Categories
ভেষজ খাদ্য

প্রাকৃতিক ফল আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

সুস্থ থাকতে হলে আমরা কত ধরনের চেষ্টাই তো করি। পুষ্টিকর খাবার খাই,ব্যয়াম করি ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। তবে সুস্থ থাকতে হলে যে ভেষজ উপাদান কিন্তু খুবই কাজে দেয়। তা কি আমরা জানি ? অনেকেই এ সম্পর্কে বেশি জানি না। ভেষজ উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো আমলকি। এর গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক এর গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি হলো ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।এর এতো গুণাগুণ থাকার জন্য এটিকে বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। শীতকালে এটির বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ ও কাগজী লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি রয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এটি আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য কতটা উপকারী। নিচে এটির বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক…

  • আমলকি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য কয়েক টুকরো আমলকি মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • আমলকি বমির সমস্যা সমাধান করে।
  • আমলকির রস পান করলে শরীরের জ্বর কমে যায়।
  • দাঁতের ব্যথা ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে আমলকি ও কর্পূর মিশিয়ে দাঁতে লাগান। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত আমলকির রস পানে শরীরের কোলেস্টেরল কমে যায় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • এতে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিক রোগীর জন্য আমলকি দারুন উপকারী।
  • আমলকি শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয় ফলে আমাদের যকৃত বা লিভার সুস্থ থাকে।
  • আমলকিতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • আমলকিতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমলকি খুবই কার্যকর। এজন্য প্রতিদিন আমলকির গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আমলকি খেলে মুখের দুর্গন্ধ‌‌‌ দূর হয়।

আমলকির ইংরেজি নাম

আমলকির ইংরেজি নাম হলো “Amla” বা “Indian Gooseberry” ।এর আরো কয়েকটি ইংরেজি নাম রয়েছে – Malacca Tree, Emblic Myrobalan বা Emblic Myrobalan ইত্যাদি। এটিকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় “আমলক”। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো “Phyllanthus Emblica“। এটি ফাইলান্থাসি গোত্রের ফাইলান্থুস গণের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের ভেষজ ফল।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই খালি পেটে লেবুর রস পান করে থাকি। কিন্তু যেহেতু আমলকিতে লেবুর তুলনায় অনেক বেশি ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান সেহেতু খালি পেটে আমলকি ও দারুন উপকারী। খালি পেটে আমলকি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. কুসুম গরম পানিতে কয়েক টুকরো আমলকি দিয়ে সেই পানি পান করলে খুব ভালো। মধুর সাথে আমলকি মিশিয়ে খেলে আরো ভালো।
  2. খালি পেটে আমলকি খেলে শরীর থেকে দ্রুত টক্সিক উপাদান বের হয়ে আসতে পারে।
  3. এটি শরীরে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
  4. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি।
  5. সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে এটি পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে ও সকল দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
  6. যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে আমলকি খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

শুকনো আমলকির উপকারিতা
যেহেতু আমলকি সারা বছর পাওয়া যায় না তাই একে শুকনো করে সংরক্ষণ করতে হয়। শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আছে অনেক। নিচে তা দেওয়া হলোঃ।

  1. অনিদ্রাজনিত রোগ নিরাময় করে শুকনো আমলকি।
  2. প্রতিদিন দুই বেলা শুকনো আমলকি খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়।
  3. এছাড়াও অ্যাসিডিটির সমস্যা সমাধানে শুকনো আমলকি খুবই কার্যকর।
  4. খাওয়ায় অরুচি থাকলে শুকনো আমলকি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার

ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার
ত্বকের যত্নে আমলকির ব্যবহার

এবার চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে আমলকি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।

ত্বকের দাগ দূর করতে আমলকি দারুন উপকারী। ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি প্রচুর পরিমাণে থাকে আমলকিতে। এক্ষেত্রে আমলকির রস ও অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের যাবতীয় দাগ দূর হয়।

রোজ সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও আমলকির রস সরাসরি মুখে লাগালেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য ত্বকে আমলকির রস মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নিয়মিত আমলকির রস পান করলে ত্বকের মধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে না ও ত্বক টানটান থাকে‌।

আমলকির রস ও বাদামের তেল মিশিয়ে মুখে লাগালে তা ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে ও ব্রণের দাগ দূর করে।

ত্বকের কালো কালো ছোপ দূর করে আমলকির রস। এজন্য লেবুর রসের সাথে আমলকির রস মিশিয়ে মুখে লাগালে উপকার পাবেন।

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আমলকির রস , চালের গুঁড়া ও গোলাপ জল মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে মুখে ম্যাসাজ করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয়।

প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ফর্সা করতে আমলকির রস , বাদাম গুঁড়া ও চন্দন গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে মাখলে এটি ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে উজ্জ্বল করে তোলে।

ত্বকের অ্যালার্জি ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে আমলকির রস। এজন্য আমলকি বাটার সাথে কয়েক চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ৪০ মিনিট।

আমলকি ও পেঁপে ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আমলকির রস ও পেঁপে বাটা দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

এটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী। এটি ত্বকে কোনো ধরনের ইরিটেশন করে না।

কাঁচা হলুদ বাটা ও আমলকির রস একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের মরা কোষ দূর করে ও ত্বককে উজ্জ্বল করে।

উপরোক্ত নিয়মে আমলকির রস ব্যবহার করলে আপনার ত্বক ভালো থাকবে।

চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার

চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার
চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার

চুলের যত্নে আমলকি যে কতটা উপকারী তা অবশ্যই কারো অজানা নয়।
এটি চুলের যত্নে যেভাবে ব্যবহার করতে হয় এটিও সবার জেনে রাখা জরুরি।

চুল পড়া সবার একটা কমন সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণে আমলকি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এজন্য বিভিন্ন ভাবে আমলকি ব্যবহার করা যায়।

✓ এক চামচ আমলকির রস, এক চামচ মধু ও দু চামচ টক দই একত্রে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এটি চুলে মেখে নিন ও ৩০ মিনিট রেখে দিন।এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন।

✓সরাসরি আমলকির রস চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে রেখে দিন ১০-২০ মিনিট। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে ‌।

✓আমলকির তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করলে চুলের ফলিকল মজবুত হয় ও চুল পড়া বন্ধ হয়।

যাদের অকালে চুল পেকে যাচ্ছে তারা আমলকি হেয়ার ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য কয়েকটি আমলকি কেটে পানিতে দিয়ে আধাঘণ্টা ফুটিয়ে নিন। ফুটে গেলে এটিকে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, আপনার পাকা চুলে কালোভাব এসে পড়বে।

আমলকিতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট চুলের খুশকি দূর করে ও বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে তা নিরাময় করে।

আমলকিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা চুলকে সিল্কি ও মজবুত করে। সেই সাথে চুলের আগা ফাটা রোধ করে।

আমলকি চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলকে শাইনি করে তোলে।

আমলকির রস পান করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল ঘন হয়।

আমলকি ব্যবহারে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে ও সহজে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায় না।

নারকেল তেল হালকা গরম করে এতে কয়েক ফোঁটা আমলকির রস মিশিয়ে চুলে মালিশ করলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে ও আগা ফাটা রোধ হয়।

খুশকি দূরীকরণে আমলকির রসের সাথে কয়েকটি তুলসী পাতা বেটে মিশিয়ে নিন ও চুলে ব্যবহার করুন। এতে ভালো ফল পাবেন।

আমলকির ব্যবহার চুলের যত্নে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে চুলের বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে এর ব্যবহার অনেক ব্যাপক। তাই এটি চুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ বহেড়ার খাওয়ার উপকারিতা এবং চুলের যত্নে বহেড়ার ব্যবহার

আমলকির তেল

আমলকির তেল
আমলকির তেল

চুলের যত্নে আমলকির তেলের ব্যবহার ব্যাপক। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির আমলকির তেল পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেকে ঘরোয়াভাবে আমলকির তেল তৈরি করে নেন। ঘরোয়া ভাবে তৈরি করা আমলকির তেল সম্পূর্ণ অরগানিক হয় বলে এর উপকারিতা অনেক। চলুন জেনে নেয়া যাক ঘরে কিভাবে তৈরি করবেন আমলকির তেল।

যা যা লাগবে:

আমলকি -১০/১৫ টি
নারকেল তেল-¼ কাপ
কারি পাতা – ¼ কাপ
ভিটামিন ই ক্যাপসুল – ৫ টি
তিলের তেল – ৩ কাপ

যেভাবে তৈরি করবেন

আমলকি ভালো মতো ধুয়ে নিন। ছুরি দিয়ে কেটে শাস আলাদা করে বিচি ফেলে দিন। কারি পাতা ও ¼ কাপ নারকেল তেলের সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন মিহি করে।

একটি কড়াই চুলাতে দিয়ে এতে ৩ কাপ তিলের তেল দিয়ে আমলকির মিহি মিশ্রণ দিয়ে কম আঁচে নাড়তে থাকুন। প্রায় ৪৫ মিনিট পর রং পাল্টিয়ে গেলে নামিয়ে ৮ ঘন্টা ঢেকে রাখুন।এরপর একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। তৈরি হয়ে গেল আমলার তেল। এই তেল আপনি চাইলে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। চুলের যত্নে এই তেল খুবই ভালো। ভারতীয়রা এই তেল বেশি ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এই তেল চুলের জন্য সবচেয়ে বেশি উপাকারি।

আমলকির সিরাপ

আমলকির সিরাপ

আমলকি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ভালো তা আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি। অনেকে সরাসরি আমলকির রস বা গুঁড়ো খেতে পারে না। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আমলকির সিরাপে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ কোম্পানী আমলকির সিরাপ বাজারে নিয়ে এসেছে। তবে অবশ্যই এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। চলুন তাহলে এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক…

উপকারিতা:

✓ যাদের খাবারে রুচি নেই তাদেরকে ডাক্তার আমলকির সিরাপ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।

✓দেহে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দিলে আমলকির সিরাপ খাওয়া যেতে পারে।

✓আবার অনেকে মোটা হওয়ার জন্য এই সিরাপ সেবন করে থাকেন।

✓আমলকির সিরাপ হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

অপকারিতা:

উপকারিতার পাশাপাশি আমলকির সিরাপ সেবনে বেশ কিছু সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। যেমন:

✓এই সিরাপ সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

✓এটি দীর্ঘদিন ধরে সেবন করার পর হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলে ঠোঁট ও জিহ্বা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

✓এটি অতিমাত্রায় সেবনের কারণে স্বাস্থ্যহানি ও ঘটতে পারে।

আমলকি রসায়ন

আমলকির বিভিন্ন ধরনের সিরাপের মধ্যে “আমলকি রসায়ন” একটি। এটি কাঁচা আমলকির নির্যাস দ্বারা তৈরি একটি ভিটামিন সিরাপ। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সিরাপ। এটি শতভাগ ক্যামিক্যাল মুক্ত ও প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি সেবনের ফলে যা যা উপকার পাবেন তা নিচে দেওয়া হলো:

  • এটি সেবন করলে বুকের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
  • খাওয়ায় অরুচি , ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দূর করে।
  • হজমে দূর্বলতা দূর করে।
  • খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি করে ।
  • গ্যাসজনিত পেট ব্যথা দূর করে।তবে অবশ্যই এই সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। তা না হলে সমস্যা হতে পারে।

আমলকির অপকারিতা

আমলকির এতো গুণাগুণ থাকার পর ও এর কিন্তু কিছু অপকারিতা ও আছে। অতিরিক্ত আমলকি খেলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত…

এতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি অতিরিক্ত সেবনে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: পেট ব্যথা, পেট খারাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।

এটি ঠান্ডা ধাঁচের হওয়ায় এটি অতিরিক্ত খেলে সর্দি কাশির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

এতে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে কিডনি রোগীদের জন্য এটি কম খাওয়াই ভালো।

অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের আমলকি না খাওয়াই ভালো।

আমলকির প্রভাবে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।

পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হতে পারে।

তাই পরিমিত পরিমাণে আমলকি খাওয়া উচিত এবং দিনে ২ টার বেশি আমলকি না খাওয়াই ভালো।

Categories
ভেষজ খাদ্য

বহেড়ার খাওয়ার উপকারিতা এবং চুলের যত্নে বহেড়ার ব্যবহার

বহেড়া একটি অত্যন্ত গুনে ভরপুর ভেষজ ও ফল। আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞানে এর ব্যবহার ও চর্চা বহুকাল থেকে হয়ে আসছে। শরীর স্বাস্থ ঠিক রাখতে প্রতিদিন বহেরা খাওয়া যেতে পারে। বহেরা খাওয়ার উপরকারিতা অনেক বেশি। বহেরা গাছ আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে, এরা লম্বায় ৬০ থেকে ১০০ ফুট ও হতে পারে। এদের গাছের গুড়িও অনেক লম্বা হয়ে থাকে। শীত কালে এর ফল পেকে যায়, তারপর নিজ থেকেই গাছ থেকে খসে পড়ে।

এ গাছের ফল দু’রকমের হয়-এক প্রকার গোল, আরেকটি ডিম্বাকৃতির। এর বাকল ধূসর ছাই রঙের। পাতা কাঁঠাল পাতার মতো মোটা, লম্বায় প্রায় ৫ ইঞ্চি। কাঁচা পাকা বহেড়া ফলের রঙ সবুজ থাকে। পেকে গেলে লাল যার। পর শুকিয়ে ক্রমশ বাদামী। ফলের বাইরের আবরন মসৃণ ও শক্ত এবং ভেতরে একটি মাত্র শক্তবীজ থাকে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ভেতর এর ফল পেকে যায় ।শরীরের নানা রোগ নিরাময়ে বাহেড়া বেশ উপকারী। এ ছাড়া ত্বক ও চুলের যত্নে বহেড়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।

বহেড়ার খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের দেশে ভেষজ চিকিৎসায় ত্রিফলা খুব এ জনপ্রিয় আর এ ত্রিফলার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে বহেরা। বহেড়ার ওষুধি গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। চলুন দেখি আসি বহেরা খাওয়ার উপকারীতা এবং চিকিৎসায় এর ব্যবহার।

  1. দীর্ঘায়ু পেতে হলে নিয়মিত বহেরা খেতে হবে,প্রতি দিন বহেড়া ভেজানো পানি এক কাপ করে খেলে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায়।
  2. হৃদপিন্ড ও যকৃৎ সুস্থ থাকে নিয়মিত বহেরা গ্রহণ করলে নানান রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  3. কৃমি কমায়, জ্বর এবং অনিদ্রা দূর করে। তা ছাড়াও পাইলস, শ্বাসকষ্ট ও কুষ্ঠরোগের চিকিৎসায় বহেড়া বেশ উপকার করে।
  4. সাদা বা রক্ত আমাশয়ের সমস্যা দেখে দিলে প্রতি দিন সকালে পানির সাথে বহেড়া চূর্ণ এবং মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
  5. বহেড়া সর্দি-কাশি কম করে। জ্বর ,সর্দি ,ঠান্ডা ,কাশির সমস্যা থাকলে বহেড়া চূর্ণ আধা চা-চামচ, সামান্য গরম ঘি মিশিয়ে তা আবার গরম করে মধু দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  6. প্রাপ্তিস্থান শরীরের কোন জায়গা যদি বেথা পেয়ে ফুলে যায় তাহলে বহেড়ার ছাল বেটে একটু গরম করে ফোলা জায়গায় প্রলেপ এর মতো লাগিয়ে দিলে ফোলা কমে যাবে।

বহেড়া গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই জন্ম হয়। প্রধানত এ গাছ বেশি দেখা যায় ভাওায়ালের অঞ্চল মধুপুর গড়, গাজীপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রামগড়, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের ছোটনাগপুর, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম, বাঁকুড়া ও বর্ধমানের শালবনেও এ গাছ প্রচুর জন্মে। উত্তোলণের সময়: শীতের প্রাক্কালে ফল সংগ্রহ করা হয়।

বহেড়া খাওয়ার নিয়ম

বহেড়ার ওষুধি গুনাগুন পেতে হলে তা অবশই সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। নিচে বহেরা খাবার নিয়ম গুলা দেয়া হলো

  1. পেটে যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ বহেড়া গুঁড়া এবং মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  2. ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্যেঃ যাদের ইন্দ্রিয়- দুর্বলতা আছে ,অন্য ওষুধ খেয়ে ও কোনো উপকার পাচ্ছে না তারা এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে রোজ তিন ’টি করে বহেড়া বিচির শাঁস খেতে হবে। এর ফলে এই রোগ দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
  3. বড় ছোট আমরা সবাই কম বেশি কৃমির সমস্যায় ভুগে থাকি। বহেরা বিচি ফেলে দিয়ে শাঁসের গুঁড়া ডালিম পাতার রসের সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আমলকী, হরিতকী ও বহেড়া এই তিন ফলের মিশ্রণকে ত্রিফলা বলে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
  4. জ্বর ,সর্দি ,ঠান্ডা ,কাশির সমস্যা থাকলে বহেড়া চূর্ণ আধা চা-চামচ, সামান্য গরম ঘি মিশিয়ে তা আবার গরম করে মধু দিয়েখেলে উপকার পাওয়া যায়।
  5. ডায়রিয়া(Diarrhea) হলে বহেড়ার খোসা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। অল্প মাত্রায় খেলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাওয়া উচিত।
  6. রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটে যায়? এখন থেকে চমৎকার ঘুমের জন্য নিয়মিত কুসুম গরম দুধের সাথে এক চা চামচ বহেরা পাউডার মিশিয়ে নিয়মিত খান। অল্প কিছুদিনেই ভালো ফলাফল পাবেন।
  7. হাঁপানি থেকে মুক্তি পেতে বহেড়া বীজের শাঁস ২ ঘণ্টা অন্তর চিবিয়ে খেলে হাঁপানি(Asthma) থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ পদ্ধতি মেনে চলুন।
  8. শরীরের কোন জায়গা যদি বেথা পেয়ে ফুলে যায় তাহলে বহেড়ার ছাল বেটে একটু গরম করে ফোলা জায়গায় প্রলেপ এর মতো লাগিয়ে দিলে ফোলা কমে যাবে।

চুলের যত্নে বহেড়া

চুল কে বলা হয় মাথার মুকুট। চুলের যত্নে মানুষ কত টাকা পয়সা বায় করেও ও অনেক সময় কাঙ্খিত ফলাফল পায়না। চুলের যত্নে বহেরা অনেক ভালো কাজ করে। এর ভেষজ গুন্ আপনার চুলের নানা রকম সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। চুলের যত্নে বহেরা এর
ব্যাবহার দেখে আসি।

চুলের যত্নে বহেড়া
চুলের যত্নে বহেড়া
  • অনেকের অল্প বয়সে চুল পেকে যায় যা দেখতে মোটেও ভালো লাগে না । বহেরার বিচি ফেলে দিয়ে ৩০ গ্রাম ছাল নিয়ে পানি দিয়ে বাটুন। এক কাপ পানিতে গুলে পানি ছেঁকে নিন, এবার সে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুল ওঠা অনেক তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
  • অকালে টাক পড়লেঃ টাক সমস্যা আমাদের দেশের পুরুষদের একটি খুবই কমন সমস্যা। দেখা যায় অল্প বয়সে অনেক পুরুষদের মাথার সব চুল পরে যায়। বহেড়া বিচির শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে হেয়ার প্যাক বানিয়ে টাকে লাগালে, টাক সেরে যায়।ফুলা কমানোর জন্যঃ বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ছাল বেটে একটু গরম করে ফুলায় প্রলেপ দিলে ফুলা কমে যায়।
  • চুল লম্বা করতে চাইছেন? কিন্তু রাতারাতি তো চুল বড় করা সম্ভব না ।তাই ধৈর্য আপনাকে ধরতেই হবে, আর সেই সঙ্গে নিয়মিত সঠিক যত্নও নিতে হবে। চুলের আগা ফেটে গেলে তা কেটে ফেলতে হয়। কারণ, আগা ফাটা থাকলে চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে না। আবার চুল ঝরতে থাকলেও তার বৃদ্ধি হয় না। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলের যত্ন নিতে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে। তবেই চুল সুস্থ থাকবে, আর লম্বা হবে। নিয়ম করে চুলে বহেরা দিয়ে তৈরী হেয়ার প্যাক লাগালে চুল হবে লম্বা ,ঘন ও মসৃন।
  • চুল পাকা প্রতিরোধে: ১০ গ্রাম পরিমাণ বহেড়ার ছাল পানি মিশিয়ে থেঁতো করে নিন। এ থেঁতলানো বস্তু এক কাপ পানিতে ছেঁকে নিন। এবার পানিটুকু দিয়ে চুল(Hair) ধুয়ে ফেলুন।

বহেড়া দিয়ে তৈরী চুলের প্যাক

নিয়ম করে এ প্যাক লাগালে যে উপকার পাবে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

    • চুল পাকা রোধ করে।
    • চুলের রুক্ষতা দূর করে।
    • চুল লম্বা ও ঘন করে।
    • চুলের খুশকি সমস্যা দূর করে।
    • চুলের সান ড্যামেজ কমায়।
    • টাক সমস্যা দূর হবে।
    • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
    • প্রিম্যাচিউর হেয়ার গ্রেয়িং রোধ করে।

      যেভাবে হেয়ার প্যাক লাগাবেন

      আমলকীর রস চুলের জন্য ভালো। চাইলে এর সঙ্গে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল নরম হবে আবার কন্ডিশনারের কাজও করবে।

      পেঁয়াজের রস কখনোই সরাসরি চুলে লাগাতে হয় না। পেঁয়াজের অ্যাসিড চুলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এর সঙ্গে মেথি ও টকদই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন।

      চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হলে দুধ ,মধু ,বহেরা পাউডার একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান।

      সপ্তাহে এক দিন যেকোনো একটি প্যাক মাথায় লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

      শ্যাম্পুর পরিবর্তে। কন্ডিশনার হিসেবে মেথি গুঁড়া দুই থেকে তিন ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা লেবুর রস, চায়ের লিকার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে কন্ডিশনার তৈরি করে নিতে পারেন।

      টকদই এর সাথে ত্রিফলা গুঁড়া মিশিয়ে চুলে প্যাক এর মতো ব্যাবহার করুন। এতে চুল পড়া কমে যাবে।

      বহেড়া পাউডার

      বহেরা কে শুকিয়ে চূর্ণ করে বহেরা পাউডার তৈরী করা হয় আপনারা চাইলে ঘরে বহেরা শুকিয়ে নিজেরা গ্রিন্ডার মেশিনে গুঁড়া করে নিতে পারেন। এছাড়া এখন বাজারে ও বহেরা পাউডার পাওয়া যায়। বহেড়ার কোনো কিছুই ফেলার মতো নয়। বহেড়ার ফল, বীজ এবং ছালবিশেষ ভাবে পরিশোধিত করে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্‍সা শাস্ত্রে। এর রয়েছে অসংখ্যা ভেষজ গুন্ ,চলুন দেখে আসি ত্বকের যত্নে বহেরা কি ভূমিকা পালন করে।

      বহেড়া পাউডার
      বহেড়া পাউডার

      শ্বেতী রোগেঃ অনেকের এ কুষ্ঠ রোগ বা শ্বেতী রোগ আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির নানা রকম ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত বর্হেড়া বিচির শাঁসের তেল বের করে শ্বেতীর ওপর লাগালে গায়ের রং অল্পদিনের মধ্যেই আগের মতো স্বাবাভিক হয়ে যাবে।

      বহেড়া বীজের শাঁসের তেল ত্বকের সমস্যা দূর করতে অনেক কাজে লাগে। বহেরা বীজ থেকে তেল বের করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ত্বকের সমস্যা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

      বহেড়া পাউডার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এক চামচ বহেড়া পাউডার। ২ চামচ টক দই,এক চামচ মধু এক সাথে মিশিয়ে ফেস প্যাক এর মতো নিয়মিত ব্যাবহার করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

      রোদের পোড়াভাব কমাতে বহেরা পাউডার ব্যাবহার করা যায়। টমেটো পেস্ট করে তার সাথে এক চামচ পাউডার মিশিয়ে মুখে নিয়ম করে লাগাতে হবে। এতে ত্বকের পোড়াভাব কমে যাবে।
      আরোও পড়ুনঃ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা

      অনেকের ত্বকে ব্রণ এর সমস্যা হয়ে থাকে। বহেরা তে আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ত্বকের ব্রণ সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।

      ক্ষুদামন্দ ও অনিদ্রায় বহেড়া

      আপনি যদি দীর্গদিন ক্ষুদা মন্দা ও অনিদ্রায় ভুগে থাকেন তাহলে এখন থেকেই বহেরা খাওয়া শুরু করেন। বহেরা পেটের বদহজম দূর করে ,খাবার হজমের ক্ষমতা বাড়ায় ,এতে খাবারের প্রতি রুচি বাড়ে। শরীর এর বজ্য কে ডেটক্সিফাই করে বহেরা। এ ফলের খোসা ভালো করে গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হবে।

      প্রতিদিন রাতে এক চামচ বহেরা পাউডার গরম দুধ আর মধু মিশিয়ে খেলে আপনার ঘুম ভালো হবে। বহেড়া শরীর কে ঠান্ডা রাখে ,অনিদ্রা দূর করে। তাই আপনি যদি একটি চমতকার ঘুম চান তাহলে এখন থেকে বহেরা খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

      চাষাবাদের ধরণ

      গ্রীষ্মকালে এই গাছে ফুল আসে। তারপর হয় ফল। সেই ফল পুষ্ট হয় শীতের প্রাক্কালে। তারপর আপনা আপনি ঝরে পড়ে। এই গাছ রোপনের দরকার হয়না। পতিত জমির ধারে, জমির আইলে এটি আপনা আপনি জন্মে।
      আরও পড়ুনঃ জানলে অবাক হবেন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

      বহেড়া ফুল

      গ্রীষ্মকালের একদম শুরুতে বহেরা গাছে ফুল আসে। বহেড়ার ফুল দেখতে হালকা হলুদ ও কমলা রঙের হয়ে থাকে। এ ফুলগুলা আকারে বেশি বড় হয় না। এর ফুল ডিম্বাকৃতির প্রায় ১ ইঞ্চির মতো লম্বা কাঁচা ত্রিফলার অন্যতম ফল বহেড়া। লোকশ্রুতি আছে, বহেড়া ভেজানো এক কাপ পরিমাণ পানি নিয়মিত পান করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়।

      বহেড়া ফুল
      বহেড়া ফুল

      সুদীর্ঘকাল ধরে এর বীজ, ফল, বাকল প্রভৃতি নানা রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এর গুনাগুলি বলে শেষ করা যাবে না। সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত বহেরা খেতে হবে। বলা বাহুল্য বহেড়া একটি চমৎকার ওষুধিগাছ এবং এর ভেষজ গুণাবলীর উপকারিতা অনেক। শরীর সুস্থ রাখতে ,ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে বহেরা খুব এ প্রয়োজনীয় একটি ভেষজ। তাই আমাদের প্রাত্যহিক রুটিনে নিয়মিত বহেরা খাওয়ার এবং ব্যবহার এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বহেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে।

Categories
ভেষজ খাদ্য

১টি চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর ভিতরে যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা। আপনাদের ভিতরে হয়তবা অনেকের আছে যারা চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। আর আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের ভিতরে আপনাদের সাথে সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি যে, আমাদের  আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে পড়ে আপনারা এই বিষয় সর্ম্পকে সম্পূর্ণভাবে ধারণা পেয়ে যাবেন। তাহলে আসুন এই বিষয় সর্ম্পকে বিস্তারিত ভাবে যে সমস্ত তথ্য গুলো রয়েছে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আমরা ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আশা করি যে, আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাহলে আসুন এবার মূল কথায় আসি মানে আজকের আলোচনা শুরু করি।

আমাদের দেশের এবং দেশের বাহিরের সকল ধরনের ফলে কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খাওয়া অনেক উপকারী একটি খাদ্য। আর ঠিক সেরকম ভাবে একটি ফল হল চেরি ফল। তবে এর ভিতরে পুষ্টিগুণ বেশি থাকার কারণে এটাকে বর্তমান সময়ে কোন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। আসুন তাহলে এখন চেরি ফল খাবার কিছু উপকারী দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

১। চেরি ফলের ভেতরে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের শরীরের কোন অংশ যদি কেটে যায় তাহলে কিন্তু সেটাকে পূরণ করার জন্য চেরি ফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। এই ফলের ভেতরে পটাশিয়াম রয়েছে যেটা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক সাহায্য করে। চেরি ফলের ভেতরে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম এর পরিমাণ প্রায় ১৭৫ মিলিগ্রাম এর মত। যাদের রক্তচাপ এর সম্ভাবনা রয়েছে বা রক্তচাপের মতো সমস্যা রয়েছে তারা কিন্তু চেরি ফল নিয়মিতভাবে খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।

৩। ডায়াবেটিস ১ মরন ব্যাধির নাম। আর এই রোগটা কখন চলে আসে এটা কিন্তু বলা একেবারে অসম্ভব। চেরি ফল যদি আপনারা নিয়মিতভাবে খান, তাহলে কিন্তু আপনাদের ডায়বেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। চেরি ফল আপনাদের ডায়াবেটিস হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

৪।  চেরি ফল  আমাদের দেহে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন করার জন্য সহায়তা করে থাকে। আপনাদের ভিতরে যাদের হার্টের রোগ রয়েছে তারা কিন্তু চেরি ফল খেলে অনেক উপকার পাবেন।

৫। চেরি ফল উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল, আর আপনাদের ভিতরে যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কিন্তু  চেরি ফল অনেক উপকারী।

৬। ইউরিক এসিডের মাত্রা  কমানোর জন্য কিন্তু চেরি ফলের উপকারিতা রয়েছে।

৭। ক্যান্সার প্রতিরোধ  করার জন্য কাজ করে থাকে চেরি ফল। আপনারা যদি নিয়মিতভাবে চেরি ফলে  খেতে পারেন তাহলে কিন্তু দেখা যাবে যে নিয়মিত ভাবে চেরি ফল খাওয়ার কারণে আপনাদের শরিরে বা দেহে যে মরা সেল অথবা কোষ থেকে থাকেন, তাহলে সেটাকে শক্তিতে পরিণত করে দিবে।

৮। চেরি ফলের অন্যতম উপকারিতার দিক হলো বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোষের ক্ষয় রোধ করার জন্য ও কাজ করে থাকে। মেয়েরা নিয়মিত ভাবে যদি চেরি ফল খেয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনাদের নিজেদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখবে, আর আপনাদেরকে সহজে বয়স্ক হতে দিবে না বা বয়সের ছাপ আপনাদের মুখে পড়তে দিবে না।

৯। ওজন বেশি হয়ে যাওয়ার অন্যতম একটা কারণ হল চর্বি। চর্বি জমা হওয়া যখন শুরু করে তখন কিন্তু আমাদের শরীরে ওজন বাড়তে থাকে। আর আপনারা যদি নিয়মিতভাবে চেরি ফল খান তাহলে কিন্তু আপনাদের পেটে চর্বি জমতে দিবেনা আপনাদের পেটে চর্বি জমতে দেওয়া থেকে বাধা দিবে এই চেরি ফল। চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক তাই আপনারা নিয়মিত ভাবে চেরি ফল খাবেন।

চেরি ফল কোথায় পাওয়া যায়

উত্তরে, চেরিগুলি শরতের শেষ যখন হয়ে যায় তখন সেই সময়ে পাওয়া যায় এবং শীত যখন শুরু হয় শীতের প্রথম দিকে। এরপরে আবার যখন মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সমস্ত আকারের দোকানে উপস্থিত হয়ে থাকে। যখন মৌসুমে, কয়েকটি জাত দক্ষিণে নেমে আসে এবং সেই সবাই কিন্তু মধ্য হতে বড়  আকারের উৎপাদন করা দোকানগুলোতে বেশিরভাগ বিক্রেতারা সেগুলি বিক্রি করে থাকেন। তবে এগুলোকে বলা হয়ে থাকে অন্যতম মূল্যবান একটি ফল।

ভারতের বেশিরভাগ অংশে, বিশেষ করে যদি বলা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলে মানসম্মত মানের চেরি ফল পাওয়ার আশা কখনোই করবেন না। বড়, মিষ্টি, সুস্বাদু চেরির যে কোনো রিপোর্টই আখ্যানগত এবং উত্তরের কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করা রয়েছে। ভারতে যে সকল চেরি পাওয়া যায় সেগুলো ছোট, উজ্জ্বল, শক্ত আর টার্ট।

বিবিসির মাইকেল ব্রিস্টো জানিয়ে দিয়েছেন যে, জাপান, চীন আর দক্ষিণ কোরিয়া–এই তিনটে দেশে বসন্তকালের সময় সাদা গোলাপি রঙের যে চেরি ফুল আছে সেটাকে উপভোগ করে একটা জাতীয় প্রবণতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তিন দেশের লোকেরা মূলত এই  ফুলের জন্য পাগল বলা যায়। আর বিশেষ করে বলতো জাপানি এই ফুল দেশটির প্রতীকেই পরিণত  হয়ে গিয়েছে বলতে পারেন।

চেরি ফল গাছের দাম

চেরি ফলের যেসকল কাছে রয়েছে সেই গাছগুলোতে প্রতিবছর প্রায় 40 থেকে 60 কেজির মতো চেরি ফল হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক কেজি ফলের মূল্য 2000 থেকে 2500 টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এই চারাটি কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী।

চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই চেরি ফল খাওয়া কোন সময় ঠিক বা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটি এখন আমরা সেই বিষয়টি জানব। অনেকে আবার প্রশ্ন করে থাকেন যে খাওয়ার আগে খাবেন নাকি খাওয়ার পরে খাবেন আসুন সেটাই জেনে নেই। আপনারা চেরি ফল সকালে খালি পেটে খেতে পারেন কিংবা দিনের যেকোনো সময় যদি আপনাদের পেটে ক্ষুধা লাগে তাহলে সেই সময় আপনারা এই চেরি ফল খেতে পারেন কোন সমস্যা নেই। চেরি হচ্ছে “প্রুনাস” গণের অন্তর্ভুক্ত ১ প্রকারের ফল৷ বাণিজ্যিকভাবে যে চেরির জাত চাষ করা হয়ে থাকে সেটাকে মূলত বলা হয়ে থাকে Prunus avium(প্রুনাস অভিয়াম)৷ বুনো চেরি ফসলি  মাঠে চাষ করার জন্য কিন্তু একেবারেই অযোগ্য মনে করা হয়ে থাকে। আর যদিও বা ব্রিটিশ দীপপুঞ্জতে Prunus avium কে বুনো চেরি  বলা হয়ে থাকে।

চেরি ফল দাম

এই চেরি ফলের দাম প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। চেরির দাম এখানেও কিন্তু প্রত্যেক কেজি দেখা যায় যে 2000 টাকার মতো। কিউয়ি চারটে আপনারা পেয়ে যাবেন 100 টাকা দিয়েই।

চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা

চেরি আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। চেরি কাঁচা  অথবা রান্না করে ও  খেতে পারেন কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন যে এই ফলটি মদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চেরির পাতা আর এর সাথে বীজে বিষাক্ত উপাদান  রয়েছে। যে সময় চেরির বীজকে চুষা অথবা  চূর্ণ করা হয়ে থাকে সেই সময়ে কিন্তু প্রুসিক এসিড (হাইড্রোজেন সায়ানাইড) উৎপন্ন হতে থাকে। আর তাই আপনারা যে সবাই চেরি খাবেন এই ফলের  বীচি চুষে ভুলেও খাবেন না। বরই আর পীচ ফলের ক্ষেত্রে ও একই কথা আপনাদের জন্য বলব।

চেরি ফল চাষ পদ্ধতি

চেরি গাছ সাধারণভাবে একটু বড় হয়ে থাকে আর তাই সে জন্য আপনাদেরকে ১২ ইঞ্চির একটা টব বাছাই করে নিতে হবে। আর আপনারা যদি পারেন তাহলে এর থেকেও বড় কোন প্লাস্টিকের ড্রামে ও এই কাজটা করতে পারেন। তবে সব সময় আপনাদেরকে যে বিষয়ের উপরে খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল পানি যাতে নিকাশি ব্যবস্থা যেন অনেক ভালো থাকে সেদিকে আপনাদেরকে বিশেষ করে খেয়াল রাখা লাগবে।

ছাদ বাগানে গাছ যদি করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাদেরকে উপযুক্ত মাটি তৈরি করে নিতে হবে এবং যার জন্য প্রথমে যে জিনিসের প্রয়োজন হবে সেটা হল কোকো পিট। বাগানের মাটির সাথে আপনারা কোকোপিট, নিম খোল আর গোবর সার ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে মাটি ভালো ভাবে প্রস্তুত করে নিবেন।

নার্সারি হতে আপনারা যে কোন ভালো জাতের চেরি গাছ আনার পরে মাঠের মাঝখানে আপনারা ফাঁকা করে দিবেন এবং সেখানে আপনারা আপনাদের সেই গাছটিকে প্রতিস্থাপন করে দিবেন। গাছ প্রতিস্থাপন করে নেওয়ার পরে মাটি ভর্তি করবেন এরপরে পানি দিয়ে দিন। আর আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোকের  দরকার হয়ে থাকে। আর তাই সেজন্য আপনারা ছাদের যে জায়গাতে সারাদিন মানে যেখানে রোদের পরিমাণ সব সময় বেশি পরিমাণে থাকে সেখানে লাগানোর চেষ্টা করবেন।

আর এই গাছের পোকার আক্রমণ শুরু হয়ে যেতে পারে, তাই আপনারা এই গাছকে পোকার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কয়েক টুকরো রসুন  আর তার সাথে লাল লঙ্কা গুঁড়ো ১দিন রাতে ভিজিয়ে পরের দিন সেটাকে গাছের ভিতর স্প্রে করে দিবেন। আপনাদেরকে একটা বিষয় খেয়াল রাখবে যাতে পিঁপড়ে কোন ভাবে আক্রমণ করতে না পারে। দশ দিন যাওয়ার পরে আপনারা সরষের খোল পচা তরল সার  দিবেন।

আর এই গাছ কিন্তু পানি অনেক ভালোবাসে তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যাতে কোন সময়ে এই গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে  সেদিকে আপনাদেরকে ভালো ভাবে খেয়াল রাখা লাগবে। গাছের গোড়া সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। আগাছা যাতে জন্ম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এইভাবে যদি সকল নিয়ম মেনে আপনারা step-by-step চাষ করতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে কিন্তু দেখা যাবে যে আপনাদের ছাদ বাগানে খুব সুন্দর ভাবে আস্তে আস্তে করে বেড়ে উঠবে চেরি ফল।

আরোও পড়ুনঃ

আমাদের শেষ কথা
তাহলে আজকে আমাদের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনার চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এই বিষয়ে আপনাদের মনের ভেতরে যত প্রশ্ন রয়েছে। সে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে অনেক ভাল লেগেছে। এরকম এর বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য  তিস্তামিডিয়ার সাথেই থাকুন।