Categories
শিক্ষা

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কোথায় এবং সমস্ত তথ্য

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ যেটি বাংলাদেশের মেয়েদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা সবাই কিন্তু কম বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ সম্পর্কে জানি। সেই সাথে আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সম্পর্কে জানি, কিন্তু গার্হস্থ্য অর্থনীতি যে কলেজগুলো রয়েছে যেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এ তথ্যগুলো হয়ত আমাদের তেমন কারোর জানা নেই। এমনকি এই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কোথায় অবস্থিত তা হয়তো অনেকেই জানিনা। এটিও আলোচনা করা হবে আজকের এই প্রতিবেদনে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এই কলেজগুলো কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয়।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হল গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোরও সার্টিফিকেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়, ঠিক যেমনটি সাত কলেজগুলোতে প্রদান করা হয়। আপনারা কি জানেন, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ আসলে কোথায় অবস্থিত? আপনারা হয়ত জানেন যে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, আজিমপুরে ঢাকায় অবস্থিত। কিন্তু এই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজটিরও আরও শাখা কলেজ রয়েছে। যেগুলো আলাদা আলাদা জায়গায় অবস্থিত রয়েছে। প্রিয় পাঠক, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ এবং আরও বিস্তারিত তথ্য গুলো জানার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কাকে বলে

সহজ কথায় যদি আপনাদের বলি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বলতে আসলে পারিবারিক অর্থনীতি বোঝানো হয়। অর্থাৎ পরিবারের অর্থনৈতিক যে ব্যবস্থাপনাটি রয়েছে যেমন বাজেটের সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যয়, সঞ্চয়, বিনিয়োগ ইত্যাদি।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি পরিবারের বাজেট এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যেহেতু পরিবারের একজনের আয়ের উপর নির্ভর করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চাহিদা, ব্যয়, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি। সেহেতু এগুলোর কারণে একটি বাজেট পরিকল্পনা করা হয়। আর এই বাজেট পরিকল্পনা কিন্তু গার্হস্থ্য অর্থনীতির মাধ্যমে এসেছে।গার্হস্থ্য অর্থনীতি একজন ব্যক্তি এবং পরিবারের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের কলেজ কয়টি এবং কোথায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট যেটি মেয়েদের জন্য অন্যতম পছন্দের একটি সাবজেক্ট। মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারের জন্য গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের কলেজ স্থাপিত করা হয়। এই ইউনিটটি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত তাই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হলেও গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আলাদা আলাদা কলেজ রয়েছে। এই কলেজগুলো বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। আপনাদের জানার সুবিধার্থে আজকে আমি আলোচনা করব গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের কলেজ কয়টি এবং কোথায় অবস্থিত রয়েছে।

আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন না যে, বাংলাদেশে গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সর্বমোট ৫ টি কলেজ রয়েছে এবং এই কলেজগুলো বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত করা হয়েছে। কলেজগুলোর নাম নিম্নে দেওয়া হলো-

  1. প্রথম যে কলেজটি রয়েছে সেটি হলো Home Economics College, Azimpur(Dhaka)
  2. এরপর রয়েছে Bangladesh Home Economics College, Greenroad(Dhaka)
  3. Akiz College of Home Economics, Dhanmondi (Dhaka)
  4. এরপর যে কলেজটি রয়েছে সেটি হলো National College of Home Economics, Lalmatia(Dhaka)
  5. Mymensingh Home Economics College, Mymensingh.

বাংলাদেশের এই জায়গাগুলোতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোতে কোন সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয়

এতক্ষন আপনারা জানলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের কলেজগুলো কোথায় অবস্থিত এই সম্পর্কে। এখন আপনাদের জানাব এই কলেজগুলোতে কোন সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতির সব কলেজগুলোতে সাবজেক্ট কিন্তু একই। এখানে পড়ানো হয় ৫টি বিষয় নিয়ে।এই বিষয়গুলো হল-(খাদ্য এবং পুষ্টি বিজ্ঞান, বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেণরশীপ)। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ গুলোতে বাংলা এবং ইংরেজি এই দুইটি ভার্সন রয়েছে।

এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনারা যারা পড়তে চান, তারা কিন্তু ইংলিশ ভারসনেও পড়তে পারেন। গার্হস্থ্য অর্থনীতির এই সাবজেক্ট গুলো কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং, এই সাবজেক্টগুলো নিয়ে পড়াশুনা করে বর্তমানে মেয়েরা ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারছে। অনেকেরই হয়ত ধারণা এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে ভালো ক্যারিয়ার শুরু করা যায় না বা সাবজেক্ট গুলো শুধু হোম রিলেটেড হওয়ায় ভালো জব পাওয়া পসিবিলিটি নেই। কিন্তু আসলে তা নয়, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে পুষ্টিবিদ, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আরও অনেক কিছু নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা সম্ভব।

আজিমপুর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ

এখন আমি আপনাদের সাথে এই কলেজ সম্পর্কে আলোচনা করব, যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত প্রথম মহিলা কলেজ। ৫ টি কলেজের মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম স্থাপিত হয়।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কোথায় অবস্থিত

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত এবং মেয়েদের জন্য সবচেয়ে অন্যতম এবং পছন্দের তালিকায় এই কলেজটি।গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ যেটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং এটি একটি সরকারি কলেজ। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফাউন্ডেশন (ফোর্ড) এর সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটি যার নাম ( Oklahama State University), এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ স্থাপিত হয়।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে পাঠদান শুরু হয় ১৯৬১ সালে এবং সেইসাথে ইন্টারমিডিয়েট, স্নাতক পর্যায়ের মেয়েরা এই কলেজে অ্যাডমিশন নিয়ে পাঠদান শুরু করে। এরপর স্নাতকোত্তর লেভেলের পাঠদান ও সকল কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৩ সাল থেকে। যদিও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান শুরু হলেও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়টির স্নাতক কোর্স চালু হয় ১৯৭৩ সালে।

বদলে গেল গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের নাম

আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না যে, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের নতুন একটি নামকরণ করা হয়েছে সেটি হলো Government College of Applied Human Science. এই কলেজের গ্রাজুয়েশন কোর্সের সিলেবাস তৈরী করা হত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সের নিয়ম অনুকরণে। সেইসাথে করাচি হোম ইকোনোমিক্স, লাহোর হোম ইকোনোমিক্স কলেজে কোর্সের যে নির্দেশিকা অনুসরণ করা হতো, সেই নির্দেশিকা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের কোর্সসমূহে অনুসরণ করা হতো।

১৯৮৫-১৯৮৬ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কোর্সের ৫ টি বিভাগ চালু করা হয় এবং এই ৫ ট বিভাগের সাথে ৫টি সম্মান কোর্স বা বিষয় চালু করা হয়। বিষয়গুলো হলো- শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, বস্ত্র ও বয়ন শিল্প, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেণরশীপ, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক। এরপর ১ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স ২০০২-২০০৩ সালে চালু হয়।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আসনসংখ্যা

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ক্যাম্পাসটি দেখতে কেমন।গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ অর্থাৎ (গভর্মেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স) এর ক্যাম্পাসটি প্রায় ১০.৩ একরজুড়ে স্থাপন করা হয়েছিল। অত্যন্ত মনোরম ও চোখ জুড়ানো সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাস। এখানে রয়েছে সেমিনার রুম ৫টি, লাইব্রেরি ১টি, পরীক্ষাগার ৪টি, হোস্টেল ১টি, মাঠ ২টি, পুকুর ১টি, প্রার্থনা রুম ২টি। এছাড়া আছে ক্যান্টিন, অনেকগুলো শ্রেণীকক্ষ, ফুলের বাগান ইত্যাদি। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আসনসংখ্যা ৫৭০ টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট এবং যোগ্যতা অনুসারে এই কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ

মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার উন্নতি ডেভেলপমেন্ট এর জন্য গার্হস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ঠিক এই ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ স্থাপিত করা হয়। এই কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি দ্বারা এই কলেজটি পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন নয় অর্থাৎ এটি কোন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত করা হয় না, এই কলেজটি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। ঢাকার গ্রীনরোডে, (পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরদিকে) এই কলেজটি অবস্থিত। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে দরিদ্র মেধাবী যারা ছাত্রী রয়েছে তাদেরকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম এবং সিলেবাসসহ অন্যান্য যাবতীয় কাজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ কর্তৃক পরিচালিত করা হয়।

কলেজটিতে ৪ বছর মেয়াদি বি.এস.সি (সম্মান) ১বছর মেয়াদি এম.এস.সি, এম.এস ফাইনাল (১ বছর) মেয়াদি, এই কোর্সগুলো রয়েছে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে। এই কোর্স গুলোতেও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (আজিমপুর) এর মত ৫টি বিভাগ রয়েছে। এখানের পড়ালেখার মান উন্নত পর্যায়ের এবং প্রত্যেক বছর ছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট এর মাধ্যমে গ্রাজুয়েশন শেষ করে। এবার আসি আসনসংখ্যায়, এই কলেজটিতে ৫৫০ টি আসনসংখ্যা রয়েছে। উন্নতমানের কক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাব রুম, ক্যাফেটেরিয়া সহ আরও রয়েছে প্রার্থনা রুম এবং গার্ডিয়ানদের বসার স্পেস।

আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকস

এবার আপনাদের বলব গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অন্য আরেকটি কলেজ সম্পর্কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আরেকটি কলেজ হলো আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকস। এই কলেজটি অবস্থিত রয়েছে ধানমণ্ডি, ঢাকাতে। বাকি দুইটি কলেজের মত এই কলেজটিতেও ৫ টি বিভাগে কোর্স চালু করা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ থেকে এই কলেজের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই কলেজটি সম্পূর্ণ বেসরকারি নয়, অর্থাৎ হাফ সরকারি হাফ বেসরকারি বলা যায়।

অন্যান্য সকল কলেজের মত এই কলেজেও একই সিলেবাস পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই কলেজের আসনসংখ্যা প্রায় ৫০০ এর মত এখানেও রয়েছে উন্নত মানের পড়াশোনার পদ্ধতি, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া সহ আরও অনেক কিছু। এখানে রয়েছে ল্যাব, ডিবেটিং রুম ইত্যাদি। এছাড়া কোন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জন্য রয়েছে আলাদা রেস্ট করার রুম এবং চিকিৎসার সুব্যবস্থা, আছেন চিকিৎসকও। এই কলেজটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় গ্রাজুয়েশন শেষে। পরিশেষে বলব, এই কলেজের ছাত্রীদের সাথে সকল শিক্ষকদের সুসম্পর্ক রয়েছে, যার ফলে ছাত্রীরা পড়াশোনার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে।

ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিকস

গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আরেকটি সুসজ্জিত এবং উন্নত মানসম্পন্ন কলেজ হলো ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিকস। যেটি অবস্থিত রয়েছে ঢাকার লালমাটিয়ায়। এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। কলেজটির সকল কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, ইত্যাদি সকল কিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়। কলেজের কোর্সগুলোর সিলেবাস প্রনয়ণ পদ্ধতিও জীব বিজ্ঞান অনুষদ থেকে পরিচালনা করা হয়।

এই কলেজটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কলেজটিতে বি.এসসি (অনার্স) এম.এসসি কোর্স রয়েছে।সেইসাথে কোর্সগুলো ছাত্রীরা বাংলা বা ইংরেজি ভার্সনে সম্পন্ন করতে পারবেন। কোর্সগুলোতে ৫টি বিষয় রয়েছে অন্যান্য কলেজগুলোর মত। সেগুলো হচ্ছে- শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, বস্ত্র ও বয়ন শিল্প, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেণরশীপ এবং শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক। ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিকস কলেজটিতে আসনসংখ্যা রয়েছে ৫৫০ টি।কলেজে রয়েছে উন্নত মানের ক্লাসরুম, শিক্ষকদের জন্য রয়েছে আলাদা মিটিং রুম, লাইব্রেরি, ল্যাব রুম, আর্ট রুম সহ আরও অনেক কিছু। কলেজের সামনে সুন্দর ব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিন। এই কলেজেও গ্রাজুয়েশন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

ময়মনসিংহ হোম ইকোনমিকস কলেজ

সর্বশেষ যে আরেকটি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ রয়েছে সেটি হলো ময়মনসিংহ হোম ইকোনমিকস কলেজ, যেটি ময়মনসিংহে অবস্থিত। এই কলেজটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ থেকে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কলেজের সকল কোর্সের সিলেবাস প্রনয়ণ করা হয় এই অফিস থেকে। কলেজটিতে আসনসংখ্যা রয়েছে ৪০০ এর মত এবং এই কলেজটি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। কলেজটিতে কোর্স রয়েছে বি.এস.সি সম্মান কোর্স এবং এম.এসসি কোর্স। এই কোর্সগুলোতে ৫টি বিভাগ চালু করা হয়েছে।প্রত্যেকটি কোর্সগুলোতে আলাদা আলাদা সিট বরাদ্দ রয়েছে ছাত্রীদের জন্য।

এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত যে বিভাগগুলো রয়েছে সেগুলো হল- খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেণরশীপ, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা এবং বস্ত্র ও বয়ন শিল্প। এই সাবজেক্ট গুলো ছাত্রীরা বাংলা এবং ইংরেজি ভার্সনেও পড়তে পারবে।বিএসসি সম্মান কোর্স এ প্রত্যেক ছাত্রীর চার বছর পর কোর্স শেষ হয়। এমএসসি কোর্সে ১বছর পর প্রত্যেক ছাত্রীদের গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে থাকে। গ্রাজুয়েশন শেষে প্রত্যেক ছাত্রীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোর আবেদনযোগ্যতা

এতক্ষন আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলো সম্পর্কে। এখন আপনাদের বলব এই কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য কি কি আবেদন যোগ্যতার দরকার হয় এবং বিস্তারিত আরো অনেক তথ্য।

আপনারা জানেন, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোতে রয়েছে ৫টি কোর্স এবং এই কোর্স গুলোতে রয়েছে ৫টি বিভাগ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথমে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এখানে শুধুমাত্র মেয়েরাই এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। এই ইউনিটটিই মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে চালু করা হয়েছিল। এরপর মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ন্যুনতম ২.৫ এর উপরে হতে হবে। এর নিচে হলে আবেদন করা যাবে না।

এছাড়া সাবজেক্ট পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে যারা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তারা খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান এই সাবজেক্টটি পাবেন।সেইসাথে বস্ত্র ও বয়ন শিল্প এই বিষয়টিও পাবেন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা। আর বাকি সাবজেক্ট গুলো ব্যবসায় ও মানবিক বিভাগের ছাত্রীরা পাবেন। ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের বাংলা, ইংরেজি, সাধারণজ্ঞান, বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা হবে। এরপর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্রীদের বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সাব্জেক্টগুলোর উপর পরীক্ষা হবে। মানবিক বিভাগের ছাত্রীদের পৌরনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং সাধারণ জ্ঞান এর উপর ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। আর যারা গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে ছিলেন তারা গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন, শিশু বিকাশ, খাদ্য ও পুষ্টি, সাধারণ জ্ঞান এই বিষয়গুলো উপর পরীক্ষা দিবেন।

সাধারণত গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া মে থেকে জুন মাসের মধ্যে শুরু হয় এবং আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয় জুলাই মাসে। আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হয়ে থাকে। পরীক্ষার পূর্ণ নম্বর থাকে ১০০ তে এবং পাশ মার্ক ৪০ নম্বর এর হয়ে থাকে। পরীক্ষার রেজাল্ট বিবেচনা করে প্রত্যেক ছাত্রীর পরীক্ষার নম্বর অনুযায়ী গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোতে নাম দেওয়া হয়ে থাকে।
আরোও পড়ুনঃ ডিপ্লোমা নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি নার্সিং কি

পরিশেষে: মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলো। ৫ টি বিষয়ে শিক্ষার্থীকে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয় এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন এর জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়ে থাকে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষে একজন ছাত্রী খাদ্য রসায়ন, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে পেশা গ্রহণ করতে পারেন।

এছাড়াও ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, নকশা ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।তাই বাংলাদেশের মেয়েদের সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোতে পাঠদান শুরু করার মাধ্যমে নিজের আত্নকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তুলতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *