Categories
ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ এবং কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর

ভাইরাস বাহিত একটি রোগ হিসেবে পরিচিত হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ জানতে হলে সাথে থাকুন।

বহুকাল পূর্বে মানুষের মধ্যে, যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বেশ সীমিত। এই সীমিত যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে কোন রকমে দিন পার করতেন। অনুন্নত সমাজ ব্যবস্থার ফলে তখন চিকিৎসা সেবা ছিল না উন্নত। ফলে উন্নত চিকিসৎসা সেবার অভাবে, কোন ঘাতকবাহী রোগের প্রভাবে অনেক মানুষ ঢলে পড়তেন মৃত্যুর কোলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সেই রোগকে প্রতিহত করার মতো উন্নত চিকিসৎসা সেবার আবির্ভাব হয়েছে আমাদের জীবনে। ভাইরাস জনিত একটি রোগ হিসেবে হেপাটাইটিস এ। তাই হেপাটাইটিস এ এর লক্ষন বিস্তারিত বিবরণ থাকবে আজকের আলোচনায়।

হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ

হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংগঠিত হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন কারণে হতে পারে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। মূলত ৫ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাসের প্রভাবে হয়ে থাকে হেপাটাইসিস ভাইরাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-

  • আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পেশী এবং গিটে গিটে ব্যথা হয়ে থাকে এই রোগের প্রভাবে।
  • শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় শরীরে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব দেখায়।
  • অনেক সময় ক্ষুদামন্দার মতো সমস্যা দেখা দেয় এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে।
  • রক্তে বিরুলিনের পরিমান কমে গিয়ে যকৃটার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে গিয়ে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে শরীরে।

হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম

হেপাটাইটিস এ একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। আর আমরা প্রায় কম বেশি সকলে জানি, যে কোন ধরণের ভাইরাসবাহিত রোগ যদি কোন একজন ব্যক্তির উপর ভর করে, সেই রোগ ধীরে ধীরে সকলের মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে ফেলতে পারে। যা মাঝে মাঝে অনেক সময় মহামারীর মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই কোন রোগ এর প্রাদুর্ভাব ঘটার পূর্বে থেকে রোগটি যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে তার জন্য অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কথা আছে সমাধান থেকে প্রতিকার শ্রেয়। তাই ভাইরাসবাহিত যেকোনো ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তার জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করতে চাইলে এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে জেনে তার জন্য উপযুক্ত ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করতে হবে । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ এর টিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

হেপাটাইটিস এ এর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হল হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বেশ সাহায্য করে। এই ভাইরাসের টিকা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রায় ৯৫ ভাগ সফল। তবে এই টিকা গ্রহণের জন্য আপনার বয়সসীমা সর্বোচ্চ ১৫ হতে হবে। হেপাটাইটিস এ থেকে পরিপূর্ণরূপে সুরক্ষার জন্য দুই ডোজের টিকার প্রয়োজন। প্রতি ৬ মাস পর পর এই হেপাটাইটিস এ সুরক্ষার জন্য টিকা নিতে হয়।

হেপাটাইটিস এ হলে করনীয়

একটি ঘাতকবাহী রোগ হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত হল হেপাটাইটিস এ। হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমণে হয় এই রোগ। তবে হেপাটাইটিস এ একটি স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ। পরিমিত চিকিসৎসা এবং পর্যাপ্ত পরিমান সেবা যত্ন পেলে হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে আপনার এই রোগটি হয়েছে কিনা। তাই কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ এ আক্রান্ত হয় তাহলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে-

  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তিকে সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেই ব্যক্তির বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি জাতীয় তরল খাবার প্রদান করে পানিশূন্যতা দূর করতে হবে।
  • কোন ব্যক্তি যদি হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সে ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গরমে যাতে কোন ধরণের পচা বেশি খাবার রোগীর না খেতে পারে সে দিকে পরিপূর্ন খেয়াল রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং সঠিক খাবার-দাবার পারে খুব সহজে হেপাটাইটিস এ থেকে রোগীর সুস্থতা প্রদান করতে।

তবে যদি কোন রোগীর হেপাটাইটিস এ এতে আক্রান্ত হবার পর শরীর থেকে রক্তের মধ্যে বিরুলিনের মাত্রা ১০ মিলিগ্রাম কমে যায় তাহলে তাকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

হেপাটাইটিস এ হলে কি খাওয়া উচিত

সঠিক এবং পরিমিত খাবার গ্রহণে যেকোনো রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। সাধারণত রাস্তার ধারে পঁচা বাসি খাবার, ময়লা পানি খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ দেখা দিলেই আপনার শরীরে বাসা বাধতে পারে হেপাটাইটিস এ। এই রোগের প্রাদুর্ভাব এর ফলে আপনার কর্মচঞ্চলতা হতে পারে রুদ্ধ এবং ব্যাঘাত গ্রস্থ। তাই এই রোগের যদি প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আপনাকে বিশেষ করে নজর দিতে হবে পরিমিত এবং সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার-দাবারের দিকে।

যেহেতু হেপাটাইটিস এ একটি লিভারজনিত রোগ তাই এই রোগে আক্রান্ত শরীরে অবশ্যই দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতার। তবে হেপাটাইটিস এ এর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই এই রোগ হয়েছে বিধায় ধরে নেওয়া ঠিক নয়।বরং লক্ষণ প্রকাশ পেলে আপনাকে পরীক্ষার মাধ্যমে শুনিশ্চিত হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস এ হলে কি ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত।

          • শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি এবং সেই সাথে মিনারেল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
          • বিভিন্ন ফলমূল যেমন তরমুজ, মাল্টা, আনারস, আপেল ইত্যাদি পানিজাতীয় ফলমূল বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে।
          • বেশি বেশি করে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
          • পরিমিত পুষ্টি পেতে স্যুপ খেতে দিতে হবে রোগীকে।
          • খাবারে স্বাদের পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে মাছ মাংশের পর্যাপ্ত
          • পরিমাণ সমন্বয় করতে হবে খাবার দাবারে।
          • সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
          • রোগীকে দুধ ডিম খাওয়াতে হবে।

সবচেয়ে ক্ষতিকর হেপাটাইটিস ভাইরাস কোনটি?
হেপাটাইটিস একটি লিভারজনিত রোগ। এইরোগটির প্রভাবে ধীরে ধীরে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা বিকল হয়ে বিভিন্ন রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের শরীরে বাসা বাধে ঘাতকবাহি এই রোগটির। বিভিন্ন লক্ষণ এবং প্রভাবরের উপর ভিত্তি করে হেপাটাইটিসকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তা হল –

  1. হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
  2. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।
  3. হেপাটাইটিস সি ভাইরাস।
  4. হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস।
  5. হেপাটাইটিস ই ভাইরাস।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন হেপাটাইটিস ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস এ
মূলত দূষিত পানি এবং রাস্তার ধরে অবিশুদ্ধ পানি গ্রহণের ফলে মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে এই রোগটিতে। তবে বড়দের তুলনায় শিশুরাই এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি বেশ ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। হেপাটাইসিস এর যতগুলো ভাগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হল এটি। কারণ এটি মানবদেশে আক্রমণ করে ধীরে ধীরে আমাদের যকৃতের কার্যক্ষমতা কমিয়ে আনে।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
আরও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

হেপাটাইটিস সি
এর উপসর্গ তেমন একটা চোখে প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘদিন আমাদের শরীরে বসবাস করার ফলে এটি লিভার সিরোসিস এর প্রভাব দেখা দিতে সাহায্য করে আমাদের শরীরে। এই রোগে ক্যান্সার কিংবা মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস ডি হেপাটাইটিস বি এর মতো আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

হেপাটাইটিস ই
এটি তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে গর্ভকালীন সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস এর যতগুলো ধরণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি এর প্রতিচ্ছবি হল হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস। হেপাটাইটিস ডি এর টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ দমন করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এর বিশেষ কিছু লক্ষণ বিদ্যমান রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, সাধারণত কি ধরণের লক্ষণ দেখলে আপনারা বুঝবেন যে রোগীর হেপাটাইসিস ডি এ আক্রান্ত হয়েছে –

শরীরের বিশেষ অংশ যেমন চোখ ,ত্বক হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে।
অনেক সময় শরীরে রক্তের বিদ্যমান বিরুলিনের মাত্রা কমে গিয়ে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়।

উপরের লক্ষণসমূহ হেপাটাইটিস ডি হওয়ার জন্য প্রকৃত দায়ী।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

শেষ কথা
হেপাটাইটিস “এ” একটি মরণব্যাধি রোগ। এই রোগ হলে সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক খাদ্যভাস পারে রোগীদের সুস্থ করে তুলতে।

Categories
ভ্যাকসিন

১১ টি ভ্যাকসিন এর নামের তালিকা এবং কার্যকারীতা

আমাদের নানা সময়ে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে এর মধ্যে অনেক সময় ভাইরাস জনিত রোগ হয়ে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পযন্ত এই সব ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যে সব ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার নাম এবং কার্যকারিতা আলোচনা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

তার আগে ভ্যাকসিন কি বা টিকা কি সেই সব জেনে নেই… ভ্যাকসিন হচ্ছে জৈব রাসায়নিক যৌগ যা অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা জন্মাতে সাহায্য করে তাকে টিকা বা vaccine বলে। আর এই ভ্যাকসিন কোনো প্রাণীর দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria), ভাইরাস (Virus) ইত্যাদির জীবিত (যার রোগসূচনাকারী ক্ষমতা শূন্য) এবং মৃতদেহ বা কোনো অংশবিশেষ হতে প্রস্তুত ঔষুধ যা ঐ প্রাণীর শরীরে ঐ ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে আন্টিবডি তৈরি করে।

টিকা হল কোন রোগের কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট রোগটিরই বিরুদ্ধে শুধু কাজ বা প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়া সম্পন্ন জৈব উপাচার যা টিকাকরণ (ইনঅক্যুলেশন) অর্থাৎ ত্বকে সূচ ফুটিয়ে দেওয়া হতে পারে বা অন্য উপায়ে যেমন:- খাবার ড্রপ (যেমন মুখে সেব্য পোলিও টিকা) বা ওরাল পোলিও শরীরে ভ্যাক্সিন হিসেবে দেওয়া হতে পারে।

এতে করে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু অথবা তার বিষ থেকে তৈরী হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু-সদৃশ উপাদান থাকে। এই ধরনের টিকা উক্ত উপাদানটিকে বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করতে, সেটিকে ধবংস করতে এবং পর্বতীতে স্মৃতিতে রাখতে অনাক্রম্যতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যাতে পরবর্তীতে অনাক্রম্যতন্ত্র ঐ সমস্ত জীবাণুকে খুব সহজে পরবর্তী অনুপ্রবেশে শনাক্ত ও ধবংস করতে পারে। এই জন্য জীবাণু দারাআক্রান্ত রোগের জন্য টিকা ব্যবহার করে থাকে।

১১ টি ভ্যাকসিন এর নামের তালিকা

1. হেপাটাইটিস বি টিকা (Hepatitis B vaccine)
১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার মধ্যে এই হেটাটাইটিস এটি একটি অন্যতম ঠিকা। এই টিকা আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানব জাতির অনেক উপকার হয়েছে। চলুন তাহলে কি কি উপকার হয়েছে জেনে নেওয়া যাক?

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন

আমাদের শরীরে হেপাটাইটিস বি নামক ভাইরাসের আক্রমণ হলে, লিভার প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভার ক্যান্সার হতে পারে, লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয়, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে। রোগীর অজান্তেই এই রোগ অন্যদের মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। এই সব রোগের বিরুদ্ধে শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনটি ডোজে হেপাটাইটিস বি টিকা দেওয়া হয়। জন্মের এক-দু’দিনের মধ্যে প্রথম ডোজ, শিশুর বয়স এক মাস হলে ২য় ডোজ দিতে হয় এবং ৬ মাস হলে ৩য় বা শেষ ডোজটি দেওয়া হয়।

2. বিসিজি (Bacillus Calmette-Guerin Vaccine (BCG)
আমরা আলোচনা করবো ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকার মধ্যে বিসিজি(BCG) নিয়ে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক…
বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

এই বিসিজি টিকা বাচ্চার জন্মের পর থেকে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে যে কোনও সময় দেওয়া যায়। এই টিকা টি টিউবারকুলোসিস মেনিনজাইটিস (Tuberculous Meningitis) বা বাচ্চাদের একরকম যক্ষ্মা রোগ থেকে রক্ষা করে। এটি প্রয়োগ করে থাকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই বিসিজি টিকা দেওয়া হয়ে থাকে বাচ্চাকে। আদর্শ বিসিজির ডোজে ১ মিলিলিটার টিকার তরলে ০.১ মিলিগ্রাম ওষুধ থাকে। বাচ্চাকে একটাই বিসিজি ডোজ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ বিসিজি টিকা নিয়ে নতুন তথ্য এবং বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

3. পোলিও টিকা (Oral Polio Vaccine (OPV)
এখন যে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে আলোচনা করবো এই টিকার নাম আমরা সবাই জানি প্রায়। এই টিকার অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং এটি আবিষ্কার হওয়ার ফলের শিশুদের এই মারাক্ত রোগের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে। এই টিকার কারনে কি কি রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে শিশুরা। চলুন তাহলে সেই সব বিষয় আগে জেনে নেই।
পোলিও রোগের জীবাণুর নাম কী

এই টিকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং পোলিও রোগের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করে। পোলিও রোগের প্রকোপে শিশুর পা বিকৃত হয়ে যায় এবং সারাজীবনের জন্য শিশু প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। এই পোলিও টিকা চারটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ জন্মের পর থেকে ২ মাসের মধ্যে, দ্বিতীয় ডোজ ৪ মাস বয়সে, তৃতীয় ডোজ ৬-১৮ মাসের মধ্যে এবং শেষ ডোজটি বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয় ৪-৬ বছর বয়সের মধ্যে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই ডোজগুলি দেওয়া যায় আবার ওষুধের মতো খাইয়েও দেওয়া যায়।

4. রোটাভাইরাস টিকা (Rotavirus Vaccine)
আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে পায় ছোট শিশু থাকে। আর এই ছোট শিশুদের নানা সময়ে নানা ধরেনের রোগ হয়ে থাকে। আমরা যদি সচেতন না থাকি তাহলে আমাদের শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সকলের এই রোটাভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা দরকার। চলুন তাহলে এই ভাইরাস সম্পর্কে জেনে নেই।

এই রোটা ভাইরাস ছোট শিশুদের আক্রমণে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন ও ডায়রিয়া হতে পারে। এই রোটাভাইরা টিকা শিশুকে টিকা ওষুধের মতো খাওয়ানো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে শিশুর জন্মের ৬-১৫ সপ্তাহের মধ্যে এই টিকার প্রথম ডোজ খাওয়ানো হয়। এই টিকা মোট তিনটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়। প্রথমে শিশুর ২ মাস বয়সে একটি, এরপর ৪ মাস বয়সে একটি সর্বশেষ ৬ মাস বয়সে একটি, মোট তিনটি ডোজ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ সব পিতা-মাতার জানা দরকার রোটা ভাইরাস কি

5. ডিটিএপি/ডিটিপি (DTAP/DTP)
এটিও একটি শিশুদের মারাক্ত রোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। তাই আমাদের সকলের এই সব টিকার বিষয়ে জানা থাকা দরকার। তাহলে আর দেরি না করে এখনি শুরু করা যাক।

এই ডিটিএপি/ডিটিপি ভ্যাকসিন বা টিকাটি টিটেনাস (Tetanus), এটি ডিপথেরিয়া(Diphtheria) ও হুপিং কাশি(whooping cough) এবং যক্ষার –এর মতো রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা শরীরে দ্রুত গড়ে তোলে। পর্বতীতে এই রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা করে এবং স্মৃতিতে রাখে পর্বতীতে জীবাণুর অনুপ্রবেশ করতে ধবংস করে। এটি বাচ্চার ১.৫ মাস, ২.৫ মাস ও ৩.৫ মাস বয়সে এই টিকাটি দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথম ডোজ সম্পন্ন হলে, ১.৫ বছর বয়সে DPT-র দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় এবং ৫ বছর বয়সে Double DT-র আর একটি ডোজ দেওয়া হয়। এই DTaP টিকা বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই টিকাটি প্রয়োগে শিশু ব্যথা পায় না এবং আগের থেকে অনেক নিরাপদ। এর আগে DTP টিকা শিশুকে দেওয়া হত। এই DTP টিকা শিশুর জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল। তাই এখন আর এই টিকা দেওয়া হয় না।

শিশুর টিকা, প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ

6. এইচ আই বি টিকা (Haemophilus influenzae B (HiB) Vaccine)
এই ভাইরাসটি শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি করে থাকে তাই এইচ আই বি ভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা দরকার এবং এই ভাইরাস এর উপাকারিতা কি সেটিও জানা উচিত। তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক

আমরা জানি সব টিকাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানব শরীলে বাড়িয়ে তুলে। তেমনি এই টিকাকরন করলে শিশুর শরীর হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus Influenzae) নামক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এই ভাইরাস যে সব শিশুদের আক্রমন করেছে তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছে যে শিশুর গলা, ত্বক এবং মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এই টিকা নিলে শিশদের এপিগ্লটিস, মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করে থাকে। তবে এই টিকাটিও বাচ্চাকে তিনটি ডোজে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমে বাচ্চার ২ মাস বয়সে এবং ২য় ডোজ ৪ মাস বয়সে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এরপর বাচ্চার বয়স ১৫ মাস হয়ে গেলে শেষ ডোজটি বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।

7. হেপাটাইটিস এ টিকা (Hepatitis A Vaccine)

আমাদের শিশুদের প্রায় দেখা যায় লিভার জনিত সমস্যা। এই লিভারজনিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে এই হেপাটাইটিস এ টিকা দেওয়া হয়। আর এই হেপাটাইটিস এ নামক ভাইরাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হেপাটাইটিস এ টিকা দুটি ডোজে এই টিকা শিশু পেয়ে থাকে। শিশুর বয়স ১২থেকে২৩ মাস তখন প্রথম ডোজ এরপর ৬থেকে১০ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়।

8. এম এম আর (Measles Mumps Rubella (MMR) Vaccine)
অন্যন্য টিকার মতোই এই টিকা টিও শিশুকে তিনটি ধাপে দেওয়া হয়। এই টিকা যে সব রোগের জন্য কার্যকারিতা বা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, হাম বা মিসলস, মাম্পস এবং রুবেলার। তবে এই টিকাটি তিনটি ডোজে শিশুকে দেওয়া হয়ে থাকে। ৯ মাস বয়সে প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়।

9. পি সি ভি (Pneumococcal Conjugate Vaccine (PCV)
ছোট শিশুদের প্রায় নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। আর এই নিউমোনিয়া হয়ে অনেক শিশু মৃত্যু হয়। আর এই নিউমোনিইয়ার কবল থেকে বাচাতে পি সি ভি দেওয়া হয়। এটি দেওয়ার ফলে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এই টিকা টি শিশুর ২ মাস বয়সে প্রথম এবং ৪ মাস বয়সে দ্বিতীয়। এরপর ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ৪থেকে৬ বছরের মধ্যে একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। আর বুস্টার ডোজ সম্পন্ন হলে পর্বতীতে শিশুর নিউমোনিয়া হয় না।

10. টি সি ভি টিকা (Typhoid Conjugate Vaccine (TCV)
টি সি ভি টিকা টাইফয়েড রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এই টিকা। শিশুদের এই টিকা দুটি ডোজে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ শিশুর ৯-১২ মাসের মধ্যে দিয়ে দেওয়া উচিত।

11. ভ্যারিসেলা টিকা (Varicella Vaccine)
চিকেনপক্স এই এটিও একটি মারাক্ত রোগ। ভ্যারিসেলা টিকা চিকেনপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে শিশুর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এই টিকা। এই টিকা অন্য টিকার চাইতে একটু আলাদা, এটি প্রথম ডোজ দেওয়া হয় শিশুকে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে এবং পরের ডোজটি দেওয়া হয় প্রথম ডোজের তিন মাস পরে

কিছু বিষয় মাথায় রাখুন
আমরা জানি বাচ্চা নিজের মায়ের কোলে সবথেকে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত বোধ করে। আপনার শিশুকে টিকার জন্য ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় যদি আপনি আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে থাকেন, তা হলে ও আপনার মুখ দেখতে পাবে না। বাচ্চাকে টিকা দেওয়ার সময় বাবা বা পরিবারের অন্য কাউকে সঙ্গে নিয়ে যান, বাচ্চাকে ওনার কোলে দিন। আর আপনি এমনভাবে বাচ্চাটির পাশে তার গায়ে হাত দিয়ে থাকুন, যেন বাচ্চা বুঝতে পারে আপনি তার পাশেই আছেন এবং ওর কোনও ক্ষতি হবে না। এতে করে বাচ্চা ভয় কম পাবে।
টিকা নেওয়ার পরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান বা ও যদি ফর্মুলা খেতে শুরু করেছে তা হলে তাই দিন। যদি বাচ্চা খুব কাঁদলে একটু শান্ত করে নিয়ে তবেই খাওয়ান। তা না হলে গলায় আটকে যেতে পারে। এই টিকা নেওয়ার পর বাচ্চার জ্বর আসতে পারে, এতে কেউ ঘাবড়ে যাবেন না। প্রয়োজনে অনুসারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এমনকি ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাচ্চার টিকা দেওয়ার সময় এবং ঠিক কোন সময় কী টিকা বা কোন টিকা দিতে হবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। এতে করে পর্বতীতে আর সমস্যা হবে।

টিকা দেওয়ার পরে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তবেই ওই জায়গায় ব্যথা কমানোর মলম লাগান। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ব্যথা কমানোর কোনও ওষুধ বাচ্চাকে দেবেন না। এতে করে আপনার বাচ্চার ক্ষতি হতেপারে। আপ্নারা কোনও রকম কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চার স্বাস্থ্যের সাথে ঝুঁকি নেবেন না। এই সমস্ত টিকা আপনার সন্তানকে সারা জীবন নানা জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে। যদি নিজের মনে কোনও সন্দেহ বা দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে বিশেষ আলোচনা করুন।
আরও পড়ুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

পরিশেষে বলতে পারি আমাদের আজকের এই ১১টি ভ্যাকসিন বা টিকা নাম ব্যবহার বা তথ্য গুলো আপনাদের অনেক কাজে লাগবে ইনশাল্লাহ

Categories
ভ্যাকসিন

জেনেনিন টিটেনাস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

আমাদের চার পাশে নানা ধরনের রোগ বাতাসের সাথে মিশে রয়েছে। আমাদের শরীলে এই সব রোগ আক্রমন করলে আমরা সহজে বুঝতে পারিনা। কারন এই সব রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা জানিনা, তাই আজকে এমন একটি রোগের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হলো টিটেনাস রোগের লক্ষণ। তার আগে একটু টিটোনাস কি এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক…

টিটেনাস রোগের লক্ষণ

ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস, একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। এই টিটেনাস রোগের লক্ষণ হল মাংস পেশীর খিঁচুনি| সাধারণত, খিঁচুনি চোয়ালে শুরু হয় এবং তারপরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পরে। প্রতিটি খিঁচুনি এ ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা ইনজেকশন এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে।

লক্ষণ একদম শুরুর দিকে চোয়ালের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় অনেকের। যার কারণে ঠিক মতো চোয়াল নাড়ানো যায় না। অনেকের তীব্ৰ জ্বর উঠে। মাথা ব্যথা থাকতে পারে ,মুখের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াও খাবার খেতে অসুবিধা হয়। যখন অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে তখন প্রচুর খিঁচুনি শুরু হয়। কারো কারো শাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

কেটে গেলে টিটেনাস কত দিনের মধ্যে দিতে হয়?

হঠাৎ কেটে গেলে বিচলিত না হয়ে কাটা জায়গা উঁচুতে ধরে রাখুন ও এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে জোরে চেপে ধরুন। ছোটখাটো কাটা হলে কিছুক্ষণ কাটা জায়গাটা পরিষ্কার পানি, সাবানপানি বা অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রিত পানি দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণপর এমনিতেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। জীবাণু দ্বারা যাতে সংক্রমণ না হয় সেজন্য আগে এক টুকরো পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত গজ নিতে হবে এবং তার উপর অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে জায়গাটা ঢেকে বা বেঁধে রাখতেপারেন।

১০ বছরের মধ্যে টিটেনাস টিকা না দেওয়া থাকলে পরিষ্কার ক্ষতেও একটা বুস্টার ডোজ নেওয়া ভালো। কিন্তু ক্ষতস্থান নোংরা বা পুরোনো মরচে ধরা অপরিষ্কার কিছু দিয়ে কেটে গেলে পাঁচ বছরের মধ্যে টিটেনাস না দেওয়া থাকলে অবশ্যই বুস্টার নিয়ে নিন। ব্যথা বেড়ে গেলে, ফুলে লাল হলে বা পুঁজ জমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা ঠিক আছে কি না দেখুন।

টিটেনাস ইনজেকশন নিলে কি হয়?

বেশি কিছু বলার আগে জেনে নিই টিটেনাস রোগে কী কী হয় এবং কতটা ক্ষতিকর এই রোগ। এই রোগের জীবাণুর নাম ক্লস্ট্রিডিয়া টিটানি। এর স্বাভাবিক বাসস্থান মল দ্বারা দূষিত মাটি, নোংরা পাথর, রাস্তা ইত্যাদি। সাধারণত মলের মধ্যেই এই জীবাণুর অবস্থান। এই রোগ শরীরে ঢুকলে চার থেকে পনেরো দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এতে গোটা শরীরের মাংসপেশির খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং এতটাই শক্তিশালী এই খিঁচুনি যে শরীরের হাড়গোড় ভেঙে যায় – শেষ পর্যন্ত বুকের পেশি এতটাই সঙ্কোচিত হয়ে যায় যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

রোগটি বড়োই ভয়ংকর। তাই আমরা কেটে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশন নিতে ছুটি। কিন্তু সেটা কি আমাদের সঠিক সুরক্ষা দেয়?
টিটেনাস ইনজেকশনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্ষম জীবাণুদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দেখে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আসলে এ টিকা আমাদের শরীরে ঢুকে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে। যার আগে ভ্যাকসিন নিয়েনেওয়াই ভাল। কাটার পরে একটা ইনজেকশন কিন্তু প্রায় কোনো কাজ‌ই করে না। প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন।

টিটেনাস টিকা কত বার দিবে ?প্রত্যেকবার কাটার পর কি দিতে হবে?

নিয়ম অনুযায়ী টিটেনাস টক্সাইড টিকা কেটে যাওয়া বা আঘাত পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অব্যশই এক ডোজ টিকা নিতে হবে। পরবর্তীতে তিন মাস পর এবং এক বছর পর শেষ ডোজ নিতে হবে lতাহলে আগামী ৫ বছর টিটেনাস বা ধন্সটংকার থেকে আপনি নিরাপদ থাকবেন। তাই যতবার কেটে যাবে ততবার টিটেনাস টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়ম অনুযায়ী টিকা দিলে আপনি ৫ বছর নিরাপদ থাকবেন।

টিটেনাস ইনজেকশন এর দাম কত

ভ্যাক্সিলেট কোম্পানি টিটেনাস টিকা বানিয়ে থাকে যার মূল্য পরবে ৪৮০ টাকা। টিকার ব্যাপারে আরো তথ্য জানার জন্য আপনার নিকটস্থ টিকা কেন্দ্রে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া পপুলার ফার্মা এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন কোম্পানি ও টিটেনাস টিকা বের করেছে। এর .৫ মিলির দাম পরবে প্রায় ১০০ টাকার মতো।
আরোও পড়ুনঃ বিসিজি টিকা নিয়ে নতুন তথ্য এবং বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

টিটেনাস ইনজেকশন এর মেয়াদ

প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে। তবে কিছু কারণে আপনি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

যেসব কারণে আপনার টিটেনাস ইনফেকশন এর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে

কাঠ ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল। বর্ষার সময় আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ। কারণ ভেজা কাঠে ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই বৃদ্ধি লাভ করে। এজন্যই কাঠের দরজা বা টেবিলে লেগে কেটে গেলেও টিটেনাস ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পোষা প্রাণীরা যে কোন স্থান চাটতে পছন্দ করে। মেঝের ধুলাবালি থেকে শুরু করে ভেজা কাঠ বা মরিচা পড়া ধাতব বস্তু পর্যন্ত সবকিছু চাটে পোষা প্রাণীরা যা কিনা ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ থাকতে পারে।

যদি এমন কোন পোষা প্রাণী বা অন্য প্রাণী আপনাকে কামড়ায় তাহলে আপনি টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন। ধুলো, কাদা ও ময়লায় বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যদি আপনার কেটে যাওয়া স্থানে বা ক্ষততে এগুলো লেগে যায় তাহলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন নোংরা ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।অধিকাংশ মানুষই টিটেনাসের টিকা নেন না এবং এ কারণেই ইনফেকশনের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রত্যেকেরই উচিৎ টিটেনাসের টিকা নেয়া।

টিটেনাস শনাক্ত

টিটেনাস শনাক্ত করা কঠিন। সাধারণত ধুলাবালি, ময়লা ও পশুর মলে টিটেনাস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া Clostridium tetani পাওয়া যায়। এর বীজ ত্বকের কাটা অংশ দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। তারা শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি লাভ করে ও অঙ্কুরিত হয়। অঙ্কুরিত স্পোর থেকে টক্সিন – টিটেনোস্প্যাজমিন উৎপন্ন হয় যা স্নায়ুতন্ত্রের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। এই বিষ প্রথমে ত্বকের ক্ষত স্থানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তারপর এটি স্নায়ুরজ্জু ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে টিটেনাসের সবচেয়ে ভীতিকর লক্ষণটি দেখা যায়, আর তা হল – লকড jaw বা দাঁত কপাটি লেগে যাওয়া। তারপর আক্রান্ত রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, ঢোক গিলতে সমস্যা হয় এবং পেট অনমনীয় হয়ে যায়। বিষ ছড়িয়ে পড়লে পেশীতে খিঁচুনি শুরু হয়। এই লক্ষণগুলো কয়েকসপ্তাহ স্থায়ী হয়।

টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়?

টিটেনাস ইনজেকশন নিলে কি হয়

প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে।

আরোও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

বিশেষ পরামর্শ
মনে রাখতে হবে প্রতিরোধ অবশই প্রতিকার থেকে ভালো। তাই টিটেনাস টিকা সময় মতো নেয় অত্যন্ত দরকারি। আসে পাশের সকল কে ও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। পুরানো লোহার বা স্টিলের ভাঙা ,ধারালো জিনিসপত্র সাবধানে ডিস্পোজাল করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই এই টিটেনাস লক্ষণ গুলো জেনে রাখতে পারলে আপনার জীবনে অনেক কাজে আসবে।

Categories
ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য

হেপাটাইটিস বি যকৃৎ বা লিভার এর একটি মারাত্তক সংক্রামিত রোগ। হেপাটাইটিস বি শরীরে যদি কোনভাবে প্রবেশ করে তখন এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের উপসর্গ গুলি সবসময় বোঝা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষন দেখা যায়।বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে এক নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে।

হেপাটাইটিস বি নিয়ে আমাদের দেশে অনেক উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কেননা এ রোগ নিয়ে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে তেমনি অনেকে জানেই না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত। দেখা যায় প্রতি ১০ জন্যে ৯ জন জানে না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত ।এছাড়া এ রোগে আক্রান্তরা অনেকক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা পান না। ভ্রান্ত ধারণা এ হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে।
আরও পড়ুনঃহাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ভাইরাসে সংক্রমিতরা ঝাড়-ফুঁক, ডাব পড়া পানি পড়া নিয়ে মনে করেন যে কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হয়েছে। কিন্তু হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তাই বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করতে সচেতন করা প্রয়োজন

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন

হেপাটাইটিস বি টিকা হল একটি টিকা যা হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ করে। প্রথম ডোজটি জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয় এবং তার পরে আরও দুটি বা তিনটি ডোজ দেওয়া হয়। এইচআইভি / এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ,যেসব শিশুরা সময়ের আগে জন্ম নেয় তারা হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভনা অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ জানতে হবে পোলিও রোগের জীবাণুর নাম কী

বিশ্ব সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী নবজাতক শিশুদের হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বার্থ ডোজ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে তা এখনো পুরাপুরি মেনে চলা সম্ভব হয়ে উঠে নি ,এখনো শিশু জন্মের কয়েকসপ্তাহ লেগে যায় এ টিকা পেতে। হেপাটাইটিস বি এর জন্য টিকা পাওয়া যায় এবং এইচবিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম পদ্ধতি। নতুন ভ্যাকসিন হ্যাপসলিভ-বি এক মাসের ব্যবধানে 2 ডোজ দেওয়া হবে। পুরাতন টিকা ছয় মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়া হয় এ ইনজেকশন সিরিজ। হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-বি এর জন্য একটি যৌথ টিকা থাকে শিশুদের জন্য Pediarix ভ্যাকসিন এইচবিভি, পোলিও, টেটানাস, ডিপথেরিয়া এবং ওয়েভিং কাশি থেকে রক্ষা করে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কমসূচিতে (ইপিআই) হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন যুক্ত করা হয়েছে। এতে এটার সহজলভ্যতার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি-এর প্রাদুর্ভাব অনেক কমে এসেছে।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ

হেপাটাইটিস বি হলে শরীরে লক্ষণ সবসময় নাও ও দেখা দিতে পারে আবার জন্ডিস বা চোখ, শরীর বা প্রস্রাব হলুদ হয়ে যেতে পারে, হঠাৎ বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি বোধ করা, খাবারে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা। শরীরে মাঝে মাঝে চুলকানির সমস্যা থাকতে পারে। অনেকের জ্বর জ্বর ভাব থাকে। আবার অনেকেই তীব্র জ্বর ও উঠে। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি চলে আসে যেমন পেট ও পা।

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়?

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে হেপাটাইটিস বি কিভাবে ছড়ায়।

  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মা যদি শিশুকে দুধ খাওয়াও তাহলে শিশু আক্রান্ত হতে পারে।
  • অনিরাপদ যৌন মিলন।,বহুগামিতা কিংবা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর সাথে অনিরাপদ যৌন মিলন থেকে হেপাটাইটিস বি ছড়াতে পারে।
  • সেলুন দোকানে বেবহার করা খুর ,ব্লেড যদি জীবানুমুক্ত না করা হয় তাহলে সেখান থেকে ছড়াতে পারে।
  • ইনজেকশন ব্যবহার করার পূর্বে যদি জীবানু মুক্ত না করা হয় তাহলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা হলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • একই সিরিঞ্জ দিয়ে একধিক ব্যাক্তি মাদক গ্রহণ করলে।
  • সার্জারির সময়
  • কারাগারে থাকা ব্যক্তিরা
  • এইচআইভির রোগী
  • নাক-কান ছিদ্র করার সময সচেতন ও সাবধান থাকতে হবে।
  • কেননা ছিদ্রের সময় রক্ত বের হলে সে রক্তের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়াতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যাক্তি বিয়ে করলে তার সঙ্গীর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভভনা থাকে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

হেপাটাইটিস ‘বি ভাইরাস লিভারকে আক্রান্ত করে। বর্তমানে এর বেশ আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে “বি” ভাইরাসকে প্রথমে দুটো ভাগে দেখা হয়। প্রথমত যখন বি ভাইরাসের রোগী আসে, তখন আগে দেখা হয়, এই ভাইরাস কি সক্রিয়, না কি নিষ্ক্রিয় । অর্থাৎ লিভারের কি ক্ষতি করছে, নকি ক্ষতি করছে না, সেটি আগে দেখা হয়। তার জন্য কিছু লিভার ফাংশন পরীক্ষা করা হয় l হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে ডিএনএ করে দেখা হয় যে ভাইরাসের সংখ্যা কতটুকু রয়েছে।

এইবিইএজি দেখা হয় অর্থাৎ ভাইরাস কি সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, না কি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই কয়েকটা পরীক্ষার পর ফাইব্রোস্কেন করা হয়। আগে লিভার বায়োপসি করা হতো। এখন এটি না করে ফাইব্রোস্কেন করা হয় ।দেখা হয় যে লিভারের স্টিফনেস কী রকম। ভাইরাসটা লিভারের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। ফাইব্রোস্কেনের স্কোরিং যদি বেশি হয়,তখন অ্যান্ডোস্কোপি করে দেখা হয় যে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, রক্তনালিগুলো বড় রয়েছে কি না।

সব ডাটা ব্যবহার করার পর আল্ট্রাসোনোগ্রামে দেখা হয় , পেটে কোনো পানি রয়েছে কি না। এসব কিছু দেখার পর বি ভাইরাসের দুটো ক্লাসিফিকেশন করে ফেলা হয়। এরপর রোগীর ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পেগ ইন্টারশন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এখন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ বের করেছে
হেপাটাইটিস বি রোগ টি আপনার আছে কিনা তা জানতে নিচের পরীক্ষা গুলা করতে হবে

  1. হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন পরীক্ষা।
  2. হেপাটাইটিস বি পৃষ্ঠ অ্যান্টিবডি পরীক্ষা।
  3. পাটাইটিস বি কোর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
  4. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ডিএনএ পরীক্ষার।
  5. লিভার ফাংশন পরীক্ষা।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা খরচ

হেপাটাইটিস বি এর চিকৎিসায় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যদি লিভার এর বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে অব্যশই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এতে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এটি একটি বায়বহুল চিকিৎসা
আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

হেপাটাইটিস বি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কি করণীয়

রক্ত কেনা বেঁচে এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। কারো ব্যবহার করা ইনজেকশন সিরিঞ্জ ফেলে দিতে হবে। এগুলা র দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যাবে না। সেলুন দোকানে অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড ,খুর এসব নিজে ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে,অন্যকেও সচেতন করতে হবে। প্রত্যেকের উচিত বছরে অন্তত ২ বার পরীক্ষা করা এতে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তাহলে ধরা পরবে। রক্ত নেওয়ার আগে সেটাকে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে যে রক্তদাতার রক্ত ভাইরাসযুক্ত কিনা। আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। স্ট্রিটফুড, জাঙ্কফুড, রাস্তার বাফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ,কেননা এসব খাবার তৈরির সময় তেমন কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা হয় না। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে অব্যশই টিকা নিতে হবে। টিকার থেকে সেরা বিকল্প অন্য কিছু নেই। যৌন মিলনের সময় অব্যশই কনডম বা প্রটেকশন ব্যবহার করতে হবে।

Categories
ভ্যাকসিন

বিসিজি টিকা নিয়ে নতুন তথ্য এবং বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়

আজকে এমন একটি টিকা নিয়ে আলোচনা করবো। এই টিকার নাম হচ্ছে বিসিজি টিকা। এই টিকা টি অনেক গুলো রোগের কাজ করে থাকে। তাই আমাদের এই টিকার সম্পর্কে সাবার জানা থাকা দরকার। চলুন তাহলে এবার যেনে নেওয়া যাক…

  • বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়?
  • বিসিজি টিকা কেন দেওয়া হয়?
  • বিসিজি টিকা কোথায় দেওয়া হয়?
  • বিসিজি টিকা দেওয়া হয় কোন রোগের জন্য?
  • নবজাতকের বিসিজি টিকা.

বিসিজি টিকা

ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন (বিসিজি) টিকা হল একটি টিকা যা প্রাথমিকভাবে যক্ষ্মা (টিবি) এর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এটির উদ্ভাবক অ্যালবার্ট ক্যালমেট এবং ক্যামিল গুয়েরিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেসব দেশে যক্ষ্মা বা কুষ্ঠরোগ সাধারণ, জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ শিশুদের জন্য একটি ডোজ সুপারিশ করা হয়। যেসব এলাকায় যক্ষ্মা সাধারণ নয়, শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা শিশুদেরই সাধারণত টিকা দেওয়া হয়, যখন যক্ষ্মা রোগের সন্দেহভাজন ক্ষেত্রে পৃথকভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়।

যে প্রাপ্তবয়স্কদের যক্ষ্মা নেই এবং পূর্বে টিকা দেওয়া হয়নি, কিন্তু ঘন ঘন সংস্পর্শে আসে, তাদেরও টিকা দেওয়া হতে পারে। বুরুলি আলসার সংক্রমণ এবং অন্যান্য ননটিউবারকুলাস মাইকোব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের বিরুদ্ধেও বিসিজির কিছু কার্যকারিতা রয়েছে। অতিরিক্তভাবে এটি কখনও কখনও মূত্রাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।সুরক্ষার হারের অনেক পার্থক্য হতে পারে এবং তা দশ থেকে কুড়ি বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।শিশুদের মধ্যে এটা প্রায় ২০%-কে সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে এবং যারা সংক্রামিত হয় তাদের মধ্যে এটি অর্ধেককে রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।টিকাটি শিশুদের যক্ষামুক্ত রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।টিকাটি ত্বকে ইঞ্জেকশনের দ্বারা দেওয়া হয়।অতিরিক্ত ডোজগুলি প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়।কিছু ধরনের মূত্রথলির ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও এটা ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি বিরল। এই টিকা দেয়ার পর তেমন কোনো প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।প্রায়ই ইঞ্জেকশনের জায়গায় লালভাব, ফোলাভাব ও হালকা ব্যথা থাকে। একটা ছোট ঘা তৈরি হতে পারে যা সেরে যাওয়ার পরে কিছুটা ক্ষতচিহ্ন থাকতে পারে। দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা মানুষদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি বেশি সাধারণ, এবং তা সম্ভাব্যরূপে বেশি তীব্র হয়। এটা গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। টিকাটি মূলত প্রস্তুত করা হয়েছিল মাইকোব্যাক্টেরিয়াম বোভিস থেকে যা সাধারণভাবে গরুর মধ্যে পাওয়া যায়। এটা দুর্বল হয়ে গেলেও এখনও জীবিত আছে।

বিসিজি টিকা প্রথম ১৯২১ সালে চিকিৎসামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপরিহার্য ওষুধগুলির তালিকায় আছে, যেগুলি মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।২০১৪ সালে একটি ডোজের পাইকারী দাম হল ০.১৬ মার্কিন ডলার।আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এর দাম হল ১০০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলার। প্রতি বছর টিকাটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন শিশুকে দেওয়া হয়।

বিসিজি টিকা কেন দেওয়া হয়?(বিসিজি টিকা দেওয়া হয় কোন রোগের জন্য?)

এই টিকা যক্ষ্মা (টিবি) সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এটি 70-80% টিবি-এর সবচেয়ে গুরুতর রূপের বিরুদ্ধে কার্যকর, যেমন টিবি মেনিনজাইটিস। যাইহোক, এটি ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এমন টিবি প্রতিরোধে কম কার্যকর।

বিসিজি ভ্যাকসিনে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা দুর্বল (ক্ষমিত) হয়েছে, যাতে তারা ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে কিন্তু সুস্থ মানুষের মধ্যে রোগ সৃষ্টি করে না। তবে ভ্যাকসিনটি এমন লোকেদের দেওয়া উচিত নয় যারা ক্লিনিক্যালি ইমিউনোসপ্রেসড (হয় ড্রাগের চিকিৎসা বা অন্তর্নিহিত অসুস্থতার কারণে)। এটি কারণ ভ্যাকসিনের স্ট্রেন খুব বেশি প্রতিলিপি করতে পারে এবং একটি গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে সেইসব শিশু যাদের মায়েরা গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানোর সময় ইমিউনোসপ্রেসিভ চিকিৎসা নিয়েছেন।

কার্যকারিতা সম্পাদনা

বিভিন্ন দেশে বিসিজি-এর পরিবর্তনশীল কার্যকারিতার সম্ভাব্য কারণগুলির একটি সংখ্যা প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনটিই প্রমাণিত হয়নি, কিছু অপ্রমাণিত হয়েছে, এবং কেউই কম যক্ষ্মা-বোঝার দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং উচ্চ যক্ষ্মা-বোঝার দেশ (ভারত) উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকারিতার অভাব ব্যাখ্যা করতে পারে না। পরিবর্তনশীল কার্যকারিতার কারণগুলি বিসিজি-র উপর একটি WHO নথিতে দৈর্ঘ্যে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্যবহৃত বিসিজি স্ট্রেনের জেনেটিক প্রকরণ বিভিন্ন পরীক্ষায় রিপোর্ট করা পরিবর্তনশীল কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে পারে। জনসংখ্যার জিনগত পরিবর্তন: বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জেনেটিক মেক আপের পার্থক্য কার্যকারিতার পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে পারে। বার্মিংহাম বিসিজি ট্রায়াল 1988 সালে প্রকাশিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে ভিত্তিক এই ট্রায়ালটি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে উদ্ভূত পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুদের পরীক্ষা করে (যেখানে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আগে শূন্য দেখানো হয়েছিল)। ট্রায়াল একটি 64% প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব দেখিয়েছে, যা অন্যান্য ইউকে ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত চিত্রের অনুরূপ, এইভাবে জেনেটিক প্রকরণ অনুমানের বিরুদ্ধে তর্ক করে।

ননটিউবারকুলাস মাইকোব্যাকটেরিয়া দ্বারা হস্তক্ষেপ: পরিবেশগত মাইকোব্যাকটেরিয়ার (বিশেষত মাইকোব্যাকটেরিয়াম এভিয়াম, মাইকোব্যাকটেরিয়াম মেরিনাম এবং মাইকোব্যাকটেরিয়াম ইন্ট্রাসেলুলার) এক্সপোজারের ফলে মাইকোব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি অনির্দিষ্ট ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মাইকোব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট ইমিউন রেসপন্স আছে এমন কাউকে বিসিজি করালে তা ইতিমধ্যেই সেখানে থাকা প্রতিক্রিয়া বাড়ায় না। তাই, বিসিজি কার্যকরী হবে না কারণ সেই ব্যক্তির ইতিমধ্যেই অনাক্রম্যতার একটি স্তর রয়েছে এবং বিসিজি সেই অনাক্রম্যতা যোগ করছে না।

এই প্রভাবটিকে মাস্কিং বলা হয় কারণ বিসিজির প্রভাব পরিবেশগত মাইকোব্যাকটেরিয়া দ্বারা মুখোশিত। এই প্রভাবের জন্য ক্লিনিকাল প্রমাণ যুক্তরাজ্য এবং মালাউইতে কিশোর-কিশোরী স্কুল শিশুদের সমান্তরালভাবে সম্পাদিত গবেষণার একটি সিরিজে পাওয়া গিয়েছে এই গবেষণায়, যুক্তরাজ্যের স্কুলের বাচ্চাদের মাইকোব্যাকটেরিয়ার প্রতি কম বেসলাইন সেলুলার অনাক্রম্যতা ছিল যা বিসিজি দ্বারা বৃদ্ধি পায়; বিপরীতে, মালাউই স্কুলের বাচ্চাদের মাইকোব্যাকটেরিয়ার উচ্চ বেসলাইন সেলুলার প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল এবং এটি বিসিজি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়নি।

এই প্রাকৃতিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া প্রতিরক্ষামূলক কিনা তা জানা যায় না। একটি বিকল্প ব্যাখ্যা মাউস অধ্যয়ন দ্বারা প্রস্তাবিত হয়; মাইকোব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা বিসিজিকে প্রতিলিপি করা থেকে বিরত করে এবং তাই এটিকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা থেকে বিরত করে। একে ব্লক হাইপোথিসিস বলা হয়। সমসাময়িক পরজীবী সংক্রমণ দ্বারা হস্তক্ষেপ: অন্য অনুমানে, পরজীবীর সাথে একযোগে সংক্রমণ বিসিজি-তে প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিবর্তন করে, এটিকে কম কার্যকর করে তোলে। যেহেতু টিউবারকুলাস ইনফেকশনের কার্যকর ইমিউন রেসপন্সের জন্য Th1 রেসপন্স প্রয়োজন, তাই বিভিন্ন পরজীবীর সাথে একযোগে ইনফেকশন একযোগে Th2 রেসপন্স তৈরি করে, যা BCG-এর প্রভাবকে ভোঁতা করে দেয়।

কিছুসংখ্যক ক্যান্সারের ভ্যাকসিন BCG কে একটি সংযোজন হিসেবে ব্যবহার করে যাতে ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেমের প্রাথমিক উদ্দীপনা পাওয়া যায়।
বিসিজি মূত্রাশয় ক্যান্সারের উপরিভাগের রূপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 1970 এর দশকের শেষের দিক থেকে, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মূত্রাশয়ে বিসিজি স্থাপন করা এই রোগে ইমিউনোথেরাপির একটি কার্যকরী রূপ। যদিও প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট, এটি টিউমারের বিরুদ্ধে একটি স্থানীয় ইমিউন প্রতিক্রিয়া মাউন্ট করা হয়েছে বলে মনে হয়। বিসিজির সাহায্যে ইমিউনোথেরাপি 67% পর্যন্ত মূত্রাশয় ক্যান্সারের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে।

বিসিজি টিকা দেওয়ার নিয়ম

বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়এ টিকা টি দেওয়া হয় বাম হাতের চামড়ার নিচে, যার ফলে বামহাতে স্কারচিহ্নের মতো গোল হয়ে ফোলে উঠে। এতে করে শিশুটি বেশি ব্যাথা পায় না, আর শরীরে জ্বরও আসে না। বিসিজি টিকার ডোজ একটি। টিকা দেয়ার কয়েকমাসের মধ্যে টিকা দেয়ার জায়গাটি পাকবে, গলবে, এতে করে যক্ষ্মার জীবানুটি বের হয়ে যাবে, ফলে শিশুটি যক্ষ্মা মুক্ত হয়। বিসিজি টিকা মূলত নবজাতক শিশুদের জন্য।

বিসিজি টিকা কখন দিতে হয়?

বিসিজি টিকা শিশু জন্মের সময় বা জন্মের এক বছর এর মধ্যে দিতে হয়।টিকা দেয়ার কয়েক মাসের মধ্যে টিকা দেওয়ার যায়গা টি পাকবে,গলবে,এতে করে যক্ষার জীবাণুটি বের হয়ে যাবে।

বিসিজি টিকার দাগ না হলে কি করণীয়?

ডেল্টয়েডের সন্নিবেশে বিসিজি একটি একক ইন্ট্রাডার্মাল ইনজেকশন হিসাবে দেওয়া হয়। যদি BCG ভুলবশত ত্বকের নিচে দেওয়া হয়, তাহলে একটি স্থানীয় ফোড়া তৈরি হতে পারে (একটি “BCG-oma”) যা কখনও কখনও আলসার হতে পারে, এবং অবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, অন্যথায় চিকিৎসা ছাড়াই এটি সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে, যা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

একটি ফোড়া সবসময় ভুল প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয় না এবং এটি টিকা দেওয়ার সাথে ঘটতে পারে এমন একটি সাধারণ জটিলতা। অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এই ফোড়াগুলির চিকিৎসার উপর অসংখ্য চিকিৎসা গবেষণা বিভিন্ন ফলাফলের সাথে করা হয়েছে, কিন্তু সম্মতি হল একবার পুঁজ আকাঙ্ক্ষিত এবং বিশ্লেষণ করা হলে, যদি কোনও অস্বাভাবিক ব্যাসিলি উপস্থিত না থাকে তবে ফোড়া সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই সেরে যাবে। শিশুর বাম হাতে বিসিজি টিকা দেওয়ার পর সেখানে ক্ষত হবে।ক্ষত হওয়ার পর ক্ষত শুকিয়ে দাগ দেখা যাবে।শিশুর হাতে দাগ না হলে বুঝতে হবে টিকা টি শিশুর দেহে কাজ করে নি।এক্ষেত্রে শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের নিকট উপস্থিত হতে হবে।টিকার দেয়ার স্থান না পাকলে শিশুর শরীরে যক্ষা জীবানু থেকে যেতে পারে।

বিসিজি টিকা কোথায় দেওয়া হয়?

আমরা জানি সব টিকা বাম হাতে দেওয়া হয়। এই বিসিজি টিকা শিশুর বাম হাতে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আরও পড়ুনঃ রোটা ভাইরাস কি

বিসিজি চিকিৎসার কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?

এই টিকা গ্রহন করার পরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাহলে নিচে আলোচনা করা যাক।…

  • আপনার প্রস্রাবে অল্প পরিমাণে রক্ত।
  • নিম্ন-গ্রেডের জ্বর (99-100 ডিগ্রি ফারেনহাইট [37.22-37.77 ডিগ্রি সেলসিয়াস])।
  • ক্লান্তি।
  • আপনি যখন প্রস্রাব করেন তখন জ্বালা পোড়া ভাব।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা প্রয়োজন (ঘন ঘন প্রস্রাব)।
  • পেশী ব্যথা.
  • সংযোগে ব্যথা.

প্রতিকূল প্রভাব সম্পাদনা

বিসিজি ইমিউনাইজেশন সাধারণত ইনজেকশনের জায়গায় কিছু ব্যথা এবং দাগ সৃষ্টি করে। প্রধান প্রতিকূল প্রভাব হল কেলোয়েড—বড়, উঁচু দাগ। ডেলটয়েড পেশীতে সন্নিবেশটি প্রায়শই ব্যবহৃত হয় কারণ সেই সাইটটি ব্যবহার করার সময় স্থানীয় জটিলতার হার সবচেয়ে কম হয়। তবুও, নিতম্ব হল প্রশাসনের একটি বিকল্প সাইট কারণ এটি আরও ভাল প্রসাধনী ফলাফল প্রদান করে।

বিসিজি ভ্যাকসিন ইন্ট্রাডার্মালি দিতে হবে। যদি ত্বকের নিচে দেওয়া হয়, তাহলে এটি স্থানীয় সংক্রমণকে প্ররোচিত করতে পারে এবং আঞ্চলিক লিম্ফ নোডগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে হয় suppurative (পুস উৎপাদন) এবং nonsuppurative lymphadenitis। রক্ষণশীল ব্যবস্থাপনা সাধারণত ননসপুরেটিভ লিম্ফডেনাইটিসের জন্য যথেষ্ট। যদি suppuration ঘটে, তাহলে এর জন্য সূঁচের আকাঙ্খার প্রয়োজন হতে পারে। অমীমাংসিত স্তন্যদানের জন্য, অস্ত্রোপচারের ছেদনের প্রয়োজন হতে পারে। এই জটিলতার চিকিৎসার প্রমাণ খুবই কম।

অস্বাভাবিকভাবে, হেমাটোজেনাস (রক্ত দ্বারা বহন করা) এবং লিম্ফাঙ্গিওম্যাটাস স্প্রেডের কারণে স্তন এবং গ্লুটিয়াল ফোড়া হতে পারে। আঞ্চলিক হাড়ের সংক্রমণ (BCG osteomyelitis বা osteitis) এবং প্রচারিত BCG সংক্রমণ হল BCG টিকা দেওয়ার বিরল জটিলতা, কিন্তু সম্ভাব্য জীবন-হুমকি। সিস্টেমিক অ্যান্টিটিউবারকুলাস থেরাপি গুরুতর জটিলতায় সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ হাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

বিসিজি টিকাদান পদ্ধতি সম্পাদনা

একটি টিউবারকুলিন ত্বক পরীক্ষা সাধারণত বিসিজি পরিচালনার আগে করা হয়। একটি প্রতিক্রিয়াশীল টিউবারকুলিন ত্বক পরীক্ষা গুরুতর স্থানীয় প্রদাহ এবং দাগের ঝুঁকির কারণে বিসিজি-তে একটি contraindication; এটা কোনো অনাক্রম্যতা নির্দেশ করে না।
আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

বাংলাদেশে টিকা ব্যবস্থা

হাম ও ডিপিটি ছাড়াও বিসিজি তথা যক্ষ্মার যে টিকা দেওয়া হয়, তার হার ১৯৮৫ সালে ছিল মাত্র ২ শতাংশ, যা পরবর্তী সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ শতাংশে। টিকাদান কর্মসূচির কলেবর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল দেশে ৬টি রোগের বিরুদ্ধে ইপিআই কার্যক্রম শুরু হয়, যা বর্তমানে ১০টি রোগের ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে।প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই টিকা প্রদান করা হয়।এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে যক্ষা দূর করা সম্ভব হয়েছে।

বিসিজি টিকা এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে এবং সব তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই প্রতিবেদন টি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

Categories
ভ্যাকসিন

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আসসালামুয়ালাইকুম পাঠকবৃন্দ। আজকের প্রতিবেদন টি মূলত কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। এই রোগটি আমাদের সকলের পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে কুষ্ঠরোগ অন্যতম।এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগ।পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমি মিশর, চীন, গ্রিক, রোম, ভারত ইত্যাদি প্রায় সব দেশের ইতিকথায় এই রোগের বিবরণ পাওয়া যায়। চলুন এবার জেনে নিই এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত।

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ

কুষ্ঠ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই কিন্তু এর লক্ষণ দেখা দেয় না। এজন্য তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে। অনেক সময় এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫ থেকে ২০ বছরও লাগতে পারে। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রাথমিকভাবে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হলো:

      • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ত্বকের রং পরিবর্তন হয় ও ছোপ ছোপ
      • দাগ দেখা দেয়।
      • শরীরের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।
      • ত্বক জ্বালা করে ও অনেক গরম অনুভব হয় ।
      • হাত ও পায়ে ঘা সৃষ্টি হয়।
      • শরীর অসাড় হয়ে যায়।
      • চুল ও চোখের পাপড়ি উঠে যায়।
  • দীর্ঘদিন ধরে জ্বর ও কাশি হয়।
  • চোখের পাতার ভেতরের অংশে ঘা সৃষ্টি হয়।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
  • শরীরের ত্বকে ছোট ছোট পিন্ড দেখা দেয়।
  • ত্বকে লালচে দাগ ও দেখা দিতে পারে।
  • মুখ ও কানের লতিতে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকের বিভিন্ন অংশের অনুভূতি হ্রাস পেতে পারে।
  • হাত পা নাড়াতে সমস্যা হয় ও অবশ হয়ে যায়।
  • শরীর পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।

উপরোক্ত লক্ষনগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

কুষ্ঠরোগ (Leprosy) কি

কুষ্ঠরোগের ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো। আল কোরআন ও বাইবেলে ও এ রোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। কুষ্ঠরোগকে “হ্যানসেনের রোগ” (এইচডি) ও বলা হয়ে থাকে।কারণ ১৮৭৩ সালে নরওয়ের বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেন তার গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে কুষ্ঠ একটি জীবাণুবাহিত রোগ যা নিরাময়যোগ্য।

এটি যে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয় তার নাম হলো “মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি” বা “মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস”। এ ব্যাক্টেরিয়া মানবদেহের স্নায়ু ,শ্বাসতন্ত্র ,চোখ ও ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। World Health Organization বা WHO এর মতে , কুষ্ঠরোগ খুব সম্ভবত শ্বাসতন্ত্র ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। আবার অনেকে মনে করেন এটি এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণেও হতে পারে।

কুষ্ঠরোগের কারণে বিশেষ করে মস্তিষ্ক , মেরুদন্ডের বাইরের দিকের স্নায়ু , অন্ডকোষ , ত্বক ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেকোনো বয়েসের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর কোনো বয়সসীমা নেই। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। প্রায় ৯৫% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জোরে এ রোগ থেকে বেঁচে রয়েছেন।

এই রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার শেষ নেই।অনেকে এটাকে বংশগত রোগ মনে করে।তবে তা ঠিক না। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। সব ধরনের কুষ্ঠ রোগ ছড়ায় না। এ রোগের মধ্যেও দুটি ধরন রয়েছে । একটি হলো অধিক রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগ এবং আরেকটি হলো কম রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগ।

অধিক রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগই এই রোগ সংক্রমণের প্রধান উৎস। এর জীবাণু রোগীর হাঁচি কাশির মাধ্যমে অন্য সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে তাকে আক্রান্ত করে দেয়। কম রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগ খুব একটা ছড়ায় না। তবে এ ধরনের কুষ্ঠ রোগীর সাথে ও যথাসম্ভব কম মেলামেশা করা উচিত।
আরোও পড়ুনঃ যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

কুষ্ঠ রোগের প্রকারভেদ

  1. টিউবারকুলার লেপ্রসি
  2. ইন্টারমিডিয়েট লেপ্রসি
  3. লেপ্রোমাটাস লেপ্রসি

একেক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে একেক ধরনের কুষ্ঠ রোগের বিস্তার ঘটে। একজন কুষ্ঠরোগী তার শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি মানসিক ভাবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা এ রোগের কারণে তাকে সবাই অবহেলা করে, ঘৃণা করে। তাকে আলাদা করে দেয়। অনেক পরিবার তো বাসা থেকেই বের করে দেয়। কিন্তু এটি মোটেও ঠিক নয়। কুষ্ঠরোগ কোনো অপরাধ নয়।এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ। এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এটি শনাক্ত করতে পারলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।

এজন্য এ সম্পর্কে সকলকে জানতে হবে ও সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে।তাই এর লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে জানা থাকলে এটি সহজেই নিরাময় করা সম্ভব।
আরোও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

কুষ্ঠ রোগের ঔষধ

সব ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে সঠিক চিকিৎসার দরকার হয়। তেমনি কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য এর চিকিৎসা ও ওষুধ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় খুবই উপকারী ও লাভদায়ক হলো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম।

এসব ঔষধের মধ্যে কয়েকটি হলো
ড্যাপসন (Dapsone), ক্লোফাজামিন (Clofazamine) , রিফাম্পিসিন (Rifampicin),মাইনোসাইক্লিন (Minocycline),ফ্লুরোকুইনোলোন (fluroquinolones) ইত্যাদি।

এসব ঔষধের মধ্যে ড্যাপসন (Dapsone) ৪০-এর দশকে আবিষ্কার করা হয় ও তা তখন প্রায় দুই দশক ধরে কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে । অতঃপর ৬০-এর দশকে কুষ্ঠ রোগের ব্যাকটেরিয়া এই ঔষধের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠে।

এজন্য নতুন কোনো ঔষধের দরকার পড়ে। আর তখনই আবিষ্কৃত হয় রিফামপিসিন ও ক্লোফাজিমিন নামক দুটি অ্যান্টি-বায়োটিক। আর ড্যাপসনের সাথে এ দুটি ঔষধ সমন্বয় করে দেখা গেলো তা বেশ কার্যকর। এরপর থেকেই শুরু হয় মাল্টি ড্রাগ থেরাপি (MDT)। এই থেরাপির মাধ্যমে তখন কুষ্ঠ রোগীদের মধ্যে ভালো উন্নতি দেখা যায়। এই মাল্টি ড্রাগ থেরাপি আবিস্কারের ফলে কুষ্ঠ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

কুষ্ঠ রোগের কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য অ্যান্টি- ইনফ্লামেটারি উপাদান সমৃদ্ধ ঔষধ সেবন করতে হয়। অ্যান্টি – ইনফ্লামেটারি উপাদান সমৃদ্ধ ঔষধের মধ্যে রয়েছে : অ্যাস্পিরিন(Aspirin), প্রেডনিসোন(Prednisone) এবং থালিডোমাইড(Thalidomide) ইত্যাদি। এছাড়াও এই রোগ গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসক তার যথার্থ চিকিৎসা করতে পারবেন।

কুষ্ঠ রোগের প্রতিকার

কুষ্ঠ রোগের প্রতিকার হিসেবে সঠিক উপায়ে ঔষধ সেবন করা ও নিয়মমাফিক জীবন যাপন করার বিকল্প নেই।
আমরা জানি , প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই সকলকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই এর প্রতিরোধ করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে এ রোগে আক্রান্ত হতে না হয়।
আরোও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধে যা করতে হবে

  • সর্বপ্রথম পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কারণ এ রোগ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়।
  • কুষ্ঠ রোগী থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
    বিসিজি (Bacillus Calmette-Guerin) টিকা গ্রহণ করতে হবে। এটি কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর।
  • প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ পুষ্টিকর খাবার না খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যা কুষ্ঠ রোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী চলার মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগসহ অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

কুষ্ঠ রোগের প্রতিরোধে প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ রোববার পালিত হয় বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। এই দিবসটির প্রচলন করেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এন্টি-লেপ্রসি অ্যাসোসিয়েশনস (আইএলইপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফলেরিউ। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ রোববার কুষ্ঠ রোগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে এই দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে জোরালো কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা প্রতি দশ হাজারে একজনে নামিয়ে আনার পরিকল্পনায় ১৯৯৮ সালেই বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করে।
আরোও পড়ুনঃ সব পিতা-মাতার জানা দরকার রোটা ভাইরাস কি

সতর্কতাঃ
কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে যত সম্ভব নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং বিসিজি টিকা গ্রহণ করুন। তবে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত রোগির সাথে করমর্দন, চলাফেরা কিংবা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে এ রোগ ছড়ায় না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কুষ্ঠরোগ সামাজিকভাবে নিগৃহীত একটি রোগ হিসেবে প্রচলিত। তাই এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ বা লক্ষণ বুঝতে পেরেও অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে তা লুকিয়ে রাখে। ফলে তারা আরো খারাপ পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। আবার আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা আছে যে, চিকিৎসা গ্রহণের পর তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠলে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী অর্থাৎ এক থেকে দুই বছরেরও বেশি অধিক হয়ে থাকে। তাই তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত কোন রোগী যদি নিয়মিত সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করে, তবে এ রোগ একদম নিরাময়যোগ্য। তাই, অযথা আতঙ্ক না ছড়িয়ে, কুষ্ঠ রোগ কে অবহেলা না করে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব।

আসুন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন না থেকে সচেতন থাকি, সুস্থ থাকি নিজ ও দেশের প্রয়োজনে।

Categories
ভ্যাকসিন

সব পিতা-মাতার জানা দরকার রোটা ভাইরাস কি

আপনাদের মধ্যে অনেকেই রোটা ভাইরাসের নাম শুনেছেন। আবার অনেকে এ ভাইরাস সম্পর্কে খুব একটা জানেন না‌। কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে সব ধরনের রোগ ও এর প্রতিরোধের উপায় জেনে রাখতে হবে। তাহলে অতি সহজেই এসব থেকে বেঁচে থাকা যায়।এবার চলুন জেনে নেই এই ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

রোটা ভাইরাস কি

রোটা ভাইরাস হলো এমন এক ধরনের ভাইরাস যা ছোঁয়াচে হয় ও দ্রুত সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নবজাতক শিশুর ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতার প্রধান কারণ এই রোটা ভাইরাস।

এটি মূলত খাদ্যনালীতে সংক্রমন ঘটায়। এর কারণেই ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের এ ভাইরাস বেশি আক্রমণ করে থাকে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬০-৮০ ভাগই রোটা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। এটি মূলত অন্ত্রের সংক্রমণ। এটি সরাসরি অন্ত্রকে আক্রমণ করে বিধায় শিশুর মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

আমাদের দেশে শীতকালে এ ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এর ফলে ডায়রিয়া ও বমি বেড়ে যায় ও শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি বড়দের মধ্যে তেমন কোন ক্ষতি না করতে পারলেও বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে বাচ্চাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে জানতে হবে ও এর প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

রোটা ভাইরাস কেনো হয়

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে রোটা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেসব কারণে রোটা ভাইরাস আক্রমণ করে তা অবশ্যই সবার জেনে রাখা ভালো। নিচে তা দেওয়া হলো…

  • অপরিচ্ছন্ন থাকলে এ ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির মলমূত্র থেকে ও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
  • দূষিত পানি পান করলে ও এ ভাইরাস অন্ত্রে বাসা বাঁধে।
  • উপরোক্ত এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলে রোটা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

যেভাবে শনাক্ত করা যায় এই ভাইরাস

শিশুর মলের নমুনা সংগ্রহ করে এলাইজা বা পিসিআর পরীক্ষা করার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় এই ভাইরাস।তবে প্রাথমিকভাবে এই ভাইরাস শনাক্ত করা যায় না। কারণ এর লক্ষণ সাধারণ ডায়রিয়ার লক্ষণের মতোই হয়ে থাকে। এজন্য অভিভাবকরা ও এটি বুঝতে পারেন না।

রোটা ভাইরাসের লক্ষণ

রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অনেক লক্ষণই প্রকাশ পায়। যার ফলে তাৎক্ষণিক ভাবে এটি শনাক্ত করা যায়। তবে ভাইরাস দেহে প্রবেশের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হলো:

  • জ্বর আসে।
  • পেট খারাপ ও বমি হয়।
  • পেটে ব্যথা হয়।
  • ডায়রিয়া হয়‌।
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় , রোগী কিছু খেতে পারে না।
  • ডিহাইড্রেশন হয়।
  • গলা শুকিয়ে যায়।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
  • মাথা ব্যথা করে ও মাথা ঘুরায়।
  • শরীরের মধ্যে অস্বস্তিবোধ হতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

উপরোক্ত লক্ষনগুলো দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।

রোটা ভাইরাস হলে করণীয়

রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়লে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। দেরী করলে চলবে না। কারণ এটি মারাত্মক একটি ভাইরাস। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। কোনো অ্যান্টি বায়োটিক এ ভাইরাস দমন করতে পারে না। আবার এর জন্য কোনো অ্যান্টি ভাইরাল ঔষধও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়লে যা করতে হবে তা সবারই জেনে রাখা জরুরি।

  1. আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ সেবন করতে হবে।
    পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  2. নিজের খাবারের প্লেট , গ্লাস ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে।
  3. হাঁচি কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
  4. জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
  5. শরীর থেকে বেড়িয়ে যাওয়া পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে পানি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণ খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, লেবুর শরবত, ডাবের পানি, ঘোল,চিনির শরবত ইত্যাদি।
  6. রাইস স্যালাইন খেতে হবে।
  7. ওরাল স্যালাইন প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।নাহলে পানিশূন্যতা দূর করা সম্ভব হবে না।
  8. তেলজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।
  9. বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না।
  10. খাবার ভালোমতো রান্না করে খেতে হবে।এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।

রোটা ভাইরাসের টিকা

সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই প্রতিরোধক হিসেবে টিকা গ্রহণ করতে হয়। এতে করে ওই রোগ থেকে বাঁচা যায় বা ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেও তেমন কোন ক্ষতি হয় না। রোটা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও টিকা গ্রহণ করতে হয়। এই ভাইরাসের দুই ধরনের টিকা রয়েছে। একটি হলো রোটা রিক্স (Rotarix) ও আরেকটি রোটা টেক(Rotatek)। এই দুই ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করলে শিশুরা এই ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পায়।

রোটা ভাইরাসের টিকার মূল্য

  • রোটা রিক্স দুই ডোজ নিতে হয় ও এর মূল্য পরবে ১৮০০ টাকা প্রতি ডোজ।
  • রোটা টেক তিন ডোজ নিতে হয় ও এর মূল্য প্রতি ডোজ ১৬০০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

কখন দিতে হবে এই টিকা

রোটা টেক বাচ্চাদের ২,৪ ও ৬ মাস বয়সে দিতে হয়। রোটা রিক্স বাচ্চাদের ২ ও ৪ মাস বয়সে দিতে হয়। শিশুদের বয়স ছয়মাস হওয়া পর্যন্ত এ টিকা দিয়ে দিতে হবে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। সূচবিহীন সিরিঞ্জের সাহায্যে এ টিকা ফোঁটা ফোঁটা করে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়। সঠিক সময়ে এই টিকা গ্রহণ করতে পারলে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

কোথায় পাবেন এই টিকা

বাংলাদেশে এ টিকা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যাবে।

রোটা ভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এ টিকা গ্রহণে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে কিছু কিছু শিশুর জ্বর ও দূর্বলতা হতে পারে যা সাধারণ অ্যান্টি বায়োটিক ঔষধ সেবন করলেই চলে যেতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

আক্রান্ত শিশু যেসব খাবার খেতে পারবে

রোটা ভাইরাস সরাসরি শিশুর অন্ত্রে আক্রমণ করে। ফলে শিশুর খাওয়া দাওয়ায় পরিবর্তন আনতে হয়।এ ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু যেসব খাবার খেতে পারবে তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:

  1. তরল জাতীয় যেকোনো খাবার খেতে হবে।
    শরীরে পানির চাহিদা পূরণে ওরাল স্যালাইন খাওয়াতে হবে বেশি পরিমাণে।
  2. ছোট শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে। এটি এই ভাইরাস প্রতিরোধে অধিক কার্যকর।
  3. ফলমুল ও শাকসবজি খাওয়ানো যাবে।
  4. এসব খাবারের পাশাপাশি রাইস স্যালাইন ও ঘরে তৈরি খাবার স্যালাইন ও খাওয়াতে হবে।

রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

এ ভাইরাস প্রতিরোধে সকলকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। নাহলে এই মারাত্মক ব্যধি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ও রয়েছে। এজন্য যা করা দরকার তা আলোচনা করা হলো।

  1. শিশুদের মেঝেতে খেলতে দেয়া যাবে না । এর ফলে জীবাণু অতি সহজেই তাদের হাতের মাধ্যমে তাদের মুখে প্রবেশ করতে পারে।
  2. তাদের মলমূত্র ত্যাগের পর ভালোমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  3. তাদের হাত যেন ময়লা বা অপরিচ্ছন্ন না থাকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
  4. পরিষ্কার পাত্রে তাদের খাবার খাওয়াতে হবে।
  5. জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানি পান করাতে হবে।
  6. বাইরের খাবার খাওয়ানো যাবে না।
  7. ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

বিঃ দ্রঃ
সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। এভাবেই এই রোটা ভাইরাস দমন করা সম্ভব হবে।

Categories
ভ্যাকসিন

শিশুদের জন্য টি টি টিকার উপকারিতা

পৃথীবিতে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধের জন্য নানা সময় ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। তাই আজকে আলোচনা করবো টি টি টিকার উপকারিতা নিয়ে।

টি টি টিকার উপকারিতা

টি টি টিকা প্রাপ্ত বয়স্ক এবং শিশুদের দেওয়া হয় টিটেনাস বা ধনুষটংকার রোগ প্রতিরোধ এর জন্য। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সাত বছরের উপরে শিশুদের এ টিকা দিতে বলা হয়। টি টি টিকার উপকারিতা অনেক। এ টিকা গ্রহণের ফলে আপনি টিটেনাস ভাইরাস এর বিপক্ষে ইমিউন হয়ে যাবেন। এ টিকা সময় মতো না গ্রহণ করলে পরবর্তীতে আমাদের টিটেনাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।

হাম-রুবেলা টিকা

হাম ভাইরাসজনিত মারাত্মক একটি সংক্রামক রোগ। যাকে রুবেলাও বলা হয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে শুরু হয়। এছাড়া এটি জার্মান মিজলস নামেও পরিচিত। শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। সময় মতো হামের টিকা অথবা চিকিৎসা না করালে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। হাম যে শুধু শিশুদের হয়ে থাকে এমনটা নয়। বড়দেরও হাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভ্যাকসিনের নেওয়ার পরেও বিশ্বের অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করে থাকে। হামের কারণে বছরে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়। বিশেষ করে যাদের বয়স ৫ বছরের কম।

হাম ভাইরাস ব্যক্তির নাক এবং গলার শ্লেষ্মায় বাস করে। রোগটি বাতাসের মাধ্যমে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস ভূপৃষ্ঠে এবং বাতাসে ২ ঘন্টা সক্রিয় থাকে। ৯০ % সম্ভাবনা রয়েছে যে, যে ব্যক্তিকে হামের টিকা দেওয়া হয়নি সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগটি দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ঘটে। প্রথম ১০-১৪ দিন ইনকিউবেশন পিরিয়ড, যেখানে কোন লক্ষণ দেখা যায় না। এখানে শুধু রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।

রুবেলা igG পসিটিভ মানে কি?

রুবেলা igG পসিটিভ মানে আপনি রুবেলা ভাইরাস এর প্রতি ইমিউন এবং আপনার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা নেই। রুবেলা igG টেস্ট টি সবচেয়ে বেশি করা হয়।

জটিলতা

জটিলতাগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টি, এনকেফালাইটিস, অন্ধত্ব ও বধিরতা অন্যতম। হামের মতো রুবেলাও ভাইরাসজনিত অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ। এটিও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। গর্ভবতী মায়েরা গর্ভের প্রথম তিন মাসে রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মা থেকে গর্ভের শিশু আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গর্ভপাত, এমনকি গর্ভের শিশুর মৃত্যু হতে পারে অথবা গর্ভজনিত বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করে, যা কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম নামে পরিচিত। এসব রোগ থেকে শিশুকে বাঁচানোর উপায় হচ্ছে সঠিক সময়ে তাকে টিকা দেওয়া।

কেন হাম রোগ হয় ?

ভিটামিন-এ এর ​​অভাব হাম রোগের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও ভিটামিন-এ এর অভাবে গুরুতর লক্ষণ এবং জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

হামের কারণ ও লক্ষণ

হাম একটি সংক্রামক রোগ। যা একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। হাম প্রথমে সংক্রমিত ব্যক্তির গলা এবং নাকের মধ্যে পুনরুউৎপাদন করে। যখন এই হাম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি বা এমনকি কথা বলে, তখন তাদের ফোঁটাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অন্য কোন ব্যক্তি শ্বাস নিলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এই সংক্রমিত ফোঁটাগুলি পৃষ্ঠের উপরেও অবতরণ করতে পারে।

যেখানে এটি কমপক্ষে ২ ঘন্টা সক্রিয় থাকার ক্ষমতা রাখে। দূষিত পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসার পরেও যদি কোন ব্যক্তির চোখ এবং নাক স্পর্শ করেন তবে সেই ব্যক্তি এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন। প্রতিটি মানুষের জন্য হামের টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোন ব্যক্তির ছোট বেলায় হামের টিকা না নিয়ে থাকে বড় হওয়ার পর সেই ব্যক্তির হাম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যে সব দেশ বা অঞ্চলে মানুষের হাম বেশি পরিমানে হয়। সেই সব অঞ্চলে ভ্রমণ করলে হাম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

হাম রোগের লক্ষণ

এই রোগের লক্ষণগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১০ থেকে ১৪ দিন পরে উপস্থিত হয়। এই রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • কাশি
  • জ্বর
  • সর্দি
  • লাল চোখ
  • গলা ব্যাথা
  • মুখের ভিতরে সাদা দাগ
  • ফুসকুড়ি হামের প্রধান লক্ষণ হলো ব্যাপকভাবে ত্বকের মধ্যে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়া। এই ফুসকুড়ি গুলো দেহের মধ্যে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ফুসকুড়িগুলি সাধারণত মাথায় প্রদর্শিত হতে শুরু করে। তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে এগুলো ছড়িয়ে পড়ে।

হাম রুবেলা টিকা কখন দিতে হয়

হাম-রুবেলা রোগ ও এর জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো সঠিক সময়ে শিশুকে হাম-রুবেলা (এমআর) টিকা প্রদান করা। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে শিশুদের ৯ মাস ও ১৫ মাস বয়সে ২ ডোজ এমআর টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে মোট
আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

হাম রুবেলা টিকা কোথায় দিতে হয়

হাম রুবেলা টিকা আপনার নিকটস্থ টিকা কেন্দ্রে দিয়ে থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সময় টিকা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

হাম রুবেলা টিকার পার্শপ্রতিক্রিয়া

এ টিকার তেমন কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে অনেকের সামান্য মাথা ব্যথা,বমি বমি ভাব হতে পারে। যদি কারো একাধিক পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে অবসই ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে। টি টি টিকা প্রাপ্ত বয়স্ক এবংশিশুদের দেওয়া হয় টিটেনাস বা ধনুষটংকার রোগ প্রতিরোধ এর জন্য। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সাত বছরের উপরে শিশুদের এ টিকা দিতে বলা হয়। টি টি টিকার উপকারিতা অনেক। এ টিকা গ্রহণের ফলে আপনি টিটেনাস ভাইরাস এর বিপক্ষে ইমিউন হয়ে যাবেন। এ টিকা সময় মতো না গ্রহণ করলে পরবর্তীতে আমাদের টিটেনাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।
আরও পড়ুনঃ যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

টিকা কর্মসূচি
এ রোগের প্রকোপ থেকে শিশুকে বাঁচানোর জন্য নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে নয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য এক ডোজ এমআর টিকা যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি হাম দূরীকরণ ও রুবেলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আগে হাম বা এমআর টিকা পেয়ে থাকলেও হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে নয় মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ এমআর (হাম-রুবেলা) টিকা দেওয়া হচ্ছে।

Categories
ভ্যাকসিন

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

আজকের প্রতিবেদনে থাকছে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা নিয়ে। পথমে আমরা বলতে চাচ্ছি যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে যক্ষ্মা একটি মারাত্মক রোগ। রাজরোগ নামে পরিচিত এ রোগটি সময়ের সাপেক্ষে খুবই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি না যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে গভীর ধারণা না থাকে। শ্বাসতন্ত্রের যে কোনো অংশে আক্রমন করতে পারে।

“যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই” কথাটি সুদূর অতীত থেকে প্রচলিত। যদিও বর্তমান সময়ে কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থার দরুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তবুও এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ

অবাক করার বিষয় হলো যে, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং এইডস রোগের লক্ষণ প্রায় একই। তবে লক্ষণগুলোর স্থায়িত্ব ও ব্যতিক্রমতার ভিত্তিতে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণগুলো সনাক্ত করা সম্ভব।

ফুস্ফুসে যক্ষ্মা আক্রমন করলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সাথে গলার ভিতর থেকে থুতুর সাথে রক্তও বের হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পাঁচ থেকে ছয় মাস জ্বর থাকার মূল কারণ হলো টিবি।

এছাড়াও ফুসফুসীয় যক্ষ্মার অন্যান্য লক্ষণগুলো হলোঃ

  • তিন সপ্তাহের বেশি কাশি।
  • জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
  • রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম।
  • কাশির সাথে কফ বের হয়।
  • মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া।
  • ওজন হ্রাস পাওয়া।
  • বুকে ব্যাথা, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা।
  • মল ত্যাগের সময়সূচী তে পরিবর্তন।
  • পেটব্যাথা।
  • বুকে বা পেটে পানি জমা।
  • খিঁচুনি।
  • অজ্ঞান হয়ে পড়া।

যক্ষ্মা রোগ যখন ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষা বলে। যেমনঃ প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা, পরিপাক তন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষা ইত্যাদি।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা

আশার কথা হলো যে, সঠিক নিয়মে চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। প্রধানত দুই ধরণের পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করা হয়।

প্রথম ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে আট থেকে নয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে, কখনো কখনো তিন থেকে চার মাসে রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া যায়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে কোনো রূপ বিলম্ব ছাড়াই বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

যক্ষ্মা কী ছোঁয়াচে রোগ?

হাঁচি, কাশি কিংবা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য সংক্রমণ রোগের মতো খুব দ্রুত গতিতে ছড়ায় না। অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যক্ষ্মা আবার ফুসফুসের যক্ষ্মার মতো খুব একটা ছোঁয়াচে নয়।

তবে, আশ্চর্যজনক বিষয় হইলো যে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার কিছু অংশ জন্মগতভাবে কিংবা জিনগতভাবে যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সুস্থ ব্যক্তির শরীরের কাটা স্থান স্পর্শ করেন, তাহলে যক্ষ্মা রোগ ছড়ানোর প্রবল ঝুঁকি থাকে।

যক্ষ্মা রোগের কারণ

টিউবার্‌কিউলোসিস্‌ বা টিবি যার পূর্ণ নাম হলো মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণুর আক্রমণে শরীরের যে কোনো অংশে যক্ষ্মা হতে পারে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ(১/৩) এই টিবি দ্বারা আক্রান্ত।

ক্ষেত্র: Bacteria

পর্ব: Actinobacteria

শ্রেণী: Actinobacteria

বর্গ: Actinomycetales

পরিবার: Mycobacteriaceae

গণ: Mycobacterium

প্রজাতি: M. tuberculosis

দ্বিপদী নাম: Mycobacterium tuberculosis Zopf 1883

প্রতিশব্দ: Tubercle bacillus Koch 1882

অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে টিকতে পারে না এরা। বিজ্ঞানী Robert Koch ১৮৮২ সালে প্রথম এই জীবাণু আবিষ্কার করেন। প্রতিবছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মা রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে এবং প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়।

টিউবারকিউলিন স্কিন টেস্ট, অ্যাসিড ফাস্ট স্টেইন ও বুকের এক্সরে ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো যক্ষ্মা রোগের জীবাণু শনাক্তকরণে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই জীবাণুর জিনোম সিকোয়েন্স ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত করা হয়।

কোথায় চিকিৎসা করাবেন

বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা

সাধারণ পরীক্ষা, ত্বকের পরীক্ষা, রক্তের পরীক্ষা, কফ পরীক্ষা ইত্যাদি। অন্যান্য পরীক্ষা বুকের এক্স-রে পরীক্ষা/ সিটি স্ক্যান কালচার টেস্ট পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলেও অনেক সময় যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যেমন : যক্ষা রোগের সংক্রমণের আট থেকে দশ সপ্তাহ পরেও তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে ধরা নাও পড়তে পারে।

এইডস এর মতো ভয়ংকর কোনো রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অনেকসময় পরীক্ষায় যক্ষা রোগ ধরা পড়ে না।

এছাড়া এইডস এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো প্রায় এক রকম হওয়ায়(কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) এইডস রোগীদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হয়ে থাকে। হামের টিকার কারণে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু থাকে।

ফলে যক্ষা রোগের জীবাণু কিংবা জিনোম ধরা নাও পড়তে পারে। শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু অতিরিক্ত পরিমাণ বা বেশি হয়ে গেলে ত্বকের পরীক্ষায় রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে যা এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা। অনেক সময় সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা না করলেও যক্ষা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে না।
আরও পরুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

যক্ষ্মা রোগের ওষুধ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যাড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জটিল যক্ষ্মা চিকিৎসায় নতুন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। প্রেটোমানিড নামের এই নতুন ওষুধ খুবই কার্যকরী। অন্য দুটি ওষুধ বেডাকুলাইন ও ডেলামিনিড।
আরও পড়ুনঃ হাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

যক্ষ্মা রোগের টিকার নাম

ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন (বিসিজি) টিকা যক্ষ্মা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। যে সকল দেশে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি, সেই সকল দেশের সুস্থ শিশুদেরকে জন্মের সময়ের যতটা সম্ভব কাছাকাছি সময়ে একটি ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এইচআইভি/এইডস থাকা শিশুদের এই টিকা নেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। আবার টিকাটি মুত্রথলির ক্যান্সার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।

বাণিজ্যিক নামঃ বিসিজি ভ্যাকসিন, বিসিজি ভ্যাকসিন AJV এএইচএফএস/ ড্রাগস.কম

গর্ভধারণ বিষয়শ্রেণীঃ US: সি (ঝুঁকি বাতিল নয়)

প্রয়োগের স্থানঃ পার্কিউটেনিয়াস, ইনট্রাভেসিক্যাল

এটিসি কোডঃ J07AN01 (ডাব্লিউএইচও) L03AX03 প্রথম ১৯২১ সালে চিকিৎসামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্র ঢাকা

প্রকৃত নাম যক্ষ্মা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত যক্ষ্মা রোগের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৩ সালে যক্ষ্মা হাসপাতাল হিসাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার চাঁনখাঁরপুল এলাকায় স্থাপন করা হয়।

একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ৯ জন পূর্ণকালীন ডাক্তার রয়েছেন। এনাদের সাথে ২ জন নার্স ও ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী সক্রিয় রয়েছেন। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানের পাশাপাশি প্যাথোলজিক্যাল এক্স-রে করা হয়।

দেখেনিন যক্ষ্মা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটঃ

গঠিতঃ ১৯৫৩(৬৯ বছর আগে)

ধরনঃ সরকারি

আইনি অবস্থাঃ বিশেষায়িত রোগ-গবেষণা প্রতিষ্ঠান


উদ্দেশ্যঃ
  যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা ও গবেষণা

অবস্থানঃ  ঢাকা, বাংলাদেশ

যে অঞ্চলে কাজ করেঃ বাংলাদেশ

তত্ত্বাবধায়কঃ মো. মোসাদ্দেক

স্টাফঃ

৯ জন ডাক্তার

২ জন নার্স

৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। যক্ষ্মা রোগের বিষয়ে সচেতন করতে এই দিনটি পালন করা হয়।

১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করার ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।

ডব্লিউএইচও সহ ভিন্ন ভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা যথাসাধ্য চেষ্টা করেই চলেছে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যে। দেশের সব নাগরিকের জন্য বাংলাদেশ সরকার যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

Categories
ভ্যাকসিন

চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

হঠাৎ করে জ্বর,সর্দি, কাশির আগমন মানুষের শরীরে যাতে জেঁকে বসতে না পারে তার থেকে রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন।

আজ থেকে কিছু সময় পূর্বেও চিকিৎসা সেবার মান ছিল না এতটাও উন্নত। সেখানে সামান্য জ্বর, সর্দি কিংবা কাশি হলে মানুষের মাঝে মহামারীর মত আশংকা দেখা দিত। উন্নত চিকিৎসা সেবা না থাকার কারণে তারা বনাজি ওষুধ খেয়েই জীবিকা নির্বাহ করতে হত।

পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হয়েছে। মানুষের সর্দি, কাশি কিংবা ফ্লু হলে ওষুধের উপর নির্ভরশীলতার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু হঠাৎ কোন ফ্লু এর আক্রমণের ফলে, তা যেন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যেতে না পারে, কিংবা কোন আতংকের কারণ না হতে পারে, সেই থেকে ভ্যাকসিনের সূত্রপাত হয়েছে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ

বাংলাদেশ একটি ষড়ঋতুর দেশ। এদেশে পালাক্রমে হাজির হয় ঋতুসমূহ। হঠাৎ করে ঋতুসমূহের আবর্তনের কারণে পরিবর্তন এর সূর ধরে আমাদের দেশের প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে পালাবদলের হাওয়া লাগে পরিবেশের। হঠাৎ করে কোন ঋতুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় বেশ প্রভাব ফেলে। কারণ কোন ঋতু পরিবর্তন হলেই আমাদের শরীরে যে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হল জ্বর,সর্দি কিংবা কাশি।

যা প্রথম দিকে না সেরে উঠলে পরবর্তীতে ইনফ্লুয়েঞ্জার সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু ঠিক জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জার আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-

  • অধিক মাত্রায় জ্বর হওয়া। কখনো কখনো জ্বর ১০০ তাপমাত্রা বা তার চেয়ে বেশি হলে ইনফ্লুয়েঞ্জা লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে।
  • প্রচণ্ড পরিমাণ গলা ফুলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে গলা ব্যথা হয়।
  • অতিরিক্ত মাথাব্যথা হয়।
  • সর্দি কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
  • খাবারে অরুচি দেখা যায়।
  • পাশাপাশি ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা যায়।
  • অতিরিক্ত শরীর খারাপের প্রভাবে শরীর দুর্বল হয়ে উঠে।
  • খুব দ্রুত নাক বন্ধ হয়ে থাকে। যার কারণে কোন কিছুর গন্ধ এবং স্বাদ পাওয়া যায় না।
  • অতিরিক্ত বমি বমি ভাব দেখা যায়।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন মূল্য

যুগে যুগে যখনই কোন মহামারী আমাদের আঘাত করেছে। তখনই তার প্রতিষেধক বের হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একসময় বেশ মহামারী প্রভাব ফেলেছিল সারাবিশ্বে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা উন্নতির ফলে বের হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন। বাজারে মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা এর দুটি ভ্যাকসিনের দেখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন মূল্য সম্পর্কে-

ভ্যাকসিন ইনফ্লুভাক্স –৭০০ টাকা।
ভেক্সিগ্রিপ টেট্রা ভ্যাকসিন -১,১৩৫ টাকা।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ঔষধ

ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতক-বাহী রোগ হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। তাই কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে বিভিন্ন প্রতিষেধক প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। হঠাৎ করে এই রোগটির আক্রমণে ডাক্তাররা মূলত এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে। কারণ এই রোগটি যতদিন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অবস্থান করবে, আক্রান্ত ব্যক্তি ঠিক ততদিন এই রোগের জীবাণু বহন করবে। তাই এই রোগটি সংক্রামক ঠেকাতে ডাক্তাররা বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রদান করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ওষুধ সমূহ হল-

  • Grilinctus GD
  • inducers
  • Avit
  • Adaptogens
  • Immunomodulators
  • Arbidol

ইনফ্লুয়েঞ্জা কেন হয়

আমাদের দেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ। আমাদের দেশে তাই আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। প্রাত্যহিক শীত, গরম, বর্ষার এক অপ্রতিরোধ্য খেলা চলে আমাদের দেশে। আর এই খেলায় আবহাওয়ার সাথে আমাদের শরীরের এক ধরণের তারতম্য দেখা দেয় বিধায় আমাদের শরীর খুব খারাপ হয়। কখনো জ্বর, কখনো সর্দি, কখনো কাশি লেগেই থাকে আমাদের শরীরে। ইনফ্লুয়েঞ্জা কেন হয় এই নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। চলুন জেনে নেই কারণ সমূহ-

  1. আবহাওয়ার তারতম্যের প্রভাবে।
  2. হঠাৎ করে সর্দি, কাশির আক্রমণে আমাদের শরীরে যদি দুর্বল হয়ে উঠে তখন আমাদের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রমণ করে।
  3. আবার কখনো কোন সংক্রমণ ব্যক্তির সংস্পর্শে আমাদের শরীরে আক্রমণ ঘটে ইনফ্লুয়েঞ্জার। যা ধীরে ধীরে আরও নানান ধরণের উপসর্গের জন্ম দেয় আমাদের শরীরে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন বাংলাদেশ

কোন ঘাতক-বাহী রোগের আক্রমণের প্রভাবে ধীরে ধীরে আমাদের শরীর যেমন দুর্বল হয়ে উঠে ঠিক তেমনি করে আমাদের শরীরে নানান ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তেমনি ইনফ্লুয়েঞ্জা অন্যতম। ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তোলে এই রোগ। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং সেই সাথে এর প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন বাংলাদেশ অবিষ্কার করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। বেশ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর কতদিন থাকে

ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত একটি ভাইরাস-বাহিত রোগ। যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে দুর্বল করে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে দেয়। পাশাপাশি এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ বিধায় খুব সহজে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পরে। মূলত মানবদেহে যদি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণ করে তাহলে তার দুইদিন পর আমাদের শরীরে নানান ধরণের উপসর্গ দেখা যায়। এই ইনফ্লুয়েঞ্জার ৪ টি ভ্যারাইটি থাকলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

তবে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে হলেও অনেকের ধারণা নেই ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর কতদিন থাকে? মূলত আমাদের শরীরে প্রবেশের পর অন্তত ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর এর প্রভাব থাকে আমাদের শরীরে। যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে অকেজো এবং দূর্বল করে তোলে।

আরোও পড়তে পারেনঃ হাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি

ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাস-বাহিত রোগ এই কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটি এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের মাঝে এই রোগটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী। মূলত অর্থোমিক্সোভিরিডি পরিবারের একটি ভাইরাস হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এই ভাইরাস ঠিক কতটা প্রাণঘাতী তা শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে উঠে।

১৯১৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটিরও বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছে এই ঘাতক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি কিন্তু বেশ গোলাকার। প্রায় ৩ ধরণের টাইপ ভাইরাসের সন্ধান এখন পর্যন্ত মিলেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতকবাহী রোগ হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা কিন্তু অনেকের নেই। এটি ঘন ঘন তার পোষক পরিবর্তন করে আরও মারাত্মকভাবে ফিরে আসে। মূলত এটি গোলাকার হয় যার ব্যাস ধারণা করা হয় প্রায় ৮০-১২০ ন্যানোমিটার।

ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে করণীয়

তইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুতই এই রোগটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে স্থানান্তর করতে পারে। ধরুন যদি পরিবারের একজন সদস্যের এই রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তাহলে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের এই রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কোন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগে তার প্রতিকার করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কথায় আছে “Prevention is better than cure”। আরোগ্য লাভের চেয়ে সমাধান জরুরি। তাই কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তখন তার পর্যাপ্ত খেয়াল রাখা বেশ জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে করনীয় সম্পর্কে-

  1. কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তাহলে সে ব্যক্তিকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
  2. আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার দাবারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
  3. আক্রান্ত ব্যক্তিতে প্রচুর পরিমাণে ফলের জুস,শরবত এবং সেই সাথে পানি খেতে দিতে হবে। এই সময়ে প্রচুর পানির অভাব হয়। তাই অভাব পূরণের জন্য পানির ব্যবস্থা করা জরুরি।
  4. যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ঠাণ্ডার সমস্যা হয় তাই আক্রান্ত ব্যক্তির যাতে পুনরায় ঠাণ্ডা না লাগে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কোন কথা কিংবা কম্বল দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর মুড়িয়ে দিতে হবে।
  5. ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র যেমন কাপড়চোপড়, গ্লাস, বাতি, ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  6. অবশ্যই ভেকসিন দিয়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনতে হবে।

আড়ও পড়তে পারেনঃ
জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

শেষ কথা
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতক-বাহী ছোঁয়াচে রোগ। তাই এই রোগে আক্রান্ত হবার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।পাশাপাশি এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।