আজকে এমন ১০ টি ভিটামিন “সি” যুক্ত খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো যে খাদ্য মানব শরীলের জন্য গুরুত্বপুর্ণ একটি উপাদান। এই উপাদান টি হচ্ছে ভিটামিন “সি” এই ভিটামিন সি এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মানব শরীরের জন্য খুবই জরুরি। এর কারণে রক্ত চলাচল থেকে শুরু করে শিরা ও ধমনীর কর্মক্ষমতা বজায় রাখা, শরীলের কোষ গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সব কিছুতেই ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি অপরিহার্য।
এই উপাদান অত্যন্ত উচ্চ মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন দূষণ থেকে রক্ষা করে, এবং নানা ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। এমনকি এটিপি, ডোপেমিন ও পেপটাইন হরমোনের ক্ষেত্রেও ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মোটকথা আমাদের মানব শরীরের চালিকাশক্তি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ভিটামিন সি-এর দৈনিক চাহিদা হলো ৬০ মিলিগ্রাম। আর এই ভিটামিন সি আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকেই পেয়ে থাকি। এই জন্য ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উত্সের কথা ভাবতেই আমাদের মনে পড়ে লেবুর ছবি! কিন্তু আপনি কি জানেন , সর্বোচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রথম দশটি খাবারের মধ্যেই লেবুর স্থান নেই? এটা জেনে সত্যি! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? এই লেবুর চেয়ে আরো অনেক বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসুন তাহলে জেনে নিই সারাবিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ভিটামিন সি যুক্ত দশটি খাবারের কথা –
১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা
১। কাঁচা মরিচ:
আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা যে সর্বোচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকার প্রথমেই রয়েছে আমাদের অতি চেনা কাঁচা মরিচ। আমরা সালাদ, স্যুপ, ভর্তার সাথে বা এমনিতেই কাঁচা মরিচ খেয়ে থাকি। এই কাচা মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ২৪২.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। লাল মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
২। পেয়ারা:
মরিচের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পেয়ারা। এই পেয়ারা প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আর একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় প্রায় ১২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি “ পাওয়া যায়। কিন্তু পেয়ারার জাতভেদে এর ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
৩। বেল মরিচ:
এই বেল মরিচ বাংলাদেশে পাস্তা সস বা পিজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মেক্সিকান মরিচ। এই মরিচটি অন্যন্য দেশেও অনেক খাবারে ব্যবহৃত করে থাকে। বেল মরিচে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১৮৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।
৪। টাটকা ভেষজ:
আমরা জানি যে বেশির ভাগ ভেষজই নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে সেটা তাজা হোক অথবা শুকনো। কিন্তু তাজা থাইম ও পোর্সলেতে রয়েছে আর সব ভেষজ থেকে বেশি ভিটামিন সি। এতে প্রতি ১০০ গ্রাম থাইমে রয়েছে ১৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং প্রতি ১০০ গ্রাম পোর্সলেতে রয়েছে ১৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এই সব খাবার বেশি বেশি করে খেলে ভিটামিন “সি” এর অভাব থাকবে না।
৫। গাঢ় সবুজপাতা এবং শাক:
আমার প্রতিদিন যে সব খাবার হিসেবে কাঁচা পাতা খাই যেমন পুদিনা বা লেটুস তেমনই একটি হলো Kale, এই সব এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”। Kale তে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। শাকের ভেতরে সরিষা শাক সর্বোচ্চ ভিটামিন “সি” যুক্ত। আর প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষা শাকে রয়েছ ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।
৬। ব্রকোলি:
আমরা সবাই তাজা শাক-সবজি খেতে পছন্দ করি। কেননা এতে রয়েছ প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”। ১০০ গ্রাম সবুজ টাটকা ব্রকোলি -এর আরেকটি ভালো উত্স। এটিতে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৯৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”।
৭। কিউয়ি ফল:
ভিটামিন “সি” এর জন্য এর আরেকটি উত্কৃষ্ট উত্স। কিউয়ি ফল এ প্রতি ১০০গ্রাম রয়েছে ৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এটিও খেলে ভিটামিন “সি” এর অভাব পুরন হবে।
৮। পেঁপে:
আমাদের সবার অতি পরিচিত ফল পেঁপে রয়েছে অষ্টম স্থানে।এই পেঁপেকে ভিটামিন “A” এবং ফোলেটের আধার হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হলেও এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি” । পাকা পেঁপে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৬২ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এই ফলটি আমরা সহযে পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর অভবে পুরন এর জন্য এই ফল টি খাওয়া যায়।
৯। কমলা:
এই ফলটিও আমাদের সবার পরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে কমলার খাদ্যযোগ্য রয়েছে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। যা অন্যন্য ফলের তুলনায় কম আছে।
১০। স্ট্রবেরী:
অতি চমত্কার স্বাদের ফল স্ট্রবেরী এমনিতে খাওয়ার পাশাপাশি আইসক্রিম, কেক, ডেজার্ট এবং আরো বিভিন্নভাবে এই ফল কে খাওয়া হয়ে থাকে। কমলার সম পরিমাণ ভিটামিন “সি” রয়েছে। স্ট্রবেরীতে প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন “সি”। এটি অন্যন্য ভিটামিন সি যুক্ত ফলের তুলনায় অনেক কম রয়েছে।
সংক্ষেপে,
আমাদের এই শেষ কথাটি সবার ভ্লোভাবে জানা থাকা দরকার। উপরের এই ভিটামিন সি খাবারগুলি বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকার সহ দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটের অংশ হওয়া উচিত। এই ভিটামিন সি আমাদের দেহ দ্বারা ক্যালসিয়াম শোষণকে উন্নত করে এবং হাড়ের শক্তি সর্বাধিক করে তোলে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল গুলো ফুসফুসের ক্যান্সার এবং গ্লাইওমার মতো নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করার সম্ভাবনাও দেখিয়েছে। অত এব ক্যান্সারের চিকিত্সার ক্ষেত্রে, ওরাল ভিটামিন সি উপ-অনুকূল শোষণের কারণে অপর্যাপ্ত। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বা ভিটামিন সি ইনফিউশনগুলি নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির ওষুধগুলির থেরাপিউটিক কার্যকারিতা এবং সহনশীলতার উন্নতি দেখিয়েছে। এগুলি রোগীদের বৃদ্ধির সম্ভাবনাও দেখিয়েছে জীবনের মানের এবং তেজস্ক্রিয়তা এবং কেমোথেরাপি চিকিত্সা ব্যবস্থার বিষক্রিয়া হ্রাস। উচ্চ ডোজ ভিটামিন সি (অ্যাসকরব্যাট) ইনফিউশনও অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির বিষ হ্রাস করার সম্ভাবনা দেখিয়েছে। সূত্র (ওয়েলশ জেএল এট আল, ক্যান্সার চেমার ফার্মাকল)