Categories
রোগ নিরাময়

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

ডায়াবেটিস একটি হরমোন জনিত রোগ। ডায়াবেটিস এর সমার্থক বাংলা শব্দ হচ্ছে মধুমেহ বা বহুমূত্র। মানব দেহ যখন তৈরিকৃত ইনসোলিন ব্যবহারে বিফল হয় অথবা অগ্ন্যাশয় যদি পর্যাপ্ত ইনসোলিন উৎপন্ন করতে না পারে তখন আমাদের রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমানের অসামঞ্জস্যতার কারণে যে রোগ বা ব্যাধি হয় তাই ডায়বেটিস বা বহুমূত্র। এটি যতোটা কঠিন তেমনি এটি দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কিছু রয়েছে। চলুন তাহলে সেই সব উপায় গুলো কি কি

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

নিয়ম মাফিক ওষুধ সেবন বা ইনসোলিন গ্রহণ করেও অনেকেই তাদের ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ এ রাখতে পারছেন না। দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস এর পরামর্শ হচ্ছে: তিনি বলেন নিয়মিত শরীর চর্চা ও চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুসারে খাদ্য গ্রহণের মাধমে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডা. উনউইন এর একটি গবেষণা পত্র গাইডলাইনস ইন প্র্যাক্টিস নামক ওয়েব সাইট এ প্রকাশিত হয়। যেখানে ডাক্তার উল্লেখ করেন মিষ্টান্নজাতীয় খাবার চিনি শষ্য যা কার্বোহাইড্রেড (কার্বোহাইড্রেড রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমান বাড়িয়ে দেয়) এই ধরণের খাবার গ্রহণে বিরত থেকে চর্বিজাতীয় এবং প্রোটিন সমৃদ্দ খাবার গ্রহণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ডা. উনউইন এর সমীক্ষা অনুসারে টাইপ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বল্প পরিমানে কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্দ খাবার অত্যন্ত কার্যকরী। এটি রক্তে চিনি বা শর্করার মাত্রা কমায় যার ফলে উল্লেখিত বিষয়বস্তু আলোচনা পর্যালোচনায় বলা যায় যে নিয়মিত শরীর চর্চা ও চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুসারে খাদ্য গ্রহণ ও ওষধ সেবনে খুব দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার, অত্তাধিক ক্যালরি যুক্ত খাবার, আমিষ ও সাদা চিনি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের দেহে রক্তে গ্লোকোজ এর পরিমান দ্রুত বৃদ্ধিতে যে সকল খাবার দায়ী সেসব খাবার স্বল্প পরিমানে খেতে হবে। যেমন:

  • মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার (চিনি, মিষ্টি, কনডেন্সড মিল্ক ইত্যাদি)
  • শর্করা জাতীয় খাবার (ছাঁটা চালের ভাত, ময়দার রুটি ইত্যাদি)
  • ধূমপান ও মদ্যপান

ডায়াবেটিস থাকে বাঁচতে হলে যেসব খাবার রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমান ধীর গতিতে বৃদ্ধি করে সেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস হবে না। চলুন জেনে নেই কি খেলে ডায়াবেটিস হবে নাঃ

  1. লাল চালের ভাত।
  2. লাল আটার রুটি
  3. স্বল্প পরিমানে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার
  4. শাক সবজি
  5. গোটা জাতীয় শস্যদানা

তাছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে নিমোক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে ডায়াবেটিস হবে না বা ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কম থাকবে। যেমন: দই, সিম, খেজুর, আপেল, অ্যাসপ্যারাগাস, কুমড়ো বীজ, আখরোট, বার্লি, ফ্ল্যাক্স সীড, কলাই বা শুঁটি, বেরি, চিয়া বীজ ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন উপায়

ডায়াবেটিকস চিকিৎসা কে আরো উন্নত করে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা যাচ্ছে আমাদের দেশের চিকিৎসকর। ডায়াবেটিকস রোগীরা প্রায় জানতে চায়। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন উপায় এক বার ব্যাবহার করা যাবে এমন একটি নতুন ওষুধ এসেছে বাজারে। ওষুধের মলিকিউলের নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন ‘সিমাগ্লুটাইড। এটি দেড় এম এল এবং তিন এম এল হিসাবে বাজার জাত করা হব। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৯ টাকা। ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া কোনো ভাবেই এ ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ

যারা সাথে সচেতন তারা প্রায় জানতে চায় ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ হতে পারে । আসলে যারা ডায়াবেটিকস আক্রান্ত তারা নিয়ম মেনে ওষুধ ও খাদ্য না খেলে অনেক বিপদে পড়তে পারে। এ রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চলুন দেখে আসি ডায়াবেটিকস কত হলে বিপদ।

আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের যে গাইডলাইন রয়েছে তা অনুযায়ী এইচবিএ১সির মান ৫.৭-এর নিচে থাকলে স্বাভাবিক ধরা যায়। এটি ৬.৫-এর বেশি যদি হয় তাহলে আপনার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হবে। পরীক্ষার পর টেস্ট এ সুগার লেভেল ৫.৭ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা হিসাবে ধরা হয়।

এইচবিএ১সি পরীক্ষা ভালো মানের ল্যাবরেটরিতে নির্দেশিত নিয়মে করতে হবে। কারও বংশগত রক্তরোগ থাকলে বা রক্ত ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থাকলে এই পরীক্ষা সঠিক ফল আপনাকে না-ও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশই ডাক্তার এর সাথে আলাপ করে নিবেন। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ে এই পরীক্ষার ফল সঠিক ধরা হয় না।

হামদর্দ ডায়াবেটিস ঔষধ

আমাদের অনেকেরই হামদর্দ এর ওষুধ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। হামদর্দ এ উপমহাদেশের খুব এ বিখ্যাত হারবাল ওষুধ কোম্পানি। হামদর্দ ডায়াবেটিকস ওষুধ কেমন কার্যকরী তা অনেকেই জানতে চায়। হামদর্দ এর একটি ট্যাবলেট রয়েছে যার নাম ক্যাপসুল ডায়াবিট- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক মহা ঔষধ।তারা দাবি করে এটি নিয়মিত গ্রহণ করলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এসে পরে। অব্যশই এর পাশাপাশি সঠিক খাদ্যবাস এবং নিয়মিত বেয়াম করা অপরিহার্য।

হামদর্দ এর বেশ কিছু হারবাল ওষুধ আছে যা ডায়াবেটিকস রা নিয়মিত গ্রহণ করলে অনেক উপকার পাবে।
হামদর্দ এর সাফি সিরাপ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হারবাল ঔষধ যা রক্ত ও চর্ম রোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিরাপ ছাফী রক্ত কে বিশুদ্ধ রাখে এবং পরিপাকে সহায়তা করে। এটি ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য অনেক ভালো এই সিরাপ কোষ্ট্যকাঠিন্য দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সিরাপ ছাফী মূত্র এবং ঘর্ম নিঃস্বরন রোধ করে। ছাফী নাকের রক্ত ক্ষরন বন্ধ করে। এই সিরাপ রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে।
আরোও পড়ুনঃ জেনেনিন টিটেনাস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়

ডায়াবেটিকস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। ডাক্তাররা সবসময় তিনটি পরামর্শ ডায়াবেটিকস রোগীদের মেনে চলতে বলে। শৃঙ্খলাযুক্ত জীবন, নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া ,সঠিক খাদ্যবাস। অনেকেই জানতে চায় ডায়াবেটিকস কি খেলে ভালো হয়। চলুন জেনে নেই কি কি খেলে ডায়াবেটিকস ভালো হয়:

দারুচিনি: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা নিয়ম করে ৩-৬ গ্রাম দারুচিনি খায় তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায় পরিলক্ষিতভাবে। রক্তের সংবেদনশীলতা এবং গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

তিসি: তিসি বা ফ্লেক্সসিড আমাদের সাস্থের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত তিসি গ্রহণ করে তাদের ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে মিনারেলস ,ভিটামিনস ,ওমেগা ৩ ,ওমেগা ৬ রয়েছে। তিসি গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার পান করা উচিত।

তুলসী: তুলসী কে বলা হয় ডায়াবেটিকস রোগের প্রাকৃতিক ইনসুলিন। খালি পেটে তুলসীপাতার রস গ্রহণ করলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এভাবে রস না খেতে পারলে তুলসীর চা খেতে পারেন। বাজারে এখন অনেক ধরণের তুলসী পাতার চা পাওয়া যায়।

মেথি: যাদের ডায়াবেটিকস হয় তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় । নিয়মিত মেথি গ্রহণ শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ৩ বছর ধরে টানা মেথি গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা অনেকটা কমে যায়।

এলাচে: এলাচে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাইপোলিপিডেমিক উপাদান যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। এটি এনার্জি, কোষের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুনঃ মেডিপ্লাস টুথপেস্ট এর উপকারিতা

ডায়াবেটিকস হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়ম করে ওষুধ খান ,সঠিক খাদ্যবাস গ্রহণ করুন ,পরিমিত বেয়াম করুন । এছাড়া কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে আপনার ডাক্তার এর সাথে আলোচনা করুন। মনে রাখবেন সাস্থ আসল সুখের মূল। আশা করি আমাদের আজকের লেখাটি পরে আপনারা সবাই অনেক উপকৃত হয়েছেন।