কোষ্ঠকাঠিণ্য একটি কষ্টসাধ্য মলাশয়ের মলত্যাগ জনিত সমস্যা। কোষ্ঠ ও কাঠিণ্য দুটি পৃথক শব্দ যেখানে কোষ্ঠ শব্দের অর্থ মলাশয় আর কাঠিন্য মানে মল ত্যাগে সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিণ্য শব্দের অর্থ দাঁড়ায় মলাশয়ের মল পরিপূর্ন ভাবে ত্যাগ করতে ব্যর্থ হওয়া। যখন কোন ব্যাক্তি ফাইবার সমৃদ্দ্ব খাবার খাবার পর ও সপ্তাহে অন্তত তিন বার সঠিক ও স্বাভাবিক ভাবে মল ত্যাগে ব্যর্থ হয় তখন তিনি যে পীড়ায় ভোগেন সেটাই কোষ্ঠ কাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়
অতিরিক্ত তেল, জাল, ফাস্টফুড ও মশলা যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, ধূমপান করা, অতিরিক্ত শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া, পানি কম খাওয়া, আঁশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও ভিবিন্ন রোগ ব্যাদি যেমন: ডায়াবেটিস, অন্ত্রনালীর ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড এর সমস্যা, মস্তিষ্কে টিউমার বা রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত শোয়ে থাকা এবং কাপনিজনিত রোগ এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া ভিবিন্ন ধরণের ওষুধ সেবনে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন: পেপটিক আলসার এর ওষুধ , ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, পেট ব্যথা , খিঁচুনি ও উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ খেলে তাছাড়া ক্যালসিয়াম,অ্যালুমিনিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।তাই আমাদের নিয়ম করে কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার গ্রহণ করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণসমূহ
পেট ব্যথা, মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যথা ও জ্বালা পোড়া করা, মলত্যাগের চাপ অনুভব করা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ মলত্যাগ না হওয়া, শক্ত শক্ত শুস্ক ও ছোট আকারের মল ত্যাগ হওয়া।
অন্তত দুই দিনে একবার পায়খানা না হওয়া। বেশি সময় নিয়ে পায়খানা করা, পেট ফুলে থাকা, পানের ডগা আঙ্গুল বা সাপোজিটরি পায়খানা করা, তলপেট ব্যথা করা ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।
কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার
ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়োজোষ্ঠ আমরা সবাই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকি। অনেকেই এ ভুল ধারণা টি মনে পোষণ করে থাকেন যে কোষ্টকাঠিন্য শুধু ওষুধ সেবনের মাদ্ধমে ঠিক করা যায়। সঠিক খাদ্যবাস ও খাবার নির্বাচন কোষ্টকাঠিন্য নিরাময় ও প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার আর ভবিষতে ওষুধ ও লাগবে না। চলুন জেনে নেই কোষ্টকাঠিন্য দূর করার খাবার নিয়ে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।
১. কলমিশাক: কলমিশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুব এ কার্যকরী ।কলমিশাকের পাতা ও কাণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে। এই ফাইবার খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে থাকে। কলমিশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর ভালো থাকে।
২. কলা: কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । পাকা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা এর পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে। কাঁচা কলা তরকারি হিসাবে রান্না করে খেলেও কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়।
৩. গাজর: গাজর একটি পরিচিত সবজি যা আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় এই সবজিটি প্রাকৃতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ সমৃদ্ধ। একটি আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে।
৪. শসা: শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ডায়াটেরি ফাইবার যা শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহা ঔষধ। শসার বেশির ভাগ প্রায় ৭০ ভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
৫. পেয়ারা: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ওজন কমাতে পেয়ারা খুব এ ভালো কাজ করে। তাই যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পেয়েরা খেতে পারেন।পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কি এবং মিনারেলস।
৬. কিসমিস: কিসমিস প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি করে কিসমিস খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিসমিস কোষ্টকাঠিন্য কমাতে খুব কার্যকরী। বাজার থেকে ভাল গুণসম্পন্ন কিসমিস কিনে আনবেন। কেননা অনেক দোকানদার কিসমিসে চিনি মিশিয়ে দেয়।
৭. এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী: নিয়মিত এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জুস বানিয়ে খান। এতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও মিনারেলস রয়েছে যা সাস্থের জন্য অতন্ত্য উপকারী। নিয়মিত এলোভেরা জুস পান করে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। অবশই বাজার থেকে কেনা এলোভেরা জুস যেগুল প্যাকেট এ পাওয়া যায় সেগুলো পরিহার করবেন।
৮. লেবুর রস: লেবুর রস নিয়মিত গ্রহণ করলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে আধা চা চামচ নুন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন আপনার রুচি অনুযায়ী । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করবেন দ্রুত ফল পেতে প্রতিদিন দুইবার পান করুন এই মিশ্রণ।
9. ইসবগুলের ভুসি: ইসবগুলের ভুসি কোষ্টকাঠিন্য দূর করার মহাঔষধ। অনেকেই স্বাদের জন্য ভুসি খেতে চান না। কিন্তু এর অনেক গুনাগুন রয়েছে। ইসুবগুলের ভুসি রক্তে চিনির পরিমান কমায় এবং হজমে সহায়তা করে। তাই কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে অবশই নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসির শরবত বানিয়ে খাবেন। ক্যাস্টর অয়েল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। আপনি চাইলে ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
10. মধু: প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলেই দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট পরিষ্কার না হাওয়ার মতো সমস্যা একেবারে কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে। ফলে মধু খাওয়া মাত্র পেট পরিষ্কার হতে শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রে দিনে ৩ বার, এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ করে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।
11.পালং শাক: প্রতিদিন এই শাকটি খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। তাই যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে হয় রান্না করে পালং শাক খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন অল্প দিনেই কষ্ট কমে যাবে। প্রসঙ্গত, আরেক ভাবে পালং শাককে কাজে লাগানো যেতে পারে। এক গ্লাস পানির সঙ্গে ১ গ্লাস পালং শকের রস দিনে দুবার করে খেলে কনিস্টেপেশনের কোনও নাম গন্ধই থাকে না।
12. আঙুর: এতে উপস্থিত অদ্রবণীয় ফাইবার, পেট পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। তাই বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক না হলেই দিনে হাফ বাটি কাঁচা আঙুর অথবা আঙুরের রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
13.তিসি: এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পেট পরিষ্কার রাখতে নানাদিক থেকে সাহায্য করে। তাই পটি পরিষ্কার হোক, বা না হোক, প্রতিদিন তিসি বীজ জলে গুলে পান করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, এক গ্লাস জলে ১ চামচ তিসি বীজ গুলে কম করে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন। রাতে শুতে য়াওয়ার আগে পান করুন সেই জল। দেখবেন সকালে উঠে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।পয়ঃনিষ্কাষণে কোনো সমস্যা থাকবে না।
14. তিলের বীজ: তিলের বীজ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এতে আছে অত্যাবশ্যকীয় তেল যা শরীরের পক্ষে ভালো। এই বীজ পেট পরিষ্কার করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
আরোও পড়ুনঃ জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা
আরোও পড়ুনঃদ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট টি পরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অব্যশই কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করার খাবার এর বিকল্প নেই। আমরা আজকে যে খাদ্য তালিকা উল্লেখ করেছি তা নিয়মিত গ্রহণ করবেন। এছাড়া অবশই পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করবেন। বাইরের ফাস্ট ফুড ,তেল চর্বি সম্ভব হলে এড়িয়ে যাবেন নাহলে পরিমানে একদম কম গ্রহণ করবেন।
আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট এর উপদেশ মেনে চললে আপনাকে আর কোষ্টকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে হবে না।