
  3. উদ্ভূত আমিষ

খ) নানাবিধ কাজের ভিত্তিতে আমিষকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন-

  • দেহরক্ষাকারী আমিষ: এন্টিবডি,এন্টিজেন।
  • রক্তজমাটকারী আমিষ: ফিব্রিনোজেন।
  • হরমোন ও এনজাইম আমিষ: ইনসুলিন, পেপসিন।
  • সংকোচন আমিষ: পেশির সংকোচনের সহায়তা করে।
  • গঠনগত আমিষ: নখ ও চুলের কেরাটিন।

গ) পুষ্টিগত ভূমিকার উপর ভিত্তি করে আমিষের ২ ধরনের, যেমন-

  1. সম্পূর্ণ আমিষ: যেসব খাদ্য সকল অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড সঠিক পরিমাণে আছে তারাই হলো সম্পূর্ণ আমিষ। যেমন- দুধ, ডিম।
  2. অসম্পূর্ণ আমিষ: যেসব খাদ্যে সকল অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড সঠিক পরিমাণে নেই বা এক বা দুটি অ্যামাইনো এসিড আজে তারাই হলো অসম্পূর্ণ আমিষ। যেমন- ডাল।

আমিষ কত প্রকার ও কি কি, এটা জানার পর এবার আমরা আমিষের উৎস সম্পর্কে জানবো।আমিষের উৎস জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

আমিষের উৎস

আমিষ আমাদের শরীরের জন্য আবশ্যিক একটি উপাদান যা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা খুব জরুরী। কিছু খাবারে আমিষ বেশি থাকে আবার কিছু খাবারে আমিষ কম থাকে। কিন্তু তাই বলে কম আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে না।

আমিষের উৎস প্রধানত দুইটি

১) প্রাণিজ আমিষ: প্রানিজ আমিষ উদ্ভিজ্জ আমিষের তুলনায় ভালো কারণ প্রাণিজ আমিষে সব ধরনের অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান আছে।তাইতো দুধ আর ডকে সবাই আদর্শ খাবার বলে চিনে।

২) উদ্ভিজ্জ আমিষ: উদ্ভিজ্জ আমিষে সব অ্যামাইনো এসিড নেই এবং এটি দামেও সস্তা। উদ্ভিজ্জ আমিষ জাতীয় খাবারের আমিষের পরিমাণ চাইলেই বাড়িয়ে তোলা যায়। বিভিন্ন ধরণের ডাল ও বীজ একসাথে রান্না করলে আমিষের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। আবার খিচুড়ি মাধ্যমেও আমিষের পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়।

দৈনিক আমিষের চাহিদা

আমাদের সবার শরীর সমান পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না ,আর সবার সমান পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনও হয় না। একজন বৃদ্ধ বয়সে এসে খাদ্যের চাহিদা কমে যায় তেমনি শিশুকালে খাদ্য চাহিদা বেশি থাকে। এমনিতেও বাড়ন্ত শিশুদের বেশি বেশি পুষ্টি দরকার হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার আর আমার দৈনিক আমিষ চাহিদা এক রকম নয়।চলুন জেনে নিই দৈনিক কি পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাবার আমাদেরকে গ্রহণ করা জরুরি।

বয়স
দৈনিক আমিষের চাহিদা
০-৬ মাস
৬-১২ মাস
৮ গ্রাম
১০গ্রাম
১-৩ বছর
৩-৬ বছর
৭-৯ বছর
১২ গ্রাম
১৬ গ্রাম
২৩ গ্রাম
১০-১২ বছর (ছেলে)
১০-১২ বছর (মেয়ে)
৩২ গ্রাম
৩৩ গ্রাম
১৩-১৫ বছর (ছেলে)
১৩-১৫ বছর (মেয়ে)
৪৫ গ্রাম
৪৩ গ্রাম
১৬-১৮ বছর (ছেলে)
১৬-১৮বছর (মেয়ে)
৫৫ গ্রাম
৪৬ গ্রাম
১৮ + প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ গ্রাম
গর্ভবতী মা ২য় ট্রাইমেস্টার +৭ গ্রাম
৩য় ট্রাইমেস্টার +১৭ গ্রাম
অ্যাথলেট, খেলোয়াড়,অধিক পরিশ্রমী প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৫-২ গ্রাম করে।

যারা কম পরিশ্রম করেন ও যারা অধিক পরিশ্রম করেন তাদের আমিষ চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়। আপনার শরীরের জন্য কতটুকু আমিষ দরকার তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই একজন প্রফেশনাল নিউট্রিশনিষ্ট এর শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিবেন।
আরোও পড়ুনঃপটাসিয়ামের উপকারিতাপরিশেষেঃ প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাবার খেলে দেহের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে আবার অতিরিক্ত পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাবার খেলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে দেখা যায় শরীরের মেদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে যা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যতটুকু আফনার শরীরের জন্য প্রযোজ্য ততটুকুই আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন।আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে আমরা আমদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘আমিষ’ নিয়ে অনেক স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিয়েছি। আশা করি আমাদের এই তথ্য আপনার জন্য উপকার হবে। পরবর্তী টপিক নিয়ে বা নতুন তথ্য জানতে আমাদের আর্টিকেল সাথেই থাকুন।

Categories
খাদ্য তালিকা

পটাসিয়ামের উপকারিতা

পটাসিয়াম নামটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। যেমন: কেউ বলে, “বেশি করে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাও” আবার কেউ বলে, “পটাসিয়াম এর পারমাণবিক সংখ্যা কত”? এসব কথার মাধ্যমেই বোঝা ‘পটাসিয়াম’ শব্দটা খুব বেশি একটা অপরিচিত নয় আমাদের কাছে। কিন্তু এই পটাসিয়াম নিয়ে অনেক কিছু জানার আছে ; কারণ আমরা শুধু পটাসিয়াম শব্দটার সাথে পরিচিত,এর বিস্তর তথ্য কয়জনইবা জানি।
পটাসিয়ামের উপকারিতা

পটাসিয়াম হলো একটি রাসায়নিক উপাদান বা পদার্থ। একাডেমিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে পটাসিয়াম একটি পদার্থ যার পারমাণবিক সংখ্যা ১৯ এবং প্রতীক K।পটাসিয়াম দেখতে কিছুটা রুপালি-সাদাটে বর্ণের। আবার খাদ্য ও স্বাস্থ্যর দিক দিয়ে চিন্তা করলে পটাসিয়াম হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি মিনারেল যা আমাদের শরীরের সকল স্থানের টিস্যুর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের পটাসিয়ামের উপকারিতা সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরবো।সেই পর্যন্ত আমাদের আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। চলুন দেখে নিই পটাসিয়ামের উপকারিতা নিয়ে আজকের আয়োজনে যা থাকছে—

পটাসিয়ামের উপকারিতা
পটাসিয়াম অক্সাইড এর স্ফুটনাঙ্ক
পটাসিয়াম অক্সাইড এর গঠন
পটাসিয়াম অক্সাইড এর সংকেত
পটাসিয়াম জাতীয় খাবার
পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর কাজ
পটাসিয়াম ক্লোরাইড এর কাজ

পটাসিয়াম আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন ইলেক্ট্রোলাইট কি? সেটা নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি। চলুন তাহলে এবার মূল কথায় আসি।

পটাসিয়ামের উপকারিতা

পটাসিয়ামের উপকারিতা দুই ধরনের একটি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অন্যটি ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন বিক্রিয়া করতে পটাসিয়াম প্রয়োজন হয়।পটাসিয়ামের রাসায়নিক উপকারিতা পরে জানব আগে স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করি।

আগেই বলছি পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খাদ্যের ছয়টি উপাদান থাকা জরুরী। মিনারেল হলো তার মধ্যে অন্যতম। এই মিনারেল আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। পটাসিয়ামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো:

ক্রোনিক ডিজিজ দূরে রাখে: আজকাল ক্রোনিক ডিজিজ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সতেজ, ক্যামিকেলমুক্ত ও পুষ্টিকর খাবারই পারে আমাদের এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দিতে। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থ সবল রাখতে ভিটামিন ও মিনারেল খুব গুরুত্বপূর্ণ। পটাসিয়াম আমাদের শরীরকে হার্টের সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার ও টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগ থেকে দূরে রাখে অর্থাৎ এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।

কিডনির ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে: যারা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে না তখন তাদের শরীরে পটাসিয়ামের অভাব দেখা যায়। পটাসিয়াম এর অভাব হলে কিডনি তখন ক্যালসিয়াম পুনরায় শোষণ করতে চায় এবং অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে। আর এই পটাসিয়াম কিডনিতে পাথর সমস্যা দূরে রাখতে সহায়তা করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে:
যাদের উচ্চ আছে তারাই জানে প্রতিটা খাদ্য কি পরিমাণে বাছাই করে খেতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, লো সোডিয়াম খাবার ও হাই পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।অর্থাৎ যেসব খাদ্যে কম পরিমাণে সোডিয়াম আছে ও যেসব খাদ্যে বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম আছে সেই খাবারগুলো খেলে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

হার্টের ফাংশন সচল রাখে: উচ্চ রক্তচাপ থেকেই যত সমস্যার উদ্ভব হয়। যাদের সব সময় উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তের সুগার লেভেল বেশি থাকে অর্থাৎ ডায়াবেটিস বেশি থাকে তাদের হার্টের সমস্যা ও কিডনি জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে।তাই পটাসিয়াম যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই হার্টের ফাংশনও সচল রাখতে সহায়তা করে।

কোষের পানিসাম্যতা রক্ষা করে: আগেই বলেছিলাম পটাসিয়াম ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। ইলেক্ট্রোলাইট মানে হলে পানিসাম্যতা বজায় রাখা। আমাদের কোষের ভেতরের ও বাইরের যে চাপ তা পটাসিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। গরমের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের হয়ে যায় ফলে কোষের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পটাসিয়াম এই ভারসাম্য বজায় রাখে বলেই আমরা সুস্থ থাকি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: পটাসিয়াম রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমাতে সাহায্য করে ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। আবার পটাসিয়াম রক্তনালী পরিষ্কার রাখে।

নার্ভ সিস্টেম সচল রাখে: পটাসিয়াম আমাদের শরীর ও ব্রেইনের নার্ভ ফাংশনের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। ফলে আমরা খুব দ্রুত প্রতিবর্তী ক্রিয়ায় সাড়া দেই।

হাড় ও পেশির জন্য: বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশি শক্তি কমে যায় ও পেশি নষ্ট হয়ে যায়।পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পেশির ক্ষয় রোধ করে ফলে পেশির শরীরের ভর সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হয় না।আর পেশি সংরক্ষণ থাকলে আমাদের হাড়ও মজবুত থাকবে।

উপকারিতা তো জানলেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন পটাসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটা মিনারেল।তবে উপকারিতা জানার পাশাপাশি কিছু অপকরিতা না জানলেই নয়।

সতর্কতা: পটাসিয়াম কিডনিতে পাথর ও কিডনি সমস্যা দূরে রাখলেও যারা ইতিমধ্যেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য পটাসিয়াম মোটেই ভালো নয়। এই জন্য নিউট্রিশনিষ্ট বা ডাক্তাররা কিডনি রোগীর ডায়েটে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম রাখেন।

পটাসিয়ামের অপকরিতা

আসলে কোনো সতেজ, তাজা খাবারের কোনো অপকরিতা নেই। কিন্তু যখন কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে খায় বিপদটা তখনই ঘটে।পটাসিয়ামের অপকরিতা না বলে আমরা এটাকে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা বলতে পারি ।

পটাসিয়াম অক্সাইডের স্ফুটনাংক

ল্যাবরেটরিতে যে পটাসিয়াম আছে সেটাকে যদি আপনি বাতাসের সংস্পর্শে রাখেন তাহলে সেটি বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সাথে মিশে পটাসিয়াম পার অক্সাইড গঠন করবে।আর পটাসিয়াম অক্সাইড হলো একটি আয়নিক যৌগ যা পটাসিয়াম ও অক্সিজেনের দ্বারা গঠিত হয়েছে। পটাসিয়াম অক্সাইড দেখতে কিছুটা ধূসর বর্ণের ।অতিরিক্ত অক্সিজেনের সাথে পটাসিয়াম পুড়ে পটাসিয়াম অক্সাইডে গঠন করে।

পটাসিয়াম অক্সাইডের স্ফুটনাংক 1032 K ​(759 °সে, ​1398 °ফা)।
পটাসিয়াম অক্সাইডের গলনাংক 336.53 K ​(63.38 °সে, ​146.08 °ফা)।

নোট: এখানে K দ্বারা কেলভিন একক,,°সে দ্বারা সেলসিয়াস এবং °ফা দ্বারা ফারেনহাইট তাপমাত্রা বোঝানো হয়েছে।

পটাসিয়াম অক্সাইডের গঠন

পটাসিয়াম অক্সাইড রাসায়নিক এই পদার্থটি আজকাল নানাভাবে ব্যবহার হচ্ছে। পটাসিয়াম অক্সাইড সম্পর্কে এতক্ষণ জানার পর এবার পটাসিয়াম অক্সাইডের গঠন না জানলেই নয়।

পটাসিয়াম অক্সাইডের সংকেত

রসায়নে সব পদার্থকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা, সহজে চিনার জন্য ও বিক্রিয়ার জন্য সংকেত ব্যবহার করা হয়। তেমনি পটাসিয়াম অক্সাইডের সংকেত হলো: K2O।

পটাসিয়াম জাতীয় খাবারের তালিকা

পটাসিয়াম জাতীয় খাবারের তালিকা
পটাসিয়াম জাতীয় খাবারের তালিকা;

যেসব খাবারে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলোই পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বলে পরিচিত। আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় পটাসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের নাম জানা খুব জরুরী। আমাদের আর্টিকেলে কয়েকটি খাবার যেগুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম আছে সেই নিয়ে আজ জানাবো। নিচে তা তুলে ধরা হলোঃ

  • কলা
  • খেজুর
  • অ্যাভোকেডো
  • সব ধরনের বাদাম
  • মিষ্টি আলু
  • মিষ্টি কুমড়ো
  • মিষ্টি কুমড়োর বিচি
  • শিমের বিচি
  • ফ্লাক্স সিডস
  • দই
  • দুধ
  • কমলা
  • স্যালমন মাছ
  • কিসমিস
  • ফলমূল ও শাকসবজি

এছাড়াও আরো পটাসিয়াম জাতীয় খাবার আছে ,তবে এই খাবারগুলোতে পটাসিয়াম বেশি পরিমাণে আছে।

পটাসিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেটের কাজ

পটাসিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেট গন্ধহীন ,কঠিন ও ফ্যাকাশে বর্ণের তবে পানিতে দিলে গাঢ় বেগুনি বর্ণের হয়। মূলত এটি একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট।পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেটের সংকেত হলো KMnO4।

পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেটের কাজ বলতে এটি সাধারণত রাসায়নিক কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়। চলুন পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেটের কিছু কাজ সম্পর্কে জেনে নিই-

১৷ কৃষি শিল্পে ব্যবহার করা হয়।যেমন মাছ চাষে, জমি চাষের মাটিতে প্রয়োগ করা যায়।

২৷ চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন।ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা (একজিমা) দূর করতে।

৩৷ ক্ষতিকর ছত্রাক ও ব্যাক্টিরিয়া ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়।

৪৷কারখানার পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিত আছে যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।এসব পানি শোধনের জন্য পটাসিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেটের প্রয়োজন হয়।

সর্তকতা:

পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ত্বকের প্রয়োগের সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজমতো ব্যবহার করতে হয় নয়তো ত্বক জ্বলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা

পটাসিয়াম ক্লোরাইডের কাজ

পটাসিয়াম ক্লোরাইড হলো একটি মেডিসিন; মূলত যেসব মানুষ বেশি পরিমাণে পটাসিয়ামের অভাবে ভুগছেন তাদের জন্য এবং এটি খেতে ডাক্তার নিজে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।পটাসিয়াম ক্লোরাইড সবাই খেতে পারেন না। খেলে নানা শারীরিক জটিলতা হয়। শারীরিক জটিলতা জানার আগে আসুন জেনে নিই পটাসিয়াম ক্লোরাইডের কাজ নিয়ে-

১) যেসব মানুষে শরীর লো পটাসিয়াম লেভেল তাদের জন্য পটাসিয়াম ক্লোরাইড বেস্ট।শরীরে পটাসিয়াম লেভেল কম থাকলে তাকে হাইপোক্যালিয়া বলে। এই হাইপোক্যালেমিয়ার সমস্যা সমাধানে পটাসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। এটাই মূলত পটাসিয়াম ক্লোরাইডের আসল কাজ।

২) এছাড়াও পটাসিয়াম ক্লোরাইড খেলে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের যেসব উপকারিতা আছে সেগুলো সব পাওয়া যাবে।

পটাসিয়াম ক্লোরাইডের সতর্কতা

পটাসিয়াম ক্লোরাইড খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্যকারো বা নিজের মতো করে এই ঔষধটি খাওয়ার দরকার নেই। এছাড়াও আরো কিছু সতর্কতা মেনে চলবেন।

  1.  যাদের শরীরে অতিরিক্ত পটাসিয়াম আছে তারা পটাসিয়াম ক্লোরাইড খাবেন না।
  2. যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তারা এই ঔষধটি এড়িয়ে চলুন।
  3. যাদের লিভারে সমস্যা আছে তারাও এটি এড়িয়ে চলুন ।
  4. গর্ভবতী মায়েরা জেনে বুঝে সচেতন না হয়ে সেবন করবেন ন।
  5. এছাড়াও সর্বসাধারণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না।

পটাসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিনারেল। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে; নয়তো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৩৪০০ মিলিগ্রাম এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ২৬০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। তবে বয়স ও কাজের ধরন, ওজন ,উচ্চতা অনুযায়ী এয পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।

আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনারা জানলেন পটাসিয়ামের উপকারিতা ও পটাসিয়াম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। পটাসিয়ামের অভাব হলে আজকাল যেসব সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হয়, তবে সেগুলো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। শারীরিক খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে সব ধরনের খাবার ও ঔষধ গ্রহণ করতে হয়।

তো বন্ধুরা ,আজ তো জানলেন পটাসিয়ামের উপকারিতা নিয়ে, এরপর আপনাদের জানাবো অন্য কোনো খাদ্য উপাদান বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নতুন কোনো তথ্য নিয়ে; সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আমাদের আর্টিকেলের সাথেই থাকবেন।

Categories
খাদ্য তালিকা

জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা

বর্তমানে অনেকেই শরীরের অতিরিক্ত চর্বি নিয়ে চিন্তিত। কথায় আছে না- বেশি ভালো ভালো না ’চর্বি দেহের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত চর্বি দেহের জন্য নানা রোগ ডেকে আনে। আপনিও কি অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ নিয়ে চিন্তিত? চর্বি কমানোর উপায় খুঁজছেন? আসলে চর্বি কমাতে হলে প্রথমেই সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হবে। চর্বি কমাতে চাইলে আপনার চর্বি কমানোর খাবার তালিকা জানার বিকল্প নেই। সঠিক তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে সহজেই আপনি আপনার দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সফল হবেন। চলুন চর্বি কমানোর খাবার তালিকা সম্পর্কে অবহিত হই।

চর্বি কি

আসলে এই চর্বি কি? চর্বি আমরা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির উৎস হিসেবে খাদ্যগ্রহণ করি।খাদ্যের প্রধান তিনটি উপাদান হচ্ছে-প্রোটিন, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট। এর মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালরির একটা বড় অংশ আসে চর্বি জাতীয় খাবার থেকে।সত্যি বলতে, শক্তির পাওয়ার হাউস বলা হয় চর্বিকে। রসায়ন ও জীব বিজ্ঞানের ভাষায়, ফ্যাট বা চর্বি হচ্ছে প্রাণীদেহে বিদ্যমান এক ধরনের লিপিড যা গ্লিসারল,ফ্যাটি এসিড বা ট্রাই গ্লিসারাইডের সমন্বিত যৌগ। মূলত এই চর্বি কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বিত জৈব যৌগ। চর্বির ধর্ম অনুযায়ী, এরা সাধারন তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে।এরা জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় ও অজৈব দ্রাবকে অদ্রবণীয়।

চর্বি কমানোর খাদ্য তালিকা

অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ কমানোর পূর্বশর্ত আপনার খাদ্যভাসে পরিবর্তন। শর্করা ও চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আপনাকে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন যেমন: ডাল জাতীয় খাবার রাখবেন। নিয়মিত কফি পান করবেন, কফি ফ্যাট কমাতে ভালো ভুমিকা রাখে।যদি চর্বি কমাতে চান, তবে অবশ্যই খাবার তালিকা থেকে লবণ বাদ দিন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রীণ টি বা মেথি জল পান করুন, মেদ কমাতে এটি বেশ কার্যকর উপায়।খাবার তালিকায় কোনোভাবেই ফাস্টফুড বা কোমল পানীয় রাখা যাবে না। রিফাইনড চিনি গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দিন।

চর্বিযুক্ত খাবারের কাজ

চর্বি নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা দেখা দিয়েছে। স্থূলতা, ওজন বৃদ্ধি ও নানা রোগের কারণে অনেকেই একে খাদ্যতালিকা থেকে প্রায় বাদ দিয়ে দিচ্ছে। আপনি এর কার্যকারিতা না জেনেই একে খাদ্যতালিকা দিয়ে বাদ দিতে পারেন না কখনোই। চলুন এই চর্বিযুক্ত খাবারের কাজ কি তা জেনে নেই।

কার্বোহাইড্রেট আপনার শরীরের জ্বালানির প্রধান উৎস, এতে কোনো সন্দেহ নাই।তবে যখন কার্বহাইড্রেট পাওয়া যায় না, তখন চর্বিই শক্তির ব্যাকআপ উৎস হিসাবে কাজ করে। চর্বি শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস। এক গ্রাম চর্বিতে 9 ক্যালোরি থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন থেকে পাওয়া ক্যালোরির দ্বিগুণেরও বেশি। যেহেতু ফ্যাট থেকে ক্যালোরি বেশি পাওয়া যায়, তাই আপনাকে আপনার খাদ্যতালিকায় চর্বি থেকে 20 থেকে 35 শতাংশ ক্যালোরিতে বরাদ্দ করতে হবে।একটি 1,800-ক্যালোরি খাদ্যে তালিকায় দৈনিক 40 থেকে 70 গ্রাম চর্বি রাখা যায়।

ভিটামিন শোষণ এবং সঞ্চয় করা চর্বির উপর নির্ভর করে। ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে, যাকে চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন বলা হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণ চর্বি ছাড়া এরা কাজ করতে পারে না। বলাবাহুল্য, এই ভিটামিনগুলি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের অপরিহার্য অংশ। ভিটামিন এ আপনার চোখকে সুস্থ রাখে এবং ভালো দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণকে বাড়িয়ে আপনার হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে, ভিটামিন ই ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে কোষকে রক্ষা করে এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য ভিটামিন কে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় চর্বি গ্রহণ না করেন,তবে এই ভিটামিনগুলো তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

নিরোধক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ফ্যাট কোষ, অ্যাডিপোজ টিস্যুতে সঞ্চিত থাকে যা আপনার শরীরকে নিরোধক করে এবং শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যাডিপোজ টিস্যু সবসময় দৃশ্যমান হয় না, তবে আপনার ওজন বেশি হলে আপনি এটি আপনার ত্বকের নিচে দেখতে সক্ষম হবেন।আপনি দেহের কিছু নির্দিষ্ট অংশে প্রচুর পরিমাণে অ্যাডিপোজ টিস্যু লক্ষ্য করতে পারেন, যার ফলে আপনার উরু এবং পেটের চারপাশে ভাজ দেখা যায়। অন্যান্য সঞ্চিত চর্বি শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গকে ঘিরে রাখে এবং তাদের আকস্মিক নড়াচড়া বা বাইরের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার

প্রতিটি খাদ্যেই কম-বেশি চর্বি বিদ্যমান। আপনি যদি সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে চান, তবে অবশ্যই কোন খাবারগুলো অধিক চর্বিযুক্ত আপনার তা জানা দরকার।

অ্যাভোকাডো: পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম। যেখানে অন্যসব ফল শর্করায় ভরপুর, সেখানে অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৮০%চর্বি থাকে যা প্রাণিজ চর্বি চেয়েও বেশি।

চীজ: ফাস্টফুড লাভারদের জন্য চীজ যেন অমৃত। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকরও বটে।প্রতি ২৮গ্রাম চীজে ৬গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা একগ্লাস দুধের প্রায় সমান।

বাদাম: চর্বি ও ফাইবারে সমৃদ্ধ বাদাম প্রোটিনেরও একটি উৎকৃষ্ট উৎস।গবেষণা বলছে,বাদাম গ্রহণকারী মাুনষদের স্থূলতা, ডায়বেটিস ও হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

ডিম: আমিষভোজীদের জন্য ডিম প্রোটিন একটি অনন্য উৎস। আচ্ছা বলুন তো, ডিমের সাদা অংশ বেশি পুষ্টিকর না ডিমের কুসুম?জানি বাকি সবার মতো আপনিও সাদা অংশকেই বেশি পুষ্টিকর মনে করবেন। শুনে অবাক হবেন যে, ৫০গ্রাম ওজনের একটি সিদ্ধ ডিমে ৫.৩ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও ফ্যাটবহুল মাছ, দই, জলপাই, প্রানিজ তেলে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায়।

চর্বি কমানোর উপায়

শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে।তাই এই অতিরিক্ত চর্বি কখনোই কারো কাম্য নয়। শরীরে একবার চর্বি জমে গেলে তা কমানো যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি সময় সাপেক্ষও হয়ে দাঁড়ায়।তবুও এই চর্বি কমানোর উপায়গুলো জেনে নিন।

বেশি বেশি ভালো চর্বি গ্রহণ করুন

বেশি পরিমানে ভালো চর্বি গ্রহণ করুন, ভালো চর্বি বলতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত প্রানিজ ও উদ্ভিজ চর্বিকে বুঝানো হয়েছে। প্রসেস খাবারগুলো যতই মুখরোচক হোক না কেন, তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম

চর্বি কমানোর প্রথম উপায় হচ্ছে শারীরিক কসরত করা। আপনি যত পরিশ্রম করবেন, শরীরের মাসল তত শক্তিশালী হবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন হবে।

নিয়মমাফিক ঘুমান

প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো মানুষের শরীর তুলনামূলকভাবে কম ভিসেরাল ফ্যাট জমা হয়। কারণ যত বেশি রাত জাগবেন, খাদ্য গ্রহণের প্রবনতাও বাড়তে থাকে। যার কারনে জমা হয় অতিরিক্ত চর্বি। খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন বেশি বেশি প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করুন,চর্বি ও শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিন।

চর্বি জাতীয় মাছ কি কি

ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছের অন্যতম উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এই চর্বি জাতীয় মাছ কি কি তা জেনে রাখুন।যেমন ইলিশ, কড, স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং ট্রাউট ইত্যাদি।এতে প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। গবেষণা বলে যে, ওমেগা-3 লিভারের চর্বি কমিয়ে,রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়।
আরোও পড়ুনঃ জেনেনিন ১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা

লিভারে চর্বি কমানোর উপায়

দেহে গ্রহণকৃত খাদ্যের একটি অংশ লিভারে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা থাকে। পরিশ্রমের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এই চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে, যাকে ফ্যাটি লিভারও বলে।এই চর্বির পরিমাণ না কমালে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।চলুন এই লিভারে চর্বি কমানোর উপায় জেনে নেই-

নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত করুন

  • খাদ্যে ফল,সবজি ও ফাইবার জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ান
  • কোমল পানীয় সম্পূর্ণভাবে বাদ দিন
  • অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য পান পরিহার করুন
  • নিয়মিত কফি পান করুন

আরোও পড়ুনঃ ৬টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন কিছু খাবার এর কথা জানুন

চর্বি কমানোর জন্য আপনার আহামরি না খেয়ে থাকতে হবে না। তাই কীভাবে চর্বি কমাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক খাদ্যভাস অনুসরণ করুন। কিছু খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কিছু এড করবেন। তাহলে আর স্ট্রেস না নিয়ে আজই লেগে পড়ুন।

Categories
খাদ্য তালিকা

৬টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন কিছু খাবার এর কথা জানুন

আমরা জানি যে আমাদের দৈন্দিন জীবনে নানা ধরনের ক্যালসিয়ামবা ভিটামিন এর প্রয়োজন পরে। তাই ৬টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে সেই সব খাবারের কথা গুলো জেনে নেওয়া যাক।

৬টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন কিছু খাবারের কথা জানুন

১। তিল বীজ: তিলের বীজে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলও থাকে। ১০০ গ্রাম কাঁচা তিল বীজে এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

তিল বীজ
তিল বীজ

২। কমলালেবু: এই ফলেও ভিটামিন সি থাকে, যা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

কমলালেবু
কমলালেবু

৩। বাদাম: কাঠ বাদামে উচ্চমাত্র্রায় ক্যালসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম কাঁচা অথবা নাট বাটারে ব্যবহৃত চূর্ণ করা কাঠ বাদামে ২৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। প্রায় সব ধরনের বাদামে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ভাইটামিন, পটাসিয়াম, আয়রন ও খনিজ পদার্থ। এটি দেহের জন্য অতি উপকারি যা শক্ত হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে।

বাদাম
বাদাম


৪। ভেন্ডি:
ঢেঁড়স একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি. এক কাপ ভেন্ডিতে প্রায় ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যাসিয়াম থাকে। যা আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।

ভেন্ডি
ভেন্ডী

৫। ব্রোকলি: ক্যালসিয়ামে ভরপুর এই সব্জিও শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।

ব্রকলী
ব্রকলী

৬। শালগম: এই শালগম ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের উত্তম একটি উৎস। এটি হাড়ের নমনীয়তা, অস্টেয়োপরোসিস, ফ্রাকচার ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে। এমনকি এটি পেশীতে শক্তি যোগায় ও কর্মদক্ষতা বাড়ায়। এক মুষ্টি শালগমে থাকে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের এক-পঞ্চমাংশ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

শালগম
শালগম

ক্যালসিয়াম এর উপকারিতা

আমরা জানি ক্যালসিয়াম এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মানব সহ সমস্ত জীবের প্রয়োজন। আর এই ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান এবং এটি অবশ্যই হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যাবশ্যক। আমাদের ক্যালসিয়াম শক্তিশালী হাড় তৈরি করতে এবং বজায় রাখতে অতি প্রয়োজন। মানব দেহের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম হাড়ের মধ্যে থাকে।

কিন্তু মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্য অন্য অংশের মধ্যে স্বাস্থ্যকর যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ক্যালসিয়াম পেশী এবং কার্ডিওভাসকুলার ফাংশনে ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক ভাবে অনেক খাবারে ক্যালসিয়াম থাকে, আবার খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে ক্যালসিয়াম যুক্ত করে। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট আকারেও পাওয়া যায়।

আমরা জানি ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি মানুষের ভিটামিন ডি এর ও প্রয়োজন, কারণ ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি, মাছের তেল, দুগ্ধজাত পণ্য। আজকের এই প্রতিবেদনে শরীরে কেন ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন, কোন খাবারে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম না থাকলে কি হতে পারে, ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক, এবং গঠনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আমাদের কেন ক্যালসিয়াম দরকার? কেনোনা ক্যালসিয়াম শরীরের বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। কিছু বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো,

ক্যালসিয়াম এর উপকারিতা হাড়ের স্বাস্থ্য মানবদেহে ক্যালসিয়ামের প্রায় 99% হাড় এবং দাঁতে থাকে। ক্যালসিয়াম হাড়ের বিকাশ, বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয়।শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে ক্যালসিয়াম তাদের হাড়ের বিকাশে অবদান রাখে।যে মহিলারা ইতিমধ্যে মেনোপজের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন তারা পুরুষ বা অল্প বয়স্কদের চেয়ে বেশি হারে হাড়ের ঘনত্ব হারাতে পারেন। তাদের অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, এমন সমস্যায় ভোগা রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞরা বরাবরই ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ক্যালসিয়াম দেহের মৌলিক কার্য সম্পাদনের ভূমিকা রাখে। ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের অনেকগুলো মৌলিক কার্য সম্পাদনের ভূমিকা রাখে। রক্তসঞ্চালন, ফিশিং সচল রাখতে এবং হরমোন নিঃসরণ এর জন্য আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের বার্তা বহন করতে সহায়তা করে। দাঁত এবং হাড়ের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এটি আমাদের হাড়কে শক্তিশালী এবং ঘন করে তোলে। আপনি আপনার শরীরের হাড়কে আপনার দেহের ক্যালসিয়ামের গোডাউন হিসেবে ধরে নিতে পারেন। যদি আপনার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না থাকে তবে আপনার শরীর আপনার হাড় থেকে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করবে ।

শরীর কি কালসিয়াম উৎপন্ন করে?

আমাদের প্রত্যেকের জানা থাকা দরকার শরীরে নিজে নিজে ক্যালসিয়াম উৎপাদন করে না বা করতে পারে না। অতএব আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আমাদেরকে খাবারের সাথে গ্রহণ করতে হবে। সেই জন্য যে সব খাবার এর মধ্যে ক্যালসিয়াম এর পরিমান বেশি রয়েছে এমন খাবার গ্রহন করতে হবে। সেই সব খাবারের মধ্যে রয়েছে দুগ্ধজাত পণ্য যেমনঃ দুধ, পনির এবং দই, সবুজ শাকসবজি আরও রয়েছে যেমন কলা, পালং শাক ইত্যাদি সাদা মটরশুটি সামুদ্রি পোনামাছ, ক্যালসিয়াম, সুরক্ষিত রুটি,সয়া পণ্য এবং কমলা জুস ইত্যাদি খাবার গুলো খেতে হবে।

ক্যালসিয়াম শোষণ এর জন্য ভিটামিন ডি দরকার

আমাদের শরীরে কার্যক্ষমাতা সচল করার জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন রয়েছে। শরীরের শোষণ রোধের জন্য ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে। এই শোষণ রোধ করার জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন এর অর্থ আমরা যদি খাবারে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম দুইটা একসাথে না রাখি অথবা সমপরিমাণ না রাখি, সেক্ষেত্রে শুধু ক্যালসিয়াম সেবনে আমরা যতটুকু উপকার পাওয়ার কথা ততটুকু পাবোনা।

অতএব কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেতে হবে। যেমনঃ ডিমের কুসুম বিশেষ ধরনের মাশরুম থেকে আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। দেখতে ক্যালসিয়ামের মত কিছু খাবারের উৎপাদকরা তাদের পণ্যে ভিটামিন ডি যুক্ত করে থাকে। ক্যালসিয়ামের জন্য এই সব খাবার এর প্রধান উদাহরণ হতে পারে দুধ, আর প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন “ডি” গ্রহণ করার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে রোদ, এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারীি।

বয়স অনুযায়ী আপনাকে ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে

অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহন করা ক্ষতি কর। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে। ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে আপনি সেবন করছে কিনা তা কিভাবে বুঝব? এটি বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। একজন ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের এবং গর্ভাবস্থা ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীদের জন্য দৈনিক কমপক্ষে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।

আমরা কম বেশি জানি ক্যালসিয়ামের অভাবে স্বাস্থ্যের অনেক সমস্যার হতে পারে। এই ক্যালসিয়ামের অভাবে মানব শরীরে অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই প্রাপ্তবয়স্করা যদি কম পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন তাহলে তাদের অস্টিওপোরোসিস এবং অট্টালিকর হাড়গুলি সহজেই ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।ছোট বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মনে রাখতে হবে যেসব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সেবন করে না বা করতে পারে না, তারা প্রথম যে সমস্যাটার সম্মুখীন হয় তা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ উচ্চতা না বাঁড়া, এবং এর সাথে সাথে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়া। এতে করে শিশুর বেড়ে উঠতে নানা সমস্যার সম্মখীন হতে হয়।

তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে এটির পরিপূরক ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দৈনদিনকার খাবারে অনেক সময় আমাদের শরীরের যতটুকু ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন ততটুকু আমরা পাইনা। সেজন্যই ক্যালসিয়ামের পরিপূরক হিসেবে বাজারে থাকা কিছু স্বাস্থ্যকর পণ্য আমরা ব্যবহার করতে পারি। এটি হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ক্যালসিয়াম সাইট্রেট হল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেয়া ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক।কিন্তু ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক গ্রহণ করার আগে আপনাকে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই জেনে রাখতে হবে। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক সেবন করতে হবে।

আমরা সবাই জানি সব কিছুর একটা পরিমাপ রয়েছে। তাই যে কোন খাবার খাওয়ার আগে হিসাব করে খেতে হবে। যেনো বেশি পরিমানে ক্যালসিয়া না খেয়ে ফেলি। বেশি ক্যালসিয়াম খাওয়াত ফলে খারাপ ফলাফল বয়ে আনতে পারে। এটাও জানি অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ তা ভালো কিছুই হোক আর খারাপ কিছুই হোক। কেউ যদি খুব বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম সেবন করে তাহলে অবশ্যই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভুগবে।

তাহলে কিভাবে বুঝবেন আপনি যে ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক গ্রহণ করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিনা? আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেবন করে থাকেন তাহলে আপনার যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তা হচ্ছে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের বিভিন্ন সমস্যা এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই ব্যাপারটা যদিও বিরল কিছু ক্ষেত্রে খুব বেশি ক্যালসিয়াম রক্তে ক্যালসিয়াম জমা করতে পারে। এটিকে আবার হাইপারকালেসিমিয়া বলা হয়। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন ক্যালসিয়াম এর পরিপূরক গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে তবে এই বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।

ক্যালসিয়াম সংকেত

ক্যালসিয়াম শরীরের একটি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট। ইহা মাংসপেশী ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা, হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা এবং রক্তের জমাট বাঁধা প্রক্রিয়া ইত্যাদির সাথে জড়িত।
CaCO3 + 2HCl = CaCl2 + H2O + CO2

ক্যালসিয়াম কি

ক্যালসিয়াম হচ্ছে Ca প্রতীকযুক্ত একটি মৌলিক পদার্থ, যার পারমাণবিক সংখ্যা ২O। ক্যালসিয়াম একটি ক্ষারীয় ধাতব পদার্থ।

বয়স ভেদে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা ভিন্ন হয়

আমাদের সবার ক্যালসিয়ামের চাহিদা এই রকম না। একেক জনের চাহিদা একেক রকমের হয়ে থাকে সেটা শারীরিক চাহিদা বা দৈহিক চাহিদার উপরে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কতো থেকে কতো বছরের মানুষের দৈহিক চাহিদা গুলো…

শূন্য থেকে ছয় মাস শিশুদের – দৈনিক ২০০ মিলিগ্রাম। সাত থেকে ১২ মাস- দৈনিক ২৬০ মিলিগ্রাম। এক থেকে তিন বছর- দৈনিক ৭০০ মিলিগ্রাম। চার থেকে আট বছর- দৈনিক এক হাজার মিলিগ্রাম। নয় থেকে ১৮ বছর – দৈনিক এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম। ১৯ থেকে ৫০ বছর – দৈনিক এক হাজার মিলিগ্রাম। ৫১ থেকে ৭০ বছর – দৈনিক এক হাজার মিলিগ্রাম (পুরুষ), এক হাজার ২০০ মিলিগ্রাম (নারী)। অন্যদিকে ৭১ বছরের উপরে – দৈনিক এক হাজার ২০০ মিলিগ্রাম বেশির ভাগ মানুষ শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে দুধ পান করেন। অনেককে বিভিন্ন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের সাহায্য নিতে হয়। আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা দুধ এবং ক্যালসিমায় সাপ্লিমেন্ট দুই-ই পছন্দ করেন না। কিন্তু তাঁরা কিছু খাবার খেয়েই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে পারেন।

সতর্কতা
কিডনি জটিলতায় রোগীকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট সাবধানে দেয়া উচিত। যে সব রোগের ক্ষেত্রে পাথর তৈরীর পূর্ব ইতিহাস জানা আছে তাদেরকে তরল খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেয়া উচিত। বিশেষভাবে নির্দেশিত না হলে ক্যালসিয়াম গ্রহণের সময় উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ডি পরিহার করা উচিত।হাইপারক্যালসিউরিয়ার ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মাত্রা কমান বা চিকিৎসা বন্ধ করা উচিত।

লবণ খাওয়া কমান

অনেকেই আছে খাবার খাওয়ার শুরুতে ভাতের সাথে লবণ খান। তবে বেশি লবণ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়। লবণ ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। অতএব লবণ ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়াও বাদ দিন। এতে করে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হবে না এবং শরীরে ক্যালসিয়ামও বাড়বে।

আরোও পড়ুনঃ রমজান মাসের স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য তালিকা

বিশেষ সতর্কতা
আমরা জানি অনেকেই কফি পানের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করে থাকে। আর আপনার যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগে থাকেন, তাহলে কফি পানের অভ্যাস বাদ দেওয়াই উত্তম। এক গবেষণায় বলা হয়, যদি কেউ দিনে চার কাপের বেশি কফি পান করলে হাড় ক্ষয় রোগ বাড়ায়। সবার ক্ষেত্রে না, বিশেষ করে যেসব নারীর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি হয়।

Categories
খাদ্য তালিকা

জেনেনিন ১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা

আজকে এমন ১০ টি ভিটামিন “সি” যুক্ত খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো যে খাদ্য মানব শরীলের জন্য গুরুত্বপুর্ণ একটি উপাদান। এই উপাদান টি হচ্ছে ভিটামিন “সি” এই ভিটামিন সি এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মানব শরীরের জন্য খুবই জরুরি। এর কারণে রক্ত চলাচল থেকে শুরু করে শিরা ও ধমনীর কর্মক্ষমতা বজায় রাখা, শরীলের কোষ গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সব কিছুতেই ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি অপরিহার্য।
১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা

এই উপাদান অত্যন্ত উচ্চ মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন দূষণ থেকে রক্ষা করে, এবং নানা ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। এমনকি এটিপি, ডোপেমিন ও পেপটাইন হরমোনের ক্ষেত্রেও ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মোটকথা আমাদের মানব শরীরের চালিকাশক্তি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ভিটামিন সি-এর দৈনিক চাহিদা হলো ৬০ মিলিগ্রাম। আর এই ভিটামিন সি আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকেই পেয়ে থাকি। এই জন্য ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উত্‍সের কথা ভাবতেই আমাদের মনে পড়ে লেবুর ছবি! কিন্তু আপনি কি জানেন , সর্বোচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রথম দশটি খাবারের মধ্যেই লেবুর স্থান নেই? এটা জেনে সত্যি! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? এই লেবুর চেয়ে আরো অনেক বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসুন তাহলে জেনে নিই সারাবিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ভিটামিন সি যুক্ত দশটি খাবারের কথা –

১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা

১। কাঁচা মরিচ:

আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা যে সর্বোচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকার প্রথমেই রয়েছে আমাদের অতি চেনা কাঁচা মরিচ। আমরা সালাদ, স্যুপ, ভর্তার সাথে বা এমনিতেই কাঁচা মরিচ খেয়ে থাকি। এই কাচা মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ২৪২.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। লাল মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
কাচা মরিচ

২। পেয়ারা:

মরিচের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পেয়ারা। এই পেয়ারা প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আর একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় প্রায় ১২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি “ পাওয়া যায়। কিন্তু পেয়ারার জাতভেদে এর ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
পেয়ারা

৩। বেল মরিচ:

এই বেল মরিচ বাংলাদেশে পাস্তা সস বা পিজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মেক্সিকান মরিচ। এই মরিচটি অন্যন্য দেশেও অনেক খাবারে ব্যবহৃত করে থাকে। বেল মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১৮৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।
বেলমরিচ

৪। টাটকা ভেষজ:

আমরা জানি যে বেশির ভাগ ভেষজই নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে সেটা তাজা হোক অথবা শুকনো। কিন্তু তাজা থাইম ও পোর্সলেতে রয়েছে আর সব ভেষজ থেকে বেশি ভিটামিন সি। এতে প্রতি ১০০ গ্রাম থাইমে রয়েছে ১৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং প্রতি ১০০ গ্রাম পোর্সলেতে রয়েছে ১৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এই সব খাবার বেশি বেশি করে খেলে ভিটামিন “সি” এর অভাব থাকবে না।

৫। গাঢ় সবুজপাতা এবং শাক:

আমার প্রতিদিন যে সব খাবার হিসেবে কাঁচা পাতা খাই যেমন পুদিনা বা লেটুস তেমনই একটি হলো Kale, এই সব এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”। Kale তে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। শাকের ভেতরে সরিষা শাক সর্বোচ্চ ভিটামিন “সি” যুক্ত। আর প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষা শাকে রয়েছ ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।

৬। ব্রকোলি:

আমরা সবাই তাজা শাক-সবজি খেতে পছন্দ করি। কেননা এতে রয়েছ প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”। ১০০ গ্রাম সবুজ টাটকা ব্রকোলি -এর আরেকটি ভালো উত্‍স। এটিতে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৯৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।

৭। কিউয়ি ফল:

ভিটামিন “সি” এর জন্য এর আরেকটি উত্‍কৃষ্ট উত্‍স। কিউয়ি ফল এ প্রতি ১০০গ্রাম রয়েছে ৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এটিও খেলে ভিটামিন “সি” এর অভাব পুরন হবে।
কিউয়ি ফল

৮। পেঁপে:

আমাদের সবার অতি পরিচিত ফল পেঁপে রয়েছে অষ্টম স্থানে।এই পেঁপেকে ভিটামিন “A” এবং ফোলেটের আধার হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হলেও এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি” । পাকা পেঁপে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৬২ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এই ফলটি আমরা সহযে পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর অভবে পুরন এর জন্য এই ফল টি খাওয়া যায়।
পেঁপে

৯। কমলা:

এই ফলটিও আমাদের সবার পরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে কমলার খাদ্যযোগ্য রয়েছে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। যা অন্যন্য ফলের তুলনায় কম আছে।

কমলা
কমলা

১০। স্ট্রবেরী:

অতি চমত্‍কার স্বাদের ফল স্ট্রবেরী এমনিতে খাওয়ার পাশাপাশি আইসক্রিম, কেক, ডেজার্ট এবং আরো বিভিন্নভাবে এই ফল কে খাওয়া হয়ে থাকে। কমলার সম পরিমাণ ভিটামিন “সি” রয়েছে। স্ট্রবেরীতে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এটি অন্যন্য ভিটামিন সি যুক্ত ফলের তুলনায় অনেক কম রয়েছে।
স্ট্রবেরী

সংক্ষেপে,
আমাদের এই শেষ কথাটি সবার ভ্লোভাবে জানা থাকা দরকার। উপরের এই ভিটামিন সি খাবারগুলি বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকার সহ দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটের অংশ হওয়া উচিত। এই ভিটামিন সি আমাদের দেহ দ্বারা ক্যালসিয়াম শোষণকে উন্নত করে এবং হাড়ের শক্তি সর্বাধিক করে তোলে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল গুলো ফুসফুসের ক্যান্সার এবং গ্লাইওমার মতো নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করার সম্ভাবনাও দেখিয়েছে। অত এব ক্যান্সারের চিকিত্সার ক্ষেত্রে, ওরাল ভিটামিন সি উপ-অনুকূল শোষণের কারণে অপর্যাপ্ত। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বা ভিটামিন সি ইনফিউশনগুলি নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির ওষুধগুলির থেরাপিউটিক কার্যকারিতা এবং সহনশীলতার উন্নতি দেখিয়েছে। এগুলি রোগীদের বৃদ্ধির সম্ভাবনাও দেখিয়েছে জীবনের মানের এবং তেজস্ক্রিয়তা এবং কেমোথেরাপি চিকিত্সা ব্যবস্থার বিষক্রিয়া হ্রাস। উচ্চ ডোজ ভিটামিন সি (অ্যাসকরব্যাট) ইনফিউশনও অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির বিষ হ্রাস করার সম্ভাবনা দেখিয়েছে। সূত্র (ওয়েলশ জেএল এট আল, ক্যান্সার চেমার ফার্মাকল)

Categories
খাদ্য তালিকা

রমজান মাসের স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য তালিকা

আমরা যেহেতু মুসলিম তাই আমাদের সকলের যানা থাকা দরকার রমজান মাসে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। আজকে আলোচনা করবো রমজান মাসের স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য তালিকা নিয়ে চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক…

রমজান মাসের স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য তালিকা

ইফতার

১.আমরা যারা রোজা রাখি তাদের জন্য ইফতার স্মপর্কে জানা থাকে দরকার। আজকে আলোচনা করবো রমজান মাসের মান স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য তালিকানিয়ে। যখন করবেন অবশ্যি মনে রাখবেন সারাদিন রোজা রেখে তেলে ভাজা খাবার আগে খবেন না। আপনি সবার আগে পানি পান করবেন। এর পর কিছু খাবেন। তাহলে আর কোন সমস্যা হবেনা।

২. আমরা যারা সারাদিন রোজা রাখি ইফতারের সময় ভালো খাবার খেতে মন চায় বেশি। তেলে ভাজা খাবার বেশি না খেয়ে অল্প করে খাবেন। তাহলে গ্যাস স্মস্যা আর দেখা দিবে না। আমরা জানি পেঁয়াজু/ বেগুনী/ কাবাবঃ ইফতারের সময় আমাদের দেশে পেঁয়াজু বেগুনী থাকবেই। এই সব তেলে আজা খাবার বেশি করে না খেয়ে অল্প করে খেতে হবে। যেমনঃ ২টি পেঁয়াজু বা ২টি বেগুনী অথবা ২টি কাবাব খেতে পারেন। ১টি পেঁয়াজু আর একটি বেগুনী, একটি বেগুনী আর একটি কাবাব এভাবেও মিলিয়ে খেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যেন এ ধরনের খাবার ২টির বেশি না খান। কারণ প্রতিটি পেঁয়াজু, বেগুনী বা অন্য যে কোন তেলে ভাজা খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ ৫০ থেকে ৭০ এর মত হতে পারে। একটি টিকিয়া কাবাবে ক্যালরি হলো ৮০ আর চপে ৮৫। যদি আপনি সিঙ্গারা খান তাহলে অবশ্যই একটি সিঙ্গারা খাবেন কারণ এক্টী সিঙ্গারাতে ১৪০ ক্যালরি থাকে যা ২টি রুটির সমান! আর যদি আপনি সিঙ্গারা খান তাহলে পেঁয়াজু/ বেগুনী/ কাবাব খাবেন না। এতে করে অন্য সমস্যা হতে পারে।

৩.হালিমঃ আমরা জানি যে সারাদিন রোজা রাখার পর জাল জাতীয় খাবার বেশি খেতে মন চায় তাই আপনি হালিম কেতে পারেন। তবে বেশি খাওয়া যাবে না। কারন হালিমে বিভিন্ন রকমের ডাল আর মাংস মেশানো থাকে তাই এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। এক বাটি ভরে হালিম না খেয়ে আধা বাটি হালিম খান। তবে দোকানের হালিম না খেয়ে বাসায় তৈরি করুন। এতে করে আর কোন সমস্যা হবে না।

৪. ছোলা মুড়িঃ ইফাতারের সময় যদি হালিম না খান তাহলে এক বাটি ছোলা মুড়ি খান কিন্তু যদি আধা বাটি হালিম খান তাহলে আধা বাটি ছোলা মুড়ি খান। কারণ এক কাপ মুড়িতে ৭০ ক্যালরি। আপনি যদি একই সাথে হালিম আর এক বাটি ছোলা মুড়ি খান তাহলে সেটাতে অনেক ক্যালরি হবে।

৫. শরবতঃ ইফাতের সময় অবশ্যই সরবত খাবেন। কারন সারাদিন রজা থাকার পর ভেতরে অনেক পানি শূন্যতা থাকে তাই ইফতারের সময় সরবত খাবেন। আবার অতিরিক্ত চিনি দিয়ে শরবত না তৈরি করে ডাবের পানি পান করুন। শরবত যে একদম ছেড়ে দিবেন তা বলছিনা। ৩/৪ দিন পর পর চিনি মেশানো লেবুর শরবত বা অন্য কোন ফলের শরবত খেতে পারেন। কিন্তু বাইরে থেকে রঙ মেশানো শরবত এনে খাবেন না। বাহিরের সরবত অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি করতে পারে।

৬. ইফতারের সময় শশা খেতে পারেন। কারন শশাতে পানি রয়েছে । সারাদিন রোজা রাখার পর একটু শশা খেতে পারলে অনেক টা পানি শূন্যতা পূরন করবে।

৭. ইফতারের সময় আপনি কলা/ একটি আপেল/ লিচুর সময় হলে ৩/৪ টি লিচু খেতে পারেন।

রোজার মাসে রাতের খাবার

০১.রাতের জন্য একটি রুটি অথবা আধা কাপ ভাত/ অর্ধেক পরোটা যে কোন একটি খাবেন। তাহলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

০২. রাতের রাখার সময় তখন ২ টুকরো মাছ অথবা মাংস। ২টি মাছ আর ২টি মাংসের টুকরো এক সাথে খাওয়া যাবেনা। এতে করে খাওয়ার রুচি কমে যাবে।

০৩. যে কোন শাক।
০৪. ২/৩ চা চামচ টক দই।

সেহেরি

দেখা যায় অনেকেই সেহেরিতে কিছু খান না। আবার কেউবা এক বা দুই কাপ চা খান। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। অবশ্যই আপনি সেহেরিতে কম খান বা বেশি খান কিন্তু নিয়ম মেনে খাবেন। যেমন –

ক) আধা কাপ ভাত অথবা একটি রুটি
খ) ১ টুকরো মুরগীর মাংস
গ) সবজি ১ কাপ
ঘ) টক দই ১ কাপ

বিশেষ করে যারা টক দই খেতে পারেন না তারা ১ কাপ সর ছাড়া দুধ খেতে পারেন। এতে করে অনেক ভালো উপকার পাবেন।

রমজান মাসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু টিপস

১. যদি পিৎজা খেতে চান তাহলে এক স্লাইসের বেশি খাবেন না। এক স্লাইসে প্রায় ৩০০ ক্যালরি।
২. বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এ ফ্রাই করা মুরগীর প্রতিটি টুকরোতে প্রায় ২০০ ক্যালরি থাকে। তবে এটি বুঝে শুনে খাবেন। নতুবা সমস্যা হতে পারে।

৩. এটিও সাবধানে খাবেন কারন, ছোট একটি প্যাকেটের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এ ২৭০ ক্যালরির মত থাকে।

৪. ঝাল খাবার খাবেন না।

৫. ইফতার করার পর কিছু খাওয়ার পর প্রচুর পানি পান করবেন।

৬. যদি গ্রিন টি পান করতে পারেন তাহলে ভালো, নাহলে দুধ চিনি ছাড়া চা পান করুন। এছাড়া ইফতারে এমনিতেই প্রচুর ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া হয় তাই চায়ের সাথে দুধ চিনি মিশিয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে রমজান মাস শুরু হওয়ার ৩/৪ দিন আগে থেকেই ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিলে ভালো। কারণ যারা বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করেন তারা রোজা পালনের কারণে হঠাৎ সারা দিন ক্যাফেইন গ্রহণ না করলে মাথা ব্যথায় ভোগেন। তাই এটি গ্রহন করা থেকে বিরত থাকবেন।

৮. ইফতারের পর অন্তত ২০-২৫ মিনিট হাঁটুন।

৯. সেহেরিতে সময় নিয়ে উঠুন যেন শেষ মুহূর্তে তাড়াতাড়ি খেতে গিয়ে বেশি খেয়ে না ফেলেন। এবং কিছুটা সময় হাটার সময় পান। ভোর রাতে সেহেরি তে খাওয়া শেষ করে কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটুন।
এভাবে একটু নিয়ম মেনে আর ক্যালরি হিসাব করে যদি খান তাহলে আশা করছি এই মাসে তেলে ভাজা আর দোকানের খাবার খেয়ে আপনার ওজ়ন বাড়বেনা ইনশাল্লাহ। বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি তারা বাসার বাইরে খেলে এমন ভাবে খাবেন যেন আপনাদের ক্যালরি গ্রহণ ১৪০০ এর মধ্যে থাকে।