আমাদের চার পাশে নানা ধরনের রোগ বাতাসের সাথে মিশে রয়েছে। আমাদের শরীলে এই সব রোগ আক্রমন করলে আমরা সহজে বুঝতে পারিনা। কারন এই সব রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা জানিনা, তাই আজকে এমন একটি রোগের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হলো টিটেনাস রোগের লক্ষণ। তার আগে একটু টিটোনাস কি এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক…
টিটেনাস রোগের লক্ষণ
ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস, একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। এই টিটেনাস রোগের লক্ষণ হল মাংস পেশীর খিঁচুনি| সাধারণত, খিঁচুনি চোয়ালে শুরু হয় এবং তারপরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পরে। প্রতিটি খিঁচুনি এ ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা ইনজেকশন এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে।
লক্ষণ একদম শুরুর দিকে চোয়ালের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় অনেকের। যার কারণে ঠিক মতো চোয়াল নাড়ানো যায় না। অনেকের তীব্ৰ জ্বর উঠে। মাথা ব্যথা থাকতে পারে ,মুখের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াও খাবার খেতে অসুবিধা হয়। যখন অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে তখন প্রচুর খিঁচুনি শুরু হয়। কারো কারো শাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
কেটে গেলে টিটেনাস কত দিনের মধ্যে দিতে হয়?
হঠাৎ কেটে গেলে বিচলিত না হয়ে কাটা জায়গা উঁচুতে ধরে রাখুন ও এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে জোরে চেপে ধরুন। ছোটখাটো কাটা হলে কিছুক্ষণ কাটা জায়গাটা পরিষ্কার পানি, সাবানপানি বা অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রিত পানি দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণপর এমনিতেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। জীবাণু দ্বারা যাতে সংক্রমণ না হয় সেজন্য আগে এক টুকরো পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত গজ নিতে হবে এবং তার উপর অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে জায়গাটা ঢেকে বা বেঁধে রাখতেপারেন।
১০ বছরের মধ্যে টিটেনাস টিকা না দেওয়া থাকলে পরিষ্কার ক্ষতেও একটা বুস্টার ডোজ নেওয়া ভালো। কিন্তু ক্ষতস্থান নোংরা বা পুরোনো মরচে ধরা অপরিষ্কার কিছু দিয়ে কেটে গেলে পাঁচ বছরের মধ্যে টিটেনাস না দেওয়া থাকলে অবশ্যই বুস্টার নিয়ে নিন। ব্যথা বেড়ে গেলে, ফুলে লাল হলে বা পুঁজ জমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা ঠিক আছে কি না দেখুন।
টিটেনাস ইনজেকশন নিলে কি হয়?
বেশি কিছু বলার আগে জেনে নিই টিটেনাস রোগে কী কী হয় এবং কতটা ক্ষতিকর এই রোগ। এই রোগের জীবাণুর নাম ক্লস্ট্রিডিয়া টিটানি। এর স্বাভাবিক বাসস্থান মল দ্বারা দূষিত মাটি, নোংরা পাথর, রাস্তা ইত্যাদি। সাধারণত মলের মধ্যেই এই জীবাণুর অবস্থান। এই রোগ শরীরে ঢুকলে চার থেকে পনেরো দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এতে গোটা শরীরের মাংসপেশির খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং এতটাই শক্তিশালী এই খিঁচুনি যে শরীরের হাড়গোড় ভেঙে যায় – শেষ পর্যন্ত বুকের পেশি এতটাই সঙ্কোচিত হয়ে যায় যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
রোগটি বড়োই ভয়ংকর। তাই আমরা কেটে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশন নিতে ছুটি। কিন্তু সেটা কি আমাদের সঠিক সুরক্ষা দেয়?
টিটেনাস ইনজেকশনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্ষম জীবাণুদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দেখে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আসলে এ টিকা আমাদের শরীরে ঢুকে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে। যার আগে ভ্যাকসিন নিয়েনেওয়াই ভাল। কাটার পরে একটা ইনজেকশন কিন্তু প্রায় কোনো কাজই করে না। প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন।
টিটেনাস টিকা কত বার দিবে ?প্রত্যেকবার কাটার পর কি দিতে হবে?
নিয়ম অনুযায়ী টিটেনাস টক্সাইড টিকা কেটে যাওয়া বা আঘাত পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অব্যশই এক ডোজ টিকা নিতে হবে। পরবর্তীতে তিন মাস পর এবং এক বছর পর শেষ ডোজ নিতে হবে lতাহলে আগামী ৫ বছর টিটেনাস বা ধন্সটংকার থেকে আপনি নিরাপদ থাকবেন। তাই যতবার কেটে যাবে ততবার টিটেনাস টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়ম অনুযায়ী টিকা দিলে আপনি ৫ বছর নিরাপদ থাকবেন।
টিটেনাস ইনজেকশন এর দাম কত
ভ্যাক্সিলেট কোম্পানি টিটেনাস টিকা বানিয়ে থাকে যার মূল্য পরবে ৪৮০ টাকা। টিকার ব্যাপারে আরো তথ্য জানার জন্য আপনার নিকটস্থ টিকা কেন্দ্রে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া পপুলার ফার্মা এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন কোম্পানি ও টিটেনাস টিকা বের করেছে। এর .৫ মিলির দাম পরবে প্রায় ১০০ টাকার মতো।
আরোও পড়ুনঃ বিসিজি টিকা নিয়ে নতুন তথ্য এবং বিসিজি টিকা না পাকলে কি হয়
টিটেনাস ইনজেকশন এর মেয়াদ
প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে। তবে কিছু কারণে আপনি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
যেসব কারণে আপনার টিটেনাস ইনফেকশন এর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে
কাঠ ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল। বর্ষার সময় আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ। কারণ ভেজা কাঠে ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই বৃদ্ধি লাভ করে। এজন্যই কাঠের দরজা বা টেবিলে লেগে কেটে গেলেও টিটেনাস ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পোষা প্রাণীরা যে কোন স্থান চাটতে পছন্দ করে। মেঝের ধুলাবালি থেকে শুরু করে ভেজা কাঠ বা মরিচা পড়া ধাতব বস্তু পর্যন্ত সবকিছু চাটে পোষা প্রাণীরা যা কিনা ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ থাকতে পারে।
যদি এমন কোন পোষা প্রাণী বা অন্য প্রাণী আপনাকে কামড়ায় তাহলে আপনি টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন। ধুলো, কাদা ও ময়লায় বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যদি আপনার কেটে যাওয়া স্থানে বা ক্ষততে এগুলো লেগে যায় তাহলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন নোংরা ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।অধিকাংশ মানুষই টিটেনাসের টিকা নেন না এবং এ কারণেই ইনফেকশনের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রত্যেকেরই উচিৎ টিটেনাসের টিকা নেয়া।
টিটেনাস শনাক্ত
টিটেনাস শনাক্ত করা কঠিন। সাধারণত ধুলাবালি, ময়লা ও পশুর মলে টিটেনাস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া Clostridium tetani পাওয়া যায়। এর বীজ ত্বকের কাটা অংশ দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। তারা শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি লাভ করে ও অঙ্কুরিত হয়। অঙ্কুরিত স্পোর থেকে টক্সিন – টিটেনোস্প্যাজমিন উৎপন্ন হয় যা স্নায়ুতন্ত্রের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। এই বিষ প্রথমে ত্বকের ক্ষত স্থানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তারপর এটি স্নায়ুরজ্জু ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে টিটেনাসের সবচেয়ে ভীতিকর লক্ষণটি দেখা যায়, আর তা হল – লকড jaw বা দাঁত কপাটি লেগে যাওয়া। তারপর আক্রান্ত রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, ঢোক গিলতে সমস্যা হয় এবং পেট অনমনীয় হয়ে যায়। বিষ ছড়িয়ে পড়লে পেশীতে খিঁচুনি শুরু হয়। এই লক্ষণগুলো কয়েকসপ্তাহ স্থায়ী হয়।
টিটেনাস ইনজেকশন কখন দিতে হয়?
প্রথম ইনজেকশনের খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহের মাথায় আর একটা এবং ছয় মাসের মাথায় তিন নম্বর ইনজেকশন নিলে দশ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে। এবং অবশ্যই কাটা ছেঁড়ার আগেই ইনজেকশনগুলো নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাটার আগেই সাবধান হবেন। সুতরাং প্রতি দশ বছরে একটা করে বুস্টার ডোজ ইনজেকশন নিতেই হবে।
আরোও পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য
বিশেষ পরামর্শ
মনে রাখতে হবে প্রতিরোধ অবশই প্রতিকার থেকে ভালো। তাই টিটেনাস টিকা সময় মতো নেয় অত্যন্ত দরকারি। আসে পাশের সকল কে ও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। পুরানো লোহার বা স্টিলের ভাঙা ,ধারালো জিনিসপত্র সাবধানে ডিস্পোজাল করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই এই টিটেনাস লক্ষণ গুলো জেনে রাখতে পারলে আপনার জীবনে অনেক কাজে আসবে।
One reply on “জেনেনিন টিটেনাস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি”
[…] […]