Categories
খাদ্য তালিকা

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

মানুষের দেহে আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আয়রন দেহে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে। আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকায় কি ধরনের খাদ্যে আয়রন এর পরিমান বেশি রয়েছে তা জেনে নেই।

আপনারা কি জানেন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিগ্রাম আয়রনের দরকার হয়। সেই সাথে নারীদের জন্যও কিন্তু আয়রন আবশ্যকীয়। দৈনিক প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন নারীদের জন্য প্রয়োজন এবং প্রতিদিন প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন হয় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য।

আমরা যখন শরীরে ক্লান্তি এবং দূর্বল অনুভব করি তখন আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর কারণ হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতির ফলে। আয়রনের ঘাটতির ফলে গর্ভবতী মহিলাদের এবং শিশুদের অ্যানেমিয়া জনিত রোগ হয়ে থাকে। আপনি যদি এই আয়রনের ঘাটতি পূরণের করতে চান, তাহলে আপনাকে দুই ধরনের আয়রন গ্রহণ করতে হবে। যেমন; প্রাণীজ আয়রন এবং উদ্ভিজ্জ আয়রন। এই দুই ধরনের আয়রন মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আয়রন জাতীয় খাদ্যের তালিকা

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবারের মধ্যে আয়রন আছে এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য –

কলিজা:
কলিজা হচ্ছে এমন একটি খাবার, যেটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন ছাড়াও কলিজার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। মুরগীর কলিজা থেকে গরুর কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তবে আমরা অনেকেই কলিজা খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু কলিজার পরিবর্তে আপনি চাইলে লাল মাংস অথবা ডিম খেতে পারেন।কারন ৩ আউন্স লাল মাংসে রয়েছে (২-৩) মিলিগ্রাম আয়রন এবং আধা কাপ ডিমের কুসুমে রয়েছে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন, যা আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।

ডার্ক চকলেট:
আমাদের দেহের জন্য ডার্ক চকলেট কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এর কারণ ডার্ক চকলেটে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। পাশাপাশি ডার্ক চকলেটে বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও থাকে।

ছোলা:
আমরা সাধারণত যে ছোলা খেয়ে থাকি সেটিতে রয়েছে আয়রন।এক কাপ ছোলাতে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং সেইসাথে এতে পরিমাণমতো প্রোটিনও থাকে। আমরা যারা নিরামিষ পছন্দ করি, তাদের জন্য কিন্তু ছোলা আদর্শ একটি খাবার। ছোলা আমরা চাইলে বিভিন্ন ভাবে রান্না করেও খেতে পারি।

কুমড়ার বিচি:
কুমড়ার বিচিতেও কিন্তু আয়রন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। কুমড়ার বিচি আমরা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেতে পারি। যেমন; সালাদের সাথে কুমড়ার বিচি মিক্স করলে অনেক সুস্বাদু হয়ে উঠে। তাই আমরা চাইলে প্রতিদিনের সালাদে কুমড়ার বিচি মিক্স করে খেতে পারি। এছাড়াও অনেকেই আবার কুমড়ার বিচি তেলে ভেজে খেয়ে থাকে।অনেকেই আবার এটি তরকারির সাথে রান্না করে খেতে পছন্দ করে। কেউবা আবার সিদ্ধ করেও খায়।তাই বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেহে আয়রনের ঘাটতির অভাব মেটাতে পারি। এই কুমড়ার বিচিতে আছে ২ মিলিগ্রাম আয়রন।

ব্রোকলি:

ব্রকলী
ব্রকলী

আয়রন জাতীয় খাবারের মধ্যে ব্রোকলি একটি জনপ্রিয় সবজি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। ব্রোকলিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, আয়রন ফলিত, জিংক এবং ম্যাগনেশিয়াম। ব্রোকলি সেদ্ধ বা সাতলিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

ডালজাতীয় খাবার:
আরো একটি খাবার যেটি আয়রনের ভালো একটি উৎস হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে, আর সেটি হলো ডালজাতীয় খাবার। ডালজাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আপনারা হয়ত জানেন প্রতি কাপ ডালের মধ্যে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রনের একটি ভালো উৎস হল ডাল। এক কাপ ডালে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং প্রচুর ফাইবার থাকে।এতে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে এবং রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে।

বেদানা:
বেদনা এমন একটি ফল, এটি খাওয়ার পর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বেদনায় রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এতে আরো রয়েছে এসকর্বিক এসিড যা শরীরে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

বিটরুট:

বিটরুট
বিটরুট

যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা বিটরুট সবজি খেতে পারেন। কারন এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের ভালো উৎস। বিটরুট এটি একটি শীতকালীন সবজি। এতে আয়রন ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, কপার, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, সালফারসহ আরও অনেক উপাদান।

বাঁধাকপি:

বাঁধাকপি
বাঁধাকপি

আমরা জানি বাঁধাকপি একটি শীতকালীন সবজি। জনপ্রিয় এই সবজিতে রয়েছে আয়রন, আরোও অনেক প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ওজন কমাতে সহেতা করে,বাঁধাকপি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং মানব দেহের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

আপেল:

আপেল
আপেল

আপেল আমাদের সবার পরিচিত এবং প্রিয় একটি ফল, এই ফল আয়রনের ভালো উৎস এবং পুরো স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।

পালং শাক:

পালংশাক
পালংশাক

শীতকালীন নানা ধরনের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি। এতে এক কাপ রান্না করা পালংশাকে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, এছাড়াও এতে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন ই থাকে। এটি পরীক্ষিত ভাবে জানা গিয়েছে, রান্না করা পালং শাক এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই মানবদেহ শোষণ করে নিতে পারে।

কমলা:

কমলা
কমলা

আপেল এর মতোই কমলা একটি জনপ্রিয় ফল, এতে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস এবং শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। কমলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি দেহের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ
কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার
শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা কি কি

সিদ্ধ আলু:
আপনি কি জানেন সিদ্ধ আলুতে বি ভিটামিন, ভিটামিন সি প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রনও থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে থাকে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন।

আমরা জানি উপরের আয়রন জাতীয় সমৃদ্ধ বাদ দিয়ে আরও অনেক খাবার রয়েছে। যেমন: কিশমিশ, কাজুবাদাম, টমাটো, শিমের বীচি মটরশুঁটি ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরে চা বা কফি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ক্ষতি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *