Categories
ভ্যাকসিন

ভ্যাকসিন নিয়ে সব তথ্য এবং ভ্যাকসিন নিবন্ধন

ভ্যাকসিন কি?

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৬০ সালে। পরবর্তীতে আরও অনেকবার করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেলেও ২০২০ সালে চিনে করোনা ভাইরাস শনাক্তের প্রায় ১ মাস পরে। ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। তার পরবর্তীতে এটি প্রায় সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ভ্যাকসিন নিবন্ধন

করোনা প্রতিরোধে জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় গবেষণা। অবশেষে সন্ধান মিলে ভ্যাকসিনের। ভ্যাকসিন (Vaccine) হল:- এমন এক ধরণের জৈব রাসায়নিক যেটি মানব দেহের immunity system বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একটা নির্দিষ্ট রোগ বা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করতে শক্তির যোগান দেয়। তাকে ভ্যাকসিন বলে।

ভ্যাকসিন সাধারণত, কোনো প্রাণীরে দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণু ইত্যাদি। বা মৃতদেহের কোনো অংশবিশেষ হতে প্রস্তুতকৃত ঔষধ। যা ঐ প্রাণীর দেহে ঐ ভাইরাস, জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে আন্টিবডি সৃষ্টি করে। এতে মানব দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিপায়। এবং ঐ ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বেষ্টণী বা শক্তি তৈরি করে।

ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধের হিসেব অনুযায়ী। বিশ্বে ২৭৩ টি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার চললেও, মোট ১২ টি ভ্যাকসিন গবেষণার তৃতীয় ধাপ পার হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে লক্ষ করা গেছে। এরই মধ্যে পাঁচটি ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশের সরকার জনগণের ওপর প্রয়োগের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি।

  • ফাইজার বায়এন্টেক
  • যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা
  • চিনের চিনোভ্যাক
  • রাশিয়ার স্পুটনিক ৫ এবং
  • অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকা

CDC তথ্য মতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন মানবদেহ কে কয়েক স্তরের সুরক্ষা দেয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর দেহের টি লিম্ফোসাইট এবং বি লিম্ফোসাইট বাড়াতে কাজ করে। আর লিম্ফোসাইটের কাজ হল শরীরের পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরি করে। আর এ এন্টিবডি শরীরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট

করোনাকালে বহু নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি আমরা। যেমন :- কোভিড-19, ভ্যাকসিন, হোম কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি। এবারে এ তালিকায় উঠে এসেছে ‘ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ এখন প্রশ্ন আসতে পারে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট আবার কি?

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট হলঃ- কোন নাগরিক করোনা টিকা নিয়ে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া মুক্ত হয়ে আছেন, এমন নিশ্চয়তা। দেশের প্রত্যেকটা মানুষকে দরকারি জিনিসপত্রের সাথে এখন থেকে Vaccine টিকা সনদ নিয়ে ঘুরতে হবে বলে ধারণা করা হয়।

ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটের মধ্যে বেশকিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা উপসর্গের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো দশজনের মধ্যে এক জনের হতে পারে যেমন:-

  1. শরীরের যে স্থানে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেখানে ব্যথা হওয়া ফুলে যাওয়া, কিংবা লাল হয়ে যাওয়া।
  2. মাংস পেশী বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
  3. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ জ্বর হওয়া।
  4. মাথাব্যথা এবং শীতল অনুভূতি।
  5. ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর শরীরের এগুলা কার্যকর হতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। এজন্য শরীরে জ্বর সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তারমানে শরীরে ভ্যাকসিন কাজ শুরু করছে।

ভ্যাকসিনের দাম

সরকারিভাবে মহামারি করোনা ভাইরাসের অক্সফোর্ড টিকা ভ্যাকসিনের দাম পড়বে প্রায় ৫$ অর্থাৎ ৪২৫ টাকা। তবে বেসরকারি টিকার দাম পড়বে ৮$ প্রায় ৭০০ টাকা করে। এটি দেশে খুবদ্রুত প্রয়োগ শুরু হবে। কেননা অন্যান ভ্যাকসিনের তুলনায় এ ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।

কোভিশিল্ড টিকার দাম

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী পুনাওয়ালা বলেন। তাদের উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকার সিঙ্গেল ডোজ ভারতের খোলা বাজারে ১০০০ রুপিতে অর্থাৎ ১৪$ বিক্রি হবে। তবে ভারত সরকার তাদের উৎপাদিত টিকার ৯০ শতাংশ কিনে নিবেন। যেগুলো বিক্রি করা হবে প্রায় ৪$ অর্থাৎ ২৫০ রুপি করে।

করোনা টিকা ২য় ডোজ

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি এক ডোজ টিকা দেয়ার মাধ্যমে, দেশে শুরু হয় করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি। করোনা ভাইরাসের টিকা মডার্নার অর্থাৎ ২য় ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০২১ সালের ১৪ই আগস্ট। BBC ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২২৩,৩৫৬,৮১৫ ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ভ্যাকসিন নিবন্ধন

আপনি চাইলে ঘরে বসে করোনা টিকা/ ভাকসিন নিবন্ধ করতে পারবেন খুব সহজে। করোনা ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য যা যা লাগবে। আপনি যদি স্টুডেন্ট হোন তাহলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধন দিয়ে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। আপনি যদি ভোটার হয়ে থাকেন এক্ষত্রে ভোটার কার্ড ( NID) অথবা পাসপোর্ট দিয়ে আবেদন করা যাবে ভ্যাকসিনের জন্য। আবেদন প্রক্রিয়া নিম্নে তুলে ধরা হলঃ-

আপনার হাতে থাকা মোবাইল কম্পিউটার ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ দিয়ে প্রথমে চলে আসুন গুগোল ব্রাউজার। এবার চার্স অপশনে চার্স করুন (www.surokkha.gov.bd)
ভ্যাকসিন নিবন্ধন

এবার আপনি ওপর থেকে আপনার পছন্ধের অপশনটি বেছে নিন। উদাঃ আপনি জতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকা নিবন্ধন করবেন। তাহলে সবার ওপরের অপশনটি ক্লিক করুন। এবার আপানর সামনে ২য় পেইজটি পেয়ে যাবেন। যেখানে আপনাকে আপনার শ্রেণী (ধরণ) নির্বাচন করতে বলবে। এখন নির্বাচন অপশনে ক্লিক করে আপনার শ্রেণী নির্বাচন করুন।

এরপর আপনি ৩য় ধাপে অতিক্রম করবেন সেখানে আপনার শ্রেণীর অনুযায়ী তথ্য দিতে বলবে। ধরুন আমি পূর্বে শ্রেণী হিসেবে বেছে নিয়েছি ১৮ বছর ও তদুর্ধ। তাই আমার সামনে এই পেইজটি অপেন হয়েভ্যাকসিন নিবন্ধ

এখন পেইজটিতে থাকা অপশন গুলো যথাযথ ভাবে বসাতে হবে। যেমন:- প্রথমে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার। তারপর জন্ম দিন, মাস, বছর। এরপর আপনার সামনে আসা ইংরেজি ও গনিত সংখ্যাটি দেখে দেখে সঠিকভাবে শূর্ণস্থানে বসিয়ে নিন। এটি একেক জনের একেক রকম দেখাবে। আপনার যেমন দেখাবে হুবহুব সেই রকম বসাতে হবে। উদাঃ আমাকে দেখাইছে ( U9MZHR) আমি দেখে দেখে হুবহুব কোডটি বসিয়ে নিচের যাচাই করুন অপশনে ক্লিক করব।

টিকা কেন্দ্র বেচে নিন

আপনার দেওয়া জন্মনিবন্ধনের নাম্বার, তারিখ, মাস, বছর, ও (I am not Robot) কোডটি সঠিক থাকলে। আপনার সামনে আপনার জন্মনিবন্ধন তথ্য গুলো দেখাবে।

টিকা কেন্দ্র বেচে নিন
আপনি যে কেন্দ্রে থেকে টিকা নিবেন সেই কেন্দ্র টি বাচাই করে নিবেন।

যদি উপরের তথ্যগুলো আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সাথে মিলে যায়। তাহলে নিম্নের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর গুলো বসাতে হবে। যেমন:- আপনাকে একটি ফোন নাম্বার দিতে হবে, যেখানে আপনার করোনা আপডেট, ডেট গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। তারপর আপনার বর্তমান ঠিকানা যেমন:- বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, পোষ্ট অফিস, ওয়ার্ড, হোলডিং বা রাস্তা নাম্বার ইত্যাদি।

তারপর সবগুলো খালি স্থান যথাযথ ভাবে পূরণের পর। একটু নিচে গেলে দেখবেন একটি অপশন আছে। যেখানে লেখা আছে ( যে কেন্দ্রে টিকা নিতে ইচ্ছুক) অপশনটাতে আপনার নিকটস্থ কেন্দ্রের নাম সিলেক্ট করুন।

টিকা কার্ড সংরক্ষণ

টিকা কার্ড সংগ্রাহ
কোভিড১৯ এর টিকা দেওয়ার পর কার্ড সংরক্ষন করুন

সবগুলো ঠিকঠাক হয়ে গেলে, একটু নিছে আসলে সবুজ রং এর একটি বাটন পাবেন (সংরক্ষণ করু)। এখন সংরক্ষণ করুন অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আপনাকে পরবর্তী পেইজ এ নিয়ে আসবে। যেখানে লেখা থাকবে।

মোবাইল OTP প্রদান করুন। আপনি একটু আগে যেই নাম্বারটি দিয়েছেন। সেই নাম্বারে ৬ থেকে ৮ ডিজিটের একটি কোড যাবে। কোডটি এনে OTP অপশনে দিয়ে। নিচের নিবন্ধন সম্পন্ন করুন। অপশনে ক্লিক করুলে আপনার করোনা টিকা আবেদেন শেষ হয়ে যাবে।

এরপর আপনাকে একটি মেসিস দেখাবে। আপনার আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। তার একটু নিচে প্রথমে একটি অপশন পাবেন। টিকা কার্ড সংগ্রহ করুন।

টিকা কার্ড সংগ্রাহ

এবার আপনার টিকা কার্ডটি সংগ্র করতে টিকা কার্ড সংগ্রহ অপশনটাতে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী একটি পেইজ এ নিয়ে যাবে। সেখানে আপনার। নিবন্ধনকৃত ফোন নাম্বারটি, জন্ম তারিখ, সাল, মাস OTP ইত্যাদি দিয়ে যাচাই করুন অপশনে ক্লিক করুন।

সবগুলো ঠিক থাকলে আপনার সামনে আপনার আবেদনকৃত টিকা ফরমটি পেয়ে যাবেন। এখন ওপরের ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার টিকা কার্ডটি হাতে পেয়ে যাবেন। এবারে যেকোন কম্পিটার দোকানে গেলে তারা আপনার টিকা কার্ডটি প্রিন্ট করে বের করে দিব।

টিকা দিন এখনি

এখন, টিকা মেসিস পেতে অপেক্ষা করুন। নির্দিষ্ট সময়ে আপনি নিবন্ধনের সময় দেওয়া নাম্বারে টিকা মেসিস পেয়ে যাবেন। সেখানে আপনার টিকার ডেট ও কেন্দ্র বলে দেওয়া হবে। এখন নির্দিষ্ট তারিখ এ নির্দিষ্ট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে টিকা নেওয়া সম্পন্ন করুন।

One reply on “ভ্যাকসিন নিয়ে সব তথ্য এবং ভ্যাকসিন নিবন্ধন”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *