হঠাৎ করে জ্বর,সর্দি, কাশির আগমন মানুষের শরীরে যাতে জেঁকে বসতে না পারে তার থেকে রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন।
আজ থেকে কিছু সময় পূর্বেও চিকিৎসা সেবার মান ছিল না এতটাও উন্নত। সেখানে সামান্য জ্বর, সর্দি কিংবা কাশি হলে মানুষের মাঝে মহামারীর মত আশংকা দেখা দিত। উন্নত চিকিৎসা সেবা না থাকার কারণে তারা বনাজি ওষুধ খেয়েই জীবিকা নির্বাহ করতে হত।
পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হয়েছে। মানুষের সর্দি, কাশি কিংবা ফ্লু হলে ওষুধের উপর নির্ভরশীলতার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু হঠাৎ কোন ফ্লু এর আক্রমণের ফলে, তা যেন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যেতে না পারে, কিংবা কোন আতংকের কারণ না হতে পারে, সেই থেকে ভ্যাকসিনের সূত্রপাত হয়েছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ
বাংলাদেশ একটি ষড়ঋতুর দেশ। এদেশে পালাক্রমে হাজির হয় ঋতুসমূহ। হঠাৎ করে ঋতুসমূহের আবর্তনের কারণে পরিবর্তন এর সূর ধরে আমাদের দেশের প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে পালাবদলের হাওয়া লাগে পরিবেশের। হঠাৎ করে কোন ঋতুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় বেশ প্রভাব ফেলে। কারণ কোন ঋতু পরিবর্তন হলেই আমাদের শরীরে যে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হল জ্বর,সর্দি কিংবা কাশি।
যা প্রথম দিকে না সেরে উঠলে পরবর্তীতে ইনফ্লুয়েঞ্জার সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু ঠিক জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জার আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-
- অধিক মাত্রায় জ্বর হওয়া। কখনো কখনো জ্বর ১০০ তাপমাত্রা বা তার চেয়ে বেশি হলে ইনফ্লুয়েঞ্জা লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে।
- প্রচণ্ড পরিমাণ গলা ফুলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে গলা ব্যথা হয়।
- অতিরিক্ত মাথাব্যথা হয়।
- সর্দি কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
- খাবারে অরুচি দেখা যায়।
- পাশাপাশি ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা যায়।
- অতিরিক্ত শরীর খারাপের প্রভাবে শরীর দুর্বল হয়ে উঠে।
- খুব দ্রুত নাক বন্ধ হয়ে থাকে। যার কারণে কোন কিছুর গন্ধ এবং স্বাদ পাওয়া যায় না।
- অতিরিক্ত বমি বমি ভাব দেখা যায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন মূল্য
যুগে যুগে যখনই কোন মহামারী আমাদের আঘাত করেছে। তখনই তার প্রতিষেধক বের হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একসময় বেশ মহামারী প্রভাব ফেলেছিল সারাবিশ্বে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা উন্নতির ফলে বের হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন। বাজারে মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা এর দুটি ভ্যাকসিনের দেখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন মূল্য সম্পর্কে-
ভ্যাকসিন ইনফ্লুভাক্স –৭০০ টাকা।
ভেক্সিগ্রিপ টেট্রা ভ্যাকসিন -১,১৩৫ টাকা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ঔষধ
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতক-বাহী রোগ হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। তাই কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে বিভিন্ন প্রতিষেধক প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। হঠাৎ করে এই রোগটির আক্রমণে ডাক্তাররা মূলত এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে। কারণ এই রোগটি যতদিন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অবস্থান করবে, আক্রান্ত ব্যক্তি ঠিক ততদিন এই রোগের জীবাণু বহন করবে। তাই এই রোগটি সংক্রামক ঠেকাতে ডাক্তাররা বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রদান করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ওষুধ সমূহ হল-
- Grilinctus GD
- inducers
- Avit
- Adaptogens
- Immunomodulators
- Arbidol
ইনফ্লুয়েঞ্জা কেন হয়
আমাদের দেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ। আমাদের দেশে তাই আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। প্রাত্যহিক শীত, গরম, বর্ষার এক অপ্রতিরোধ্য খেলা চলে আমাদের দেশে। আর এই খেলায় আবহাওয়ার সাথে আমাদের শরীরের এক ধরণের তারতম্য দেখা দেয় বিধায় আমাদের শরীর খুব খারাপ হয়। কখনো জ্বর, কখনো সর্দি, কখনো কাশি লেগেই থাকে আমাদের শরীরে। ইনফ্লুয়েঞ্জা কেন হয় এই নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। চলুন জেনে নেই কারণ সমূহ-
- আবহাওয়ার তারতম্যের প্রভাবে।
- হঠাৎ করে সর্দি, কাশির আক্রমণে আমাদের শরীরে যদি দুর্বল হয়ে উঠে তখন আমাদের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রমণ করে।
- আবার কখনো কোন সংক্রমণ ব্যক্তির সংস্পর্শে আমাদের শরীরে আক্রমণ ঘটে ইনফ্লুয়েঞ্জার। যা ধীরে ধীরে আরও নানান ধরণের উপসর্গের জন্ম দেয় আমাদের শরীরে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন বাংলাদেশ
কোন ঘাতক-বাহী রোগের আক্রমণের প্রভাবে ধীরে ধীরে আমাদের শরীর যেমন দুর্বল হয়ে উঠে ঠিক তেমনি করে আমাদের শরীরে নানান ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তেমনি ইনফ্লুয়েঞ্জা অন্যতম। ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তোলে এই রোগ। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং সেই সাথে এর প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন বাংলাদেশ অবিষ্কার করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। বেশ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর কতদিন থাকে
ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত একটি ভাইরাস-বাহিত রোগ। যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে দুর্বল করে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে দেয়। পাশাপাশি এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ বিধায় খুব সহজে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পরে। মূলত মানবদেহে যদি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণ করে তাহলে তার দুইদিন পর আমাদের শরীরে নানান ধরণের উপসর্গ দেখা যায়। এই ইনফ্লুয়েঞ্জার ৪ টি ভ্যারাইটি থাকলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।
তবে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে হলেও অনেকের ধারণা নেই ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর কতদিন থাকে? মূলত আমাদের শরীরে প্রবেশের পর অন্তত ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর এর প্রভাব থাকে আমাদের শরীরে। যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে অকেজো এবং দূর্বল করে তোলে।
আরোও পড়তে পারেনঃ হাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাস-বাহিত রোগ এই কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটি এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের মাঝে এই রোগটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী। মূলত অর্থোমিক্সোভিরিডি পরিবারের একটি ভাইরাস হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এই ভাইরাস ঠিক কতটা প্রাণঘাতী তা শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
১৯১৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটিরও বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছে এই ঘাতক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি কিন্তু বেশ গোলাকার। প্রায় ৩ ধরণের টাইপ ভাইরাসের সন্ধান এখন পর্যন্ত মিলেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতকবাহী রোগ হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা কিন্তু অনেকের নেই। এটি ঘন ঘন তার পোষক পরিবর্তন করে আরও মারাত্মকভাবে ফিরে আসে। মূলত এটি গোলাকার হয় যার ব্যাস ধারণা করা হয় প্রায় ৮০-১২০ ন্যানোমিটার।
ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে করণীয়
তইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুতই এই রোগটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে স্থানান্তর করতে পারে। ধরুন যদি পরিবারের একজন সদস্যের এই রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তাহলে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের এই রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কোন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগে তার প্রতিকার করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কথায় আছে “Prevention is better than cure”। আরোগ্য লাভের চেয়ে সমাধান জরুরি। তাই কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তখন তার পর্যাপ্ত খেয়াল রাখা বেশ জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে করনীয় সম্পর্কে-
- কোন ব্যক্তি যদি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় তাহলে সে ব্যক্তিকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার দাবারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিতে প্রচুর পরিমাণে ফলের জুস,শরবত এবং সেই সাথে পানি খেতে দিতে হবে। এই সময়ে প্রচুর পানির অভাব হয়। তাই অভাব পূরণের জন্য পানির ব্যবস্থা করা জরুরি।
- যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ঠাণ্ডার সমস্যা হয় তাই আক্রান্ত ব্যক্তির যাতে পুনরায় ঠাণ্ডা না লাগে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কোন কথা কিংবা কম্বল দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর মুড়িয়ে দিতে হবে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র যেমন কাপড়চোপড়, গ্লাস, বাতি, ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- অবশ্যই ভেকসিন দিয়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনতে হবে।
আড়ও পড়তে পারেনঃ
জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়
শেষ কথা
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ঘাতক-বাহী ছোঁয়াচে রোগ। তাই এই রোগে আক্রান্ত হবার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।পাশাপাশি এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
3 replies on “চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি”
[…] বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়। আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গু… […]
[…] আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গু… […]
[…] কুষ্ঠ রোগের প্রতিকার হিসেবে সঠিক উপায়ে ঔষধ সেবন করা ও নিয়মমাফিক জীবন যাপন করার বিকল্প নেই। আমরা জানি , প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই সকলকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই এর প্রতিরোধ করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে এ রোগে আক্রান্ত হতে না হয়। আরোও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গু… […]