Categories
ভ্যাকসিন

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

আজকের প্রতিবেদনে থাকছে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা নিয়ে। পথমে আমরা বলতে চাচ্ছি যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে যক্ষ্মা একটি মারাত্মক রোগ। রাজরোগ নামে পরিচিত এ রোগটি সময়ের সাপেক্ষে খুবই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি না যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে গভীর ধারণা না থাকে। শ্বাসতন্ত্রের যে কোনো অংশে আক্রমন করতে পারে।

“যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই” কথাটি সুদূর অতীত থেকে প্রচলিত। যদিও বর্তমান সময়ে কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থার দরুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তবুও এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ

অবাক করার বিষয় হলো যে, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং এইডস রোগের লক্ষণ প্রায় একই। তবে লক্ষণগুলোর স্থায়িত্ব ও ব্যতিক্রমতার ভিত্তিতে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণগুলো সনাক্ত করা সম্ভব।

ফুস্ফুসে যক্ষ্মা আক্রমন করলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সাথে গলার ভিতর থেকে থুতুর সাথে রক্তও বের হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পাঁচ থেকে ছয় মাস জ্বর থাকার মূল কারণ হলো টিবি।

এছাড়াও ফুসফুসীয় যক্ষ্মার অন্যান্য লক্ষণগুলো হলোঃ

  • তিন সপ্তাহের বেশি কাশি।
  • জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
  • রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম।
  • কাশির সাথে কফ বের হয়।
  • মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া।
  • ওজন হ্রাস পাওয়া।
  • বুকে ব্যাথা, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা।
  • মল ত্যাগের সময়সূচী তে পরিবর্তন।
  • পেটব্যাথা।
  • বুকে বা পেটে পানি জমা।
  • খিঁচুনি।
  • অজ্ঞান হয়ে পড়া।

যক্ষ্মা রোগ যখন ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষা বলে। যেমনঃ প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা, পরিপাক তন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষা ইত্যাদি।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা

আশার কথা হলো যে, সঠিক নিয়মে চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। প্রধানত দুই ধরণের পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করা হয়।

প্রথম ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে আট থেকে নয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে, কখনো কখনো তিন থেকে চার মাসে রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া যায়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে কোনো রূপ বিলম্ব ছাড়াই বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

যক্ষ্মা কী ছোঁয়াচে রোগ?

হাঁচি, কাশি কিংবা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য সংক্রমণ রোগের মতো খুব দ্রুত গতিতে ছড়ায় না। অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যক্ষ্মা আবার ফুসফুসের যক্ষ্মার মতো খুব একটা ছোঁয়াচে নয়।

তবে, আশ্চর্যজনক বিষয় হইলো যে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার কিছু অংশ জন্মগতভাবে কিংবা জিনগতভাবে যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সুস্থ ব্যক্তির শরীরের কাটা স্থান স্পর্শ করেন, তাহলে যক্ষ্মা রোগ ছড়ানোর প্রবল ঝুঁকি থাকে।

যক্ষ্মা রোগের কারণ

টিউবার্‌কিউলোসিস্‌ বা টিবি যার পূর্ণ নাম হলো মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণুর আক্রমণে শরীরের যে কোনো অংশে যক্ষ্মা হতে পারে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ(১/৩) এই টিবি দ্বারা আক্রান্ত।

ক্ষেত্র: Bacteria

পর্ব: Actinobacteria

শ্রেণী: Actinobacteria

বর্গ: Actinomycetales

পরিবার: Mycobacteriaceae

গণ: Mycobacterium

প্রজাতি: M. tuberculosis

দ্বিপদী নাম: Mycobacterium tuberculosis Zopf 1883

প্রতিশব্দ: Tubercle bacillus Koch 1882

অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে টিকতে পারে না এরা। বিজ্ঞানী Robert Koch ১৮৮২ সালে প্রথম এই জীবাণু আবিষ্কার করেন। প্রতিবছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মা রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে এবং প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়।

টিউবারকিউলিন স্কিন টেস্ট, অ্যাসিড ফাস্ট স্টেইন ও বুকের এক্সরে ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো যক্ষ্মা রোগের জীবাণু শনাক্তকরণে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই জীবাণুর জিনোম সিকোয়েন্স ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত করা হয়।

কোথায় চিকিৎসা করাবেন

বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ চিনেনিন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি

যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা

সাধারণ পরীক্ষা, ত্বকের পরীক্ষা, রক্তের পরীক্ষা, কফ পরীক্ষা ইত্যাদি। অন্যান্য পরীক্ষা বুকের এক্স-রে পরীক্ষা/ সিটি স্ক্যান কালচার টেস্ট পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলেও অনেক সময় যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যেমন : যক্ষা রোগের সংক্রমণের আট থেকে দশ সপ্তাহ পরেও তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে ধরা নাও পড়তে পারে।

এইডস এর মতো ভয়ংকর কোনো রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অনেকসময় পরীক্ষায় যক্ষা রোগ ধরা পড়ে না।

এছাড়া এইডস এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো প্রায় এক রকম হওয়ায়(কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) এইডস রোগীদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হয়ে থাকে। হামের টিকার কারণে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু থাকে।

ফলে যক্ষা রোগের জীবাণু কিংবা জিনোম ধরা নাও পড়তে পারে। শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু অতিরিক্ত পরিমাণ বা বেশি হয়ে গেলে ত্বকের পরীক্ষায় রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে যা এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা। অনেক সময় সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা না করলেও যক্ষা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে না।
আরও পরুনঃ জেনেনিন শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা কখন দিতে হয়

যক্ষ্মা রোগের ওষুধ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যাড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জটিল যক্ষ্মা চিকিৎসায় নতুন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। প্রেটোমানিড নামের এই নতুন ওষুধ খুবই কার্যকরী। অন্য দুটি ওষুধ বেডাকুলাইন ও ডেলামিনিড।
আরও পড়ুনঃ হাম রোগের লক্ষণ ও করনীয়

যক্ষ্মা রোগের টিকার নাম

ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন (বিসিজি) টিকা যক্ষ্মা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। যে সকল দেশে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি, সেই সকল দেশের সুস্থ শিশুদেরকে জন্মের সময়ের যতটা সম্ভব কাছাকাছি সময়ে একটি ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এইচআইভি/এইডস থাকা শিশুদের এই টিকা নেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। আবার টিকাটি মুত্রথলির ক্যান্সার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।

বাণিজ্যিক নামঃ বিসিজি ভ্যাকসিন, বিসিজি ভ্যাকসিন AJV এএইচএফএস/ ড্রাগস.কম

গর্ভধারণ বিষয়শ্রেণীঃ US: সি (ঝুঁকি বাতিল নয়)

প্রয়োগের স্থানঃ পার্কিউটেনিয়াস, ইনট্রাভেসিক্যাল

এটিসি কোডঃ J07AN01 (ডাব্লিউএইচও) L03AX03 প্রথম ১৯২১ সালে চিকিৎসামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্র ঢাকা

প্রকৃত নাম যক্ষ্মা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত যক্ষ্মা রোগের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৩ সালে যক্ষ্মা হাসপাতাল হিসাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার চাঁনখাঁরপুল এলাকায় স্থাপন করা হয়।

একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ৯ জন পূর্ণকালীন ডাক্তার রয়েছেন। এনাদের সাথে ২ জন নার্স ও ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী সক্রিয় রয়েছেন। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানের পাশাপাশি প্যাথোলজিক্যাল এক্স-রে করা হয়।

দেখেনিন যক্ষ্মা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটঃ

গঠিতঃ ১৯৫৩(৬৯ বছর আগে)

ধরনঃ সরকারি

আইনি অবস্থাঃ বিশেষায়িত রোগ-গবেষণা প্রতিষ্ঠান


উদ্দেশ্যঃ
  যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা ও গবেষণা

অবস্থানঃ  ঢাকা, বাংলাদেশ

যে অঞ্চলে কাজ করেঃ বাংলাদেশ

তত্ত্বাবধায়কঃ মো. মোসাদ্দেক

স্টাফঃ

৯ জন ডাক্তার

২ জন নার্স

৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। যক্ষ্মা রোগের বিষয়ে সচেতন করতে এই দিনটি পালন করা হয়।

১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করার ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।

ডব্লিউএইচও সহ ভিন্ন ভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা যথাসাধ্য চেষ্টা করেই চলেছে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যে। দেশের সব নাগরিকের জন্য বাংলাদেশ সরকার যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

2 replies on “যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা”

[…] অধিক রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগই এই রোগ সংক্রমণের প্রধান উৎস। এর জীবাণু রোগীর হাঁচি কাশির মাধ্যমে অন্য সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে তাকে আক্রান্ত করে দেয়। কম রোগ জীবাণু সম্পন্ন কুষ্ঠ রোগ খুব একটা ছড়ায় না। তবে এ ধরনের কুষ্ঠ রোগীর সাথে ও যথাসম্ভব কম মেলামেশা করা উচিত। আরোও পড়ুনঃ যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা […]

[…] হেপাটাইটিস বি নিয়ে আমাদের দেশে অনেক উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কেননা এ রোগ নিয়ে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে তেমনি অনেকে জানেই না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত। দেখা যায় প্রতি ১০ জন্যে ৯ জন জানে না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত ।এছাড়া এ রোগে আক্রান্তরা অনেকক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা পান না। ভ্রান্ত ধারণা এ হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। আরও পড়ুনঃহাম রোগের লক্ষণ ও করনীয় […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *