Categories
খাদ্য তালিকা

জেনে রাখা ভালো চর্বি কমানোর খাবার তালিকা

বর্তমানে অনেকেই শরীরের অতিরিক্ত চর্বি নিয়ে চিন্তিত। কথায় আছে না- বেশি ভালো ভালো না ’চর্বি দেহের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত চর্বি দেহের জন্য নানা রোগ ডেকে আনে। আপনিও কি অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ নিয়ে চিন্তিত? চর্বি কমানোর উপায় খুঁজছেন? আসলে চর্বি কমাতে হলে প্রথমেই সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হবে। চর্বি কমাতে চাইলে আপনার চর্বি কমানোর খাবার তালিকা জানার বিকল্প নেই। সঠিক তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে সহজেই আপনি আপনার দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সফল হবেন। চলুন চর্বি কমানোর খাবার তালিকা সম্পর্কে অবহিত হই।

চর্বি কি

আসলে এই চর্বি কি? চর্বি আমরা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির উৎস হিসেবে খাদ্যগ্রহণ করি।খাদ্যের প্রধান তিনটি উপাদান হচ্ছে-প্রোটিন, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট। এর মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালরির একটা বড় অংশ আসে চর্বি জাতীয় খাবার থেকে।সত্যি বলতে, শক্তির পাওয়ার হাউস বলা হয় চর্বিকে। রসায়ন ও জীব বিজ্ঞানের ভাষায়, ফ্যাট বা চর্বি হচ্ছে প্রাণীদেহে বিদ্যমান এক ধরনের লিপিড যা গ্লিসারল,ফ্যাটি এসিড বা ট্রাই গ্লিসারাইডের সমন্বিত যৌগ। মূলত এই চর্বি কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বিত জৈব যৌগ। চর্বির ধর্ম অনুযায়ী, এরা সাধারন তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে।এরা জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় ও অজৈব দ্রাবকে অদ্রবণীয়।

চর্বি কমানোর খাদ্য তালিকা

অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ কমানোর পূর্বশর্ত আপনার খাদ্যভাসে পরিবর্তন। শর্করা ও চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আপনাকে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন যেমন: ডাল জাতীয় খাবার রাখবেন। নিয়মিত কফি পান করবেন, কফি ফ্যাট কমাতে ভালো ভুমিকা রাখে।যদি চর্বি কমাতে চান, তবে অবশ্যই খাবার তালিকা থেকে লবণ বাদ দিন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রীণ টি বা মেথি জল পান করুন, মেদ কমাতে এটি বেশ কার্যকর উপায়।খাবার তালিকায় কোনোভাবেই ফাস্টফুড বা কোমল পানীয় রাখা যাবে না। রিফাইনড চিনি গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দিন।

চর্বিযুক্ত খাবারের কাজ

চর্বি নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা দেখা দিয়েছে। স্থূলতা, ওজন বৃদ্ধি ও নানা রোগের কারণে অনেকেই একে খাদ্যতালিকা থেকে প্রায় বাদ দিয়ে দিচ্ছে। আপনি এর কার্যকারিতা না জেনেই একে খাদ্যতালিকা দিয়ে বাদ দিতে পারেন না কখনোই। চলুন এই চর্বিযুক্ত খাবারের কাজ কি তা জেনে নেই।

কার্বোহাইড্রেট আপনার শরীরের জ্বালানির প্রধান উৎস, এতে কোনো সন্দেহ নাই।তবে যখন কার্বহাইড্রেট পাওয়া যায় না, তখন চর্বিই শক্তির ব্যাকআপ উৎস হিসাবে কাজ করে। চর্বি শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস। এক গ্রাম চর্বিতে 9 ক্যালোরি থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন থেকে পাওয়া ক্যালোরির দ্বিগুণেরও বেশি। যেহেতু ফ্যাট থেকে ক্যালোরি বেশি পাওয়া যায়, তাই আপনাকে আপনার খাদ্যতালিকায় চর্বি থেকে 20 থেকে 35 শতাংশ ক্যালোরিতে বরাদ্দ করতে হবে।একটি 1,800-ক্যালোরি খাদ্যে তালিকায় দৈনিক 40 থেকে 70 গ্রাম চর্বি রাখা যায়।

ভিটামিন শোষণ এবং সঞ্চয় করা চর্বির উপর নির্ভর করে। ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে, যাকে চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন বলা হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণ চর্বি ছাড়া এরা কাজ করতে পারে না। বলাবাহুল্য, এই ভিটামিনগুলি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের অপরিহার্য অংশ। ভিটামিন এ আপনার চোখকে সুস্থ রাখে এবং ভালো দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণকে বাড়িয়ে আপনার হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে, ভিটামিন ই ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে কোষকে রক্ষা করে এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য ভিটামিন কে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় চর্বি গ্রহণ না করেন,তবে এই ভিটামিনগুলো তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

নিরোধক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ফ্যাট কোষ, অ্যাডিপোজ টিস্যুতে সঞ্চিত থাকে যা আপনার শরীরকে নিরোধক করে এবং শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যাডিপোজ টিস্যু সবসময় দৃশ্যমান হয় না, তবে আপনার ওজন বেশি হলে আপনি এটি আপনার ত্বকের নিচে দেখতে সক্ষম হবেন।আপনি দেহের কিছু নির্দিষ্ট অংশে প্রচুর পরিমাণে অ্যাডিপোজ টিস্যু লক্ষ্য করতে পারেন, যার ফলে আপনার উরু এবং পেটের চারপাশে ভাজ দেখা যায়। অন্যান্য সঞ্চিত চর্বি শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গকে ঘিরে রাখে এবং তাদের আকস্মিক নড়াচড়া বা বাইরের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার

প্রতিটি খাদ্যেই কম-বেশি চর্বি বিদ্যমান। আপনি যদি সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে চান, তবে অবশ্যই কোন খাবারগুলো অধিক চর্বিযুক্ত আপনার তা জানা দরকার।

অ্যাভোকাডো: পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম। যেখানে অন্যসব ফল শর্করায় ভরপুর, সেখানে অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৮০%চর্বি থাকে যা প্রাণিজ চর্বি চেয়েও বেশি।

চীজ: ফাস্টফুড লাভারদের জন্য চীজ যেন অমৃত। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকরও বটে।প্রতি ২৮গ্রাম চীজে ৬গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা একগ্লাস দুধের প্রায় সমান।

বাদাম: চর্বি ও ফাইবারে সমৃদ্ধ বাদাম প্রোটিনেরও একটি উৎকৃষ্ট উৎস।গবেষণা বলছে,বাদাম গ্রহণকারী মাুনষদের স্থূলতা, ডায়বেটিস ও হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

ডিম: আমিষভোজীদের জন্য ডিম প্রোটিন একটি অনন্য উৎস। আচ্ছা বলুন তো, ডিমের সাদা অংশ বেশি পুষ্টিকর না ডিমের কুসুম?জানি বাকি সবার মতো আপনিও সাদা অংশকেই বেশি পুষ্টিকর মনে করবেন। শুনে অবাক হবেন যে, ৫০গ্রাম ওজনের একটি সিদ্ধ ডিমে ৫.৩ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও ফ্যাটবহুল মাছ, দই, জলপাই, প্রানিজ তেলে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায়।

চর্বি কমানোর উপায়

শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে।তাই এই অতিরিক্ত চর্বি কখনোই কারো কাম্য নয়। শরীরে একবার চর্বি জমে গেলে তা কমানো যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি সময় সাপেক্ষও হয়ে দাঁড়ায়।তবুও এই চর্বি কমানোর উপায়গুলো জেনে নিন।

বেশি বেশি ভালো চর্বি গ্রহণ করুন

বেশি পরিমানে ভালো চর্বি গ্রহণ করুন, ভালো চর্বি বলতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত প্রানিজ ও উদ্ভিজ চর্বিকে বুঝানো হয়েছে। প্রসেস খাবারগুলো যতই মুখরোচক হোক না কেন, তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম

চর্বি কমানোর প্রথম উপায় হচ্ছে শারীরিক কসরত করা। আপনি যত পরিশ্রম করবেন, শরীরের মাসল তত শক্তিশালী হবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন হবে।

নিয়মমাফিক ঘুমান

প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো মানুষের শরীর তুলনামূলকভাবে কম ভিসেরাল ফ্যাট জমা হয়। কারণ যত বেশি রাত জাগবেন, খাদ্য গ্রহণের প্রবনতাও বাড়তে থাকে। যার কারনে জমা হয় অতিরিক্ত চর্বি। খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন বেশি বেশি প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করুন,চর্বি ও শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিন।

চর্বি জাতীয় মাছ কি কি

ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছের অন্যতম উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এই চর্বি জাতীয় মাছ কি কি তা জেনে রাখুন।যেমন ইলিশ, কড, স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং ট্রাউট ইত্যাদি।এতে প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। গবেষণা বলে যে, ওমেগা-3 লিভারের চর্বি কমিয়ে,রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়।
আরোও পড়ুনঃ জেনেনিন ১০টি ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য তালিকা

লিভারে চর্বি কমানোর উপায়

দেহে গ্রহণকৃত খাদ্যের একটি অংশ লিভারে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা থাকে। পরিশ্রমের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এই চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে, যাকে ফ্যাটি লিভারও বলে।এই চর্বির পরিমাণ না কমালে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।চলুন এই লিভারে চর্বি কমানোর উপায় জেনে নেই-

নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত করুন

  • খাদ্যে ফল,সবজি ও ফাইবার জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ান
  • কোমল পানীয় সম্পূর্ণভাবে বাদ দিন
  • অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য পান পরিহার করুন
  • নিয়মিত কফি পান করুন

আরোও পড়ুনঃ ৬টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এমন কিছু খাবার এর কথা জানুন

চর্বি কমানোর জন্য আপনার আহামরি না খেয়ে থাকতে হবে না। তাই কীভাবে চর্বি কমাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সঠিক খাদ্যভাস অনুসরণ করুন। কিছু খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কিছু এড করবেন। তাহলে আর স্ট্রেস না নিয়ে আজই লেগে পড়ুন।