Categories
ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

হেপাটাইটিস বি যকৃৎ বা লিভার এর একটি মারাত্তক সংক্রামিত রোগ। হেপাটাইটিস বি শরীরে যদি কোনভাবে প্রবেশ করে তখন এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের উপসর্গ গুলি সবসময় বোঝা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষন দেখা যায়।বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে এক নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে।

হেপাটাইটিস বি নিয়ে আমাদের দেশে অনেক উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কেননা এ রোগ নিয়ে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে তেমনি অনেকে জানেই না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত। দেখা যায় প্রতি ১০ জন্যে ৯ জন জানে না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত ।এছাড়া এ রোগে আক্রান্তরা অনেকক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা পান না। ভ্রান্ত ধারণা এ হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে।
আরও পড়ুনঃহাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ভাইরাসে সংক্রমিতরা ঝাড়-ফুঁক, ডাব পড়া পানি পড়া নিয়ে মনে করেন যে কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হয়েছে। কিন্তু হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তাই বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করতে সচেতন করা প্রয়োজন

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস বি টিকা হল একটি টিকা যা হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ করে। প্রথম ডোজটি জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয় এবং তার পরে আরও দুটি বা তিনটি ডোজ দেওয়া হয়। এইচআইভি / এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ,যেসব শিশুরা সময়ের আগে জন্ম নেয় তারা হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভনা অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ জানতে হবে পোলিও রোগের জীবাণুর নাম কী

বিশ্ব সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী নবজাতক শিশুদের হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বার্থ ডোজ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে তা এখনো পুরাপুরি মেনে চলা সম্ভব হয়ে উঠে নি ,এখনো শিশু জন্মের কয়েকসপ্তাহ লেগে যায় এ টিকা পেতে। হেপাটাইটিস বি এর জন্য টিকা পাওয়া যায় এবং এইচবিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম পদ্ধতি। নতুন ভ্যাকসিন হ্যাপসলিভ-বি এক মাসের ব্যবধানে 2 ডোজ দেওয়া হবে। পুরাতন টিকা ছয় মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়া হয় এ ইনজেকশন সিরিজ। হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-বি এর জন্য একটি যৌথ টিকা থাকে শিশুদের জন্য Pediarix ভ্যাকসিন এইচবিভি, পোলিও, টেটানাস, ডিপথেরিয়া এবং ওয়েভিং কাশি থেকে রক্ষা করে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কমসূচিতে (ইপিআই) হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন যুক্ত করা হয়েছে। এতে এটার সহজলভ্যতার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি-এর প্রাদুর্ভাব অনেক কমে এসেছে।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ

হেপাটাইটিস বি হলে শরীরে লক্ষণ সবসময় নাও ও দেখা দিতে পারে আবার জন্ডিস বা চোখ, শরীর বা প্রস্রাব হলুদ হয়ে যেতে পারে, হঠাৎ বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি বোধ করা, খাবারে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা। শরীরে মাঝে মাঝে চুলকানির সমস্যা থাকতে পারে। অনেকের জ্বর জ্বর ভাব থাকে। আবার অনেকেই তীব্র জ্বর ও উঠে। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি চলে আসে যেমন পেট ও পা।

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়?

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে হেপাটাইটিস বি কিভাবে ছড়ায়।

  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মা যদি শিশুকে দুধ খাওয়াও তাহলে শিশু আক্রান্ত হতে পারে।
  • অনিরাপদ যৌন মিলন।,বহুগামিতা কিংবা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর সাথে অনিরাপদ যৌন মিলন থেকে হেপাটাইটিস বি ছড়াতে পারে।
  • সেলুন দোকানে বেবহার করা খুর ,ব্লেড যদি জীবানুমুক্ত না করা হয় তাহলে সেখান থেকে ছড়াতে পারে।
  • ইনজেকশন ব্যবহার করার পূর্বে যদি জীবানু মুক্ত না করা হয় তাহলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা হলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • একই সিরিঞ্জ দিয়ে একধিক ব্যাক্তি মাদক গ্রহণ করলে।
  • সার্জারির সময়
  • কারাগারে থাকা ব্যক্তিরা
  • এইচআইভির রোগী
  • নাক-কান ছিদ্র করার সময সচেতন ও সাবধান থাকতে হবে।
  • কেননা ছিদ্রের সময় রক্ত বের হলে সে রক্তের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়াতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যাক্তি বিয়ে করলে তার সঙ্গীর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভভনা থাকে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

হেপাটাইটিস ‘বি ভাইরাস লিভারকে আক্রান্ত করে। বর্তমানে এর বেশ আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে “বি” ভাইরাসকে প্রথমে দুটো ভাগে দেখা হয়। প্রথমত যখন বি ভাইরাসের রোগী আসে, তখন আগে দেখা হয়, এই ভাইরাস কি সক্রিয়, না কি নিষ্ক্রিয় । অর্থাৎ লিভারের কি ক্ষতি করছে, নকি ক্ষতি করছে না, সেটি আগে দেখা হয়। তার জন্য কিছু লিভার ফাংশন পরীক্ষা করা হয় l হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে ডিএনএ করে দেখা হয় যে ভাইরাসের সংখ্যা কতটুকু রয়েছে।

এইবিইএজি দেখা হয় অর্থাৎ ভাইরাস কি সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, না কি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই কয়েকটা পরীক্ষার পর ফাইব্রোস্কেন করা হয়। আগে লিভার বায়োপসি করা হতো। এখন এটি না করে ফাইব্রোস্কেন করা হয় ।দেখা হয় যে লিভারের স্টিফনেস কী রকম। ভাইরাসটা লিভারের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। ফাইব্রোস্কেনের স্কোরিং যদি বেশি হয়,তখন অ্যান্ডোস্কোপি করে দেখা হয় যে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, রক্তনালিগুলো বড় রয়েছে কি না।

সব ডাটা ব্যবহার করার পর আল্ট্রাসোনোগ্রামে দেখা হয় , পেটে কোনো পানি রয়েছে কি না। এসব কিছু দেখার পর বি ভাইরাসের দুটো ক্লাসিফিকেশন করে ফেলা হয়। এরপর রোগীর ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পেগ ইন্টারশন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এখন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ বের করেছে
হেপাটাইটিস বি রোগ টি আপনার আছে কিনা তা জানতে নিচের পরীক্ষা গুলা করতে হবে

  1. হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন পরীক্ষা।
  2. হেপাটাইটিস বি পৃষ্ঠ অ্যান্টিবডি পরীক্ষা।
  3. পাটাইটিস বি কোর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
  4. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ডিএনএ পরীক্ষার।
  5. লিভার ফাংশন পরীক্ষা।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা খরচ

হেপাটাইটিস বি এর চিকৎিসায় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যদি লিভার এর বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে অব্যশই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এতে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এটি একটি বায়বহুল চিকিৎসা
আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

হেপাটাইটিস বি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কি করণীয়

রক্ত কেনা বেঁচে এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। কারো ব্যবহার করা ইনজেকশন সিরিঞ্জ ফেলে দিতে হবে। এগুলা র দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যাবে না। সেলুন দোকানে অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড ,খুর এসব নিজে ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে,অন্যকেও সচেতন করতে হবে। প্রত্যেকের উচিত বছরে অন্তত ২ বার পরীক্ষা করা এতে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তাহলে ধরা পরবে। রক্ত নেওয়ার আগে সেটাকে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে যে রক্তদাতার রক্ত ভাইরাসযুক্ত কিনা। আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। স্ট্রিটফুড, জাঙ্কফুড, রাস্তার বাফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ,কেননা এসব খাবার তৈরির সময় তেমন কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা হয় না। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে অব্যশই টিকা নিতে হবে। টিকার থেকে সেরা বিকল্প অন্য কিছু নেই। যৌন মিলনের সময় অব্যশই কনডম বা প্রটেকশন ব্যবহার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *